নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তবাজারের অভিশাপ!

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩

বিশ্ব বাজার এখন খুবই টালমাটাল। এই বাজারের স্রোতে সনাতন ব্যবস্থার সব সংসার-ধর্ম-দর্শন-জীবনব্যবস্থা-সবই যেন ক্রমাগত ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও। এর জন্য কোন ব্যক্তিই এককভাবে দায়ি নন । দায়ি গোটা বিশ্ব ব্যবস্থাই।

আজকাল কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সাহিত্যের আড্ডায় যখন কেউ বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তার অধিক বিয়ের জন্য গাল দেন , আমি তখন বলি , এ বিষয়ে তসলিমা নাসরিন একাই দায়ি নন , দায়ি পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থা , অর্থ নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববাজারও , তখন অনেকে আবার আমার সঙ্গে অমতও পোষণ করেন।

তসলিমা নাসরিন প্রথম বিয়ে করেছিলেন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে , তারপর সেই বিখ্যাত পত্রিকা ‘বিচিন্তা’ পত্রিকার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে । তৃতীয়বার বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানকে এবং তারপর...। এভাবে তসলিমা নাসরিন মোট চারটি বিয়ে করেছিলেন বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে। তার এই অধিক বিয়ের জন্য বিভিন্ন সাহিত্যের আড্ডায় অনেকেই তাকে যাচ্ছেতাই গালমন্দ করেন। কিন্তু আমি বলি এ বিষয়ে তার জীবনের বাস্তবতাকেও পর্যবেক্ষন করতে হবে।

তসলিমা নাসরিনের অনেক লেখাই আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে , যদিও কোনো কোনো লেখার শৈল্পিকমান ছিল আমার বিবেচনায় কম। আমাকে শান্তি দিয়েছেন কবি শার্ল বোদলেয়ার। শান্তি পেয়েছি মানব ইতিহাসের কুখ্যাত খুনি জার্মানীর রাষ্ট্রনায়ক এডলফ্ হিটলারের সংগৃহিত যৌন উদ্দীপক চিত্রমালা দেখেও। যেমন এখনো মনে শান্তি পাই ভারতে অবস্থিত যমুনা নদীর তীরের সেই প্রেমের সৌধ আগ্রার তাজমহল দেখেও , যদিও শাহজাহানের জীবনদশর্নের কিছু অংশ আমাকে ভীষণ যাতনাও দেয়। পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজ-উ-দ্দৌলার সেনাপতি মীরজাফরের বেঈমানীর ইতিহাস জেনেও খুব কষ্ট পাই। তবে যখন আবার দেখি সেই মীরজাফর ১৭৬৫ সালে কুষ্ঠরোগে কী যাতনায় মরে , তখন ভাবি , কাজের পরিণতি মানুষকে শেষ পর্যন্ত ভোগ করতেই হয়। আসলে একে আমরা যে বলছি অভিশাপ , কিন্তু কুষ্ঠ তো একটি রোগও।

আমার অনেক প্রতিবেশীই আমাকে যখন বলে আপনিও কি অভিশপ্ত ? আপনি কেন বারবার চাকুরি ছেড়ে বেকার হয়ে যান ? আমি তখন বাংলা ভাষার কবি জীবনানন্দ দাশের উদাহরণ দেই , অথবা বলি নোবেল পাওয়া সাহিত্যিক , দার্শনিক- গণিতবিদ বার্ট্রান্ড রাসেলও তো কেমব্রিজের লেকচারার পদের চাকুরি ছেড়েছিলেন। চাকুরি ছেড়েছিলেন কবি বিনয় মজুমদার , সমাজ বিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খানসহ আরও অনেক অনেক মেধাবী লোক। আমি কী তাদের চেয়েও ধৈর্যশীল ? কেউ যখন আমাকে জিনিয়াস বলে , আমি তখন সত্যিকার অর্থেই বলি , টুনটুনিও একটা পাখি , আর আমিও একটা জিনিয়াস ? কেউ যখন বলেন , হায় হায় আপনার প্রথম সংসার তো ভেঙ্গে গেলো ? আমি বলি , ২ বছরের প্রেম শেষে আমার যে সংসার হয়েছিল , তা ২ বছরের ওয়ারেন্টিতে আবার ভেঙ্গেও গেছে , এটাই শুধু দেখেন ? আর মধু বাবুকে দেখেন না ? কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম , তারাও কি অভিশপ্ত ? ”লচ্চিত্রকার আলমগীর কবির [১৯৩৮-১৯৮৯] কে দেখেন না ? ১৯৬৮ তে তিনি মনজুরা ইব্রাহিমকে বিয়ে করেন , ১৯৭৪-এ বিচ্ছেদ। পরের বছর ১৯৭৫-এ জয়শ্রীকে বিয়ে করেন , আবার ১৯৮২-তে বিচ্ছেদ। কেউ যখন অধিক বিয়ের জন্য তসলিমা নাসরিনকে গাল দেয় , আমি তখন তাদের বাস্তবতাকেও উপলব্ধি করার অনুরোধ করি। বলি অভিনেত্রী-আলোকচিত্রী ডলি ইব্রাহিমও তিনটি বিয়ে করেছিলেন এবং সবগুলো সংসারই ভেঙ্গেছিল।

এসব বিষয়কে আমি অভিশাপ বলি না , বলি বর্তমান বাস্তবতা। তবে অভিশাপও কখনো বলি , তবে তাকে ঐশ্বরিক অভিশাপের কথা বলি না , বলি মুক্ত বাজারের অভিশাপ। মুক্তবাজার স্বল্প পরিমাণে হলেও আগেও ছিল। আর এরই ফলাফল হিসেবে জন্ম নেয় প্রেস্টিজ। আর এই প্রেস্টিজের ইস্যুতেই সম্রাট শাহজাহান তার বোনের প্রেমিককে যমুনা নদীর জলে ডুবিয়ে চুবিয়ে চুবিয়ে মেরেছিলেন। আর নিজের প্রেমকে অমর করতে গড়েছিলেন তাজমহল। এই মুক্তবাজার আগেও ছিল , এখন এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। ক্লাইভ-সম্রাট শাহজাহান...তারা ছিলেন মুক্তবাজারের পক্ষের লোক। পরে তারা বাজারের হাতেই নিহত হয়েছেন। এই যুগে সেই বাজারের টানে সংসার ভেঙ্গেছে চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির , লেখিকা তসলিমা নাসরিনদের। আলমগীর কবির দুর্ঘটনায় মরে বেঁচেছিলেন। আর তসলিমা নাসরিন বাজারের চাপে বেঁচে মরে আছেন। আর আমি তাদের তুলনায় অতি তুচ্ছ এক মানবমাত্র।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.