নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি এখন ক্রমাগতই দালাল হতে চেষ্টা করছি

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২১

একসময় স্পষ্টবাদী ছিলাম। কিন্তু ক্রমাগত দালাল হচ্ছি এখন।
দালাল হওয়াই বরং মঙ্গলজনক। কারণ এটা প্রতিবাদীর দেশ না , যদিও আমরা ইতিহাস দিয়ে প্রমাণ করে দিতে পারি এই দেশ প্রতিবাদীরই দেশ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
কুমিল্লার পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক আমোদ’-এ কাজ করা অবস্থায় ১৯৯৭ সালের একদিন কোতয়ালী থানায় গিয়েছিলাম একটি নিউজের তথ্য আনতে। তথ্য সংগ্রহ শেষে থানার তখনকার ওসি [ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা] আমাকে বললেন , সাংবাদিক সাহেব চা খাবেন ?
আমি সঙ্গে সঙ্গেই বললাম, ‘পুলিশের চা আমি খাই না।’
এই কথা বলার কারণ কি ছিল?
হ্যাঁ ছিল।
আমার দেখা অনেক পুলিশ অফিসারের ঘুষ খাওয়ার কারণেই সকল পুলিশের উপরই তখন আমার একধরনের বিরক্তি ধরে গিয়েছিল। কিন্তু সব পুলিশ অফিসারই কি আর ঘুষখোর? সেই বয়সে সেটা আর বিবেচনা করিনি।
এই রকম বলার কারণে তখন কুমিল্লা কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রকারান্তরে একধরনের অপমান করেই বের করে দেন। যদি আমি ওখানে তখন সাংবাদিক পরিচয় না দিতাম, তাহলে হয়তো পুলিশ আমাকে এর যথাযথ জবাবও দিতো।
আমার উদ্দেশ্যে ঠিক এমনই কিছু কথা বলে এক ধরনের হুমকিও দেন তখনকার সেই ওসি।
আমার ভাগ্য ভালো যে সেই নিউজের তথ্যগুলো আমি আগেই সংগ্রহ করে নিয়েছিলাম।
ফিরে এসে ‘সাপ্তাহিক আমোদ’পত্রিকা কর্তৃপক্ষকেও আর সে কথা বলিনি আমি। কারণ পুলিশের বিরূপ আচরণের জন্য আমি নিজেই দায়ি ছিলাম। আমার ব্যক্তিগত কাজকর্মের বা প্রতিবাদকর্মের দায়ভার তো আর পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিতে পারে না। অবশ্য পরে পুলিশও বিষয়টি নিয়ে আর কোনো মাথাব্যথা করেনি।
অথচ আজ আমি কোনো পুলিশী থানার যে কোনো ওসিকেই এ রকম কথা বলার সাহস কোনোভাবেই রাখি না।
ঢাকায় আমার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্লাসে এক ম্যাডাম ছিলেন, মরিয়ম ম্যাডাম। আমার তখনকার বিবেচনায় একদিন হঠাৎই মনে হলো, তিনি আমাদের ঠিক চমৎকার করে পড়াতে পারছেন না।
যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন ক্লাসে সবার সামনেই দাঁড়িয়ে ম্যাডামকে বলে বসলাম , ম্যাডাম---আপনার ক্লাস থেকে কিছুই পাচ্ছি না আমরা। এ যুগের ছেলেদের পড়াতে হলে আপনাকেও কিছু নতুন নতুন লেখা পড়ে আসতে হবে। সাহিত্যের ক্লাসে পড়ানো কিন্তু গণিতের নামতা শেখানো নয়। সাহিত্যের ক্লাসে নতুন তত্ত্ব ও রস চাই প্রতিনিয়ত। আর সেই রসের জন্য চাই অব্যাহত চর্চা।
মরিয়ম ম্যাডামকে এভাবে কথা বলার পর আমার অনেক ক্ষতি হয়েছিল। অবশ্য সেই ক্ষতি মরিয়ম ম্যাডাম করেননি। তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু আজকে কোনো অফিসের ‘বস’কে আমি সেই মরিয়ম ম্যাডামের মতো তার ভুল ধরিয়ে দিতে পারি না। বলতে পারি না, আপনি কেন ঘুষ খেয়ে খেয়ে এই রক্তস্নাত রাষ্ট্রটাকে ডুবিয়ে দিচ্ছেন?
কারণ ক্রমাগতই যেন দালাল হয়ে যাচ্ছি আমি। এ বড়ই দুঃখজনক খবর।

একবার এক সড়ক দুর্ঘটনায় নতুন একজোড়া ‘বাটা’ কোম্পানির স্যান্ডেল হারিয়েছিলাম আমি। তখন অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে নেয়া হলো সরকারি এক হাসপাতালে। পরে অবশ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলাম। চিকিৎসা চললো।
দু’দিন পরে আমি আমার দুর্ঘটনায় হারানো সেই স্যান্ডেলের খোঁজ শুরু করলাম। ঘটনাটি ১৯৮৯ সালের।
আমার বাবা এভাবে আমাকে স্যান্ডেল খোঁজ করতে নিষেধ করলেন। বললেন, তোমার চিকিৎসায় অনেক স্যান্ডেলের টাকা চলে গেছে। বাদ দাও ওসব। কিন্তু আমি বারণ শুনিনি। স্যান্ডেলের খোঁজে গেলাম পুলিশ-থানায়।
পুলিশ বললো, দুর্ঘটনাস্থলে সেরকম নতুন মাত্র একটি স্যান্ডেল পাওয়া গেছে। আমি সেই একটি স্যান্ডেলই দেখতে চাইলাম এবং সেই স্যান্ডেল দেখে আমি শনাক্ত করলাম যে, সেটা আমারই স্যান্ডেল। আমি বললাম, স্যান্ডেল কেউ একটি নেবে না। নিলে দুটিই নিতো। থানায় যেহেতু একটি স্যান্ডেল আছে, তাহলে অপর স্যান্ডেলটিও থাকবে। সুতরাং আমার স্যান্ডেল জোড়া ফেরৎ দিন।
আমার এমন কথা শুনে ওই থানার ওসি গেলেন ক্ষেপে।
আমরা আপনার স্যান্ডেল লুকাবো কেন? ... ।
আমি আর তর্ক না করে পরে আমার ওই একটি স্যান্ডেলই হাতে নিয়ে চলে থানার বাইরে চলে এলাম।
তখন পুলিশ আমাকে ডেকে বলে, ভাই, ওই একটি স্যান্ডেল নিয়ে আর কী করবেন? সেটা তো আর পরতে পারবেন না।
আমি তখন রেগে বললাম, একটি স্যান্ডেল আমি ভাজি করে খাবো। আমার স্যান্ডেল আমি যা ইচ্ছে তা-ই করবো, তারপরও ... থানায় রেখে যাবো না।
তারপর চলে এলাম ওই এক স্যান্ডেল হাতে নিয়েই। তখনও আমি অনেকটা অসুস্থ ছিলাম বলে বাবাও আমার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু বাবা আমার এই বাড়াবাড়ি একদমই পছন্দ করলেন না।
কিন্তু যখন এক স্যান্ডেল নিয়েই চলে আসছিলাম আমি, তার কিছুক্ষণ পরই থানা থেকে বের হয়ে পুলিশের এক কনস্টেবল আমাকে তার বসের হুকুমে বাকি স্যান্ডেলটিও ফেরৎ দিয়ে গেলেন। বললেন, আপনার অন্য স্যান্ডেলটিও পাওয়া গেছে অন্য অরেক কোনে।
পুলিশ আমাকে বাকি স্যান্ডেলটিও ফেরত দিলো তখন, এ কারণে যে, ওই এক স্যান্ডেল রেখে পুলিশেরও কোন লাভ হচ্ছিল না।
আমার এভাবে থানা থেকে স্যান্ডেল বের করার কৌশল দেখে বাবাও সেদিন রীতিমত অবাক হয়েছিলেন।
তবে আমার এমন কাজের ফলাফল সব সময় কিন্তু ভালো হয়নি। বরং অধিকাংশ সময়েই এমন কাজ করতে গিয়ে আমার সমূহ ক্ষতি হয়েছে। সেইসব ক্ষতিতে ক্ষতিতে আমার জীবন এখন এমনই শূন্য হয়েছে যে, যার কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন থেকে পারলে ক্রমাগত দালালই হবো আমি। তাই দালাল হতে ক্রমাগত চেষ্টাও করছি আমি। আর রাগকে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করছি প্রায় শুন্যের মাত্রায়।
কারণ এতদিন ধরে দালালি করতে না পারার জন্য আমার জীবনটা এখন এক ব্যর্থ জীবনে রূপান্তরিত হয়েছে। এমন ব্যর্থ জীবন আর সত্যিই বহন করা যায় না।



মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৫

তিক্তভাষী বলেছেন: যস্মিন দেশে যদাচার, কাছা খুলে নদী পার।

লেখাটি ভালো লাগলো।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬

জসীম অসীম বলেছেন: দাদা , অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতামত আমাকে নতুনভাবে দেখতে শেখাবে, আমার বিশ্বাস। ভালো থাকবেন। খুব ভালো থাকবেন। ভালো থাকার সুযোগ যদিও নেই , তবু ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৮

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ক্রমাগত ভাল লাগছে আপনার লেখা।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৪

জসীম অসীম বলেছেন: দাদা , আপনার পরামর্শে আমি একটু একটু ব্লগিং শিখতে চেষ্টা করছি। আজকাল লেখার সাথে নামও দিচ্ছি না। বরং আগের লেখা এডিট করে নাম বাদ দিচ্ছি। ছবি বাদ দেয়াটা শিখতে পারিনি। আজকাল নিজের ছবি কম ব্যবহার করছি। এ পোস্টে ছবি দিলাম , কারণ , যেহেতু দালাল হবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি , তো আপনাদের দালালের চেহারাটি চেনা তো দরকার। আপনার মতামত আমার প্রেরণা হয়ে থাকলো। অনেক ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১

রাজিব বলেছেন: আজকে যে বেপরোয়া বিচ্ছু
শান্ত সুবোধ হবে কাল সে
চোখের সঙ্গী হবে চশমা
চল্লিশ পেরোলেই চালশে
আজকে যে আড্ডায় মশগুল
নির্বান্ধব হবে কাল সে
হরিহর আত্মা শুধু চশমা
চল্লিশ পেরোলেই চালশে

আজকে যে শিস দিয়ে গান গায়
কোন গান শুনবে হে কাল সে
চোখ থেকে খুলে নিয়ে চশমা
ভুলে গিয়ে চোখে আছে চালশে

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১২

জসীম অসীম বলেছেন: রাজিব ভাই , আপনার মতামতে এতই মুগ্ধ হয়েছি যে , উত্তরের ভাষা হারিয়েছি। তাই উত্তর আর লিখলাম না। এমন মতামতের জবাব আমার কাছে নেই ভাই। ভালো থাকবেন।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

আরজু মুন জারিন বলেছেন: একসময় স্পষ্টবাদী ছিলাম। কিন্তু ক্রমাগত দালাল হচ্ছি এখন। দালাল হওয়াই বরং মঙ্গলজনক। কারণ এটা প্রতিবাদীর দেশ না , যদিও আমরা ইতিহাস দিয়ে প্রমাণ করে দিতে পারি-এই দেশ প্রতিবাদীর দেশ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। X( X(( :-/

আমি ঠিক যেভাবে ভাবি আপনি সেভাবে লিখেন অসীম ভাই। আপনার প্রতি টি লেখায় আমি অনেক টাচড আপনার ভিতরের সুভ্রতার পরিচয় পাই প্রতি টি লেখায়। যার কারণে টাচড ।

চমত্কার একটি লেখা লিখলেন জসিম অসীম ভাই। আমি আসলে হালকা আবেগে বললাম। আসলে অসাধারণ লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ রইল। শুভেচ্ছা জানবেন।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১৪

জসীম অসীম বলেছেন: মুন , আপনার লেখনির অসম্ভব রকম গুণ। কোনো লেখনি মুগ্ধ করে , কোনো লেখনি দগ্ধ করে। আপনি প্রথম কাতারের জন। ভাষা দিয়েই আশা দিতে পারেন। বিষন্নতা যায় কেটে যায় , এমন মতামতে । মনে হয় ওই স্বর্গে আছি , যদিও আছি পথে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা তাই রেখে গেলাম মুন । লেখাই আপনার সব অলঙ্কার কী চমৎকার গুণ। ভালো থাকুন , অনেক ভালো ওই পাখিদেও মতো । থাকবে না আর মনে দু:খ কোনো রকম ক্ষত।

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সত্য বা সঠিক কথা বলতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলে মিথ্যা কথা বলতে হবে বা দালাল হয়ে যেতে হবে-এই দর্শনের সাথে আমি একমত নই। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও সত্যকথনের জন্য জীবনে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু দালাল হবার চিন্তাটাও কখনো করিনি। কারণ, আমি জানি সত্যের পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এটা মেনে নিয়েই সত্য পথে চলতে হবে।

কিছু কিছু ক্ষতি ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের জন্য হয়ে থাকে। যেমন, আপনার ক্ষেত্রে প্রথম ঘটনায় পুলিশের পয়সায় চা খেতে না চাওয়ার ব্যাপারটা।
ধন্যবাদ, জসীম অসীম।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৫

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই আবু হেনা মো: আশরাফুল ইসলাম , আমিও যে দালাল হতে চাই , কিংবা হয়েছি , হচ্ছি , তা কিন্তু নয়। আসলে দু:খ করে বলেছি এমন কথা । দালাল হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে বরাবর ব্যর্থ আমি। মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩২

িনয়ামুল কারীম মানসুর বলেছেন: পৃথিবীটা এমন কেন? কেন ভালোমানুষের মূল্য নাই?

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই , আপনার এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.