নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরপেক্ষ রিপোর্ট পাবেন কোথায়? স্বর্গে ?

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

নিরপেক্ষ রিপোর্ট আপনি পাবেন কোথায়? নিরপেক্ষ রিপোর্ট পাবেন কোথায়? স্বর্গে ? স^ার্থের কাছে সাংবাদিকতা বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু সাংবাদিকতাই বা কেন-জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রই যদি নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে এই অঙ্গনটি দুধে ধোয়া থাকবে কিভাবে? তাহলে কি রিপোর্ট সাংবাদিকরা লিখছেন না? করছেন না? লিখছেন। করছেন। কিন্তু নিরপেক্ষতার যে ভন্ডামীটুকু করছেন, সেই নিরপেক্ষতাটির বুলি হলো ভাওতাবাজি।

আরব্য উপন্যাসের ‘আলাদিনের চেরাগে'র কথা আমরা জানি। এই চেরাগ এখন এই আধুনিক যুগেও দেশে দেশে ছড়িয়েছে। তাই অনেকেরই এখন এই বাংলাদেশে ছিন্নমূল থেকে লাখপতি-কোটিপতি-বিলিয়নপতি হতে বেশি সময় লাগে না। কারণ ঐ ‘আলাদিনের চেরাগ' আছে না! দুর্ভাগ্য হলো, এই যুগের ‘আলাদিনের চেরাগে'র অপর নাম দুর্নীতি। রাজা থেকে প্রজা কোথায় নেই এই জিনিস? এ থেকে সরলেন, আর যেন মরলেনই আর কী। আর যদি ধরলেন, ঠিক তাহলেই যে স^র্ণের মুকুট নিজ মাথায় পরলেন। অথচ এই দুর্নীতির সামগ্রিক রিপোর্ট নেই সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। কারণ রাষ্ট্রই এখানে দুনীর্তির সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষক। এ প্রসঙ্গে সেই গল্পের রাজার কথা মনে পড়ে যায়। প্রতাপশালী সেই রাজা প্রতিদিন দুধ খেতেন। একদিন দেখলেন দুধে পানি মেশানো। মন্ত্রীকে ডাকলেন। বললেন, আমার দুধে পানি কেন? মন্ত্রী বললেন , হুজুর আমি তো সারাদিনই রাজকার্যে থাকি, দুধে পানি পরীক্ষার জন্য একজন ইনস্পেক্টর নিযুক্ত করা হোক। নিযুক্ত করাও হলো। ইনস্পেক্টর গোয়ালকে ধরলো, দুধে পানি দাও কেন? তোমাকে শুলে চড়াবো। গোয়ালা বললো, হুজুর আমি কী করবো, রাজার বাড়ির দুধ থেকে মন্ত্রীকে দু’সের দিতে হয়। এই অবস্থায় দুধে পানি না মেশালে আমার লাভ কী হবে?

ইনপেক্টর বললেন, গোয়ালা তুমি আর দুধে পানি মেশাবেই না। গোয়ালা তখন ইনপেক্টরকে বললো, আমি দুধে পানি না মেশালে তো আর আপনার পদে রাজা কাউকে চাকুরিতেই রাখবে না। ইনপেক্টর দেখলেন, গোয়ালা দুধে পানি না মেশালে তিনি বেকার হয়ে যাবেন। তখন তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে ঘোষের পো, তাহলে আমাকেও মন্ত্রীর মতো দু’সের দুধ দিয়ো। ওদিকে এই সমস্যার সমাধান তো হলোই না, রাজা দেখলেন গোয়ালা দুধে এবার আরও বেশি পানি মেশাচ্ছে। ইনপেক্টরকে ডাকলেন। ইনপেক্টর রাজাকে বললেন, হুজুর আমি তো রাজবাড়ির দেউরিতে বসে পাহারা দেই। গোয়ালা যদি রাস্তায় পানি মেশায়, তাহলে আমি কী করে ঠেকাবো হুজুর। বরং একজন রোড ইনপেক্টর নিয়োগ করা হোক। রোড ইনপেক্টর নিয়োগ করা হলো। কিন্তু ঐ রোড ইনপেক্টরও দু’সের দুধের কাছে তার নীতি বিসর্জন দিলো। ফলে সমস্যার সমাধান হলো না। দুুধে পানির পরিমাণ আরও বাড়তে লাগলো। রাজা রোড ইনপেক্টরকে ডাকলেন। রোড ইনপেক্টর বললেন, হুজুর আমি তো রাস্তায় পাহারা দেই, কিন্তু গোয়ালা যদি গোয়াল ঘরে বসে পানি দেয়, তাহলে আমি কিভাবে দেখবো? অবশেষে গোয়ালঘর ইনপেক্টরও নিযুক্ত হয়, কিন্তু সমস্যার সমাধান আর হয় না। ‘চোর আর চুরি’ দিব্যি বেঁচে থাকে। যদি এই গল্পে একজন সাংবাদিকের চরিত্রও থাকতো, তাহলে মনে হয় সেও ঐ গোয়ালার দুই সের দুধের কাছে বিক্রি হয়ে যেত। দু’সের দুধের কাছে বিক্রি হয়ে যেত তার সৎ সাংবাদিকতা। বিষয় হলো, গল্পে দেখানো হয়েছে গোয়ালা ঠকায় রাজাকে। বাস্তবের গল্পটি হলো, সকল ক্ষমতাধর মানুষ ঠকায় নিরীহ সাধারণ মানুষকে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে নিরপেক্ষ রিপোর্ট আপনি পাবেন কোথায়? স্বর্গে ? স^ার্থের কাছে সাংবাদিকতা বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু সাংবাদিকতাই বা কেন , জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রই যদি নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে এই অঙ্গনটি দুধে ধোয়া থাকবে কিভাবে? তাহলে কি রিপোর্ট সাংবাদিকরা লিখছেন না? করছেন না? করছেন। কিন্তু নিরপেক্ষতার যে ভন্ডামীটুকু করছেন, সেই নিরপেক্ষতাটির বুলি হলো স¤পূর্ণ ভাওতাবাজি।

একজন রিপোর্টার খবরের উৎসে যান। উৎসে না গিয়ে খবরকে রিপোর্ট বানাতে পারেন না তিনি। কিন্তু এই উৎসে যাওয়ার মধ্যেও পক্ষপাতিত্বের দোষ লক্ষ্যনীয়। একজন অভিজ্ঞ রিপোর্টার বিভিন্ন উপায়ে তার তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন সমৃদ্ধ করেন, কিন্তু তথ্য সংগ্রহ অভিযানেও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে। তাই ডানপন্থার এবং বামপন্থার সংবাদ মাধ্যমে কিংবা শ্রমজীবির এবং পুঁজিপতির সংবাদ মাধ্যমে এত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। গোয়ালার অবস্থান দুধ বিক্রয় করে লাভের দিকে এবং নিযুক্ত মন্ত্রী কিংবা ইনপেক্টরের নজর তার চাকরি রক্ষার দিকে, নিজেকে ভালো প্রমাণের দিকে এবং সর্বশেষ বিনা টাকায় গোয়ালার কাছ থেকে ঘুষ হিসাবে দুধ পাওয়ার দিকে।

‘মহাভারত’ মহাকাব্য বিষয়ে এ রকম একটি গল্প রয়েছে। কার দৃষ্টি কোনদিকে ? পরাশর ঋষির পুত্র ব্যাসদেব ‘শ্রীকৃষ্ণ-কুরু ও পান্ডব’দের কাহিনী নিয়ে মহাভারত নামে ষাট হাজার শ্লোকের একখানি বিরাট গ্রন্থ রচনার পরিকল্পনা করলেন। এত বড় গ্রন্থ নিজে রচনা ও লেখা সম্ভব নয় বুঝে তিনি গনেশ ঠাকুরকে লেখার ভার নিতে ধরে বসলেন। গনেশ লিখতে রাজি হলেন, তবে একটি শর্তে। শ্লোক রচনা করতে আপনার যদি বিলম্ব হয়, আর সেজন্য যদি আমার কলম থেমে যায়, তবে কিন্তু আর লিখতে পারবো না। মহাভারত রচয়িতা ব্যাসদেব এতে রাজি হয়ে বললেন, আমারও একটি শর্ত আছে যে, আমি যা রচনা করবো, তার অর্থ না বুঝে আপনিও লিখতে পারবেন না। গনেশ রাজি হলেন। কিন্তু ব্যাসদেব এমন সব কঠিন শ্লোক রচনা করে বলতে লাগলেন, যার অর্থ বুঝতে গনেশ ঠাকুরের অনেক সময় লাগতো এবং এই অবসরে ব্যাসদেব আরও অনেক শ্লোক মনে মনে রচনা করে ফেলতেন। এই যে শর্ত, এই যে যুক্তি, তা এখন সবাই দেন। কারোরটা সৎ যুক্তি, কারোরটা আবার অসৎ-পার্থক্য শুধু এই।

এত শর্ত, এত চাহিদা, এত যুক্তি ও এত প্রভাবের চাপে কিভাবে নিরপেক্ষ প্রতিবেদন, ফিচার কিংবা একটি সংবাদ গল্প তৈরি করা যায়? যেখানে কী না প্রত্যেকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য বা যুক্তি দেয়। ধরা যাক, একটি বেসরকারী হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে হাসপাতালের রিপোর্ট করবেন। গেলেন কথা বলতে। দেখলেন, কেউ তার নিজের দোষ স^ীকার করবেন না। নির্বাহী পরিষদের কেউ না। পরিচালক বা চেয়ারম্যান কিংবা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রায় সবাই কেমন যেন দোষ কাটাতে চাইবেন। কর্তব্যরত ডাক্তার হয়তো আঙ্গুল তুলে দেখাবেন সুপারভাইজারকে এবং তিনি হয়তো দেখাবেন স্টাফ নার্সদের। স্টাফ নার্সগণ হয়তো বা ব্রাদার বা ওয়ার্ডবয় কিংবা ক্লিনার আয়াকে অথবা অভ্যর্থনা ইনচার্জ বা প্যাথলজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি কিংবা নিরাপত্তা প্রহরী, গাড়ি চালক, ও টি ইনচার্জকে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে নিরপেক্ষ রিপোর্ট আপনি পাবেন কোথায়? স^র্গে?

এত রকম বক্তব্যের চাপে প্রতিবেদক কিভাবে সঠিক প্রতিবেদনটি বের করে আনবেন? কিভাবে সঠিক প্রতিবেদনটি তৈরি করা যাবে , তা একজন প্রতিবেদককে জানতে হবে। এটা তার কার্যপ্রণালীরই অংশ। কিন্তু এই ব্যাকরণ জানার পরও একজন প্রতিবেদক যে ভালো প্রতিবেদন তৈরি করতে পারবেন, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ সংবাদমাধ্যমগুলোর গোড়ায় কারা আছেন, কী তাদের স^ার্থ-সেটা খুঁজে দেখতে হবে। ব্যবসায়ী মালিক পক্ষ হলে তারা ব্যবসার কাছে সবকিছু বিকিয়ে দেবে। যদি মালিকপক্ষ কালোবাজারী হয়, তাহলে তো আর কথায় নেই। তাদের দ্বারা দেশ রসাতলে যাবেই। আর যদি সংবাদ মাধ্যমটি হয় কোনো জঙ্গী গোষ্ঠীর, তাহলে যেতে হবে শত শত বছরের পেছনের ইতিহাসের দিকে। সুতরাং সাংবাদিকতাটা যে কী, তা একেক গোষ্ঠী একেকভাবে উপস্থাপন করছে কিংবা করবে। এই যদি হয় অবস্থা , তাহলে আপনি নিরপেক্ষ রিপোর্ট পাবেন কোথায় , স্বর্গে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.