নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রামমালা পাঠাগার

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

কুমিল্লার শিক্ষা-সংস্কৃতির অতীত ইতিহাস গৌরবের। বর্তমান সময়ে কুমিল্লা অনেক বঞ্চনার শিকার হলেও অতীতে কুমিল্লার নিজস^ সভ্যতার আলো ছড়িয়ে পড়েছিলো উপমহাদেশে অনেক জায়গায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সারাদেশের মতোই কুমিল্লার অনেক ঐতিহ্যবাহী পরিবারও দেশ ছেড়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থাও স্তিমিত হয়ে পড়ে। কুমিল্লার শালবন বিহারের ইতিহাস এ অঞ্চলের শিক্ষা-সভ্যতার এক উজ্জ্বল ইতিহাস। কুমিল্লা বিখ্যাত হয়েছিল নানা পথিকৃৎ ভূমিকার জন্যে। কেবল বর্তমান সময়েই রয়েছে কিছু বঞ্চনা ও মেধার অবক্ষয় স্বাক্ষর। একদা উপমহাদেশে যে পাঠাগার আন্দোলন গড়ে উঠে , তার থেকেও কুমিল্লা পিছিয়ে ছিলো না। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে ১৯১২ সালে কুমিল্লায় যে ‘রামমালা পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠিত হয় , তাতে এখনও যে দুর্লভ গ্রন্থাদি রয়েছে , তার তুলনা সত্যিই বিরল । সেই পাঠাগারে অসংখ্য দুর্লভ বই এখনো রয়েছে , যা এ অঞ্চলের গত শতকের গুণীজ্ঞানী ব্যক্তিদের মানসগঠনে বিশেষ সহায়তা করেছে।

দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের পিতৃদেব ঈশ্বর দাস তর্কসিদ্ধান্ত পিতৃহীন হলে বাল্যকালে তার পিতার মামারবাড়ি হাবলা উচ্চ গ্রামে গিয়ে বাস করেন। তারপর তিনি তদানীন্তন ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত বিটঘর নিবাসী পাপড়াশী বংশীয় প্রাণকৃষ্ণ শিরোমনির একমাত্র কন্যা রামমালা দেবীকে বিয়ে করেন। মহেশচন্দ্রের পিতা ঈশ্বর দাস তর্ক সিদ্ধান্তের শৈশবাস্থায় পরলোক গমন করেন।



মহেশচন্দ্রের মাতৃদেবী রামমালা দেবী। পিতা ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয় প্রতিভাশালী পন্ডিত ছিলেন। তিনি বিটঘর গ্রামস্থ নিজ বাড়ীতে টোল খোলেন। টোলে আন্দাজ ৪৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। তন্মধ্যে আনুমানিক ১৫ জনকে নিজ গৃহে রাখতেন। তাঁর আর্থিক অবস্থা মোটেই সচ্ছল ছিলনা, তথাপি তিনি বিদ্যার্থীকে অন্ন ও বিদ্যাদানের ব্রত হতে কখনও বিরত হননি।

তিনি সৎ ও কড়ালোক ছিলেন। তাঁর আন্তরিক আকাঙ্খা ছিল তিনি যেন অধ্যাপনায় সতত নিমগ্ন থাকেন। বাস্তবিকই তিনদিনের জ্বরে সকল পড়–য়া বাড়ীতে রেখে তিনি ৪২ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। তখন মহেশচন্দ্রের বয়স মাত্র ৬ বৎসর। এ অকাল মৃত্যু মহেশচন্দ্রের পরিবারকে অথৈ দুঃখ কষ্টে ফেলে দেয়।

মাতা রামমালা দেবী লিখতে বা পড়তে জানতেন না, কিন্তু বহু সংস্কৃত শ্লোক ও বচন তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল।

রামমালা দেবী অত্যন্ত কড়া প্রকৃতির ছিলেন। তদানীন্তন ত্রিপুরা জিলার ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মহকুমার বিটঘর গ্রামে মহেশচন্দ্রের জন্ম হয়।

৫ বৎসর বয়সে মহেশচন্দ্রের হাতে খড়ি হয়।

মহেশচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত রামমালা গ্রন্থাগারের তিনটি বিভাগ- যথা: (১) গবেষণা বিভাগ, (২) হস্তলিখিত প্রাচীন পুঁথি বিভাগ, (৩) সাধারণ বিভাগ । পুঁথি বিভাগে আট হাজার প্রাচীন পুঁথি রয়েছে। বেদবেদান্ত ব্যতীত বিশ্বের অন্যান্য ধর্মমতের মূলগ্রন্থ ও অন্যান্য দুর্লভ গ্রন্থও এখানে সংগৃহীত রয়েছে। জৈন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ে ত্রিপিটক শাস্ত্র ও দেশ বিদেশের মনীষীদের রচিত অতি দুর্লভ গ্রন্থ এখানে রক্ষিত আছে। মহাচীনের বিশ্ববরেণ্য মনীষী ঈড়হভঁপরড়ঁং এর ঈড়ভঁপরধপরংস ও তার পূর্ববতী তাও ধর্ম ও ঞধড়রংস দুর্লভ গ্রন্থও রামমালা গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে।

রামমালা গ্রন্থাগারের গবেষণার বিষয় বিশ্বের তুলনামূলক ধর্ম- (ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব জবষরমরড়হং) হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রীষ্টীয়, ইসলাম, ইহুদি, পার্শী, কনফুসীয়, তাও, মিশরীয়, ব্যাবিলোনীয়, আসিরীয় প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ রক্ষিত আছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শন, ও এ দর্শনের ইতিহাস এসব অনন্য সাধারণ গ্রন্থারাজির ধারক ও বাহক বর্তমান কুমিল্লা শহরের মহেশাঙ্গনের এ রামমালা গ্রন্থাগার। এসব গ্রন্থের ভিতর প্রবেশ করার অধিকার রয়েছে গবেষকদেরই ।



স^র্গীয় দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এ পাঠাগার। বর্তমানে কুমিল্লা শহরের মহেশাঙ্গনে অবস্থিত এ রামমালা পাঠাগারের ঐতিহ্যের কথা সারা ভারতবর্ষেই প্রচারিত। কিন্তু এ পাঠাগার বর্তমানে বিভিন্ন অবহেলার শিকার। আজকের পৃথিবী পাঠাগার রক্ষণাবেক্ষণ প্রযুক্তিতে ঠিক যে জায়গায় চলে গিয়েছে , সে হিসেবে রামমালা পাঠাগার অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রামমালা পাঠাগারে কিছু দুর্লভ পুঁথির নিদর্শন রয়েছে। কাগজ তৈরীর আগেও মানুষ বিভিন্ন গাছের বাকল এবং পশুর চামড়া ও তালপাতাকে লেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতো। সেসব নিদর্শনেরও কিছু কিছু নমুনা রয়েছে এ পাঠাগারে। এ থেকেই এ পাঠাগারের গুরুত্ব অনুভব করা সম্ভব। কুমিল্লা রামমালা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য , তিনি ছিলেন একজন মস্ত বড় দানবীর। ব্যবসায়ে প্রভুত উন্নতি করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার একমাত্র পুত্রের মৃত্যুতে তিনি তার সকল সম্পত্তি জনহিতকর কাজে দান করেছিলেন। কুমিল্লার শিক্ষা-সংস্কৃতির ইতিহাসে এই মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের নাম আজও অবিস্মরণীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় , এ প্রজন্মের অনেকেই কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী এ রামমালা পাঠাগারের নাম এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের নাম এখন আর তেমন জানে না। বর্তমানে কুমিল্লা শহরের মহেশাঙ্গনে এ রামমালা পাঠাগারটি অবস্থিত। শুরুতে পাঠাগারটি শহরের রামমালায় স্থাপিত হলেও বর্তমানে এর করুণ অবস্থান শহরের মহেশাঙ্গনে। কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালা সংলগ্ন এ পাঠাগারের পশ্চিম-দক্ষিণ দিকেই কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক প্রায় প্রতিদিনই এ পাঠাগারের পাশ দিয়ে শিক্ষা বোর্ডে যাওয়া –আসা করেন। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের এত কাছেই এতো বিখ্যাত এক পাঠাগারের বর্তমান অবস্থান। তবে এ পাঠাগারে পাঠপ্রিয় লোকদের জন্য পাঠের কোনো সুব্যবস্থা নেই। এমনকি যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এ পাঠাগারের সুবিশাল জ্ঞানভান্ডার বর্তমানে বিনষ্টের মুখোমুখি। আর তা রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন এবং উদ্যোগ ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৯

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: পোষ্টে ভালোলাগা !

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২১

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই স্বপ্নবাজ অভি , মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি সময়ের অভাবে সুশৃঙ্খল করতে পারিনি। পারলে আরও ভালো লাগতো। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.