নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড. আখতার হামিদ খান- বাংলার ভিক্ষুকে পরিণত হওয়া কৃষককে জীবন জয় করার মন্ত্র শিখিয়েছিলেন

১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬

সমাজবিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খান

কুমিল্লায় এসেছিলেন আশীর্বাদ হয়ে।

কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ণ ও ক্ষুদ্রঋণ চিন্তার বিকাশে তার অবদান অতুলনীয়। তার আবি®কৃত ‘কুমিল্লা পদ্ধতি’ কিংবা ‘কুমিল্লা এ্যাপ্রোচ’ আজ সারা দুনিয়ায় প্রচারিত। তাঁর কর্মের বদৌলতে কুমিল্লা আজ সারাবিশ্বেই পল্লী উন্নয়ণ পদ্ধতির জন্য পরিচিত। তাঁর আবিষ্কৃত ‘কুমিল্লা পদ্ধতি’ কুমিল্লাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। মানুষের কৌতুহলের কারণ হয় ‘কুমিল্লা পদ্ধতি’। এ ‘কুমিল্লা পদ্ধতি’র জনক হলেন ড. আখতার হামিদ খান। ড. আখতার হামিদ খানের কর্মের প্রতিকৃতি কুমিল্লার পথেপ্রান্তরে, মাঠেঘাটে ছড়িয়ে আছে আজও। এ অঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন মানুষদের স^নির্ভর করার আন্দোলনে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

ড.আখতার হামিদ খান ১৯১৪ সালের ১৫ জুলাই ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরিলীর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। ১৯৩৪ সালে তদানীন্তন বৃটিশ ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানজনক চাকুরী আই.সি.এস পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের বিষয়ে বৃটিশ সরকারের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নীতিগত পার্থক্যের কারণে আই.সি.এস-এর চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৫০-৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৯ সালে আখতার হামিদ খান কুমিল্লা থানাকে ল্যাবরেটরী হিসেবে ধরে নিয়ে পল্লী উন্নয়ন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার অধিকার অর্জন করেন এবং পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর পরিচালক হন।

আখতার হামিদ খান কুমিল্লায় এসেছিলেন আশীর্বাদ হয়ে। বিশ্বনন্দিত এ সমাজবিজ্ঞানী পশ্চিম ইউরোপে প্রবর্তিত সমবায় পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

প্রতিভাবান এ পুরুষ শিক্ষাদীক্ষার পুরাতন পদ্ধতি বদল করে, কৃষির সামগ্রিক সনাতন চিত্র বদল করে এখানে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন এক নতুন জীবন। তাঁর এ উন্নয়ণ-অভিযানের কোনো বিরোধিতার সঙ্গেই শেষ পর্যন্ত আপোষ করেননি তিনি। বরং যতোবার প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন, ততোবারই সাহসী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে গেছেন নতুন জীবনের সন্ধানে।

কৃষি জমি থেকে জল নিষ্কাশন কিংবা রক্তচোষা মহাজনের করাল গ্রাস থেকে শোষিত-বঞ্চিত কৃষকদের উদ্ধার করার কাজে তাঁর পদ্ধতির ভূমিকা ছিলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সনাতন জীবনে তিনি এনে দিয়েছেলেন প্রযুক্তির নব নব মন্ত্র। নিঃস^ নারী জীবনে এনেছিলেন জীবনের ্রগতিশীল ছন্দ। যে কৃষক ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ বলে খরা মৌসুমে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাহাকার করতো, আখতার হামিদ খান প্রবর্তিত সেচ পদ্ধতির প্রয়োগে তাদের জীবনে সংঘটিত হলো সবুজ বিপ্লব। এর আগে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে গিয়ে অর্জন করেছিলেন যাবতীয় অভিজ্ঞতা। জেনেছিলেন দরিদ্র জীবনের দুর্দশার মূল কারণগুলো কী। শিক্ষা এবং উন্নয়নকে তিনি বিচ্ছিন্নভাবে দেখেননি। ফলে দরিদ্র জীবনে প্রগতির ছোঁয়া আনতে নিরক্ষরতার মূলে কুঠারাঘাত করেন। শুরু করেন ইমামের মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষাসহ শিক্ষার যাবতীয় কর্মসূচী।

একদা রবীন্দ্রনাথ যে ‘সোনার বাংলা’র স^প্ন দেখেছিলেন, সেই ‘সোনার বাংলা’কে বাস্তবে রূপদানের জন্য রবীন্দ্রনাথের অনেকদিন পরে মাঠে নামলেন ড.আখতার হামিদ খান। খাঁ খাঁ করা কৃষি জমি দেখে আখতার হামিদ খানের বুক ফেটে যেতো। তিনি ভাবতে লাগলেন কিভাবে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । যে বাংলার দিকে চোখ পড়েছিলো ভয়ঙ্কর ক্লাইভের, সেই বাংলায় আখতার হামিদ খানের চোখ পড়েছিলো মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে। বাংলার গ্রামের বিচ্ছিন্নতা দূর করতে তিনি রাস্তা নির্মাণে অর্থ ব্যয়ের ওপর জোর দেন। গ্রাম ও শহরের দূরত্ব বিমোচনে অক্লান্ত শ্রম দেন। তাঁর শ্রমের বিনিময়ে কৃষকরা হয়ে ওঠে বিভিন্ন ব্যবসার মালিক। সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত না হলেও কমতে থাকে নগরমুখি দুঃশাসন। গড়ে ওঠে শত শত সমবায় সংগঠন। বাড়তে থাকে বিনিয়োগ। সমবায়নীতি ক্রমাগত প্রচারিত হতে থাকে সাধারণ মানুষের মাঝে।

আখতার হামিদ খান মুঘল সম্রাট শাহজাহানের মতো তাজমহলের সুনিপুণ কারিগর নন। কিন্তু তিনি যে বাংলার ভিক্ষুকে পরিণত হওয়া কৃষককে জীবন জয় করার মন্ত্র শিখিয়ে গেছেন, তাঁর অবদান অপরিসীম। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে জেহাদ করা এ ব্যক্তি নতুন নিয়মে বেঁচে থাকার যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সে পথই তাঁকে ঘরে ঘরে প্রদীপের আলো করে জ্বালিয়ে রাখবে অনেক অনেক দিন। এই মহান সমাজবিজ্ঞানি ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর আমেরিকার ইন্ডিয়ান ষ্টেট এর একটি হাসপাতালে ৮৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.