নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষার বিপ্লব ব্যতিরেকে সাংবাদিকতার বিপ্লব অসম্ভব

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯

‘সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের তৃতীয় নয়ন। এর মাধ্যমে আমাদের সামনে ভেসে উঠে সমগ্র পৃথিবী। সংবাদপত্রের প্রধান কাজ সমাজ জীবনের নানা ত্র“টিবিচ্যুতি পর্যালোচনা করে পথ নির্দেশ করা। এ জন্য সংবাদপত্রকে ‘ফোর্থ এষ্টেট’ বা ‘চতুর্থ রাষ্ট্র’ও বলা হয়। আসলে সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ।’ সুতরাং যে দেশের সংবাদপত্র স^াধীন নয়, সে দেশের মানুষ দেখতে জানেনা, সে দেশের জনগণ বারবার বিভ্রান্ত হয়। যে দেশের সংবাদপত্র স^াধীন নয়, সে দেশে গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদ স্থান নেই এবং সে দেশের গণতন্ত্রও প্রকৃত গণতন্ত্র নয়, বরং তা হলো এক ছদ¥বেশী গণতন্ত্র।

অনেক সময়, শ্রম, আন্দোলন ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স^াধীন হয়েছে। বাংলাদেশের এ স^াধীনতার এত বছরেও এখনও কি সংবাদপত্রকে আমরা স^াধীন বলতে পারছি ? না, পারছি না।

দেশ স^াধীন হওয়ার পর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যখন একটি গৌরবময় বিপ্লব ঘটতে পারতো, বরং তখনই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ওপর নেমে আসে কলঙ্কজনক বিবিধ ছোবল। সংবাদপত্রকে সরকারের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া, স¤পাদককে অপসারণ এবং গ্রেফতার করা কিংবা স¤পাদকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারির মতো ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে বাংলাদেশের স^াধীনতা লাভের পরপরই। এ ব্যাপারে ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ এর তদানীন্তন স¤পাদক আবদুস সালাম ও সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘দৈনিক বাংলা’র তদানীন্তন সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তীকালে ৪টি দৈনিকসহ কয়েকটি সংবাদপত্র সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে ২২২টি সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরবর্তীকালে সংবাদপত্রের বুকের তেমন কলঙ্কজনক ছোবল কমলেও তা একবারেই শেষ হয়ে যায়নি। সামরিক শাসনামলের বাংলাদেশে সংবাদপত্রগুলোর অবস্থা কেমন ছিল, তা কম বেশি সবারই জানা।

বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার স^াধীনতার এত বছরেও আশঙ্কাজনক স্তরেই রয়ে গেছে। সুতরাং কেবল পাঠকের ওপর নির্ভর করে এদেশে সংবাদপত্রের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। ফলে প্রয়োজন পড়ে বিজ্ঞাপনের। দেশের আজও সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনদাতা সরকার নিজেই। এই বিজ্ঞাপন আবার এখনও পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পায়নি। বিজ্ঞাপন প্রদানের ব্যাপারে এখানে সরকারের পছন্দটাই বড় মাপকাঠি রয়ে গেছে। অন্যদিকে দেশের শিল্পায়ন যথেষ্ট পরিমাণে বিকাশের অভাবে আজও সংবাদপত্র বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এমতাবস্থায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অব্যাহত চর্চা ও বিকাশ প্রক্রিয়াকে লালন করা এমন প্রতিকূল পরিবেশে অবশ্যই সময়সাধ্য ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার।

অনেকেই বলেন, যুগটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ এবং সে কারণে এ যুগে ইলেকট্রনিক সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই। সংবাদপত্রের সেবক কিংবা কোনো কর্মী এ কথা তেমন বিশ্বাস করেন না। কারণ গুণগত মান না থাকলে একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়াকেই অধিক ব্যর্থতার দায়ভার বেশি পরিমাণে বহন করতে হয়। তবে এ কথা অস^ীকার করার উপায় নেই যে, সরকারী ইলেকট্রনিক মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার এবং দেশের প্রধান জাতীয় বার্তা সংস্থা ‘বাসস’ সরকার নিয়ন্ত্রিত। রেডিও-টিভি-র বেসরকারী চ্যানেল অনেকগুলো প্রতিষ্ঠিত হলেও সাংবাদিকতার গুণগত মাণ কী পরিমাণে বেড়েছে , সে নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেক বিশেষজ্ঞেরই। অন্যদিকে বাংলাদেশে যে পরিমাণে শিল্প গড়ে ওঠেছে, সে সব শিল্প মালিকগণ -শিল্পপতিগণ তাদের পণ্যসহ যাবতীয় বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে টিভি ও রেডিওকেই অধিক পছন্দ করে থাকেন। এ প্রবণতা অবশ্যই সংবাদপত্রের বিকাশের পরিপন্থী। এ অবস্থায় সংবাদপত্রকেন্দ্রিক সাংবাদিকতার অগ্রযাত্রা ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তোলাও খুব জরুরী। যদিও ‘সবার জন্য শিক্ষা’র ব্যাপারটি নিয়ে বাংলাদেশে যতটা রাজনীতি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে , ততটা কাজের কাজ হয়নি এবং এখনো হচ্ছে না।

সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা ও বিকাশকে অব্যাহত রাখতে হলে, বর্তমানে অবাধ ডিক্লারেশনের অবৈধ সুযোগে রকমারি পত্রপত্রিকায় বাজার যেভাবে সয়লাব হয়ে আছে, তাকে সুপরিকল্পিত নীতিমালার আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সরকারের বিজ্ঞাপন প্রদানের নীতিমালাকে স¤পূর্ণরূপে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সংবাদপত্রের চেয়ে ভালো কোনো বন্ধু আর নেই। সরকার নিয়ন্ত্রিত রেডিও-টিভি’র বন্দীদশাও বাংলার মানুষ দেখেছে। কখনো কখনো এসব মিডিয়ার গণবিরোধী অবস্থানও তারা দেখেছে। তাঁরা দেখেছে মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং ১৯৯০-এ সৈ^রাচারমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের আন্দোলনে এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করতে এ দেশের সংবাদপত্র কী পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সুতরাং সংবাদপত্র ও জনগণের মধ্যে এখনও পর্যন্ত যে দূরত্ব বিরাজ করছে, তা দূর করতে পারলে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি বিপ্লব ঘটতে পারে। কোনো বিপ্লবই সফল হয় না, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে সেই বিপ্লব ঘটেনি এজন্য যে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা ও বিকাশের আন্দোলন থেকে আজ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। সুতরাং বাংলাদেশের সংবাদপত্রের বিকাশ ও এদেশের সকল মাধ্যমের সাংবাদিকতার মুক্তির জন্য জনগণের অংশগ্রহণ এখন খুব জরুরী একটি বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এজন্য এদেশের সকল মানুষকে গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার কাজটি সর্বপ্রথম করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া সাংবাদিকতা এগিয়ে যাবে , এটা ভাবারও সুযোগ নেই। যদি এটা সম্ভবই হতো , তাহলে সাংবাদিকতায় এমন উচ্চতর শিক্ষা গ্রহনের প্রয়োজন পড়তো না। সাংবাদিকতা করতে , সাংবাদিকতা পড়তে এবং তা বুঝতে শিক্ষার গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। সংবাদপত্রকে যে দৈনন্দিন জীবনের তৃতীয় নয়ন বলা হয় , তা কি নিরক্ষর কিংবা অশিক্ষিত লোকের নয়নের সমন্বয় ? সংবাদপত্রকে যে গণতন্ত্রের চোখ বলা হয় , তা কোনো যেনতেন বিষয় ? সুতরাং বোধের বিপ্লব ব্যতিরেকে সাংবাদিকতার বিপ্লব অসম্ভব। সংবাদপত্রের-সাংবাদিকতার স্বাধীনতার বোধসহ মানুষের আরও যাবতীয় বোধকে শাণিত করতে তার প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক যাবতীয় শিক্ষাও খুব অপরিহার্য।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৫

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: খুব সত্য কথা।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

জসীম অসীম বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ । সামান্য সত্যই বলতে পেরেছি ভাই। পুরো সত্য বলার শক্তি-যোগ্যতা-সাহস আমার নেই। ভালো থাকবেন।

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৩৫

আরজু মুন জারিন বলেছেন: শিক্ষার বিপ্লব ব্যতিরেকে সাংবাদিকতার বিপ্লব অসম্ভব X(( :| X(

অনেক সময়, শ্রম, আন্দোলন ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স^াধীন হয়েছে। বাংলাদেশের এ স^াধীনতার এত বছরেও এখনও কি সংবাদপত্রকে আমরা স^াধীন বলতে পারছি ? না, পারছি না।

ভাল লেগেছে লেখা জসিম ভাই। অনেক ক্লান্ত। তাই শুধু শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম। ভাল থাকুন।

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

জসীম অসীম বলেছেন: প্রিয় শব্দসৈনিক মুন , এ কয়েকদিন দৈনিক খোঁজ করেছি আপনার। ভাবলাম আবার কোনো চৈনিক সভ্যতা দেখতে চলে গেলেন কী না। আর আমার ডাকনাম অসীম , ও নামে ডাকলেই আনন্দবোধ করবো। আর আপনার যত ব্যস্ততা বা ক্লান্তিই থাক না কেন , মাঝে মাঝে যোগাযোগ না থাকলে আমাদের সবারই ক্ষতি। ভালো থাকবেন আরজু মুন জারিন , যতটা ভালো থাকা যায়। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.