নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুমিল্লায় চলছে পুরনো গোমতী দখলের লড়াই

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৮

কুমিল্লা শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে গোমতি নদী। একদা এ নদী বয়ে যেত শহরের খুব কাছ ঘেঁষেই। কিন্তু পরে বিভিন্ন বিবেচনায় এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। নতুন করে নির্দেশিত এ পথে প্রবাহিত হতে থাকে সচল গোমতি নদী । আর সেই থেকেই কুমিল্লা শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পুরনো খাতটিকে গিলে খাওয়ার যাবতীয় উপক্রম শুরু হয় এবং এখনো চলছে সেই পুরনো গোমতী দখলের হিংস্র লড়াই।

কুমিল্লা শহরের অনেক পুকুর আগেই ভরাট হয়ে গেছে। এখন চলছে পুরনো গোমতী দখলের অবৈধ প্রতিযোগিতা । ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর নামে পরিচিত এ কুমিল্লা শহর থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় একশো’র কাছাকাছি পুকুর। শহরে এখনও যেসব পুকুর, দিঘি ও জলাধার রয়েছে , এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জলাধার গোমতি নদীর এ পুরনো খাতটিই , যাকে স্থানীয় মানুষ এখনো ‘মরা নদী’ নামেই ডাকে। কিন্তু ভূমিখেকোদের অশুভ দৃষ্টির কারণে ক্রমাগতই হারিয়ে যাচ্ছে এ জলাধার। শহরের ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটির কথা মনে পড়ে ? যে পুকুরের পাড়ে কতরকম ফুল ফুটতো ? শেষ। ফরিদা বিদ্যায়তনের কাছের পুকুরটি ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত। উধাও হয়ে গেছে। পৌরপার্কের ভিতরের ব্যাঙ সাগরেও গিয়েও ‘ঠ্যাং’ পড়েছে ওসব পরিবেশঘাতকদের। ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর নামে পরিচিত এ কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় একশো’র কাছাকাছি পুকুর এরই মধ্যে গিলে হজম করে ফেলেছে অর্থলোভী পরিবেশঘাতক-পরিবেশখাদকরা। আর প্রশাসন বরাবরই বিভিন্ন কারণে এসব না দেখার ভান করেছে। আর সেই সুযোগে এখন চলছে পুরনো গোমতী দখলের অবৈধ প্রতিযোগিতা।

কুমিল্লার এ পুরনো গোমতী নদী , একদার কল্লোলিনী গোমতী নদী এখন দখলগ্রস্ত মানুষের হিংস্র থাবার শিকার। শীর্ণ তার দেহ। তার বিভিন্ন স্থানে পরিবেশবিরোধী নির্মম বাঁধ দিয়ে মুক্ত স্রোতধারাকে রুদ্ধ করা হয়েছে। দু’পাশের আগ্রাসী মানুষের দখলের নেশায় দু’তীরের মনোহর শোভাও বিপর্যস্ত। যেনো এ পুরনো নদীর শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম। দু’কূলপ্লাবী স্রোতের কল্লোল তার থেমে গেছে অনেক আগেই। মানুষ কর্তৃক গোমতী নদীর এ গতি পরিবর্তন করার কারণে একদা এ পুরনো গোমতী নদী প্রথম স্রোতহীন হয়। এখন এ নদীর শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দেয়ার নির্মম ষড়যন্ত্র চলছে।

পুরনো এ গোমতী নদী একদা কোল দিয়েছিলো এ শহরকে। গড়ে উঠেছিলো তার তীর ঘেঁষেই ঐতিহাসিক সুজা বাদশাহ মসজিদ। আজ এ শহরের কিছু আগ্রাসী মানুষ গিলে খাচ্ছে তাকে। যে শহরকে সে একদিন জল দিয়ে আশ্রয় দিয়েছিলো , সে শহরের বিস্তারের বেদখল তাকে রাক্ষুসের মতো খেতে বসেছে আজ। কালের স^াক্ষী ছিলো নদীর এ অংশ। এখন বিষাক্ত জলধারায় পরিপূর্ণ। বিপন্নও সে। শুধু হিংস্র মানুষের লোভের কারণে। পানির রং হয়ে গেছে ফ্যাকাসে। এখন এ গোমতী যেন ঘরবাড়ির বিভিন্ন বর্জ্যে বিপজ্জনক করা এক বিষাক্ত জলধারা। এ গোমতী এখন খোলা নর্দমার ময়লা পানি বুকে ধারণ করে কোনো রকমে বেঁচে আছে। অসহায় এ গোমতীর এখন আর অতীতের স্রোতের জোর নেই। তাই দু’তীরের আগ্রাসী মানুষ ক্রমাগতই গিলে খাচ্ছে তাকে। এ গোমতীর দু’তীর যেনো বিক্রি হয়ে গেছে ওসব আগ্রাসী মানুষের কাছে। রাহুর মতো ক্রমাগত গিলছে তাকে। ফলে ছোট হয়ে আসছে এ পুরনো গোমতী নদী। এ শহরের তথাকথিত প্রভাবশালীদের চেলাচামুন্ডাদের আগ্রাসনে। একদার দু’কূল ছাপিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ে পথ চলা গোমতী এখন কতোটা ভীত , তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে এ পুরনো গোমতী নদী একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবে। প্রশাসন কিংবা পরিবেশবান্ধব কোনো সংগঠন কি নেই , যারা এ বিশাল জলাধারকে রক্ষা করতে আন্তরিকভাবেই এগিয়ে আসতে পারে!

যদি এখনো তা না করা যায় , তাহলে নদীর এ পুরনো খাতটি খাল হয়েও টিকে থাকবে না আর। একদিন বড় বড় নৌকো এসে ভিড়েছে গোমতি নদীর যে বাঁকে, এভাবে চলতে থাকলে সে নদীর মৃত এ খাতে পানিও থাকবে না আর। থাকলেও থাকবে আশংকাজনক দূষিত পানি। এ পুরনো গোমতী কারো ব্যক্তিগত স¤পত্তি নয়। তবু কর্তৃপক্ষের অনুুমতি ছাড়া এ নদীর দখলকৃত তীরে প্রাসাদ গড়ে উঠছে। চলছে দখলের অবৈধ প্রতিযোগিতা। অথচ পুরনো নদীর দু’ তীর সংরক্ষণ করে কিংবা তীরে বনায়ন করে পর্যটক ও নাগরিকদের বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। এ নদীর দৈর্ঘ্য কুমিল্লার ঐতিহ্য ‘ধর্মসাগর’ থেকেও বড়। ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ের মতো এর দৈর্ঘ্য পাকা করে বৃক্ষরোপণ করা যেতে পারে। এ নদীতে ভাসমান রেস্তোরা করে একে অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজে লাগানো যেতে পারে। আর নদীতে হতে পারে পরিকল্পিত মৎস্য চাষ।

এ নদীর সৌন্দর্য রক্ষায় কুমিল্লাবাসীকে এগিয়ে আসতেই হবে। কেবল কুমিল্লায় বিভাগ বাস্তবায়ন , কুমিল্লায় পূর্ণাঙ্গ বেতারকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আন্দোলন করলেই চলবে না , এ মাতৃরূপা পুরনো গোমতীকেও রক্ষা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে দখলবাদীদের নদীদখলের লড়াই। গোমতী নিশ্চিহ্ন হলে কিংবা দূষিত পানির একটি সংকীর্ণ জলধারায় রূপান্তরিত হলে কুমিল্লার পরিবেশই অসুস্থ হবে। এ শহরের অনেক পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। এখন চলছে পুরনো গোমতী দখলের অসৎ প্রতিযোগিতা। এ থেকে পুরনো গোমতীকে রক্ষা করা না গেলে প্রকৃতিও একদিন এ শহরবাসীর উপর প্রতিশোধ নিতে পারে। সেটা তো আজকাল খরার মৌশুমে একটু একটু টের পাওয়াও যাচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.