নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিজের বাড়িতে ওরা শুধু বেড়াতেই যায়, কাজের সন্ধানে উত্তরবঙ্গের অনেকেই এখন কুমিল্লায়

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে উত্তরবঙ্গও বলা হয়। এ উত্তরবঙ্গের রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ আরও অনেক জেলার হাজার হাজার মানুষ কর্মের সন্ধানে এখন কুমিল্লায় এসে বাস করছেন। তাদের অধিকাংশই আবার রিকশাচালক। তবে কুমিল্লায় ভিন্ন পেশায়ও তাদের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষ করে কুমিল্লা শহরের বাইরে উত্তর বাংলার বিপুল সংখ্যক লোক কৃষিশ্রমিক হিসেবেও নিয়োজিত রয়েছেন। কুমিল্লায় কেন এসেছেন ? এ প্রশ্ন করলে লালমনিরহাটের মধ্যবয়সী রিকশাচালক সুন্দর আলী জানান, আমাদের নিজের এলাকায় তেমন কোনো কাজ পেলে তো আর আমরা এখানে ছুটে আসি না। আমাদের বাঁচার নিশ্চয়তা ওখানে তেমন নেই বলেই আমরা এখানে আসি। কুমিল্লায় কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার দেউলমীর্জাপুরের আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, রংপুরে কাজের আর্থিক মূল্য খুবই কম। কুমিল্লায় কাজ অনুযায়ী টাকা পাওয়া যায় বেশি। তাই টাকার মায়ায় ঘর-সংসার ভুলে এখানে পড়ে থাকি ।

উত্তরবাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আরও বিভিন্ন লোকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সেখানকার যে সমস্ত লোক কুমিল্লায় বসবাস করছেন,তাদের অধিকাংশেরই পেশা ছিল কৃষি। কিন্তু সেখানে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে দিন দিন কমে গেছে কৃষিজমি, দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। অন্যদিকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পারায় অবস্থা আরও চরমে পৌঁছে । এ অবস্থায় তাদের পারিবারিক জীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সেসব অঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগও নেই । কৃষিজমি কমে যাওয়ার কারণে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। এর ফলে উত্তরবাংলার বিভিন্ন জেলার মানুষ নিজের এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন । তাদের অনেকে এসেছেন কুমিল্লায়। উত্তরবাংলার বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলে দলে কর্মহীন মানুষ এসেছেন কুমিল্লা জেলায়। এখন তারা ছড়িয়ে পড়েছেন কুমিল্লার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও। জেলার সদর থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে অনেক লোকের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তেমনি কথা হয় মোহসিন মিয়ার সঙ্গেও। তার বয়স ৪০। গ্রাম ১৬ নং দেউলমীর্জাপুর। থানা- মিঠাপুকুর। জেলা- রংপুর। বললাম, কেন আপনারা কাজের খোঁজে রংপুর থেকে কুমিল্লায় চলে আসেন ? মোহসিন মিয়ার উত্তর:পেটের জ্বালায় ভাই, পেটের জ্বালায়। বললাম:কী কাজ করছেন এখানে ? মোহসিন মিয়ার উত্তর:ধান কাটছি ভাই বিভিন্ন কৃষকের জমিতে। আর কি কখনো কুমিল্লায় ধান কাটতে এসেছিলেন? মোহসিন মিয়া উত্তরে বলেন, অনেকবারই আসছি ভাই, বলা যায় প্রতিবছর। কিন্তু রিকশা চালাতে ভয় পাই। উল্টাপাল্টা চালাইলে ট্রাফিক পুলিশ বেসাইজ কইরা ফালাইবো। আমার মামাতো ভাইয়ের চান্দি ওদিন ফাটাই ফালাইছে। আমি বললাম, রংপুর থেকে কি ট্রেনে আসেন ? মোহসিন মিয়া উত্তরে বলেন, ট্রেনে খুব কমই আসি ভাই। বাসের ছাদে করে আসি। বললাম, ছাদে করে কেনো ? মোহসিন মিয়া বলেন , ভিতরে ভাড়ার রেট বেশি। ছাদের ভাড়া কম। কম টাকায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঝুঁকি নিয়েই আসি।

এমনিভাবে আরো অনেকের সাথে আলাপ হয় আমার । নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের অনেক দিনমজুরের সঙ্গে জমে নানা গল্প। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কসাকাটা গ্রামের আবদুস সালামের গায়ে ছিলো প্রচণ্ড জ্বর । প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু ওষুধ খেয়েছিলেন । ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি টাকার অভাবে। ওরা ঝাঁক বেঁধে ছড়িয়ে পড়েছেন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও। সবাই শহরে কাজ করেন না। যারা একটু সহজসরল প্রকৃতির, তারা কাজ খোঁজ করেন গ্রামে। কাজ শেষ হয়ে গেলেও স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব কম। কারণ বাড়িতে তাদের করার মতো তেমন কাজ নেই। তাই বাড়িতে ওরা মাঝে মাঝেই যান। উত্তরবাংলার একজন রিকশাচালক জানান, ঈদেও তিনি বাড়িতে যাননা। ঈদের পুরো লগ্নেই তিনি বাড়িতে যান না। কামাইটামাই শেষ করে তবেই যান বাড়িতে। কেউ আবার এ অঞ্চলে বিয়েসাদী করে রীতিমত জামাই হয়ে বসবাস করছেন। তারপরও বাড়িতে তারা যান। তবে বলা চলে, নিজের বাড়িতে তারা শুধু বেড়াতেই এখন যান। এটাই এখন তাদের জীবনের নির্মম বাস্তবতা।













মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

মহানাজমুল বলেছেন: *১.কুমিল্লা নিয়ে আপনার ধারাবাহিক লেখা অনেক প্রশংসার দাবি রাখে। প্রাণের শহর কুমিল্লা নিয়ে লেখা আরো অনেকদিন চালিয়ে যাবেন আশা করি।
*২. 'উত্তরবঙ্গের শ্রমজীবী মানুষের জন্য কুমিল্লা হল সৌদি আরব'- এরকম একটা কথা কিন্তু প্রচলিত আছে। তবে উত্তরবঙ্গের শ্রমজীবীরা যে কুমিল্লায় খুব ভাল আছেন তা কিন্তু না। উত্তরবঙ্গ থেকে আগত রিকশাচালকদের একটা মেসে যাওয়া হয়েছিল আমার। তারা সেখানে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করে।একে তো নিম্নআয়, তার উপর শিক্ষাদীক্ষার যথেষ্ট অভাব- আরো নানা বাস্তবতায় তারা খাদ্য,বস্ত্র,চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার থেকেও বন্ঞিত।
*৩. কুমিল্লার সমাজে এখনো সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব থাকার কারনে উত্তরবঙ্গ থেকে আগত শ্রমজীবীদেরকে স্থানীয় লোকজন অত্যন্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে, যা থেকে উত্তরণ জরুরী। অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি তাদের সামাজিক মর্যাদাও যাতে সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেদিকে নজর দেয়া উচিত।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই , যা বলেছেন , খুবই সত্যি বলেছেন। হয়তো কুমিল্লায় বাড়ি বলে লেখার বিষয়ে অতটা নির্মোহ হতে পারিনি। আপনার প্রতিটি কথাই বাস্তব। এই যে লেখার সঙ্গে ছবিটি পোস্ট করেছি, এমন অনেক লোক , যারা উত্তরবাংলা থেকে আগত , তারা কুমিল্লার গোমতি নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ করে। কী যে কষ্ট করে, কল্পনাতীত। অথচ মানবিক বিচার নেই ওদেও জন্য, যা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

মহানাজমুল বলেছেন: *১.কুমিল্লা নিয়ে আপনার ধারাবাহিক লেখা অনেক প্রশংসার দাবি রাখে। প্রাণের শহর কুমিল্লা নিয়ে লেখা আরো অনেকদিন চালিয়ে যাবেন আশা করি।
*২. 'উত্তরবঙ্গের শ্রমজীবী মানুষের জন্য কুমিল্লা হল সৌদি আরব'- এরকম একটা কথা কিন্তু প্রচলিত আছে। তবে উত্তরবঙ্গের শ্রমজীবীরা যে কুমিল্লায় খুব ভাল আছেন তা কিন্তু না। উত্তরবঙ্গ থেকে আগত রিকশাচালকদের একটা মেসে যাওয়া হয়েছিল আমার। তারা সেখানে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করে।একে তো নিম্নআয়, তার উপর শিক্ষাদীক্ষার যথেষ্ট অভাব- আরো নানা বাস্তবতায় তারা খাদ্য,বস্ত্র,চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার থেকেও বন্ঞিত।
*৩. কুমিল্লার সমাজে এখনো সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব থাকার কারনে উত্তরবঙ্গ থেকে আগত শ্রমজীবীদেরকে স্থানীয় লোকজন অত্যন্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে, যা থেকে উত্তরণ জরুরী। অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি তাদের সামাজিক মর্যাদাও যাতে সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেদিকে নজর দেয়া উচিত।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই , যা বলেছেন , খুবই সত্যি বলেছেন। হয়তো কুমিল্লায় বাড়ি বলে লেখার বিষয়ে অতটা নির্মোহ হতে পারিনি। আপনার প্রতিটি কথাই বাস্তব। এই যে লেখার সঙ্গে ছবিটি পোস্ট করেছি, এমন অনেক লোক , যারা উত্তরবাংলা থেকে আগত , তারা কুমিল্লার গোমতি নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ করে। কী যে কষ্ট করে, কল্পনাতীত। অথচ মানবিক বিচার নেই ওদেও জন্য, যা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪

ফা হিম বলেছেন: ভালো নগর-সাংবাদিকতা।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

জসীম অসীম বলেছেন: লেখা যদি আপনার একবিন্দু ভালো লেগে থাকে , আমি স্বার্থক। কারণ আমার লেখা প্রায়ই ব্যর্থ লেখায় রূপ নেয়। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০৫

শেরশাহ০০৭ বলেছেন: আমি তো বগুড়াতে অনেক কুমিল্লার মানুষ রে দেখি।
রাস্তায় ফাস্তফুড বেচে। ব্যাগের দোকান দারী করে।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

জসীম অসীম বলেছেন: ধন্যবাদ।ভাই, ঠিকই বলেছেন। আমি দিনাজপুরেও কুমিল্লার মানুষ দেখেছি। কিন্তু তুলনামূলক কম। ভালো থাকবেন। মতামত ভালো লেগেছে।ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.