নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড. গোলাম মহিউদ্দিন: ব্যক্তিগত স্মৃতি

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩২

একটি লেখা সংগ্রহের জন্য ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম তার ঢাকার বাসায়। তিনি তখন কথা প্রসঙ্গে বলেন , ব্যক্তি স্বার্থপর মানুষকে মানুষ মনে করবে না। ওরা মানুষরূপী জানোয়ার। ওরা দেশকে ভালোবাসতে পারে না। দেশপ্রেম এমনি এমনি হয় না। তার জন্য চর্চা করতে হয়। ধ্র“পদী গান কিংবা ছবি আঁকার মতো দেশপ্রেমেরও চর্চা করতে হয়। আমি বললাম, স্যার মাকর্সবাদ তো বলে কিছুই নিরপেক্ষ নয়। এমনকি শিল্পকলাও। তবে কি স্যার দেশপ্রেমও নিরপেক্ষ নয়? মহিউদ্দিন স্যার বললেন, অবশ্যই নয়। দেশপ্রেম নিরপেক্ষ নয় বলেই তো তোমাদের বিকল্প আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে-কী সাহিত্যে-কী নাট্যচর্চায়... সর্বক্ষেত্রেই।



দেশ নিয়ে আমার ভাবনা যেন রক্তে মিশে আছে। অথচ আজও কোনোভাবেই দেশের কাজে লাগিনি। এ দুঃখে , এ ব্যর্থতায় কখনো কখনো মরতে ইচ্ছে করে। দেশকে ভালোবেসে এ জীবনে অনেক কিছুই করতে গিয়েছিলাম। হয়নি শেষে কিছুই। গণমাধ্যমে কাজ করতে গিয়েও দেখলাম, গণমাধ্যমে গণমানুষের কোনো স্থানই নেই। ড. গোলাম মহিউদ্দিন তখন আরও বলেছিলেন, মার্কসবাদ বৈজ্ঞানিক। মার্কসবাদ সৃষ্টিশীল। তাতে কোনো গলদ নেই। কিন্তু আমি বাংলাদেশের অনেক মার্কসিস্টের কাছেই গলদ খুঁজে পেয়েছি। তারপরও শিল্পচর্চার মার্কসীয় বিকল্পধারা গড়ে তোলা এবং শিল্পীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও সময় দিয়েছিলাম। শেষ ফলাফল শূন্যেই গেছে আমার।



দীর্ঘদিন পর গোলাম মহিউদ্দিনের সঙ্গে আমার আবার দেখা হয়েছিল ২০০২ সালে, কুমিল্লায়। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী-র সঙ্গে জড়িত হয়ে তখন ‘স্যার মহিউদ্দিন’কে ‘মহিউদ্দিন ভাই’ বলা শুরু করেছি। মহিউদ্দিন ভাই তখন কুমিল্লা জেলা উদীচী-র সম্মেলনে এসেছিলেন। তখন অবশ্য সাংগঠনিক কথাবার্তা ছাড়া আর তেমন কথা বলার সুযোগ হয়নি। তিনি উদীচী-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। আমি কুমিল্লা জেলা সম্মেলনে বিষয় নির্বাচনী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলাম। তাই তিনি আমার সঙ্গেও আলাদা একটু কথা বললেন। এই মহিউদ্দিন ভাইয়ের বাড়ি ছিল আমাদের কুমিল্লাতেই। কুমিল্লার সদর উপজেলার ৫নং পাচথুবী ইউনিয়নের শ্রীপুর মাস্টার বাড়িতে তার জন্ম। তার পিতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাদের ভাই-বোনদের সবাই ছিলেন প্রতিষ্ঠিত।



১৯৯৭ সালে কুমিল্লা জেলা ছাত্র ইউনিয়ন-এর আমি ছিলাম শিক্ষা ও গবেষণা স¤পাদক। তখন আমার সম্পাদনায় ছাত্র ইউনিয়ন কুমিল্লা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ‘রক্ত দিয়ে লেখা’ শীর্ষক একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। সেই সংকলনে একটি লেখাও দিয়েছিলেন ড. গোলাম মহিউদ্দিন। তবে সেই লেখা তখন সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন আমার সিনিয়র বন্ধু সাঈদ ইফতেখার আহম্মেদ-যার ডাক নাম ছিল শাম্মী। তিনি পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হয়েছিলেন। ড. গোলাম মহিউদ্দিন বাম রাজনীতি করলেও তার কথা আমি প্রথম শুনেছিলাম আমার বাবার কাছে। আমার বাবা খাদ্য বিভাগে চাকুরি করতেন। খাদ্য অধিদপ্তরের ঢাকার অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে বাবার যোগাযোগ ছিল। ড. গোলাম মহিউদ্দিনও একসময় খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ছিলেন। তার স্ত্রী ছিলেন ঢাকা নটরডেম কলেজের অধ্যাপিকা এ এন রাশেদা। রাশেদা আপার সঙ্গে জীবনে একবারই আমার দেখা হয়েছিল। তার স¤পাদিত ‘শিক্ষাবার্তা’ ম্যাগাজিনটি একসময় আমরা প্রায় নিয়মিতই পড়তাম। নাচোল আন্দোলনের নেত্রী ইলামিত্রের সঙ্গে তাদের স^ামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কিন্তু সহসাই দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০০৪ সালে মারা গেলেন ড. গোলাম ‎মহিউদ্দিন।। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর স¤পাদনায় তারই স্মরণে ‘শিক্ষাবার্তা’ ম্যাগাজিনের যে সংখ্যাটি বের হয়েছিল, তা পড়ে আমার খুবই খারাপ লাগে। গোলাম মহিউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার আর শেষ দেখাটি হলো না। দেখা হলেই যিনি বলতেন,সমাজ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে ভোগবাদের দিকে। কারণ আমাদের সামনে এখন সত্যেন সেনদের মতো ত্যাগী মানুষের কোন মডেলই স্থির নেই। যারা এখন দেশকে ভালোবাসেন, তাদের হাতে অর্থ নেই, বড় অসহায় তাদের জীবন। আর এ প্রসঙ্গ মনে পড়লেই আমার লুৎফর রহমান সরকারের সেই কবিতার চরণ মনে পড়ে যায়:

‘দেশটা যাদের দেয় না কিছু

তারাই দেশের ভক্ত,

সবার আগে দেশের জন্য

তারাই যে দেয় রক্ত।...’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.