নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ রিপোর্ট যাবে না-এ রিপোর্ট যাবে : রিপোর্টারের ডায়েরি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

সম্ভবত ১৯৯৪ সাল। তখন থেকে কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকায় আমি একটি নিয়মিত কলাম লেখা শুরু করি। ‘অন্তর মম বিকশিত করো’-শিরোনামে। ১৯৯৩ সালে সেই কলামের প্রথম চার পর্ব লেখা আমি পত্রিকাটির তদানীন্তন স¤পাদক মোহা¤মদ ফজলে রাব্বীর হাতে তুলে দেই। তিনি লেখা পেয়ে খুব খুশি হোন, যদিও লেখার মান খুব ভালো ছিলো না।

১৯৯২ সালে ঢাকায় বসে আমি স^ল্পাকৃতির অনেক নিবন্ধ লিখি। অধিকাংশই থিয়েটার বিষয়ক। ঢাকার পত্রিকায় এসব লেখা কেউ ছাপেনি। আমার বন্ধু আবিদকে বললাম, লিখে যদি টাকা পাই, সেই আশায় লিখি। আবিদ বললো, ‘জাতি লেখকরাই লিখে টাকার নাগাল পাচ্ছে না...।’ ইত্যাদি। আমি হতাশ হলাম। পত্রিকাগুলো আমাকে ফিচার লেখার পরামর্শ দিলো। ঢাকার পথে হেঁটে হেঁটে অনেক ছবি তুলে আনলাম ফিচার লেখার জন্য। কিন্তু ফিচার লেখার কাজে মন সায় দিলো না আমার। দৈনিক ইনকিলাবে লেখার সুযোগ ছিলো। এমনকি লেখার বিনিময়ে টাকাও কিছু পাওয়ার সুযোগ ছিলো। পরিচিত লোক ছিলো বলে। কিন্তু পত্রিকাটি তখন ছিলো আমার একদমই অপছন্দের তালিকায়।

আমার সেসব দিনে লেখা কিছু কিছু নিবন্ধ কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকার ‘অন্তর মম বিকশিত করো’ কলাম-এ দিতে থাকলাম। তারপর শুরু করলাম আরেকটি কলাম লেখাও। ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’-শিরোনামে। এ কলামটি ‘পেরিস্কোপ’ ছদ¥নামে লিখতাম। কিন্তু ‘আমোদ’ কর্তৃপক্ষ আমার লেখা তাদের সম্পাদনা নীতিমালা অনুযায়ী কেটেছেটেবেঁটে করে ছাপানো শুরু করে। আমি খুব ক্ষেপে গেলাম। তখনও কোনো লেখার মূলকপি আমি রাখতাম না। ১৯৯৫ সালের শেষদিকে আমি পত্রিকাটির তদানীন্তন স¤পাদক শামসুননাহার রাব্বী খালাম্মাকে এক চিঠি লিখে জানালাম, যেন তিনি আমার লেখা আর না কাটেন। স¤পাদক খালাম্মা এ চিঠি পড়ে মনে খুব কষ্ট পেয়ে আমাকে একটি চিঠি লিখেন। পরামর্শমূলক করুণ এক চিঠি।

১৯৯৬ সালে সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এ আমি সাংবাদিকতা শুরু করি। তখন থেকে বিশেষভাবে বুঝতে পারি ‘সাহিত্য’ আর ‘সংবাদ’ স¤পাদনার মূল ফারাক। সাংবাদিকতায় স¤পাদক বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। একটি রিপোর্টকে তিনি তার নীতিমালার আলোকে ছাপেন। আমি খুব আহত হতে থাকি ‘আমোদ’ এর সংবাদ স¤পাদনা দেখেও। যদিও ১৯৯২ সালেই ঢাকায় আমি ‘বাংলাদেশ ও ভারতের প্রেস আইন’ স¤পর্কে লাইব্রেরীতে অনেক লেখাপড়া করেছি। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে, কেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিখতে আঞ্চলিক কাগজগুলো এমন ভয় পায়? কেন সারাদেশের কাগজগুলো সেনাবাহিনী বিষয়ে সচরাচর রিপোর্ট করতে পারবে না? ...ইত্যাদি।

১৯৯৬ সাল থেকে ‘আমোদ’ আমার সংবাদ ছাপতে থাকে। অনেক কাটছাটের পরও সে সময়ে ‘আমোদ’ আমার যেসব লেখা ছাপে, কুমিল্লার কোনো পত্রিকা আর কখনোই আমার তেমন লেখা ছাপেনি। আমার সেসব লেখা পাঠকও অনেকটা পছন্দ করে। ‘আমোদ’ পত্রিকার তদানীন্তন ব্যবস্থাপনা স¤পাদক বাকীন রাব্বীর সঙ্গে সে সময়ে আমি একবার চাঁদপুর গিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে তার প্রমাণও পাই। কুমিল্লায় তখন সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ আর দৈনিক ‘রূপসী বাংলা’ ছাড়া তেমন কোনো নিয়মিত পত্রিকা ছিলো না। সাপ্তাহিক ‘অভিবাদন’ অবশ্য তখনও নতুন। আর ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকার সাথে যোগাযোগ হয় আরও পরে।

সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কারণ সে পত্রিকা সে সময়ে আমার লেখাগুলো কাটছাট করে হলেও ছেপেছে, যা তার আগে কেউ ছাপেনি, ছাপতে রাজি হয়নি। এমনকি তখনও কেউ ছাপাচ্ছিল না। ‘আমোদ’ সেসব লেখা ছেপেছে এবং মাস শেষে আমাকে একটি নির্ধারিত তারিখে, নির্ধারিত টাকা বেতনও দিয়েছে।

১২ ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লীতে ৩০ বছর মেয়াদের জন্য গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স^াক্ষর করেন। সে চুক্তি স^াক্ষরের পর সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আমি তখন সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এর স্টাফ রিপোর্টার। নভেম্বরের শেষদিকে সিডি হসপিটালে ডা. কলিমুল্লাহর তত্ত্বাবধানে আমার টনসিল অপারেশন হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমি খুব বেশি একটা কাজ করতেও পারিনি।

১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা কুমিল্লা টাউনহলে এক জনসভায় এলেন। তার আগে আমি একটি রিপোর্ট লিখে সাপ্তাহিক ‘আমোদে’ দিলাম। রিপোর্টের শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা অসংখ্য ত্র“টিযুক্ত পানি চুক্তিতে কেন সই করলেন’। রিপোর্টটি দেখে ‘আমোদ’ এর ব্যবস্থাপনা স¤পাদক বাকীন রাব্বী খুব খুশি হয়ে রিপোর্টটি দৈনিক ‘দিনকাল’ পত্রিকায় পাঠাতে বললেন। দৈনিক ‘দিনকাল’ আমার অপছন্দের পত্রিকা। তাই এ রিপোর্ট আমি ওখানে পাঠাইনি। কেননা দিনকাল হয়তো রাজনৈতিক কারণেই রিপোটর্টি ছেপে দেবে।

শেখ হাসিনা কুমিল্লায় আসার ২ দিন আগে বাকীন রাব্বী আমার পানি চুক্তির সেই রিপোর্টটি ‘আমোদ’-এর উপযোগী করে আবার লিখে দিতে বললেন। আমি খুব সহনশীলভাবে আবার লিখে দেই সেই রিপোর্ট। কিন্তু আমোদ সে রিপোর্টটিকে এডিট করে পানিচুক্তির ৭টি ত্র“টি ছাপতে রাজি হলো। লেখার শিরোনাম ছিলো-‘পানিবন্টন চুক্তির বিভিন্ন ত্র“টিসমূহ’।

শেখ হাসিনা ৯ জানুয়ারি কুমিল্লা আসবেন, সেদিন বৃহস্পতিবার। ‘আমোদ’ও বের হয় প্রতি বৃহস্পতিবারে। বাঁধ সাধলেন পত্রিকার স¤পাদক শামসুন নাহার রাব্বী। তিনি তার একমাত্র ছেলে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত স¤পাদক বাকীন রাব্বীকে এ লেখা ছাপাতে বারণ করলেন। আমাকেও তিনি এমন বিষয় ধরে লেখা দেয়ার জন্য ধমক দিলেন। বাকীন রাব্বী বললেন, এ লেখা যাবে। তার মা সম্পাদক বলছেন, যাবেনা। যে লেখাটি বাকীন রাব্বী ছাপতে চাচ্ছিলেন, তা কোনো গুরুত্বপূর্ণ লেখা না হলেও বিষয়গুণে এবং শেখ হাসিনার সেদিন কুমিল্লায় আসার কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। যদিও এ বিষয় নিয়ে ততদিনে জাতীয় পত্রিকাগুলো অনেকই লিখেছে, কিন্তু কুমিল্লার কোনো পত্রিকা এ বিষয়ে নেতিবাচক এক অক্ষরও ছাপেনি। শেষে বাকীন রাব্বী রিপোটর্টি ছেপে দিলেন। সম্পাদক খালাম্মা বললেন, সব ঝুঁকি তোমার বাকীন। কারণ আমাদের পত্রিকা রাজনৈতিক পত্রিকা নয়। তোমার পত্রিকায় প্রশাসনিক হামলা হলে কেউ কোনো শব্দ করবে না। বাকীন রাব্বী তার মায়ের কথার কোনো জবাব দিলেন না।

কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আমোদে’র তখন অনেক গ্রাহক ছিলো। কুমিল্লার বাইরে চাঁদপুরেও ছিলো অনেক গ্রাহক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। কুমিল্লার লাকসামেও এ পত্রিকার বিশাল গ্রাহক ছিলো। তখন কুমিল্লায় এত সাপ্তাহিক পত্রিকাও ছিলো না। ‘আমোদ’ ছিলো নিয়মিত। জাতীয় পত্রিকা না হলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ‘আমোদ’ যেতো-যেমন এখনও যায়। বিগত প্রায় ৬০ বছর ধরে এ পত্রিকা কুমিল্লা থেকে নিয়মিত বের হচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের কারণে আওয়ামীলীগের ভুলগুলোও তখন কেউ তেমন তলিয়ে দেখছে না কেবল প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত ছাড়া। সে সময়ে কুমিল্লার কোনো পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের বিপক্ষে কিছু ছাপা অবশ্যই দুঃসাহসের কাজ ছিলো।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.