নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেটে ফেলা পাহাড়কে কি আর গড়া সম্ভব?

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক স¤পদে ভরপুর। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর-দক্ষিণপশ্চিমে সুন্দরবন-উত্তরপূর্বে চা চাষ উপযোগী পার্বত্য অঞ্চল-দক্ষিণপূর্বে বিশাল পার্বত্যভূমি। কুমিল্লায়ও পার্বত্যভূমি রয়েছে। কুমিল্লার পার্বত্য অঞ্চল বিশাল আকৃতির না হলেও আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ পাহাড়। শিক্ষার পাদপীঠ কুমিল্লার উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যের ইতিহাস এ লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়কে কেন্দ্র করেই। কিন্তু কুমিল্লার এ ঐতিহ্যবাহী পাহাড় আজ হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ পাহাড়ের মাটি দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রমাগতই পাচার হচ্ছে। বিগত দিনে কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকার কারণেই এ প্রক্রিয়া দিনে দিনে বিস্তার লাভ করেছে। ক্ষতবিক্ষত পাহাড় এখন রাক্ষুসে থাবায় বিলুপ্তির পথে। পুকুর-খাল এমনকি নদীভরাট হলে, তা পুন:খনন সম্ভব। কিন্তু পাহাড় কেটে ফেলা হলে তা কি আর গড়া সম্ভব? অথচ কর্তৃপক্ষের উদাসীন ভূমিকার কারণে আমাদের এ সোনালী ঐতিহ্য পাহাড় এখন বিলীন হতেই বসেছে।



লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় প্রাচীন কুমিল্লার বিভিন্ন ঐতিহ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। কিন্তু এ ঐতিহ্য এখন আগ্রাসী মানুষের থাবায় বিপর্যস্ত ক্রমাগত পাহাড় কাটার জন্য। পাহাড় কাটলে কেন আমাদের এত হাহাকার, তার কারণ জানতে হবে। পাহাড় আমাদের অস্তিত্বের অংশ, সৌন্দর্যের অংশ। পাহাড় ছাড়া কি ইতিহাস আছে ? সাহিত্যও নেই পাহাড় ব্যতিত। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার এক গানে লিখেছেন- ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ...’। কিšু— কুমিল্লায় যে হারে পাহাড় কাটা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, তাতে ‘আকাশে হেলান দিয়ে বেশিদিন আর পাহাড় ঘুমোতে পারবে না।

কুমিল্লার ময়নামতির যে পাহাড়ের লাবণ্য থেকে একদা চোখ ফেরানোই যেতো না, যে পাহাড় মানুষের দৃষ্টি দারুণভাবে কেড়ে নিতো, সে পাহাড় এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ময়নামতি এলাকার স্থানীয় অনেকেই আগে খুব ভোরে সূর্যোদয় দেখতে পাহাড়ে গিয়ে বসতেন। কখনো কখনো নরম সূর্যাস্ত দেখতে বিকেলেও চলে যেতেন পাহাড়ে। কিন্তু এ প্রজšে§র ছেলেদের পাহাড় নিয়ে তেমন কোনো নান্দনিক কৌতূহল নেই। একসময় কুমিল্লার বিভিন্ন পাহাড় সিনেমার ঝলমলে রঙ্গীন পর্দায়ও স্থান পেতো। এখন আর চলচ্চিত্র নির্মাতারা কুমিল্লার পাহাড়ে তেমন আসেন না। কমতে কমতে পাহাড় কুমিল্লার পাহাড় এখন অনেকই কমে গিয়েছে। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে কুমিল্লার এ সৌন্দর্য একসময় বিলীন হয়েই যাবে।

ময়নামতি পাহাড়ে আগে অনেক গাছগাছালি ছিলো। সেসব গাছপালা সমাজের তথাকথিত নামিদামি মানুষেরা কেটে ফেলেছে। তারা এসব গাছ কেটে স’মিলে নিয়ে রাশি রাশি কাঠ চিড়াই করে বিক্রি করেছে। ওরা কেবল গাছ কেটেই নিয়েছে, নতুন করে চারাগাছ আর লাগায়নি কোথাও । কখনো কখনো কোনো পক্ষ থেকে লাগানো হলেও সেগুলোর সঠিক যতœ নেয়া হয়নি।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে পাহাড়ের উল্লেখ রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে প্রাচীন গ্রীকদের নাট্যমঞ্চ ছিলো। পৃথিবীর আদিকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত সব যুগেই পাহাড়ের সঙ্গে মানুষের ছিলো নাড়ীর যোগ । পর্যটনপ্রিয় অনেক বাঙ্গালীর আজও প্রিয় পরিভ্রমণস্থান পাহাড়। সা¤প্রতিককালে বিজ্ঞানিরাও বলছেন, পাহাড় কাটা তীব্র হলে ভূমিকম্পের মাত্রা বাড়ে, পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়। চট্টগ্রামেও বিপজ্জনক পাহাড় ধসে বিগত সময়ে মানুষ মারা গেছে। পাহাড় কাটার প্রভাবে চট্টগ্রামে ভূমিক¤েপর পরিমাণও আগের চেয়ে বর্তমানে বেশি।

লালমাটির অঞ্চলখ্যাত কুমিল্লার চমৎকার পাহাড় রক্ষার আন্দোলন এখনো তেমন শক্তিশালী হয়নি। তাই কুমিল্লার পাহাড়সহ প্রতœতাত্ত্বিক অনেক নিদর্শন ক্রমাগত বিলীন হতে যাচ্ছে। কুমিল্লা সেনানিবাসের গুরুত্বের পেছনে পাহাড়ের অবদানও কম নয়। কিন্তু এখন এই কুমিল্লায় খুব অবহেলিত এ পাহাড়। ময়নামতি-লালমাই পাহাড় এখন ধসে পড়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের কুম্ভিরাশ্র“ নির্গত হলেও পাহাড়ের মাটি নির্গত বন্ধ হচ্ছে না। পুকুর-খাল এমনকি নদীভরাট হলে, তা পুন:খনন সম্ভব। কিন্তু পাহাড় কেটে ফেলা হলে তা কি আর গড়া সম্ভব? অথচ কর্তৃপক্ষের উদাসীন ভূমিকার কারণে আমাদের এ সোনালী ঐতিহ্য পাহাড় এখন বিলীন হতেই বসেছে।

কুমিল্লার পাহাড় কাটা বন্ধে আজ সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। পাহাড় কেবল ঐতিহ্যের অংশই নয়, আমাদের অস্তিত্বেরও অংশীদার। ১৯৯৯ সালে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের এতবারপুরে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙ্গার পর গিয়ে দেখি, হাজার হাজার বন্যাদুর্গত মানুষ ময়নামতি পাহাড়েই আশ্রয় নিয়েছে। তখন আমি কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ ও দৈনিক ‘রূপসী বাংলা’য় কর্মরত। ভাবলাম, এমন দুর্দিনে দুর্গত মানুষকে কে আশ্রয় দিয়েছে, পাহাড়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় সভানেত্রী খালেদা জিয়া কুমিল্লায় এসে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাও ওই পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়েই। আমরা যে প্রতিদিন সোনার বাংলা গড়ে তোলার স^প্ন দেখি, সে সোনার বাংলা কখনো পাহাড় বিচ্ছিন্ন নয়। তাই আজ আমরা যদি নিজেদের বাঁচাতে চাই, তাহলে পাহাড়কে বাঁচাতে হবেই।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬

রেন বলেছেন: ভাইয়ের বাড়ী কি কুমিল্লাতে? আমিও তাই।

ছাত্রদেরকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান পড়াই।
আমরা চাইলে পাহাড় কাটা বন্ধে উদ্যোগ নিতে পারি।

আপনার মেইল এড্রেসটা দিন, যোগাযোগ হবে ইনশাল্লাহ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

জসীম অসীম বলেছেন: জি ভাই,বাড়ি কুমিল্লায়। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন লোকাল পত্রিকায় কাজ করছি। প্রফেসনাল। অন্য কোনো করিনি আর। এখন চাকুরি করছি একটি দৈনিক পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক হিসেবে। পত্রিকার মেইল এড্রেসটিই দিলাম [email protected] ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.