নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তর মম বিকশিত করো

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১০

[১] সব্বাই বাজারের পুতুলমাত্র
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, এমন একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যে শেখ হাসিনা কুমিল্লা সদর আসনে আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরোধীতা করেছিলেন, সেই শেখ হাসিনার মনোনয়ন পেয়ে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসন থেকে আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আবার কুমিল্লা আওয়ামীলীগের যে আফজল খান সব সময় শেখ হাসিনার কথা মেনে চলতে চেষ্টা করেছেন, সেই আফজল খানকে তখন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেননি বলে আফজলভক্তরা খুব দুঃখও পেয়েছিলেন। রাজনীতির ভাবখানা এমন যে, ‘তুই খুব ভালো তুই আয়, না এলে তোকে জোর করে আনবো, আবার সময়ে বলা হলো তুই ভালো না, তুই যা। না গেলে তোকে ঠেলে বিদায় করবো।’ এই কথা সবার বেলায়ই প্রযোজ্য? শুধু আঞ্চলিকভাবে আফজল-বাহার নন, জাতীয়ভাবে হাসিনা-খালেদা নন-গোটা বিশ্বেই এখন এমন নীতি তীব্রতর। অতীতেও এমন রীতিনীতি ছিল, তবে এতটা তীব্রতর ছিল না।
কুমিল্লাতে আমরা আফজল-বাহারকে পাচ্ছি। তাই প্রশ্ন উঠে তাদেরকে নিয়ে। আঞ্চলিকভাবে অনেকে বলেন, তারা কেমন লোক? সারাদেশে এই প্রশ্ন উঠে হাসিনা-খালেদাকে নিয়েও। আর বৈশ্বিক প্রোপটে তো এখন একক মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই। যুক্তরাষ্ট্র ভাল না খারাপ, এ নিয়েও কম আলোচনা হয় না। অনেকে বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুব আপেকি। কিন্তু প্রকৃতভাবে এর উত্তর, যুক্তরাষ্ট্র একটি নব্য সা¤্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। সারা পৃথিবীকে গিলে খাওয়াই তার লক্ষ্য। আঞ্চলিকভাবে কুমিল্লা আওয়ামীলীগ নেতা আফজল খানের পরে লোকেরা এ বিষয়ে আফজল খানের অনেক সমাজসেবা ও শিা-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ আরও অনেক গুণের কথা বলেন। বিরোধীরা বলেন, বিপরে যত কথা। কিন্তু তার দোষ যা রয়েছে, সেটা কি তার একার কিছু? আফজল খান এবং হাজী বাহারের সঙ্গে অতীতে আমার অনেকবার সংবাদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাাৎ হয়েছে। তারা উভয়ে যেমন এ অঞ্চলে খুব প্রভাবশালী ব্যক্তি, তেমনি দেখেছি উঁচু পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছেও তাদের কতো জবাবদিহিতা ও জিম্মি অবস্থা রয়েছে। এটা যে শুধু আঞ্চলিকভাবে রাজনীতির ক্ষেত্রেই বিদ্যমান, তা নয়, আঞ্চলিকভাবে কুমিল্লার যে সাংবাদিক রসমালাই, খাদি পাঞ্জাবি বা অন্যান্য বস্ত্রাদি দিয়ে ঢাকায় তার গণমাধ্যম অফিসের ‘বসে’র মন রা করেন, যদি তাকে খারাপ বলি, তবে ঢাকার সেই কর্তৃত্বশীল সাংবাদিককেও খারাপ বলতে হবে, যার জেলা প্রতিনিধির কুমিল্লার খদ্দর বস্ত্র আর রসমালাই না পেলে মাথা ঠিক থাকে না। এমনটি শুধু সাংবাদিকতার েেত্রই নয়, সমাজের সর্বক্ষেত্রেই বিদ্যমান। শেখ হাসিনার এক ঘোষণায় যেখানে কুমিল্লা আওয়ামীলীগের আফজল-বাহার ২০০৮ সালে এক হয়ে গেলেন, তবে কেন আগে এত বিরোধীতা গেল? আবার কেনই বা এখন বিরোধীতা দেখা দিলো ? এক্ষেত্রে আঞ্চলিকভাবে শুধুই কি আফজল-বাহার খারাপ? নাকি ঘটনার সব নেপথ্য পাত্রপাত্রীদের আমরা সরাসরি চোখে দেখি না? নেপথ্য অনেক গভীর। মূল কথা হলো বাজার। বাজার দখল। এই বাজার দখলের লড়াইয়ে সারা দুনিয়াই এখন উন্মত্ত। সেখানে একটি অঞ্চল আর এ অঞ্চলের পাত্রপাত্রীরাও তো ব্যতিক্রম নয়। সারা আকাশ থেকে যদি বোমাবর্ষিত হয়, তবে কি ছাতামাথায় আত্মরা সম্ভব ? মধ্যযুগের বাঙালি কবি বলেছেন, ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায় ?’ আফজল খান একসময় কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তাকে সে পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে তাকে আবার কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়কেরও দায়িত্ব দেয়া হয়। সুযোগ দেওয়া হয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনের। কিন্তু বাজারের চাহিদা ও বাজারের পলিসির কাছে আফজল খান হেরেছেন। সারাজীবন আওয়ামী রাজনীতি করার পর শেষ জীবনে এসে খুব বিশাল কিছু পাননি তিনি? মাঝখান দিয়ে এগিয়ে গেলেন বাম রাজনৈতিক বলয় থেকে আসা ওমর ফারুক। কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক হয়েছেন। তিনি তো আগে থেকেই বাজার সচেতন। বাতাস বুঝেই পদক্ষেপ নেন। বাজারের কাছে নিজেকে সমর্পন করে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু অনেকটা ‘জাম্প’ করেই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার তিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামীলীগের ও আওয়ামী ঘরানার। তাই যেখানে যেতে পারতেন আফজল খান, যেতে পারলেন না, বাজারের চাহিদার কাছে আটকে গেলেন? কারা আটকে দিল? কে দেবে তার উত্তর? কারণ এ প্রশ্নগুলো, এ সংকটগুলো এখন আর শুধু আঞ্চলিক কোনো প্রশ্ন নয়, আঞ্চলিক কোনো সংকট নয়, জাতীয় কোনো ইস্যু নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই এ জটিলতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর বাহ্যিকভাবে দোষ পড়েছে সব এ রকম আফজল-বাহার-ডলি আনোয়ার-তসলিমা নাসরিন কিংবা হাসিনা-খালেদার উপর। আসলে আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার কাছে তারা-আমরা সব্বাই তো পুতুলমাত্র, কারণ এ পুতুলখেলার সুতো অনেক উপরে। ঐ সুতোওয়ালার কাছে সকলেই আমরা জিম্মি। ঐ সুতোওয়ালা কোথাও বিশ্বব্যাংক, কোথাও আই.এম.এফ কিংবা কোথাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামেই পরিচিত। তাই বলা যায়, বড় বেশি জটিল সময় এখন। এই সময়ই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। এই সময়ই তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক, আই.এম.এফ কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অথবা সরাসরি বললে বলতে হয় মুক্তবাজারকে। এই বাজার এখন চতুর্দিকে নয়, দশদিকে কিংবা সবদিকে ‘হা’ করে আছে। এ বাজাওে শেষ পর্যন্ত কেউ জয়ী হবে না। অথচ জয়ী হওয়ার আশায়, লাভের লোভে সবাই দৌঁড়াবে। প্রকৃত যে লাভ, তা কেউ খুঁজে পাবে না। বিভিন্ন দলে, সামাজিক সংগঠনে, প্রেসকাবে কেউ স্থির থাকতে পারবে না। চড়া বাজারের গতির কাছে, লাথির কাছে টিকতেই পারবে না কেউ। কেবল আসবে আর যাবে। পাবে না কিছুই। হারাবে ব্যক্তিত্বসহ অনেক মূল্যবান মূল্যবোধ।
বিশব্যাপী এই মুক্তবাজার অর্থনীতিরকালে বাংলাদেশের কুমিল্লা সদরে, কুমিল্লা শহরে ‘আফজল খান-হাজী বাহার-হাজী ইয়াসিন’ এইসব জনপ্রতিনিধি ভালো কি মন্দ কিংবা কতটা গণমুখী, তার আলোচনা নিরর্থক। কারণ বাজার সবাইকে অস্থির করে দিয়েছে। কুমিল্লা শহরের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, যে ওবায়দুল হক দুলালের বাবা আফজল খানকে ভালো বলতেন, ২০০৮-২০০৯ সালে এসে দুলাল হত্যার পুনর্বিচার বিষয়ে তিনি বলতেন-আফজল খানও আপোষবাদী লোক। কারন তখন আফজল-বাহারের ক্ষণস্থায়ী মিত্রতা দেখা দিয়েছিল। প্রকৃত গণিত হলো আফজল খানের পেছনে থাকেন আরও অনেক আফজল খান, বাহারের পেছনে আছেন আরও বাহার, শেখ হাসিনার পেছনেও আরও অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে শেখ হাসিনাও সব সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কিংবা হয়তো নেনও না। শেখ হাসিনা মানে ব্যক্তি শেখ হাসিনা নন। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মানেই ব্যক্তি সব সময় শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত নয়। অনেকের সিদ্ধান্তের সম্মিলিত সিদ্ধান্তই শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত হয়ে অনেক সময় সামনে বা গণমাধ্যমে আসে। তাই যে লোক বুলডোজার নিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করতে এল, তাকে দেখলেই হবে না, তার পেছনে ধাপে ধাপে যে প্রতিষ্ঠান আছে, তা দেখতে হবে। সব শেষে আছে আমাদের গরীব রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের পেছনে আছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের সুদের ফাঁস মানে সেই মুক্তবাজার। বিশ্বব্যাংক আমার সঙ্গে আপনার, আফজল খানের সঙ্গে বাহারের, শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদার, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ থাকলে ব্যবসা ভালো করতে পারে। কারণ তার আরও বাজার, আরও কলোনী দরকার। এই যে জটিলতা, এর সমাধান কী? খুব বেশি দুঃসময় এখন। শুধু আমার-আপনার নয়, শুধু আফজল-বাহারের নয়, শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সারা বিশ্বেরই। এমনই এক নষ্ট সময় এখন, নষ্ট না হয়ে বাঁচাই কঠিন। অনেকেই সৎভাবে মরার মতো বেঁচে আছেন। অনেকে অর্ধেক নষ্ট হচ্ছেন। কেউ কেউ নষ্ট হয়েও শেষ বাঁচাটা বাঁচতে পারছেন না। এমনই জটিল সময় এখন। এমনই জটিল সময়ে সংসারের স্বপ্ন দেখেও বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী ডলি ইব্রাহিম শেষ পর্যন্ত তিন তিনটি বিয়ে করেন এবং শেষ পর্যন্ত একটি বিয়েও তার টেকে না এবং শেষে আত্মহত্যা করেই মুক্তির চেষ্টা করেন। সেজন্য অনেকে ডলিকে দোষ দেন। কিন্তু সব দোষ ডলির নয়। সময় এবং সার্বিক পরিস্থিতিও এখানে বিশাল ফ্যাক্টর। সময় আপনাকে বলবে, গাধা খুব উপকারী, গাধাকে টেনে সঙ্গে রাখো এবং এই সময়ই আবার বলবে গাধাকে ঠেলো। গাধাকে না তাড়ালে তুমি বাঁচবে না। সময় বলছে হাজী বাহার খারাপ, আবার সময়ই বলছে হাজী বাহার ভালো। একই কথা শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার বেলাও বলছে। আর আজকে এই সময়কে, পৃথিবীর তাবৎ অর্থনীতিকে অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করে স্বয়ং নব্য সা¤্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে পৃথিবীতে এখন রীতিমত প্রভু হয়ে বসেছে। অন্যের দেশকে সে নিজের দেশ মনে করে। নিজের বউকে অন্যের করে দেয়া এবং অন্যের বউকে নিজের বউ মনে করার রীতিনীতি কোনো সুস্থ রীতিনীতি হতে পারে না। অথচ পৃথিবী ক্রমাগত সেদিকেই হেঁটে যাচ্ছে । ১৯৯১ সালের একটি ঘটনা। ডলি ইব্রাহিম, যাকে চিনতাম ডলি আনোয়ার হিসেবে। একদিন ঢাকার শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। লোকজন বলাবলি করছে যে ডলি আনোয়ার আত্মহত্যা করেছেন। দ্রুত গেলাম পত্রিকার স্টলগুলোর দিকে। দেখলাম ঘটনা সত্য। ডলি আনোয়ারের মঞ্চ অথবা বেতারের কাজ আমি দেখিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রে তিনি অমর থাকবেন। তার একদার স্বামী আনোয়ার হোসেন বিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী। আনোয়ার হোসেনের আলোকচিত্রশিল্প প্রদর্শনী ঢাকায় আমি দেখেছি। ডলি নিজেও ছবি তুলতেন। আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও ডলির ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। ডলি শেষ জীবনে নিজের পরিচয় দিতেন ডলি ইব্রাহিম নামে। জীবদ্দশায় তিনি বিয়ে করেছিলেন তিনবার। সংসার টেকেনি। কারোর কাছেই শান্তি পাননি ডলি। খুব বেশি স্বাধীন হলে মৃত্যু ছাড়া পথ কী আর আছে? কিংবা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মানুষের স্বাধীনতাই বা কোথায় ? লিও টলস্টয়ের ‘আনা কারেনিনা’ উপন্যাসের নায়িকা ‘আনা’ দ্বিতীয় সংসারেও যখন দেখল সুখ নেই, তখন রেলের চাকার নিচে মাথা দিয়েই সুখ খুঁজে নেয়। প্রথম যখন আমি ফিল্ম বা চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করি, লেখালেখি করি অথবা প্রশিণ নেই, তখন একটা কমিটমেন্ট ছিল। দিন যত যাচ্ছে, ততই যেন কমিটমেন্ট থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। না সরেও উপায় নেই। বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছি। সবাই বদলে যাচ্ছে। কেউ যেন আর দেশের কথা ভাবে না, কেবল নিজের চিন্তা। এখন দেখছি শুধুমাত্র প্রাণে বেঁচে থাকাটাই সব থেকে বড় কমিটমেন্ট। বাজারের এমনই চাপ এবং তাপ। আমাদের পারিবারিক, সাংগঠনিক বিশ্বাসগুলোও ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। নিজেকে বিক্রিও করতে পারছি না। আবার বাজারের কাছে আত্মসমর্পণ করে বাঁচতেও পারছি না। এমনকি দেশের কাজেও আসছি না। এমনই দুঃসময় এখন। কলম আর ক্যামেরাকে অস্ত্র যারা করেছেন, তাদের শেষ পরিণতির অনেক উদাহরণতো চোখের সামনে আছেই। জীবনের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ কখনো কি ভেবেছিলেন শেষ জীবনে তার সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর একটি সম্পর্ক গড়ে উঠবে? তার বৌদি কাম্বরীর আত্মহত্যার কারণ নিয়ে গবেষকগণ অনেক মাথাব্যথা করবেন। কবি নজরুল এভাবে মাত্র তেতাল্লিশ বছরে নির্বাক হয়ে যাবেন ? ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করে যে হুমায়ুন আহমেদ জনপ্রিয়তায় বিপ্লব আনলেন, তিনি পরে ফিল্ম মেকারও হলেন। তার ‘আগুনের পরশমণি’-‘শ্রাবণ মেঘের দিন’-‘দুই দুয়ারী’সহ আরও ছবি আমি দেখেছি। ভালো লেগেছে। তিনি বাজারী বই বিস্তর লিখেছেন। রেহাই পাননি। তিনি কি পূর্বে কখনো ভেবেছিলেন স্ত্রী গুলতেকিনের বদলে শাওনকে স্ত্রী করবেন? আর জন্মদিনের কেক কাটবেন শাওনকে নিয়ে। ভাষা আন্দোলন করে আমরা উর্দুকে বিদায় করেছি। কিন্তু ইংরেজি ভাষার কি কোনো আগ্রাসন নেই? নোবেল পাওয়া অনেক লেখক ইংরেজির আগ্রাসনের প্রতিবাদ করেছেন। কেনিয়ার লেখক ন্গুগি উয়া থিয়োংও এক সময় জেমস ন্গুগি নামে লিখতেন। পরে লিখেন কেনীয় মাতৃভাষায়। ইংরেজিতে আর লিখেননি। লিখবেন না প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। নগুগি বলেন, ইংরেজি ভাষা আর উপনিবেশিক শাসন একই। ইংরেজিতে না লেখা আর উপনিবেশী অধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করা তার কাছে একই কথা ছিল। তবে কেন উর্দু নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যথা হয়েছিল? আর ইংরেজি নিয়ে নয়? ভারতে কিন্তু হিন্দি আর ইংরেজির আধিপত্য বেড়েই গেল। অনেক কারণ রয়েছে এর নেপথ্যে। বর্তমান প্রতিযোগিতার এ বাজারে ইংরেজি ছাড়া বাঁচা যায় না। ইংরেজি হলো অক্সিজেন। সারাবিশ্ব ভ্রমণের পাসপোর্ট। জাতীয়তার স্বার্থে কে এমন লাভের সুযোগ ছাড়ে ? বলা হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। বলা হচ্ছে খোলা বাজার। এ বাজারে নিজেকে বিক্রি না করে বাঁচার দিন আপাততঃ শেষ। ভবিষ্যতে কী হয়-তা ভবিষ্যৎই বলবে। এ খোলা বাজার নিজেকে বিক্রি করতে না পেরে আমিও ব্যক্তিগতভাবে অনেক তিগ্রস্থ হয়েছি। সংসারও ভেঙ্গেছে একবার আমার এই বাজারের চাপে। সুতরাং আপনি বিক্রি হবেন না, তো ভিুক হয়েও মুক্তি পাবেন না। আর যদি বিক্রি হোন, তাহলেও প্রকৃত যে বাঁচা, সেই বাঁচা বাঁচবেন না। সময় এখন এ রকমই। কিচ্ছু করার নেই। কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রিত চায়নার বাজার যখন থেকে অন্যদের জন্য খুলে দেয়া হয়, তখন থেকেই কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। ঐ খোলা বাজারই গিলে খেয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। গিলে খাচ্ছে আফগানিস্তান-ইরাক। আরও খাবে। ডাইনোসরের মতো। তারপরও যখন আর কিছুই থাকবে না খাওয়ার, তখনই মরবে ডাইনোসোরটা। কিন্তু সেদিন অনেক দূরে। এই ডাইনোসোর এখন আমেরিকা।
বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে ভারতের কতো ল যুবতীর। টাকার অভাবে বাবা-মা বিয়ে দিতেও পারছেন না। অন্যদিকে ফিল্ম একট্রেস শিল্পা শেঠী একটি ই-মেইল এড্রেস খোলার মাত্র ৫ দিনের মাথায় একবার এক হাজার বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ব্যাপারটা কী? খোলাবাজার। মানে ল্যাংটা বাজার। সকলকে ল্যাংটা না করা পর্যন্ত তার নিস্তার নেই। আজ সে সিনেমার নায়িকাদের ল্যাংটা করেছে, আমরা দেখছি, আগামীকাল আপনার মা-বোনকে ল্যাংটা করাবে। আজ আলমগীর কবির, ডলি ইব্রাহিম, তসলিমা নাসরিন অথবা নায়ক আলমগীরের সংসার ভেঙ্গে গেছে, আগামীকাল আপনাদেরগুলোও ভাঙ্গতে পারে। নিস্তার নেই। জাল পাতা আছে। ধরা আপনাকে পড়তেই হবে। কারণ আপনি ইংরেজি না শিখে পারবেন না। সিনেমা-ইন্টারনেট-মোবাইল-কম্পিউটার ব্যবহার না করে জীবিকা অর্জন করতে পারবেন না। ব্যস হলো। ঐ পর্যন্ত গেলে বা এলেই হলো। তারপর সময় বা বাজারই পথ দেখিয়ে নেবে। তথ্যের যে নিয়ন্ত্রণহীন অবাধ প্রবাহ, তা যে বিষের অধিক মারণাস্ত্র, তা সময় হলেই টের পাওয়া যাবে। আজ এলিজাবেথ টেলরকে দেখছেন ১০ বিয়ে করেছে। আগামীকাল দেখবেন আপনি সাধারণ মানুষ হয়েও ৫ বিয়ে করেছেন। দুঃখে মানুষ লিভ টুগেদার করবে বেশি। বিয়ে করবে কম। কিন্তু তাতেও শান্তি পাবে না। জায়গামতো কনডম ব্যবহার না করে মুখের মধ্যে কনডম নিয়ে চুইংগামের মতো চিবানো যেই কথা, সারা পৃথিবীর কিশোর-কিশোরীদের নিয়ন্ত্রণহীন তথ্যের শিকার হওয়াও ঐ একই কথা।
খোলা বাজারে চলচ্চিত্র খোলা। ছবির নায়িকার শরীর খোলা। সংস্কৃতি খোলা। পরিবেশ খোলা। শুধু খোলা আর খোলা। খোলার এক অদৃশ্য কারাগার। আমরা ভাবছি মুক্ত। কিন্তু বন্দী। দেশ বন্দী, মানুষ বন্দী, শরীর বন্দী, মানুষের গঠন বন্দী, চরিত্র বন্দী, বয়স বন্দী, চাহিদা বন্দী, সব বন্দী ঐ বাজারের কাছে। সাময়িক মুক্তির পথ হলো বাজারের কাছে আত্মসমর্পণ করা। কিন্তু তাতেও মুক্তি নেই। পাকিস্তান এ থেকে বাঁচতে খুব চেষ্টা করেছে। চীন পারেনি। পাকিস্তান পারবে? পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাসে-ডাইনিং হলে ছেলেমেয়ের একসঙ্গে বসে খেতে পারে না। এ ব্যবস্থা উঠে যাবে। বোরখাও থাকবে না। থাকলেও অপব্যবহার হবে। পতিতারাও বোরখা পরে। ১৯৯২ সাল থেকে পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ। এ অবস্থাও থাকবে না বেশিদিন।
১৯৮৯ সাল। একদিন সকালে পত্রিকা খুলে দেখি গণতন্ত্রের দাবিতে চীনে বিশাল ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ। খোলাবাজার চীনে গণতন্ত্র হয়ে ঢুকেছে তখন। চীন সমাজতন্ত্রের দেশ। সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্টরা ডিক্টেটর। সুতরাং গণতন্ত্রের দাবী মানতে রাজি নয়। গণতন্ত্রের দাবি আদায়ের ল্েয ল্েয লাখ লাখ ছাত্র সমবেত হয় রাজধানী বেইজিং এর তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে। সরকারের হুশিয়ারী কানে নেয়নি ছাত্ররা। দাবিতে অটল। শেষে আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর গুলি আর ট্যাংকের নিচে পিষ্ট হয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র নিহত হয়। অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তারপরও খোলাবাজারকে কি চীন ঠেকাতে পেরেছে? পারলেও কতোদিন পারবে? চীনের েেত্র এমন হলে আমরাতো কোনো উদাহরণেই পড়ি না। সময়ই এখন নষ্ট। আপনিও নষ্ট না হয়ে বাঁচবেন না। অধিকাংশ সিনেমাও নষ্ট হয়ে গেছে। আফজল খান-হাজী বাহার তারাও সবাই এবং আমরা সব্বাই এই সময়ের পুতুলমাত্র। মুক্তবাজার অর্থনীতির পুতুল। আর আমরা কে কতেটা গণমুখী-কতটা নই-সেটা তো অনেক পরের বিষয়।
[২] রাইটার্সক্র্যাম্ব’ রোগীর অভিনয় করে যাচ্ছি আমি
আমিও সৎ নই। আমার লেখাও নিরপে নয়। আমিও বিভিন্ন চাপের কাছে-লোভের কাছে মাথা নত করি-করছি-তবে এখনও খুলে বলার সঠিক সময় আসেনি। আমার লেখায় অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। বলা চলে বাধ্য হয়েই এসব বিচ্যুতির কাছে মাথা নত করেছি। কারণ মাথা নত না করলে মাথা বাঁচবে না। ইদানীং মগজহীন-বিদ্যাহীন লোকজনও অসংখ্য জায়গায় নেতৃত্ব দিয়ে বেড়াচ্ছে। লেখার উপায় নেই-তবে উপায় আছে-যখন সময় হবে। কখন সময় হবে? হবে। হবেই। কারণ সময় বদলায়। মতা বদলায়। বদলানোটাই পৃথিবীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সৎ লেখা লিখতে হলে দেখা যায় নিজের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি লেখা ছাপা হওয়ার কথা। কারণ মানুষ নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কেই বেশি জ্ঞান রাখে। কিন্তু কেউ কি লিখে? তাই নিজের বিরুদ্ধে লেখা ছাপানো কঠিন। অনেকে আত্মসমালোচনায় বিশ্বাসও করেন না। এমনকি কেউ কেউ নিজের পিতামাতার পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। এসব লিখলে খবর আছে। আমি নিজের বিরুদ্ধে লেখা ছাপার েেত্র খুবই সহিংস-এমনকি নৃশংসও। কিন্তু সময় এখন খুবই খারাপ। দালালি অন্যেরও যেমন করতে হয়-তেমনিভাবে সবার কাছে বলতে হয় আমি ভাল-আমার কাজ ভাল-আমার লেখা ভাল...ইত্যাদি। তাই আমিও দালাল হচ্ছি ক্রমাগত। অনেকে বলছেন-আমার লেখায় বিশ্বাসযোগ্যতা কম-শিল্পমান কম। আমিও বলেছি আমার লেখা অত্র অঞ্চলের সর্বোচ্চ ব্যর্থ লেখা। সৌজন্যতা দেখানোর জন্য বলিনি। সত্যি সত্যি বলেছি। তারপরওতো লিখতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেকে কলম টাকার কাছে-লোভের কাছে-স্বার্থের কাছে বন্দী করে রাখে।
অন্যের বিরুদ্ধে যেমন লেখা যাচ্ছে-নিজের বিরুদ্ধে লেখা যাচ্ছে না। কার বিরুদ্ধে লিখবো আমি? নিজের অস্তিত্বও বিলীন হবে। আমি কি আমার পরিবারের বিরুদ্ধে লেখা ছাপাতে পারবো? আমি কি আমার বন্ধুর মায়ের পরকিয়া প্রেমের ঘটনা লিখতে পারবো? পারবো কি নিজের বিরুদ্ধে সত্যি সত্যি যাবতীয় নেতিবাচক কথাগুলো লিখে দিতে? না পারলে তবে আর ‘নিরপে’ থাকলাম কোথায়? অন্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট ছাপাতে পারলে নিজের বিরুদ্ধে কেন ছাপাতে পারবো না? অথচ তাই হচ্ছে। আমরা আমাদের নিজেদের এবং প্রতিবেশিদের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি রিপোর্ট পেয়ে থাকি। সবাই। কিন্তু সেসব কি আমরা লিখি? লেখার সময় স্বার্থের বিষয়টি এবং নিজেদেরকে বাঁচিয়ে লেখার বিষয়টি বড় হয়ে ওঠে। এটা কোন সৎ লেখালেখি হতে পারে না। সৎ লেখা নিজের বিরুদ্ধে -এমনকি নিজের পিতার বিরুদ্ধে যেতেও দ্বিধা করেনা। পিতা যদি রাজাকার হয়ে থাকে-আর তার সন্তান ‘লেখক’ হলে তার পিতার সেই ভূমিকার বিষয়টি সঠিকভাবে লিখতে না পারলে তার লেখালেখিটাই ব্যর্থ। আমরা সে রকম লেখা লিখতে পারিনা-কিন্তু বিদেশী অনেক লেখকই লিখতে পেরেছেন সেসব লেখা। একজন রাজনৈতিক নেতা শৈশবে আমাকে বলেছিলেন-রবীন্দ্রনাথ হিন্দুদের কবি-আর নজরুল মুসলমানদের। পরে বড় হয়ে শুনেছি পাকিস্তান আমলে কারা রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করেছিল। কবি নজরুল হিন্দু দেবদেবী নিয়েও অনেক লিখেছিলেন। তার বিখ্যাত ‘দারিদ্র’ কবিতায় আছে যীশুখ্রীষ্টের কথা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় আছে সকল ধর্মের উপকরণ। অথচ সাম্প্রদায়িক মানুষ তাদের হিন্দু-মুসলমান ভাবে-তাদের মানুষ ভাবে না। কুমিল্লার একজন রাজনীতিককে আমি চিনি-যিনি মদ এবং আরেকটি অবৈধ জিনিস [...] ছাড়া থাকতে পারেন না-সেটা লিখে কি আমি হজম করতে পারবো? ‘আদম’ ব্যবসায়ীর কথা বলি আমরা প্রায়ই। কিন্তু যারা ‘হাওয়া’ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত-তাদের নাম আমরা সচরাচর বলতে পারি না। এই ‘হাওয়া’ ব্যবসায়ীরা ইদানীং হাওয়ায় [সুদূর অট্টালিকায়] থাকতে শুরু করেছে-‘হাওয়া’ ব্যবসার লাভের টাকায়। এই ‘হাওয়া’ ব্যবসাই হলো সম্ভবত এই যুগের আলাদিনের চেরাগ। এই ‘চেরাগ’ একবার যে হাতে পেয়েছে-তার আর টাকার অভাব পড়েনা। সারাদেশ না খেয়ে থাকলেও সেদিকে তার চোখ যায় না। সে ব্যস্ত তার ‘চেরাগ’ নিয়ে। আমরা হুট করে চট্টগ্রামের ‘হাতকাটা ইয়াসিন’-কুমিল্লার ‘হাতকাটা সোহাগে’র নাম লিখে ফেলি। কিন্তু আমাদের পরিবার-পরিজনদের মধ্যে কোনো ‘কানকাটা’র অপকর্ম থাকলে লিখতে পারি না। চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী ‘কানা বক্কর’কে নিয়ে যত সহজে লিখে ফেলা যাচ্ছে-তত সহজে কুমিল্লার কোনো এক চোখওয়ালা ‘শুক্কর’কে নিয়ে লেখা যাচ্ছে না। ইরাক খারাপ-ইরান খারাপ-আফগানিস্তান খারাপ-এমনকি পাকিস্তানও? কিন্তু হিন্দুস্তান বা আমেরিকা কি দুধে ধোয়া? লেখার সময় যদি লেখককে এত সতর্ক থাকতে হয়-যদি ভাবতে হয় কী লিখলে কার তি হবে-তাহলে প্রকৃত লেখাটি লেখা যাবে না। লেখার সময় যদি লেখক মনে করেন-এভাবে লিখলে লেখাটি ছাপা হবেনা-ছাপা সম্ভব নয়-ওভাবে লিখলে আমার ‘মামা’ কষ্ট পাবে-সেভাবে লিখলে আমার ‘কাকু’ কষ্ট পাবে-না হয় ‘বন্ধু’ কষ্ট পাবে-তাহলে লেখালেখিটা করাই বৃথা। আমার অবস্থা হয়েছে অনেকটাই সেরকমই। বলা যায় ‘রাইটার্সক্র্যাম্ব’ রোগীর মতো। এই রোগী লিখতে পারে না। একটু লিখলেই মাথায় যন্ত্রণা হয়-হাতের আঙ্গুল ধীর ধীরে অসাড় হয়ে যায়। আমি টানা লিখতে পারি। লিখলে মাথায় যন্ত্রণা হয় না। আঙ্গুলও হয়না অসাড়। তারপরও লিখতে না পেরে ‘রাইটার্সক্র্যাম্ব’ রোগীর অভিনয় করে যাচ্ছি আমি। কার বিরুদ্ধে লিখবো আমি। নিজের বিরুদ্ধে কি সত্যি লেখা যায়? শুধু আমি একা নই-কেউ কি লিখতে পারছে? তাহলে আমরা নিরপে-কোথায়? লিখতে হলেতো অন্যের বিরুদ্ধে যেমন লেখা যায়-তেমনিভাবে নিজের বিরুদ্ধেও লেখা উচিত। তা না হলে লিখে কী লাভ? এমন নিরপে লেখা না লিখতে পারলে লেখালেখি ছেড়ে দেয়াই উচিত।
[৩] এখন আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেই
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষে আমি পেটের তাগিদে কুমিল্লার কিছু আঞ্চলিক সংবাদপত্রে কাজ শুরু করি। কিন্তু আমার এত অভাবের মাঝেও কোথাও একটু স্থির হতে পারিনি। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ২০ বছরে আমি পত্রিকা বদল করেছি প্রায় ১০ বার। এতে করে আমার অনেক বদনামও হয়েছে।
একবার কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘অভিবাদন’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল হাসানাত বাবুলের বাসায় আমার সঙ্গে দেখা হয় কুমিল্লার এক সময়ের তুখোড় সাংবাদিক আবদুল আজিজ মাসুদের সঙ্গে। তিনি আমাকে অনেক সুন্দর পরামর্শ দেন জীবন গঠন বিষয়ে। বলেন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে। সুতরাং কিছু একটা করতেই হবে। স্থিরতারও প্রয়োজন রয়েছে। মাসুদ ভাই বাবুল ভাইয়ের বাসায় এসেছিলেন নাজনীন আক্তার লীনা ভাবীকে নিয়ে। লীনা ভাবী এজিবি-র একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মেয়ে।
কুমিল্লা শহরের এক সময়ের আরেক সাংবাদিক আলী আকবর মাসুমের সঙ্গেও একবার আমার কথা হয় কুমিল্লার দৈনিক ‘শিরোনাম’ কার্যালয়ে। তিনিও আমার মঙ্গল কামনাকারী একজন লোক। আমাকে বলেন-যদি তুমি মনোযোগী হতে-তাহলে খুব উন্নতি করতে। তুমি কাজ জানো-তোমার দরকার শুধু স্থিরতা।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনোয়ার হোসেন একবার বলেন-তুমি তো অনেকদিন লেখালেখি করো। তোমার উন্নতি হচ্ছে না কেন? একটি পর্যায়ে তো যেতে হবে। অবস্থান যদি পাকাপোক্ত না হয়-তো কী লাভ?
আমি বলি-যেহেতু সংবাদ এবং নান্দনিক লেখালেখির চেয়েও মৌলিক চাহিদা পূরণ আমার জন্য বেশি জরুরী-তাই সময় লাগছে বেশি।
কুমিল্লার দাউদকান্দির সাংবাদিক শামীম রায়হানের সঙ্গে একবার আমি দেখা করতে যাই এশিয়াটিক সোসাইটির একটি রিপোর্ট করার কাজে সহযোগিতার জন্য। শামীম আমার বন্ধু মানুষ। ‘শুভেচ্ছা ক্যাসেট কর্নার’ নামে দাউদকান্দিতে তার একটি দোকানও ছিল। শামীম আমাকে বলেন, দাদা-আপনি এতো অস্থির কেন?
আমি বলি, আপনিও কি স্থির? আসলে আমি নিজের ইচ্ছের বাইরে চলতে পারি না। চকবাজার সাহাপাড়ার ‘সপ্তবর্ণা’ বাসার কাউসার আহমেদ বলেন-তোমার দ্বারা কিছু হয়না কেন?
আমি বলি, কারণ আমার হাতে টাকা নেই। টাকার অভাবে আমি শেষ হয়ে গেছি। চান্দিনার সাংবাদিক তাহমিদুর রহমান দিদার একসময় চান্দিনা হাইস্কুল মার্কেটে ‘চিকিৎসা নিকেতন’ নামে একটি ওষুধের দোকান চালাতেন। তিনি বলেন-আপনাকে নিয়ে এত বিতর্ক কেন? আমি বলি-কারণ আমার চিন্তা কারো সঙ্গে মিলে না বলে? তিনি আমাকে আরও বলেন-আপনার কি যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না? আমি বলি-না। কারণ মূলত আমি লেখক এবং আমার কোনো বই-ই টাকার অভাবে এখনও ছাপা হয়নি। লেখকদের বই ছাপা হলেও মূল্যায়ন হয় অনেক দেরীতে। রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত বিভাগে কাজ করেছিলেন বলেই জীবদ্দশায় কিছুটা মূল্যায়নের মুখ দেখেছিলেন।
চান্দিনার কবি মোহাম্মদ আলী ইংরেজিতে লেখালেখি করেন। আমাকে তিনি একবার বলেন-আপনি চাকুরি ছাড়ার সাহস পান কোথায়? আমি বলি-নিজের কাছে। আমি চাকুরি ছাড়তে পারি-কারণ আমার লোভ লালসা কম। আমি অনায়াসেই আরাম ত্যাগ করতে পারি। তাই কম খরচে চলতে পারি-চাকুরি ছেড়ে বাঁচতেও পারি। ‘অপর্না’ নামে কুমিল্লার দত্ত হোস্টেলে একটি মেয়ে থাকতো। একবার সে আমাকে প্রশ্ন করে আপনিতো রাজনীতিও করেছেন। আমাদের দেশের নেতারা দেশ কেমন চালাচ্ছেন? আমি বলি-আমাদের দেশের নেতারা দেশ চালান না। এ দেশ চালায় আমেরিকা। আমাদের দেশের নেতারা ব্যস্ত তাদের ভাগ-বাটোয়ারার ঝগড়া নিয়ে। তরুণ কবি পিয়াস মজিদ একবার আমাকে বলেন- লেখার মূল্যায়ন তো পরে হয়। তো লিখে লাভ কী? আমি বলি-লিখেই সবচেয়ে বেশি লাভ হয়-যদিও অনেক েেত্র মূল্যায়ন পরে হয়। চলচ্চিত্রের আরও প্রসার হলেও লেখালেখিও মরবে না। পিয়াস একসময় কুমিল্লায় ‘ভোরের পাখি’ নামে নজরুল বিষয়ক একটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংকলন সম্পাদনা করতেন।
আপনি কি বাঙালী নাকি বাংলাদেশী? একবার দুষ্টুমী করে এ প্রশ্নও সে আমাকে করে। আমি উত্তরে বলি-দুটোই। কুমিল্লার কাগজের একসময়ের সাংবাদিক কাজী সালমা সাঞ্জু আমাকে একবার প্রশ্ন করে আপনি কি সুবিধাবাদী ? আমি উত্তরে বলি-স্ট্রাগল করার সাহস আমার নেই। আমি খুব বেশি না হলেও ততটা সুবিধাবাদী-যতটা না হলে আমি ঠিক বাঁচতে পারবো না। কম্প্রোমাইজ আমিও করি। তবে খুব বেশি পরিমাণে নয়।
প্রফেসর খন্দকার আলী আর রাজী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক ছিলেন। দৈনিক ‘আমাদের সময়’ পত্রিকা বাজারে আসার আগেই সেই পত্রিকায় তিনি আমার চাকুরি ঠিক করেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি একবার আমাকে বলেন, যেহেতু বাম রাজনীতির সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন তবে কি এখনও আপনি মার্কসিস্ট? আমি বলি-না। আমি এখন আমিসিস্ট। তিনি আমাকে বলেন-লেখালেখি করেন তো আপনার বই বের হয় না কেন?
আমি বলি-কারণ আমি মুনাফা আর বিনোদনের জন্য লিখি না। তাছাড়া আমার নিজের হাতেও টাকা নেই। কে ছাপাবে আমার বই? আর রাজি বলেন-একটি লেখা তৈরি হওয়ার পর আপনি কি আর অদল-বদল করেন? আমি বলি-আমি মনে করি কাটাকাটি না করা পর্যন্ত কোনো লেখাই প্রকৃত রূপ পায় না। সর্বশেষ তিনি আমাকে বলেন-আপনি কি আধুনিক? উত্তরে আমি স্পষ্ট করে বলি-না। আধুনিক হওয়ার মতো মনোবল আমার নেই। রাজি হেসে ফেলেন এবং বলেন-আপনি কি এখনও কোনো পার্টি বা দল করেন? আমি বলি-না। কারণ দল করলে দালাল হতেই হয়। রাজি বলেন-খবরের কাগজে কবিতা-গল্প ছাপা বিষয়ে আপনার মতামত কি? আমি বলি-খবরের কাগজ আর সাহিত্যের কাগজের প্রকৃতি আলাদা। রাজি আরও বলেন-যেহেতু সমাজ বদলাবেন বলে একসময় ভাবতেন-তো এ সমাজকে আপনি কিভাবে দেখেন? আমি বলি-এটা কোনো সমাজই না। রাজি হেসে বলেন-আপনি কি নিজেকে মেধাবী মনে করেন? আমি উত্তরে স্পষ্ট করি বলি-না। তবে আপনি কি রনশীল? অনেকটা। কারণ আমি এখনও অনেকটা ভীতু। আপনি কেন প্রগতিশীল নন? আমার উত্তর-কারণ আমার সাহস খুব কম। আপনার পেশা কি সাংবাদিকতা? উত্তরে আমি বলি-না। রাজি বলেন, পত্রিকার চাকুরিতো করেছেন। আমি বলি পত্রিকার চাকুরি করলেই কি সাংবাদিক হয়ে যায় ? তিনি বলেন-তাহলে সাংবাদিক কারা? আমি বলি, যারা প্রকৃত সাংবাদিক-তারাও সাংবাদিক, আর যারা চুতিয়া-তারাও এখন সাংবাদিক। এমনকি ইদানীং কিছু চুতিয়া আর বাইনচোত পত্রিকার সম্পাদকও হয়েছে-সারাদেশেই-যারা সংবাদ সম্পাদনাও ভালোভাবে শিখেনি। উত্তর শুনে রাজি একধরনের তৃপ্তি পান।
রাজি বলেন-আপনার কি কোনো শত্রু আছে ? আমি বলি-আছে। তবে নাম বলা নিরাপদজনক নয়। আপনি কি শিল্পী? আমি বলি- শিল্পী হওয়া এতো সহজ নয়। তবে শিল্পের নাম করে আমি পণ্য উৎপাদন করি না। কুমিল্লার সাম্প্রতিক পত্রপত্রিকা সম্পর্কে আপনার মতামত কী? আমি বলি-কুমিল্লার সাম্প্রতিক পত্রপত্রিকা সাংবাদিকতার প্রকৃত বিকাশের চাইতে ব্যবসার জন্যই বের হয়েছে। অতিরিক্ত মন্তব্য নিস্প্রয়োজন। সাংবাদিক মোবারক হোসেনের বাড়ি বুড়িচংয়ের শংকুচাইলে। তিনি একবার কথা প্রসঙ্গে বলেন-আপনি তো পড়তে গিয়েছিলেন ঢাকায় ? গত ১৫-২০ বছর ধরে কুমিল্লায় কেন পড়ে রয়েছেন? আমি বলি-কুমিল্লায় আমি আটকে গেছি। একজন আমাকে বলেন-ছবি আঁকেন কেন? ছবি আঁকার প্রতিভা কি আপনার আছে? আমি বলি-ছবি আঁকার কোনো প্রতিভা আমার নেই। তবু শখে ছবি আঁকি। একবার চাকুরি ছেড়ে বেকার হলে দৈনিক কুমিল্লার কাগজের অফিস সহকারি ফারুকুল ইসলাম ফারুক বলেন-আবার কি সাংবাদিকতা করবেন? আমি বলি-করতে পারি-নাও করতে পারি। আমি কোনো বিষয়েই নিশ্চিত নই। কুমিল্লার কবি জহির শান্ত বলেন-মেয়েদের বিশ্বাস করেন? আমি বলি-করি। আবার করিও না। যখন যেমন। কারণ মেয়েরা ভীষণ জটিল। জহির আরও বলেন-আপনি কি প্রথা বিরোধী? আমি বলি-এক সময় হতে চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। তবে চেষ্টা এখনও আছে। ফটো সাংবাদিক ...বলেন-সমাজের সঙ্গে আপনি কতোটা আপোষ করেন? আমি বলি-যতোটা না করলে মারা পড়বো। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার সাংবাদিক ইলিয়াস আহমেদ একবার আমাকে বলেন, আপনার এতো বদনাম কেন? সবাই বলে, আপনি নাকি অস্থির? আমি বলি-যারা বদনাম করে বেড়ায়-আমি তাদের পোষ মানিনি বলে। ইলিয়াসের সঙ্গে কথা হয় তখন বরুড়ার মদিনা মার্কেটে। কুমিল্লার কবি নীলোৎপল অপু বলেন-আপনি কি খুব বেশি প্রচার প্রিয়? আমি বলি-ততটা নয়। তবে প্রচারবিমুখও নই। আমি কাজ করতে চাই এবং দেখিয়ে দেয়ার বাসনা লালন করি না। ড. স্বপ্না রায় যখন বলতেন, বাংলা কার কবিতা তোমার বেশি ভালো লাগে? আমি বলতাম-বাংলা কবিতার রাজা হলেন জীবনানন্দ দাশ। আসলে তিনিই তো কবিগুরু। স্বপ্না রায় এমন কথা শুনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাতেন। তসলিমা নাসরিন কেমন লেখক? বলতাম-খুব উঁচু মানের নয়। তার ‘লজ্জা’ উপন্যাস লেখার মূল কারণ ছিলো ব্যবসা। তসলিমা নিজেও অসাম্প্রদায়িক নন। তার ‘ক’-এ তিনি নিজের প্রকৃত দোষগুলো সঠিকভাবে লিখতে পারেননি। ‘নির্বাচিত কলাম’ মোটামুটি। তবে তার ‘ফেরা’ উপন্যাসটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। কুমিল্লার প্রথম নাট্যাভিনেত্রী কল্যাণী রেিতর বাসার পাশেই থাকতাম একসময়। একদিন তিনি বলেন-তোমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কে? আমি বলি-এক সময় লেনিন ছিলেন। মহাতœা গান্ধী কিছুটা সাম্প্রদায়িক হলেও তাকেই পরে বেশি পছন্দ করেছি। অহিংস দর্শনের কারণে। আর এখন কোনো প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেই।
[৪] অন্যের সুন্দরী স্ত্রী ভোগ
এ সমাজ পুরুষ নিয়ন্ত্রিত। যে পুরুষ নারীকে নিয়ন্ত্রণ করছে-সে পুরুষকেও নিয়ন্ত্রণ করছে অর্থ-টাকা। টাকা বলতে-বাজারের টাকা-মুক্তবাজারের টাকা। আর তা সব েেত্র ব্যবসার লাভের টাকা নয়-রীতিমত সুদের টাকা। সুদ খাওয়া আর অন্যের স্ত্রী ভোগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এমন বক্তব্য বিভিন্ন ধর্মের। কারণ অন্যের স্ত্রী যেমন নিজের স্ত্রী নয়-সুদের টাকার লাভের টাকাও প্রকৃতপে নিজের টাকা নয়। কিন্তু আজকাল অন্যের সুন্দরী স্ত্রীর দিকে চোখ দেয় না-অথবা সুদের টাকাতে তৃপ্তি পায় না-এমন মানুষের সংখ্যা বিরল। কারণ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার খাওয়ার নামই হলো সুদ।
এই সুদের টাকা না খাওয়ার েেত্র অনেক ধর্মে অনেক বিধান রয়েছে। কিন্তু ধর্মের এ বিধান মানতে হলে বিলাসী জীবনযাপন করা যাবে না। ইসলাম ধর্মেও এমন অনেক নির্দেশ রয়েছে। আল কুরআন-এর সূরা বাকারাসহ অনেক সূরায় সুদ ব্যবসার নির্মমতার বিপে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ রয়েছে। মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে-রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন তাদের প্রতি-যারা সুদ খায়-সুদ দেয়-সুদের হিসাব লিখে ও সুদের সাী দেয়- তারা সবাই সমান অপরাধী। কিন্তু কতোজন মুসলিম এই সুদের কারবার থেকে বিরত আছেন? অনেকে নামাজ পড়েন-কিন্তু সুদ মজা লাগে। রোজাও হয়তো রাখেন-কিন্তু সুদের টাকায় ইফতার খান-সেহরী খান। সুদের টাকায় হজ্ব করে ‘আলহাজ্ব’ হয়ে সুখ অনুভব করেন-স্বপ্ন দেখেন বেহেস্তে যাওয়ার। ইস আল্লাহর যেন ঠ্যাকা পড়েছে ঐ সুদের কারবারীকে বেহেস্তে নেওয়ার। এসব আমরা সবাই জানি-কিন্তু বলি না কিংবা বিষয়গুলো প্রমাণ করা খুবই শক্ত।
এই যে সুদের টাকার ব্যবসা-তার সর্বোচ্চ বড় প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ [ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড] ...ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান সারা পৃথিবীতে তার ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই যে আমাদের তৃতীয় বিশ্বের এনজিওগুলো-তা ওসব প্রতিষ্ঠানেরই ‘মিনি’ সংস্করণ। ব্যবসার জন্য এখন সব কিছুই ‘মিনি’ হয়ে গেছে। ব্যাংক-শ্যাম্পু-টুথপেস্ট-স্নো-গুড়া মশলা...সব। ুদ্র থেকে ুদ্রতর হয়ে আপনার জীবনে এসব পণ্য প্রবেশ করে আপনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে বিরাট অঙ্কের লাভের টাকা। বলছে সেবার কথা-নিচ্ছে লাভের টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্র কতো হিংস্র। লাভ না হলে সেবা দিচ্ছে না-সেবার কেমন নমুনা। এর নাম কখনোই সেবা হতে পারে না। এর নাম হলো ‘থাবা’।
‘মিনি’ হয়ে দেশে দেশে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে বাজার। সেই বাজারের নাম কখনো ‘ট্যাক্স’ কখনো ‘সেক্স’। কখনো ঘরে ঢোকার সময় বলবে আপনাকে দিতে এসেছে। আসলে সে আপনার কাছ থেকে লাভের টাকাসহ চরিত্রটাও নিতে এসেছে। বিভিন্ন নামে সে আপনার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। হয় পত্রিকা-নয় টেলিভিশন-কিংবা ইন্টারনেট অথবা গুড়া মশলা-সাবান-শ্যাম্পু-কনডম-বডি লোশন-বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া কোম্পানী-কতো নামে কতো ছলে।
বিশেষ করে সহজ-সরল নারীদের দিকে তার চোখ ভয়াবহ। নারীকে ওষুধ কোম্পানী পণ্য মনে করে- মানুষ মনে করে না। তাকে পণ্য শুধু মনেই করে না-তাকে দিয়ে সে পণ্য বিক্রি করায়। বিনিময়ে নারীকে শোনায় স্বচ্ছল হওয়ার গল্প-নারী স্বাধীনতার গল্প-আকাশ ছোঁয়ার ভেলকিও অনেক দেখায়। ধর্মে-সমাজে-পরিবারে নির্যাতিত নারী তাই স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা মোহগ্রস্থ হয়। পরে দেখে কিছুই তেমন লাভ হয়নি। কষ্টও সে করেছে-অথচ স্বামী-পিতা-পুত্র সন্তান কারোর মনও সে রাখতে পারছে না। যাদের জন্য একজন নারী ঘর ছেড়ে বাইরে বের হলো-তারাই একসময় সেই নারীকে ‘বেশ্যা’ বলে সন্দেহ শুরু করলো। নারী তবে কী পেল? পেল খুব সামান্যই। কিন্তু হারালো অনেক কিছুই। কারণ বাজার নারীকে মুক্তি দেয় না-তাকে ব্যবহার করে ছেড়ে দেয়। বাজারী চলচ্চিত্র একজন নারীকে ‘নায়িকা’ হওয়ার লোভ দেখিয়ে-লাভ দেওয়ার কথা বলে ‘ল্যাংটা’ করে ছাড়ে। দুদিন পরে এ ‘নায়িকা’র দ্বারা আর ব্যবসা না হলে তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় এবং অন্য আরেক নারীকে খুঁজে ‘ল্যাংটা’ করে ব্যবসা করবে বলে। বাজার নারীকে স্বাধীনতা দেয় না-ভোগ করে ছাড়ে। বাজার নারীকে মানুষ মনে করে না-পণ্য মনে করে।বাজার নারীকে বাড়ি ছাড়তে বলে-শাড়ি ছাড়তে বলে-শর্ট পোশাক পরতে বলে-অবশেষে ল্যাংটা করে শোয়ায়। গাড়ির স্বপ্ন দেখায় আর শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে কবরে ঠেলে পাঠায়। তাই সবাইকেই-বিশেষ করে ‘নারী’কে এই বাজার সম্পর্কে সাবধান থাকতে হয়। কারণ অনুন্নত বিশ্বে নারী পুরুষের তুলনায় সহজ সরল মানুষ। আরও কারণ হলো, সব বাজার বাজার নয়-সব লাভ লাভ নয়-সব মাছ মাছ নয়। যেমন পুঁটি মাছও মাছ। তিমি মাছও মাছ। নাম ‘মাছ’ হলেও তিমি কিন্তু জন্তু। তেমনি সব কোম্পানীও কোম্পানী নয়। অনেক মাল্টিমিডিয়া কোম্পানী এখন কী করছে-খবর নিয়ে দেখুন। রীতিমত লুট করছে। কী অর্থ-কী চরিত্র। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কথা মনে আছে? যে কোম্পানী ব্যবসার কথা বলে ভারতবর্ষে ঢুকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাই লুট করেছিল? সুতরাং সাবধান। তা না হলে আমও যাবে-ছালাও যাবে। আর পাবে ঘোড়ার আন্ডা। ঠান্ডা মাথায় কবরে যাওয়ারও পথ থাকবে না আর।
[৫] মলম বিক্রেতাদের কাছ থেকে দলকে নিরাপদ রাখা উচিত
২০০৯ সালের ৪ মার্চ তারিখে কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আলহাজ্ব আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘নিরীণ’ আমি একটি রিপোর্ট লিখেছিলাম। রিপোর্টের শিরোনাম ছিল-‘বাহার মলম’ বিক্রি শুরু হয়েছে। রিপোর্টটি ছাপা হওয়ার পর কুমিল্লা শহরে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে যায়। কারণ-দীর্ঘদিন কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামীলীগের কোনো প্রার্থী এখানকার আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিএনপি-র সাবেকমন্ত্রী আকবর হোসেনের প্রভাবের কারণে নির্বাচিত হতে পারেননি। দীর্ঘদিন এ আসনে মতাচ্যুত থাকার পর এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের এমপি-নির্বাচিত হন হাজী বাহার। তার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর যখন তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেমিনারে শুধুই সংবর্ধনা পাচ্ছিলেন আর ‘ফুলের মালা গলায় দিয়ে’ মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করছিলেন-ঠিক তখনই ৪ মার্চ ২০০৯ তারিখে ছাপা হয় আমার লেখা একেবারে সাদামাটা সেই নিউজটি। নিউজটি ছিল একেবারেই সাদামাটা-কিন্তু ‘সাউন্ড’ হয়েছিল সাংঘাতিক। যেহেতু হাজী বাহারের বিরুদ্ধে ছিল সেই নিউজ। কারণ বাহার এমপি-নির্বাচিত হওয়ার পর কুমিল্লার কিংবা ঢাকার কোনো পত্রিকায় সেটাই ছিল তার বিপরে প্রথম কোনো নিউজ।
নিউজটি ছাপা হলে এমপি বাহার রীতিমত বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। তার শত্রু মহল থেকে অনেক ফোন পাই প্রশংসাসূচক। তবে এক সময় হুমকি পাই খুনেরও।
কে দিলো সেই খুনের হুমকি? সবাই হয়তো ভাবছেন-সেটাও হয়তো বাহার কিংবা বাহারের লোকই বুঝি দিয়েছেন। কিন্তু না। দীর্ঘদিন পর আমি অনুসন্ধান করে বের করতে পেরেছিলাম-এই নেগেটিভ নিউজের জন্য যে আমাকে আমার শিশু পুত্রটি অপহরণের বিষয়েও বারবার হুমকি দিয়েছিল-যার ভয়ে আমি আমার শিশুপুত্রটিকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি কুমিল্লা শহর ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার বাসায় চলে যাই-সে ছিল এমপি বাহারের একজন বড়মাপের শত্রু। পরে যখন এ বিষয়ে আমি কোনো পদপেই গ্রহণ করিনি-তখন সেই লোক সেই পত্রিকার কপি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও পাঠিয়েছিল-যেন সংবাদটি পড়ে হাজী বাহারের প্রতি শেখ হাসিনা আবারও ুব্ধ হোন। তবে এই রিপোর্টটি হাজী বাহার পড়েও- ুব্ধ হয়েছিলেন। কিছু প্রতিক্রিয়া অবশ্য তার ‘চামচারা’ও প্রকাশ করেছিল। আমার আগের সেই সেই রিপোর্টের কিছু অংশে পুনরায় আবার চোখ নিবদ্ধ করে দেখুন-এ রিপোর্টের সত্যতা কি এখনও বহাল রয়েছে ? খোঁজ নিয়ে দেখুন-এখানকার মানুষ কে কী বলেন- ‘বাহার মলম’ বিক্রি শুরু হয়েছে। কী আছে হাজী বাহারের ভাগ্যে? আগামী দিনগুলোতে ? এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি কুমিল্লা জেলার আওয়ামীলীগের অনেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন। অধিকাংশ মন্তব্যই বিদ্বেষপূর্ণ ছিল-যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ও আশংকাজনক। অথচ তাদের কেউই প্রকাশ্যে তাদের নাম প্রকাশের সম্মতি দেননি। কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগ দীর্ঘদিন পর গত নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করে বিজয়ের মুখ দেখলেও বর্তমানে ভেতরে ভেতরে অনেকেই ফুঁসছেন। সময়েই হয়তো সেসব বিস্ফোরিত হবে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কর্মকান্ড একতরফাভাবে বাহারের লোক নিয়ন্ত্রণ করে বলেই এমনটি হচ্ছে। কিন্তু সেই অভিযোগ প্রকাশ্যেও তারা করছেন না- বলছেন সময় আসেনি এখনো।
শেখ হাসিনার একটিমাত্র ঘোষণায় কুমিল্লা আওয়ামীলীগের বিরোধ প্রকাশ্যে শেষ হয়ে গেলেও দীর্ঘদিনের যাপিত বিরোধ এবং বৈষম্যের বিষয়টি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়নি। অনেক নেতাই এ রকম মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে এখন মতার কাল। স্বার্থ নিয়ে ভাগ-বণ্টন আর বিরোধেরও কাল। মতায় যাওয়ার চেয়ে মতায় টিকে থাকা আরও কঠিন। অনেক বিরোধ প্রকাশ্যে শেষ হলেও বিরোধের অদৃশ্য ছায়া এখনও ভেসে বেড়াচ্ছে শহরময়। কারণ দীর্ঘদিন থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে বাহারের সম্পর্ক ছিল ভুল বুঝাবুঝির। এখন তা মিটে গেলেও তার বিপাবলম্বনের মতো লোকও কেন্দ্রে আছেন ।
তৃতীয়ত হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি নির্বাচিত হওয়ার অনেক অন্যায় কাজও শুরু হয়ে গেছে তার নামে। অনেক দন্ডপ্রাপ্ত ষন্ড-ভন্ড-গন্ডমূর্খ কিংবা অনেক অগা-মগা-বগা-ঠগা এখন এম.পি হাজী বাহারের কর্মী পরিচয় দিয়ে-আত্মীয় বলে জাহির করে শুধু নিজ স্বার্থ উদ্ধারই নয়-রীতিমত লুণ্ঠণ করছে। আর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারীতে যা হচ্ছে, তাও অনতিবিলম্বে স্পষ্ট হচ্ছে। হাজী বাহার তাদের চিনলেও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা তার পে সবসময় সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম মতায় আসেন, তখন শুধু যমুনা সেতুর নামই ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ হয়নি-অভিযোগ রয়েছে, চুলকানির মলমও বের হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নামে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার স্বার্থে শুধু বঙ্গবন্ধুর নামেই নয়, সেই মলমকে করে ফেলতে পারেন যে কোনো সময় জিয়া মলম-হাসিনা মলম-খালেদা মলম-এরশাদ মলম-আকবর মলম কিংবা বাহার মলম। এসব মলম বিক্রেতাদের কাছ থেকে দলকে নিরাপদ রাখা উচিত। সাবধানও থাকা উচিত। দলকে নিরাপদ রাখতে এসব ‘মলম বিক্রেতা’দের হটিয়ে দেয়া উচিত এখনই। কারণ যাদের কোনো আদর্শই নেই, যারা শুধুই বিক্রেতা, তারা আগামী দিন আবার হাজী বাহার মলম বাদ দিয়ে ইয়াসিন মলমও বিক্রি করা শুরু করতে পারেন। সুতরাং ভবিষ্যৎ বিষয়ে সাবধান...। তা না হলে কী আছে হাজী বাহারের ভাগ্যে, তা শুধু সময়ই বলতে পারে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২২

শ্মশান বাসী বলেছেন: রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

জসীম অসীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মতামতের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.