নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্নিগ্ধাদের গ্রাম

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯


আলোকচিত্র: জসীম অসীম: 1996

স্নিগ্ধাদের গ্রামে আছে হরেক রকম পাখি। আর আছে এক পদ্মদিঘি। সেই দিঘির জলে আছে নানাজাতের পদ্মফুল। সেই মাধবপুর গ্রামে হিজল গাছের এত ছায়া! আশেপাশের সব বাড়িতেই হিজল গাছের এত ছায়ার কারণে ঠিকভাবে রোদও নামতে পারে না। এ গ্রামে কৃষিজমি প্রায় নেই। গ্রামের সবাই প্রায় ছোটবাড়ি ব্যবসায়ী। সেই গ্রামেরই মেয়ে স্নিগ্ধা।
হিজল ফুলের গন্ধে সে কোনোদিনও পড়ায় মন দিতে পারেনি। এত হিজল তমাল গাছ যে গ্রামে থাকে, সেই গ্রামের মেয়েদের কি আর লেখাপড়া হয়! কোন হারামী যে এই মাধবপুর গ্রামটায় এত অর্জুন, এত অশোক, এত অশ্বথ্থ, এত নাগেশ্বর আর এত স্বর্ণচাপার গাছ লাগিয়েছে! এতে সর্বনাশ হয়ে গেছে স্নিগ্ধার।
স্বয়ং স্নিগ্ধাদের বাড়িতেই রয়েছে পাঁচ পাঁচটি দেবদারু গাছ। আর কৃষ্ণচূড়া এবং কাঠগোলাপে ছাওয়া স্নিগ্ধার পড়ার ঘর। কতোবার সে তার বাবাকে বলেছে কিছু গাছ কেটে দিতে। অথচ তার বাবা পারলে যেন আরও কিছু গাছ লাগায়। অনেক কষ্টে মাধ্যমিক পাশ করতে পারলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে বারবারই অনুত্তীর্ণ হয়। রাতের বেলা অনেকেই নাকি মাধবপুর গ্রামের এইসব গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় স্নিগ্ধার নাম ধরে কাউকে নাকি ডাকতে শোনা যায়। যেন ডাক নয়, আর্তনাদ। কেউ কেউ বলেছে, এ নাকি হিজলবনের ভূতেদের কারবার।
হিজল গাছের পাশ দিয়ে একদিন রাতে বাড়িতে আসার সময় কনকও স্নিগ্ধার নাম ধরে কাউকে ডাকতে শুনেছে। ভয়ে কনক পথই হারিয়ে ফেলেছিল। পরে হিজল গাছ ধরে ধরেই আবার আধা মাইলের মত পথ পার হয়ে স্নিগ্ধাদের বাড়িতে এসেছে। শেষে ওখান থেকে নিজের বাড়িতে ফিরেছে। সেই থেকে আর কনক গঞ্জ থেকে রাতের বেলা বাড়ি ফিরে না।
অশরীরী আত্মার কণ্ঠ শুনে কনক এমনই ভয় পেয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে অনেক মানুষেরই দেখা পাওয়া গেল, যারা রাতের বেলা হিজল গাছ থেকে স্নিগ্ধার নামে ডাকাডাকি করতে শুনেছে বলে সাক্ষ্য দিতে লাগলো। সেই থেকে গ্রামে এক ভয় ঢুকে গেল। এমনকি সন্ধ্যার মধ্যেই তাই সবাই গঞ্জ ছেড়ে বাড়ি ফিরতে লাগলো। এমন হলে যে গ্রামের সবাই ব্যবসায়ী, তাদের দিন কি চলবে!
মাধবপুর গ্রামের পাশের গ্রাম ফুলতলি। ওই গ্রামে স্নিগ্ধা নামে কোনো মেয়ে নেই। কিন্তু মাধবপুরে মাত্র একজন স্নিগ্ধা রয়েছে। সারা দুপুর, সারা বিকেল যে কেমন উদাসীন থাকে। মাধবপুরে মুসলিম বসতি নেই। কিন্তু পাশের গ্রাম ফুলতলিতে মুসলিম বসতি অনেক। ওখানে মাগরিবের আযান হয়ে গেলে ইদানিং ওই গ্রামের মানুষও খুব একটা বাইরে বের হয় না। মনে পড়ে যায় তাদের হিজল গাছের মগডাল থেকে স্নিগ্ধার নাম ধরে ডাক দেওয়ার কথা।
আরে এতো হিজল গাছ! ছোট্ট গ্রাম মাধবপুরে। এরই মধ্যে একদিন সন্ধ্যায় আকাশে ভীষণ মেঘ করেছে। সেদিন ছিল আবার হাটবার। এই অবস্থায় সন্ধ্যায় মাধবপুরের সবাই বাড়ি ফিরলো না। তবে বৃষ্টির পরপরই রাত নয়টার মধ্যে ফিরে এলো সবাই, শুধু নরেশ আর পরেশ বাবু ছাড়া।
তারা দুই ভাই। এক সঙ্গে আসবে মনে করে নয়টার পরই মিষ্টি দোকান বন্ধ করে বাড়িতে রওয়ানা হলো। দুই ভাই সাহস বাড়ানোর জন্য গল্প করতে করতেই বাড়ির দিকে আসছিলো। হঠাৎ নরেশ দেখলো পরেশের কোনো জবাব নেই। নরেশের হাতে ছিলো হারিকেন আর পরেশের হাতে টর্চলাইট। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো নরেশ। কিন্তু কোথায় পরেশ! পরেশের ছায়া পর্যন্তও নেই। নরেশ চিৎকার করে ডাক দিলো, পরেশ...। পরেশ...। সেই ডাক অনেক দূর ভেসে গেল কিন্তু পরেশের আর কোনো জবাবই এলো না।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রামের নামটা খুব সুন্দর। ফুলতলি!!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৪

জসীম অসীম বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ। স্নিগ্ধাদের গ্রামের নাম মাধবপুর। তার পাশের গ্রাম ফুলতলি। আর ফুলতলি বাস্তবেই রয়েছে আমার পাশের গ্রামে।
অন্যদিকে আমার এক বান্ধবী ছিল স্নিগ্ধা রায়। সে এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাঁর বাড়ি ছিল হবিগঞ্জের মাধবপুরে। তবে ওদের মূল গ্রামের নাম হলো সাতবর্গ।
আমার ‘গোমতি নদীর এপার ওপার’ উপন্যাসের অংশ এটি। এই পর্বের নামই হলো ‘স্নিগ্ধাদের গ্রাম’।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০১

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ !!

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: পরেশ না হয় হারিয়ে গেল, কিন্তু নরেশ? সে কোথায় গেল??

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৬

জসীম অসীম বলেছেন:
নরেশের খোঁজ জানতে হলে উপন্যাসের পাঁচ পর্বে যেতে হবে। হলো কী, উপন্যাসের চার পর্ব এটি। প্রথম তিন পর্ব পোস্ট না দেওয়ার কারণ হলো, তাতে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু কথা লেখা আছে। ওসব পোস্ট দিলে নিশ্চিতই আমাকে ব্লক করে দেওয়া হবে। এমনিতেই তিন বছর পর ব্লক ছেড়েছে এডমিন...। সুতরাং আর ঝুঁকি নেয়ার প্রশ্নই উঠে না।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫

টুটুল বলেছেন: হারিকেন আর টর্চলাইট- স্মৃতিকাতরতা!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৯

জসীম অসীম বলেছেন: আহারে! হারিকেন আর টর্চলাইট! সত্যি বলেছেন: স্মৃতিকাতরতা! তবে গহীন গ্রামে বা অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো এই উপাদানগুলোর ব্যবহার বিদ্যমান।

৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: জসীম অসীম ,




মোটামুটি লাগলো । উপন্যাসের খন্ডিত অংশ বলেই হয়তো ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৩

জসীম অসীম বলেছেন: আমার লেখা তো অার সে রকম নয়। অতি যত্নে লেখা হয় না কখনোই। তবু যে আপনার ভালো লেগেছে একটু, সে জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। শুভেচ্ছা নিরন্তর। ভালোবাসাও অব্যাহত রইলো।

৬| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বেশ লিখেছেন।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৭

জসীম অসীম বলেছেন: ভালো লেখা শ্রমসাধ্য ও সময়সাধ্য বিষয়। অন্যদিকে আমি আবার ভীষণই অলস এবং ইদানিং অসুস্থতা তো কিছুটা রয়েছেই। আর প্রতিভা? সে তো ছিল না কোনোদিনও। তাই লেখালেখিটা আমার সিরিয়াসলি আর হচ্ছে না কোনোভাবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.