নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূতের গল্প: সন্ধ্যামণি-র উৎপাত

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৫


রচনা: অক্টোবর-1988
অলংকরণ: জসীম অসীম

বাঁশঝাড়ের চূড়ায় বসে চালভাজা খায় বটেশ্বর ভূত। এই ভূতটি হিন্দু, কিন্তু বাস করে মুসলমান ঝাড়ুমিয়ার ডেঙ্গায় (জঙ্গল)। কারণ এই ডেঙ্গায় শত শত পাখি থাকে। বিশেষ করে পানকৌড়ি। আর এই পানকৌড়ির ডিম খেতে পছন্দ করে বটেশ্বর ভূত।
ঝাড়ুমিয়া হজ করেছেন। ভালো মানুষ। কিন্তু তার ডেঙ্গাতেই আবাস গড়েছে সেই হিন্দু বটেশ্বর ভূত।
এর আরেকটি বিশেষ কারণও রয়েছে। আর তা হলো ঝাড়ুমিয়ার ডেঙ্গার পাশের ডোবাটায় বিপুল কই, টাকি ও অন্যান্য মাছের সমাহার।

এলাকার লোক এই বাঁশঝাড়কে ‘ডেঙ্গা’ বলে। আর ঝাড়ুমিয়ার একমাত্র ছেলে মোস্তফা ধনী বলে এই ডোবাটার কই মাছগুলোও খায় না। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে সেই বটেশ্বর ভূত।
বটেশ্বর ভূত আবার ভালোবাসে ‘হাড়েশ্যার’ গ্রামের নরেশ স্যারের বাড়ির আন্ধি দিঘির সন্ধ্যামণিকে। সন্ধ্যামণি অমাবশ্যার মধ্যরাতে ছাতিমগাছে বসে আজান দেওয়ার আগ পর্যন্ত ডুগডুগি বাজায়। আর এক টাকার মুরালি কিনে মজা করে খায়। মুরালি খায় আর ওই তাঁর প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ডুগডুগি বাজায়। পেঁয়াজ আর কেরোসিন ভীষণ অপছন্দ করে সন্ধ্যামণি।
1971 সালের নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পালবাড়ির লোকদের সঙ্গে সে ইন্ডিয়া পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। কিন্তু গত 14 বছর ধরে রোজ রাতে এই ছাতিম গাছে বসে। এখন দুর্যোধনের বউয়ের গর্ভবতী পেটের দিকেই তার দৃষ্টি। তার অধিকাংশ অশুভ দৃষ্টিই থাকে শিশুদের দিকেই । বনমালীর শিশুপুত্রকে এই সন্ধ্যামণিই মেরেছে।
নির্দয় সন্ধ্যামণি দরিদ্র মানুষদের দেখতে পারে না। এমনকি দরিদ্র মানুষেরই বেশি ক্ষতি করে সে। তাকে নিয়ে কেউ মজা করলে সে তাকে ওই ছাতিমগাছেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়।
এলাকায় এখন পল্লীবিদ্যুৎ আনতে যারা ব্যস্ত, সন্ধ্যামণি তাদের কাউকেই ছাড়বে না। বিদ্যুতের আলো মেনে নিতে চায় না সন্ধ্যামণি। এ জন্য প্রয়োজনে একুশটা লাশ ফেলে দেবে সে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড তার ভীষণই প্রিয়। কারণ বৃটিশ আমলে তাকে ফাঁসিতেই মরতে হয়েছিল।
তখন এক রাজপ্রাসাদেই থাকতো সন্ধ্যামণি।
কিন্তু একদিন রাজবাড়ির এক গোপন সুড়ঙ্গে তারই পিসাতো ভাই তাকে ধর্ষণ করেছিল। কয়েকমাস পর তার পেটে এলো বাচ্চা। একদিন রাতে প্রাসাদ ছেড়ে গৌতমদের পরিত্যক্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পার হয়ে মাণিকবাবুর ছাতিমগাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিল এই সন্ধ্যামণি। সেই থেকেই একমাত্র দূর্গাপুজা ও পোনরার মেলার সময় ছাড়া অমাবশ্যার মধ্যরাতে ডুগডুগি বাজায় এই সন্ধ্যামণি৷আর কারো পেটে বাচ্চা এলে কুদৃষ্টি দেয়।
কিন্তু সন্ধ্যামণিকে দেখতে বেশ সুন্দরী দেখায় বলেই তাকে এমন ভীষণই ভালোবাসে ঝাড়ুমিয়ার বাঁশঝাড়ের বটেশ্বর ভূত। সে ওই সন্ধ্যামণির ডুগডুগি বাজনাও ভালোবাসে। আর ওই আমাদের যে নরেশ স্যার, তিনি এই সন্ধ্যামণির ভয়েই প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে যান। কারণ সন্ধ্যার পরেই শুরু হয় এই সন্ধ্যামণির বিভিন্ন উৎপাত।

রচনা: অক্টোবর-1988,
খয়রাবাদ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:১৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



বাহ!! দুষ্ট ভূতের মিষ্টি গল্প৷ভাল লাগলো ৷+++

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আসলে এই গল্পটি শৈশবে আমার মা বানিয়ে বানিয়ে আমাদের বিভিন্ন ঢঙে শুনিয়েছেন। ওই থেকেই লেখা। 1983 সালে পুনর্মুদ্রিত তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শওকত আলী সম্পাদিত ষষ্ঠ শ্রেণির দ্রুতপঠন ‘‘কৈশোরক’’ এর ‘অলক্ষুণে জুতো’ গল্পটি ছিল আমার মায়ের খুব প্রিয় একটি গল্প। বাবা পছন্দ করেছিলেন হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনকে। ... । মা আর বাবার কাছে অনেক গল্পই শুনেছিলাম। তাঁরা এখন আর নেই। নিজেরাই বাস করছেন গল্পের দেশে।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১০

সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

জসীম অসীম বলেছেন: লেখা ছোট। পড়তে বেশি সময় লাগে না: এটাই শেষ কথা নয়। আমার প্রতি আপনার আন্তরিকতা ছিল বলেই আমারই এ লেখা পড়ে, আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে মতামত দিয়েছেন। অনেক কৃতজ্ঞতা। মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: ঝারূমিয়া নামটা যেন কেমন? এই নাম কি আসলেই কারো আছে?

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৪

জসীম অসীম বলেছেন: এই গল্পটি অনেকটা স্মৃতিকথার মতোই। শুধু ভূতগুলো ছাড়া সবই বাস্তবে রয়েছে। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের খয়রাবাদ হলো আমাদের গ্রাম। তার পরের গ্রামই এলাহাবাদ-ন্যাপ পার্টির মোজাফফর আহমদের গ্রাম। শৈশবে আমি মোজাফফরের নির্বাচনে অনেক কাজই করেছিলাম। তার নির্বাচনী প্রতীক ছিল ‘কুঁড়েঘর’।
ওই গ্রামের পূর্বেই হলো ‘হারেশ্যার’ গ্রাম। তার উত্তরের হোসেনপুর হলো কবি পিয়াস মজিদের গ্রাম। পিয়াস এখন বাংলা একাডেমীতে চাকুরি করে।
নরেশ স্যারও বাস্তব চরিত্র। আমাদেরই শিক্ষক ছিলেন।
ঝাড়ু মিয়াও ছিলেন। তিনি হজও করেছিলেন। তাদের বাড়ির নজরুল ইসলাম এই কিছুদিন আগেও পরিকল্পনা সচিব ছিলেন। ঝাড়ুমিয়ার ছেলের নামও মোস্তফা।
তবে আমার মনে হয়, ঝাড়ু মিয়ার নামের বানানটি আপনার লেখা বানানটিই সঠিক হবে। কারণ আমার লেখা ঝাড়ু অর্থ তো ঝাঁটা। কেন যে ওই নাম রাখা হয়েছিল অথবা ওই ঝারু অর্থই বা কী, আমার জানা নেই। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.