নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবারের নির্বাচনে বি এন পি\'র পরাজয়ের কারণ কি: প্রকাশকাল: ২৭ জুন ১৯৯৬

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬




সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বি. এন. পি’র কেন পরাজয় হলো? এ নিয়ে এখন সর্বত্রই আলোচনার শেষ নেই। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বি. এন. পি পেয়েছিলো ১৪২টি আসন এবং জামায়াত পেয়েছিলো ১৮টি আসন। তখন বি. এন. পি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে 'কোয়ালিশন সরকার' গঠন করেছিলো। কিন্তু এবারের জাতীয় নির্বাচনে বি. এন. পি পেয়েছে ১১৬টি আসন এবং জামায়াত ৩টি। জামায়াতের অবস্থা এবার খুবই খারাপ। ফলে বি. এন. পি’র আর 'কোয়ালিশন সরকার'ও গঠন করা হলো না।
এই নির্বাচনে বি. এন. পি’র কেন এমন পরাজয় হলো? কী এর কারণ? এ ব্যাপারে বি. এন. পি’র বক্তব্য ছিলো সাদামাটা। 'নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি'। জামায়াত ইসলামীও বি.এন.পি-র এ অভিযোগ তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছিলো। বি. এন. পি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভোটদানের পর বলেছিলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে বি. এন. পি অবশ্যই জয়ী হবে। এমন বক্তব্য যুক্তিসম্মত নয়। এ মন্তব্যের অর্থ কি বি. এন. পি পরাজিত হলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না? গণরায় সম্পর্কে এমন নির্ধারিত ধারণা পোষণে অবশ্যই ক্রটি থাকে।
নির্বাচনের ব্যাপারে এন ডি আই নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের নেতা সাবেক কংগ্রেসম্যান ষ্টিফেন সোলার্জ বলেছেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে’। ফেমা-র বক্তব্যঃ কিছুমাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সার্ক পর্যবেক্ষক দলের বক্তব্য হলো: নির্বাচনে কোথাও অনিয়ম দেখিনি। বিদেশী অন্যান্য পর্যবেক্ষক দলসমূহও সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
এবারের নির্বাচনে যে সহিংসতা বা গোলযোগ হয়েছে, সেসব কেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে পুনর্নিবাচনও হয়েছে। তাছাড়া এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে'র অধীনে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নয়। তাছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছিলো বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের হাতে এবং সেই প্রেসিডেন্টও ছিলেন আবার বি. এন. পি-রই লোক। তারপরও কি বলা যায়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি? এবারের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতিও ছিলো আশাব্যঞ্জক। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও ছিলো প্রশংসার। নির্বাচনের পূর্বে ২ মাস ১০ দিনে প্রায় সাড়ে চার হাজার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে সারাদেশ থেকে ৪৪ হাজার লোককে গ্রেফতার করার ব্যাপারটিও ছিলো একটি সাহসী পদক্ষেপ।
তবে ১৯ জুন যে ২৭টি আসনে পুননির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও বি. এন. পি’ র ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু সে সম্ভাবনাও শেষ পর্যন্ত ম্লান হয়ে পড়ে দুই‘তরুনীসহ মাতাল অবস্থায় বি. এন. পি দলীয় একজন সংসদ সদস্যের গ্রেফতারের খবরটি দেশের সকল গণমাধ্যমে একযোগে প্রকাশিত হওয়াকে কেন্দ্র করে। এ খবরটিও ওই সময় সারাদেশের নিরপেক্ষ ভোটারের মনে অনেক বিরূপ প্রভাব ফেলেছিলো। তাছাড়াও ১২ই জুনের নির্বাচনী ফলাফলে পিছিয়ে পড়ে বি. এন. পি দেশের কিছু অঞ্চলে যে কিছু সন্ত্রাস চালিয়েছে এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপরও হামলা চালিয়েছে, সেসব খবরগুলোকেও দেশের সবগুলো শক্তিশালী জাতীয় দৈনিক যেভাবে ফলাও করে ছেপেছে, তাতেও বি. এন. পি-র ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুন্ন হয়েছে। তাহলে কি বলা যায় এগুলোই বি. এন. পি পরাজয়ের প্রধান প্রধান কারণ? না। আরও কারণ রয়েছে।
গত পাঁচ বছরের বি. এন. পি শাসনামলে সত্যিই বি. এন. পি-র জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিলো। কারণ বি. এন. পি 'বিশেষ ক্ষমতা আইন' বাদ দেয়নি বরং এর প্রয়োগ ঘটিয়েছে। বি. এন. পি আমলে রেডিও, টিভি ও সরকারী সংবাদ সংস্থাকে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়নি। নারী শিক্ষায় কিছুটা অগ্রগতি দেখাতে পারলেও নারী নির্যাতনকে বি. এন. পি সরকার তেমনভাবে রোধ করতে পারেনি। বিশেষ করে দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যাকান্ডের ব্যাপারটি বি. এন. পি সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্টই ম্লান করেছে। বি.এনপি-র গত আমলে যৌতুক প্রথা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষাঙ্গনে কোনোভাবেই সন্ত্রাস কমেনি। দুনীর্তিমুক্ত উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে বি. এন. পি মোটেও সাফল্য দেখাতে পারেনি এবং বরং বি.এন.পি আমলে অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করেই 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারে'র অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিটি জন্ম নেয়।
এছাড়াও বি. এন. পি সরকার ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ করতে পারেনি। সবশেষে বলা যায়, যে কৃষি ও কৃষক বাংলাদেশের মেরুদন্ড, বি. এন. পি শাসনামলে কৃষি ও কৃষকদের জন্য সার সরবরাহ ও বন্টনে অব্যবস্থাপনাজনিত কারণে বাংলাদেশের অনেক কৃষককে সার কেনার জন্য গরু বিক্রি করতে হয়েছিলো । আর এসব কারণেই এবার বাংলাদেশের মানুষের গণরায় বি. এন. পি’র বিপক্ষে চলে যায়। সুতরাং বলা যায়, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বি. এন. পি’র এই পরাজয় নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষই। তারপরও কি বি. এন. পি বলবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি? যদি তাই বলে, তাহলে তা হবে সেই সনাতনী বক্তব্যের মতোই, যেমন বক্তব্য দিয়েছিলো ১৯৯১ এর নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
============
লেখা কম্পোজ:
সাদিয়া অসীম পলি।
============
নোট:
মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী'র সম্পাদনায় ১৯৫৫ সালের মে মাস থেকে কুমিল্লা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় 'সাপ্তাহিক আমোদ' পত্রিকা। প্রথমে এ পত্রিকাটি 'ক্রীড়া সাপ্তাহিক' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরে 'সংবাদভিত্তিক সংবাদপত্র'রূপে প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৯০ সাল থেকে আমি এই পত্রিকায় সাহিত্যধর্মী বিভিন্ন লেখালেখি শুরু করি এবং ১৯৯৫ সালের শেষদিক থেকে ২০০০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জড়িত থাকি সাংবাদিকতার সঙ্গেও। এ সময়ের মধ্যে 'সাপ্তাহিক আমোদ' ছেপেছে আমার বিভিন্নধর্মী লেখা। সংবাদভিত্তিক পর্যালোচনা বা সম্পাদকীয় এবং কিছু আলোকচিত্রও এর অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে সময়কে ধারণমূলক কিছু লেখাও। উপস্থাপিত এ লেখাটিও ওই ধারারই অনুসারী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.