নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: মন ভাঙ্গনের শব্দ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:০৭


(দ্বিতীয় পর্ব)

অলংকরণ:
জসীম অসীম

রচনা: ডিসেম্বর: 2003
মাতৃভবন তৃতীয়তলা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা।


শহিদুলের সঙ্গে সংসার করতে আসার কয়েকমাস পর থেকে মহারাণীর একটি মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তার কেবলই মনে হতে থাকে যে, সে যেন তাঁর মাকে না দেখে আর বাঁচতেই পারবে না। এ সমস্যাটি এমন প্রকট হয়ে এর আগে কখনোই দেখা দেয়নি।
আজকাল প্রায়ই ঘুমে মহারাণী তার মাকে নিয়ে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে। কখনো বা ঘুমের স্বপ্নে সে তাঁর মাকে খুঁজতে খুঁজতে একেবারেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এমনকি বাড়িতেই ফিরে না আর।
একদিন সে স্বপ্নে দেখে রেডিও অফিসে ঢুকে সে বলছে, মা আমি তোমার মহারাণী মা। কুমিল্লার ময়নামতি পাহাড়কোলের বকুলপুরের মহারাণী। আমি তোমাকে ভীষণই ভালোবাসি। কিন্তু এখন তো বন্দী আমি। তাই তোমার ঠিকানায় আর কখনোই আসা হবে না আমার।
আমি এখন অনেকটাই বুঝদার হয়েছি গো মা। আগে আমার এমন বুদ্ধি থাকলে তোমাদের এমন কষ্ট কখনোই দিতাম না গো মা।
স্বপ্ন দেখা শেষে ঘুম ভাঙ্গলে মহারাণীর চোখ ভিজে যায় জলে। এসব স্বপ্নের আগামাথাগোড়া না থাকলেও এমন স্বপ্ন দেখে তার মন খুবই খারাপ হয়। মহারাণীর এক স্কুল পড়ুয়া বান্ধবী ছিল, যার মা বেঁচেছিলেন অথচ সজ্ঞান হওয়ার পর বান্ধবীটি তার মাকে কখনো দেখেনি। তার দশমাস বয়সের সময়েই তার বাবা-মায়ের সংসার ভেঙ্গে গিয়েছিলো। বাবা জোর করেই সন্তান রেখে তার মাকে বিদায় করে দেয়। মহারাণীর সেই বান্ধবী প্রায়ই তাকে তার মায়ের গল্প শোনাতো। বলতো আমার মা বেঁচে আছেন, অথচ তাকে আমি কখনোই দেখি না। বাবা মায়ের কাছে যেতে দেন না। মা আছেনও দূরে। অনেক দূরে। তিনিও কখনো দেখতে আসেন না আমাকে। বলেই সেই মুসলিম বান্ধবীটি নীরবে-নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে থাকতো। অথচ মহারাণী তখন বুঝতেই পারতো না মায়ের সঙ্গ না পাওয়ার কী ভীষণ যন্ত্রণা এই পৃথিবীতে।
আজ মহারাণী তার মুসলিম বান্ধবী মমতার সেই দুঃখ অনুভব করতে পারে। মমতার ঘরে সৎ মা ছিলো। মমতা মহারাণীকে প্রায়ই বলতো, এই যে আমি বড় ক্রমাগত হয়ে যাচ্ছি, যদি কখনো মাকে খুঁজেও পাই, তখন কি মায়ের কাছ থেকে ছোটবেলায় পাওনা আদরগুলো আর ফিরে পাবো? আমি কি আর মাকে খুঁজে পেলেও আবার ছোট হতে পারবো? মমতার এসব প্রশ্নের আজও কোনো সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পায় না মহারাণী।
মায়ের কথা শহিদুলকে বললে, শহিদুল বলে, যখন তোমার সন্তান হয়ে যাবে, তখন আর তোমার মায়ের জন্য এতো খারাপ লাগবে না। তোমার মা পর্যন্ত ধীরে ধীরে তোমার এভাবে পালিয়ে চলে আসাটা স্বাভাবিকভাবেই নেবে। মৃত্যুশোককেও প্রতি মুহূর্তে ভুলে যাচ্ছে না মানুষ?
কিন্তু এ কথায় শান্ত হয় না মহারাণীর মন। মহারাণী বলে, এই হিন্দু-মুসলিম বিয়েতে কেন এতো আপত্তি? শহিদুল বলে, এই যে মানুষের ডি.এন.এ বিশ্লেষণ হয়, ওখানে কোনো হিন্দু-মুসলিম বৈশিষ্ট্য শনাক্ত হয় না। কিন্তু আমাদের প্রচলিত সমাজ এবং ধর্মগুলো তো এসব বিশ্বাস করে না। কথা শুনে মহারাণী চুপ করে থাকে।
প্রবাল চৌধুরী ও সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠের সেই গান: আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য, তোমারই প্রেমেরই জন্য, গুনগুন করে গায় শহিদুল। শুধু পার্থক্য, সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠের স্থলে কন্ঠ মিলিয়ে গুনগুন করে না মহারাণী। চুপচাপ স্বামীর গা ঘেঁষে বসে থাকে।
ছোট কোনো বাচ্চার হাতে চক কিংবা শ্লেট-পেন্সিল দেখলেই মহারাণীর তার মায়ের কথা মনে পড়ে। মামাদের একজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রাণাঘাটের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা-বাবা কি ওদিকেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কাশতে থাকে মহারাণী।
রাতে আনা হারবাল কফ সিরাপ পরম যত্নে খাওয়ায় তাকে শহিদুল। বলে, এ সিরাপে কিছুটা অ্যালকোহল আছে রাণী, চুপচাপ একটু ঘুমোতে চেষ্টা করো। আর কিসের এতো দুশ্চিন্তা তোমার? অতো দুশ্চিন্তা করলে আয়ু কমে যাবে। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী ৩০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। আমি এতো অল্প বয়সে স্ত্রী হারাতে রাজি নই।
মহারাণী বলে, আমার মা-বাবা যদি আবার একেবারেই ইন্ডিয়ার চলে যায়? শহীদুল বলে,আরে দূর! এখন আর বাংলাদেশের হিন্দুদের ইন্ডিয়ার যাওয়া এতো সহজ নয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পার হওয়া এখন অনেক কঠিন। বুঝলে? এতো টেনশন করো না তো! সীমান্তের ফায়ারিং রেঞ্জ পার হয়ে এপার-ওপার হতে এখন দুই দেশের পাখিও অনেক বিবেচনা করে।
মহারাণী বলে, এতো অল্প বয়সে তুমি এতো কথা কিভাবে জানো? শহিদুল বলে, আমার এক মামা বি ডি আর-এর চাকুরিতে আছেন না? মামার বাবা ছিলেন এক গুণী মানুষ।
নাজিমউদ্দিন রোড থেকে ৫০ এর দশকে যখন বাংলাদেশ বেতার শাহবাগের কাজী নজরুল এভিনিউতে চলে আসে,তখন মামা বেতারে যোগ দিয়েছিলেন। তার বড় ছেলে ফজলুল রহমান বিডি আরের অফিসার। আন্তর্জাতিক আইনগুলো মামার মুখস্থ। মামার মুখেই এসব কথা অনেকবার শুনেছিলাম।
তবে আমি নিজে নিজে পড়েও অনেক কথা জানি। যেমন তোমার গঙ্গা নদীর ওপর ভারতীয় এলাকায় ফারাক্কা বাঁধ যে নির্মাণ করেছে ভারত, তা আন্তর্জাতিক নদী আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমাদের রাজশাহী সীমান্ত থেকে ১১ মাইল পশ্চিমে এবং ভারতের কলকাতা থেকে দু’শ মাইল উত্তরে অবস্থিত এ বাঁধ।
মহারাণী শহিদুলের আলোচনায় বাধা দিয়ে বলে, ওসব বাধেঁর কাহিনী শুনে আমার কী লাভ? শহিদুল বলে, তোমাকে জানতে হবে হিন্দু এবং মুসলিম কিংবা ভারত এবং বাংলাদেশ কেনো অনেক বড় বড় বিষয়েও একমত হতে পারছে না। বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত পানিপ্রবাহকে প্রত্যাহার করে ভারতের ভাগীরথী বা হুগলি নদীতে নিয়ে যাওয়ার কাজে এই বাঁধকে ব্যবহার করে ভারত। হুগলি পর্যন্ত ২৩ মাইল লম্বা ক্যানেলও তৈরি করেছে তারা। এর বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানী লং মার্চও করেছিলেন।
মহারাণী বলে, আমার এসব জানার ইচ্ছে নেই। তুমি আমাদের নদীগোপাল স্যারের মতো বিদ্যা অর্জন করেছো। অথচ চাকুরিতে কেনো মন নেই তোমার?
এই প্রশ্নের উত্তর শহিদুল মহারাণীকে অনেকবারই দিয়েছে। তাই এখন আর নতুন করে এর উত্তর দেওয়ার আগ্রহবোধ করে না শহীদুল।
বাবা-মায়ের কাছে খুব বেশিই আদরে-সোহাগে বড় হয়েছে মহারাণী। তার মা এতোই আদর করতো তাঁকে যে, এখনও শ্বাশুড়িকে সে তাঁর মায়ের সেই জায়গাটি মন থেকে দিতে পারে না। আর এ কথাটি শহিদুলের মা অবশ্যই বুঝতে পারেন। কিন্তু এ নিয়ে তাঁর তেমন মাথাব্যথা নেই। বরং শ্বাশুড়ি চায় মহারাণী আরও পড়ুক।
অথচ শ্বশুরবাড়িতে এসে এখন লেখাপড়াসহ কোনো কাজেই মন বসে না মহারাণীর। ছোটবেলায় স্কুল থেকে বিভিন্ন পথে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতো সে। তারপর মা-বাবার টানে আবার বাড়ি ফিরে আসতো।
সেই সময়টায় মহারাণী নীলকন্ঠ পাখি দেখে রীতিমত পাগল হয়ে যেতো। ঘাসফড়িং বা অন্যান্য পোকামাকড় কিভাবে টুপ করে ধরে ফেলে পাখি, মুগ্ধ হয়ে দেখতো এসব সে। কাশবনে, ঘাসবনে ঘুরতে তখন কতো না ভালো লাগতো।
মহারাণীদের এলাকায় বড় বড় কাঁঠালগাছগুলোতে এতো পাখি ছিল। বুলবুলি পাখিতে ছেয়েছিল কাঁঠাল বাগানগুলো। মহারাণীও তখন বুলবুলির মতো সারাদিন লাফিয়ে লাফিয়ে যেন বেড়াতো। কোথায় গেলো এখন সেসব দিন। মাঝে মাঝে সে ভাবে, তার এভাবে পালিয়ে আসাতে যদি তার বাবা শোকেই মারা যায়, তাহলে সে নিজেকে আর কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবে তো!
এমন কথা ভাবতে গেলেই চোখ ভেসে যায় জলে। মহারাণীর কেবল ওই একই ভাবনা যে, কেনো এমন হিন্দুতে আর মুসলমানে বিয়ে হওয়াতে বাধা?
কখনো কখনো এমনও ভাবে: যদি একদিন ঘটনাক্রমে জানতে পারে যে, তাঁর চলে আসার কারণে তার বাবা-মা হঠাৎ মারা গিয়েছে, তখন নিজেকে কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারবে না। কতোদিন সে তার মাকে দেখতে পায়নি। আর কোনোদিনও পাবে কি না, জানে না সে।
সেদিন রাতেই এক অদ্ভূত স্বপ্ন দেখে মহারাণী। দেখে সে বসে আছে শ্বশুরবাড়ির সোনাইল গাছের ছায়ায়। হঠাৎ দেখলো এক ভদ্রমহিলা চশমা চোখে নীল শাড়ি পরে মহারাণীর শ্বশুরবাড়ির দিকেই এগিয়ে আসছেন।
মহারাণী ভদ্রমহিলাকে এগিয়ে আনতে এক প্রচন্ড দৌড় দিলো। চিকন ফ্রেমের চশমা পরা মহিলা। এমন ফ্রেমের চশমা তো তার মা পরে!
মহারাণী সেই মহিলার কাছে যেতেই দেখলো তিনি মা তার ঠিকই কিন্তু চশমার গ্লাসের পেছনের চোখদুটির দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে গেছে তাঁর। সেই দৃষ্টিশক্তি দিয়ে চশমা পরেও মহারাণীকে দেখতে পাচ্ছেন না মা।
মহারাণী বলে, মা তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না? মা বলে, না। শুধু তোর ঘ্রাণ শুকেই এতো দূর পথ পাড়ি দিয়ে তোর কাছে চলে এলাম মা। মহারাণী বলে, কিভাবে তোমার দৃষ্টিশক্তি এমন ক্ষীণতর হলো?
মা বলেন, তোর জন্য দিনরাত শুধু কাঁদতে কাঁদতেই আমার সকল দৃষ্টিশক্তি শেষ। মা আরও বলেন, মহারাণী আমাদের অপরাধ কী ছিল? এভাবে না বলে আমাদের মুখে কালি মেখে তুই পালিয়ে আসলি!
তখন আর কোনো কথাই বলতে পারেনি মহারাণী। তারপর স্বপ্ন টুটে গেলে বিছানায় শুয়ে মায়ের জন্য সে অনেক কান্নাকাটি করে।
মহারাণী আর শহীদুলের সংসার মন্দ চলছিলো না। বরং শহীদুলের পিতা মহারাণীকে বউ করে পেয়ে ভাবলেন তবু যদি ছেলেটির স্থিতি আসে। কিন্তু এরই মধ্যে মহারাণীর বিষয়ে কোথায় যেন এক ঘটনা শুনে আসে শহিদুল। শোনার পর থেকেই তার মাথায় রক্ত টগবগ করে। এতোটা ক্ষিপ্ত সে, আর কখনো হয়নি আগে এমন।
ক্রুদ্ধ হয়ে মহারাণীকে শহিদুল বলে, তোমার স্কুল জীবনে যে তুমি চার চারটি যুবক দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছিলে, কেনো তুমি আমাকে এ কথা কখনো খুলে বলোনি? শহীদুলের এ কথাটার যেন অর্থ বুঝেনি মহারাণী। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শহিদুলকে বললো, কী বললে তুমি, কী বললে? শহিদুল ঠাস করে মহারাণীর গালে একটি থাপ্পড় কষে দেয়। চার যুবক একসঙ্গে চোদেনি তোমাকে? মহারাণীর প্রতি উত্তেজিত শহিদুলের প্রশ্ন।
আর ঠিক এই প্রশ্নটিই মহারাণীর হৃদপিন্ডে শহিদুলের থাপ্পড়ের চেয়েও শতগুন বেশি জোরে যেন লাগে। মহারাণী তবু ধীর হয়, শান্ত হয়। স্থির হতে চেষ্টা করে। শান্তকন্ঠে শহিদুলকে বলে, এ রকম একটি ঘটনা আছে আমার জীবনে। কিন্তু ধর্ষণের কথাটা সত্যি নয় শহীদুল। শহিদুল বলে, তাহলে সত্য ঘটনাটা কী?
মহারাণী বলে, আমি যখন হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী, তখন আমাদের ইউনিয়নের এক যুবক সৈকত আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তার প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে বাবাকে এই ঘটনার কথা বলি। বাবা আমাদের হেডমাস্টারকে বিষয়টি জানালে হেডমাস্টার স্যার সৈকতকে ধরে আনে এবং সে আর এমন করবে না বলে লিখিত অঙ্গীকারনামা দেয়।
শহিদুল বলে, তারপর? মহারাণী বলে, তারপর অনেক দিন আর সৈকতের খোঁজ জানতো না কেউ। শহিদুল বলে, তারপর...মূল ঘটনা বলো।
মহারাণী আবার বলতে থাকে। তারপর একদিন রাতে আমার শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে সৈকত আর তার তিন বন্ধু। আমাকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করলে আমারই তীব্র চিৎকারে ওরা পালাতে বাধ্য হয়।
পরদিন সকালে ওদের বিরুদ্ধে বাবা থানায় মামলা করে। শহিদুল বলে, তখন তোমাদের বাড়িতে পুলিশ আসেনি? হ্যাঁ, এসেছিলো। মহারাণীর সহজ সরল উত্তর। আর সৈকত? শহিদুল জানতে চায়।
মহারাণী বলে, সেই থেকেই সে পালিয়ে গিয়েছিলো। শহিদুল বলে, তুমি সৈকতের সাথে প্রেম করতে না? তুমি কি তোমার জীবনের এমন স্মরণীয় গল্পটার আকৃতি বদলে দিয়েছো?
মহারাণী যেন আকাশ থেকে পড়ে। আর কথা বলতে পারে না। শুধু শহিদুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। মহারাণীর মৌনতার মাঝেই শহিদুল আবার বলে, এতোদিন আমি বুঝতে পারলাম, কেন তুমি এতো দূরের এবং অন্য ধর্মের একটি যুবকের হাত ধরে পালানোর সাহস পেয়েছো।
মহারাণী শহিদুলের এসব কথার আর কোনো জবাবই দেয় না। দিতে চেষ্টাও করে না। মহারাণীর এ মৌনতা শহিদুলের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দেয়। রাগে উত্তেজিত হয়ে বলে, খুন্তি চেনো তুমি? আমার জায়গার অন্য কোনো ছেলে থাকলে এখন তোমাকে গরম খুন্তির ছেঁকা দিতো। হায় আল্লাহ! কী সাংঘাতিক একটা কান্ড এসে আমার জীবনেই ঘটলো। আর এ যে দেখছি আমাদের রুমা ম্যাডামের বলা সেই গল্পকেও হার মানিয়েছে।
দুভার্গ্য, কারণ মহারাণী আর শহিদুলের কোনো কথারই জবাব দেয় না। এমনকি আর জানতেও চায় না একবারও কে সেই রুমা ম্যাডাম এবং কী ছিল তার বলা সেই গল্পে। তার শুধু মনে পড়ে তার সুরজিত মামার বলা একটি গল্প।
সেই মামা চাকুরি করেন বি আই ডব্লিউ টি এ নারায়ণগঞ্জ অফিসে। একটি টাগ জাহাজের সাহায্যে আটকে পড়া একটি লঞ্চকে মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে যেভাবে উদ্ধার করা হয়, মামার গল্পটি ঠিক সেই অক্ষতভাবেই মনে আছে মহারাণীর। কিন্তু কোন টাগ জাহাজ আজ মহারাণীকে উদ্ধার করবে শহিদুলের অবিশ্বাসের গভীরতর মেঘনা নদী থেকে?
মহারাণী তার সরিষাফুলের রঙে রাঙানো নিজেরই সারাটি শরীরের দিকে তাকায়। আয়নায় দেখে নিজের বড় বড় চোখ, চোখের পাপড়ি। তারপর স্নান-কক্ষে প্রবেশ করে। নিজ শরীরে জড়ানো সকল বস্ত্র একে একে খুলে ফেলে। স্নানঘরের আয়নার সামনে আবারো দাঁড়ায়। তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখে তাঁর কোমল শরীরের কোথাও শহিদুল ভিন্ন অন্য কোনো পুরুষের দাগ কিংবা কোনো গন্ধ সত্যিই রয়েছে কী না। ততক্ষণে শহীদুলের বাড়ির লোকেরা শুনে তাঁদেরই স্নানঘরের বিরাট আয়নাটি ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়ার শব্দ। কিন্তু কেউ কোনোভাবেই শুনে না মহারাণীর মন ভাঙ্গনের শব্দ।


মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১০

রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই কি তার নাম মহারানী?

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৬

জসীম অসীম বলেছেন: না রাজীব ভাই, মেয়েটির আসল নাম ছিলো করুণা দেবনাথ। ময়নামতি পাহাড়ের পাদদেশেরই ঘটনা। তবে গল্পে আমি সেই কাহিনীকে অক্ষত রাখিনি।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩

নজসু বলেছেন: প্রথম পর্বটাই পড়া হয়নি।
সময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ার ইচ্ছে রইল।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৭

জসীম অসীম বলেছেন: সময় করে পড়ে আমাকে মতামত দিন। আপনার মতামতে আমি দিকনির্দেশনা পাবো।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৬

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:১১

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসলে সার্থক গল্প তো আর লিখতে জানি না ভাই। শিল্প হিসেবে গল্প লেখা সহজসাধ্য নয়। তাই আমি অধিকাংশই কাহিনী লিখে গেছি। শুভেচ্ছা রইলো। মঙ্গল কামনা অব্যাহত রইলো।

৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:২১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: লেখা ভালোলাগছে , পরের পর্বে ফিরছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.