নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: মাধুরী আর কলেজেই যাবে না

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:০৬


এই কৃতজ্ঞতা আর ক্রোধের অভিশাপে মাধুরীর কলেজে পড়ার ইচ্ছাও পুড়ে যায়। সেই থেকে আর মাধুরী কলেজে যায়নি কোনোদিনও। এমনকি লেখাপড়াও ছেড়ে দেয়।
আরও আশ্চর্যের বিষয়: বাবা হারা মেয়ে অনিন্দ্যসুন্দরী মাধুরীর কলেজে যাওয়ার দায় আর এলাকার বিশ-ত্রিশ ঘর সনাতন ধর্মাবলম্বীও নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে না। সব শেষে মাধুরীর বাবার যুগ যুগের বন্ধু ও তারই স্কুলের বাংলার শিক্ষক সিরাজুল ইসলামও বাড়িতে এসে তাকে কলেজে যাওয়ার বিষয়ে জোর আশ্বাস দেন। কিন্তু এতো ঘটনার পরও মাধুরী আর ভরসাই পায় না। অতি বিমর্ষ কণ্ঠে মাধুরীর মা সিরাজুল ইসলাম স্যারকে বলেন, সিরাজ ভাই, আমাদের আপনি ক্ষমা করবেন। অনেক আগেই আমাদের একটি বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। ভগবান রক্ষা করেছেন। আমরা অনেক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, মাধুরী আর কলেজেই যাবে না।
================================================================================
রচনা:
ডিসেম্বর ২০০৬,
মিলন্তিকা,
ঠাকুরপাড়া,
কুমিল্লা।

অলংকরণ: জসীম অসীম

বাজারের বস্ত্রের দোকানগুলোতে এতো শত, এতো হাজার রঙিন ওড়না থাকতে আজ সকলের আলাপের বিষয় হলো ‘মাধুরীর গোলাপী ওড়না’। কারণ অনিন্দ্যসুন্দরী মাধুরীর ওড়না ধরে আজ টান দিয়েছে হাকিম মুন্সীর ছেলে দেলোয়ার।
মাধুরী বারীনের বড় বোন। বারীন হতাশাবাদী এক কিশোর। আর তাদের বাবা তো ছিলেন একেবারেই ‘পারমানেন্ট’ এক হতাশাবাদী মানুষ। কয়েক মাস আগে ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
আর দেলোয়ারের দাদা, মানে হাকিম মুন্সীর বাবা ছিলেন এলাকার খুবই নামীদামী একজন মানুষ। তিনি আরও ছিলেন নেজামে ইসলামীর একজন নেতাও। তাই পিতার সেই রাজনীতির পথ ধরে রাজনীতি আর হাকিম মুন্সীও ছাড়তে পারেননি।
এমন প্রভাবশালী ব্যক্তি হাকিম মুন্সীর ছেলে দেলোয়ারের সঙ্গে এখন লড়াই করবে কে? আজ মাধুরীর গোলাপী ওড়না ধরে দেলোয়ারের টান দেওয়ার ঘটনা যদি আবার সরাসরি হাকিম মুন্সীর কানে দেওয়া যেত, তাহলে হাকিম মুন্সী এর আবার হয়তো এক কঠিন বিচারও করতেন। এমন উদাহরণ হাকিম মুন্সী অতীতে অনেকবারই রেখেছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে দেলোয়ারও যে নেপথ্যে তাঁর কূটবুদ্ধি খাটাবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে!

দেলোয়ার তারই মামাতো ভাই হোসেনকে নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ওঠানোর পর বাড়ির দিকে ফিরছিলো। পথেই হঠাৎ মাধুরীকে একা পায়। কলেজ থেকে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো মাধুরীও। হঠাৎই তাঁর সারা শরীরে ভূমিকম্প আঘাত হানে। পেছন থেকেই ওড়না ধরে হেঁচকা টান দেয় দেলোয়ার। তখন অবশ্য মোটর সাইকেলের গতি ছিলো সবচেয়ে নিচের দিকে। আর সেটা চালাচ্ছিলো তখন হোসেন।

মাধুরী অবশ্য প্রতিদিনই একা কলেজ থেকে ফিরে না। তাঁর প্রিয় বান্ধবী হামিদার সঙ্গেই ফিরে। আজ হামিদা অসুস্থ ছিলো।
দেলোয়ারের মাধুরির ওড়না ধরে টান দেওয়ার ঘটনা কেউ দেখেনি, প্রথমে অবশ্য এমনটাই মনে করা হয়েছিলো। কিন্তু পরে জানা গেলো দূরের জমি থেকে ঘোষপাড়ার চন্দন, সরকার বাড়ির জগদীশরা সবাই এ ঘটনা দেখেছে।
ঘটনা দেখে জগদীশ জোরে ডাক দেয় বাপ মরা মেয়ে মাধুরীকে। দৌড়ে আসে মাধুরীর দিকে। মুহূর্তেই বেজির মতো কেটে পড়ে দেলোয়ার আর হোসেন।

দেলোয়ারের বড় ভাই বিদেশে থাকেন। মাসে মাসেই টাকা পাঠান। আর এই কাঁচা টাকার গরমেই যেন দেলোয়ার আরও বেপরোয়া।

১৯৯২ সালে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর এই এলাকার কাইমুল, মনিরুল ও সাবিরুলরা বিনোদবাবু ও পুলিনবাবুর পরনের ধুতি টেনে খুলে ভীষণ তামাশা করেছিলো। তখন বিনোদ-পুলিনরা এলাকা ছেড়ে পালাতে যাচ্ছিলেন। ওই সময়ে এই এলাকাটা হয়ে গিয়েছিলো নেপালদের কাছে অচেনা এক রাজ্য। বিনোদবাবু ও পুলিনবাবু এই নেপালেরই বাবা-কাকা।
সেই কবে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর এই এলাকায় পুলিনবাবুদের ধুতি ধরে টান দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো, তা অনেকটা ভুলেই গিয়েছিলো এখানকার মানুষ। কিন্তু আজ হাকিম মুন্সীর ছেলে দেলোয়ারের মাধুরীর ওড়না ধরে টান দেওয়ার ঘটনায় একই সঙ্গে পুলিনবাবুদের সেই ধুতি টেনে খোলার পুরনো প্রসঙ্গও চলে এলো স্বপন-সুবীর-রত্মা-সুব্রত ও নন্দিতাদের মনে।

ভারত-বাংলাদেশের কোথাও যখন হিন্দু-মুসলিমে কোনোই সংঘাত নেই, ঠিক তেমনই এক সময়ে হিন্দু অধ্যুষিত পুরো গোপালনগর গ্রাম তপ্ত হয়ে গেলো দেলোয়ারের মাধুরীর এই ওড়না ধরে টান দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
মাধুরীর মা বিনোদিনী মেয়েকে বলেছেন সে যেন তাঁর এ ঘটনা একেবারেই ভুলে যায়। অবশ্য অনেকে আবার এ ঘটনাটিকে নিয়ে হাকিম মুন্সীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলারও প্রস্তাব দেয়। অথচ মাধুরীর মা বিনোদিনী মেয়েকে নিয়ে ঘটিত এ ঘটনা আর এক বিন্দুও বাড়তে দিতে ইচ্ছুক নন।
এদিকে মাধুরীদেরই প্রতিবেশী যুবক বলাই শুরু করে আরেক অঘটন। পাড়ার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হানা দেয় জগন্নাথ ও রাজবিহারী দাশদের বাঁশঝাড়ে। অসংখ্য বাঁশের কঞ্চি কেটে সে অনেক লাঠি বানাতে থাকে। তারপর সন্ধ্যা নাগাদ মাথায় লাল কাপড় বেঁধে ঘোষপাড়ার সবার ঘরে ঘরে একটি করে লাঠি দিয়ে আসে। বলে, আজ এক ভীষণ লড়াই হবে। সবাইকে তাই প্রস্তুত থাকতে হবে।
ক্রোধে লাল হয়ে বলাই আরও বলতে থাকে, বাংলাদেশের সহজ সরল পলায়নপর হিন্দুদের আমি দুই চোখেই দেখতে পারি না। আমার বাবাও তেমনই লোক। অনেকেই আমার বাবাকে গোঁড়া হিন্দু বলে। আর আমিও সেই গোঁড়া হিন্দুকেই পছন্দ করি।

ওদিকে সাবিরুলদের পাড়াতেও এই ওড়না টানার খবর রটে যায়। রাতে সাবিরুলদের ঈদগাহ-সংলগ্ন মসজিদে এশার নামাজ শেষে মাধুরীর ওড়না টানার প্রসঙ্গ ওঠে। মুসল্লিদের সবাই বিষয়টা শুনেন। কিন্তু এ কাজটা অন্যায় হয়েছে মেনেও তারা ঘটনাটিকে চেপে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কেউ কেউ বলেন, এ ঘটনা যেন কোনোক্রমেই হাকিম মুন্সীর কান পর্যন্ত না যায়।

ওদিকে বলাই তাঁর কয়েক বন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যায় যায় কালীমাতা মন্দিরে। মন্দিরের পাশেই গঙ্গাদিঘীর ঘাটে বসে হাকিম মুন্সীর ছেলে দেলোয়ারকে কী করা যায়, তাঁর বন্ধুদের কাছে এ প্রসঙ্গ তুলে।
হীরেন বলে, ইচ্ছা হয় শালারে শ্মশানে আইনা পুইড়া মারি। সেইবার শীতলা মেলার সময়ও সে আমার সঙ্গে গায়ে লাগতে আইছিলো। অনাথকাকু সঙ্গে ছিলেন। আমাকে আর লাগতে দিলেন না। ‘হলধনকা’ থাকলে কিন্তু এই দেলুয়ারে তখনই...। তার বোন সুরাইয়াও খুব উগ্র এক মেয়ে। মাধুরীর বান্ধবী হামিদারে কয়, মাধুরীর লগে তুই কলেজে যাস কেন? হিন্দু মানুষ আবার বান্ধবী হয় ক্যামনে। তুই কি জানিস হিন্দুরার শইলে কেমন দুর্গন্ধ হয়!

তপন বলে, আমি শুনছি দেলু রেগুলার মদ গিলে। অনুপম বলে, খোঁজ নিয়া দেখ, মদ সে শুধু গিলেই না, অন্যকেও হয়তো গিলতে দেয় অথবা এর ব্যবসাও করে।
বলাই বলে, দেলু বিষয়ে আমাদের এমন আলাপে দেলুর কি একটা লোমও ছিঁড়ে? আলাপের-আড্ডার আর কোনো দরকার নাই, কাজ দরকার, শুধুই কাজ। তবে দেলুর রাজনীতিবিদ বাপ আবার আইনের মারপ্যাঁচও খুব ভালো জানে। তাই না বুঝে আবার আমাদের কিছুই করা যাবে না।
হীরেন বলাইয়ের কাছে জানতে চায়, এখন তাহলে এ বিষয়ে তাদের আসলে কী করা দরকার। বলাই বলে, মাধুরীকে অনেকদিন ধরেই ডিস্টার্ব করছিলো দেলোয়ার ওরফে দেউল্যা। কাকীমার কাছে শুনছি। মাধুরীকে দেখলেই নাকি দেলু বলতো, হিন্দী সিনেমার নায়িকা মাধুরীর তো যুগ শেষ মাধুরী। তাই তোমারে আমি সুস্মিতা সেন বলবো মিস মাধুরী। তুমি কি মুসলমান হইয়া আমারে বিয়া করবা মিস সুস্মিতা সেন। তাহলে তোমার আমার উভয়ের বেহেস্তটাও পাক্কা হইয়া যায়।
হীরেন বলে, তারপর?
বলাই বলে, দিন দিন এসব শুনে শুনে একসময় মাধুরীও দেলুর প্রতি ক্ষেপে যায়। দেলুরে তাই জুতাও দেখায় সে। দেলু অবশ্য মাধুরীর এই তেজ দেখানোকে একেবারেই পাত্তা দেয় না। উল্টো দেলু আরও মাধুরীকে হাসতে হাসতে বলে, আইজ থাইক্কা তোমার নাম দিলাম আমি শ্রীমতি গোলমরিচ। ও মিস গোলমরিচ, গরুর মাংস রান্না করতে কিন্তু অনেক গোলমরিচ লাগে। আর গোলমরিচে রান্না করা ঝাল ঝাল গরুর মাংস খেতেও আমার ভীষণই পছন্দ।

তপন বলে, আমিও সেই কথা জানি। ওই ঘটনার পর মাধুরী কিছুদিনের জন্য কালিদাসপুর তার পিসির বাড়িতেও চলে গিয়েছিলো।
ততোক্ষণে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে আকাশে। গঙ্গাদিঘীর টলটলে জলের ভিতরে চাঁদটাকেও দারুণ সুন্দর লাগছিলো। ঠিক কি মাধুরীর মতোই সুন্দর অথবা সুন্দরী? বলাই নিজের মনে মনেই এসব কথা ভাবে। মেয়েটার প্রতি তার হৃদয়েও এক ধরনের প্রেম সৃষ্টি হয়ে আছে। এই জ্যোস্নায় গঙ্গাদিঘীর উত্তরপাড়ের লকলকে ঘাস এবং পশ্চিমপাড়ের মায়াবী হিজলছায়া দেখে বলাইয়ের এখন কবিতা লিখতেই ইচ্ছে করছে। হঠাৎ সে দিঘীর জলে কল্পচোখে রাশি রাশি রক্তপদ্ম দেখে। আর সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁপ দিয়ে জলে লাফিয়ে পড়ে সবচেয়ে বড় রক্তপদ্মটি তুলে আনবে বলে।
বলাইয়ের ঘটানো এমন আকস্মিক ঘটনার কোনো অর্থই তাঁর বন্ধুরা খুঁজে বের করতে পারে না। এরই মধ্যে জল থেকে ভেজা কাপড়ে দিঘীর ঘাটে উঠে বলাই এক নতুন কৌশল আঁটে। সবাইকে বলে, অগ্নি ভূত আমাকে গঙ্গাদিঘীর জলে পেছন থেকে ঠেলা দিয়ে ফেলে দিলো, আর তোরা আমার জন্য কিছুই করতে পারলি না?
বলাইয়ের এ কথা বলতে দেরী আর তাঁর সকল বন্ধুর হুড়মুড় করে যার যার বাড়ির দিকে দৌড় দিতে কোনো দেরি হলো না। এই ঘটনায় মনে মনে

দেলোয়ারের সেই বর্বরোচিত ওড়না ধরে টানার খবর শুনে মাধুরীর বান্ধবী শ্রীরাধাও পরদিন মাধুরীদের বাড়িতে আসে। আর সেদিন থেকেই মূলত মাধুরী তাঁর কলেজে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে পাশের বাড়ির শিবরাম কবিরাজ বলেছেন, মাধুরী তুই কলেজে রেগুলার যা। দেলুর ওই ঘটনার জন্য আমরা দুদিন আগে আর পরে ঠান্ডা মাথায় একটা বিচারের ব্যবস্থা করবোই।
কিন্তু মাধুরী আর তাঁর মা শিবরামদের এসব কথায় একেবারেই কান দেয়নি। বরং নিজেদের করমচা গাছের তলে বসে মা মেয়ে উভয়েই চুপচাপ চোখের জল ফেলে।
শিবরামের ছোট ভাই শুভায়ু বললেন, এ বিষয়ে যা করার ঠান্ডা মাথায়ই করতে হবে। গরম মাথায় কিছু করলে ওরা বাজারে আমাদের দোকানেও আগুন দিতে পারে। নব্বই আর বিরানব্বইয়ের কথা মনে নাই? এলাকার ছোট্ট বাজারে একটিমাত্র মিষ্টির দোকান রয়েছে। সেটা সিদ্ধার্থের। সিদ্ধার্থজীও চুপচাপ। তিনি তাঁর দোকানের কর্মচারী শিবার মুখে এ ঘটনা শুনে বলেন, বাড়াবাড়ি করে আর কী ই বা হবে! দেলুদের কাছে নাকখত না দিয়ে কি এ বাজারে কেউ ব্যবসা করতে পারবে? ইদানিং তার শইলে আবার অনেক তেল জমা হইছে। আমাদের সামান্য তাপে ওই তেলচর্বি গলবে না। সময় এলে আপনাআপনিই বধ হওয়ার মতো শক্তিধর শিকারীর হাতেই পড়ে যাবে সে।
সিদ্ধার্থজীও আরও বলেন, সে তো কিছুদিন আমার ভাতিজি পায়েলেরও পিছু নিয়েছিল। বড় কষ্টে তার ছায়া তাড়ানো গেছে। পায়েলকেও তখন কিছুদিনের জন্য শ্যামগঞ্জে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এখন মাধুরীর জন্য ঠিক কী করা যায়, তা ভাবা দরকার।

মাধুরীদের গোপালনগর গ্রামের আরেক উগ্র হিন্দু যুবক অভিজিৎ। সে বলাইকেও হার মানায়। অভিজিৎ মাধুরীর ঘটনা শুনে বললো, আমরা কি বাংলাদেশের খ্রিষ্টান নাকি যে কলা মুখে দিয়ে বসে থাকবো? বাংলাদেশে কি আমাদের ছাড়া আর কোনো হিন্দু নাই? দেলুরা মুসলমান হইছে বইলা কি পুরাটা বাংলাদেশ হেরা কিন্যা নিছে নাকি? বাংলাদেশের হিন্দু শালাদের এই বড় দোষ, ছোট কিছু হলে চুপচাপ হজম করবো। আর বড় কিছু হইলেই ইন্ডিয়ায় পালাইয়া যাইবো। আরে মেয়েটার যেমন মানসিক নির্যাতন দেউল্যা করছে, তাতে দেলুর হাত না ভাঙ্গি, কমপক্ষে তার বাপের কাছে গিয়া আমরা তাঁর বিরুদ্ধে বিচার দেই! এতো বড় একটি ঘটনার বিচার না চাওয়া অথবা বিচার না করাও তো পাপ। প্রতিবাদ না করাই তো অধর্ম!

কিন্তু অভিজিতের কথায় সায় দিয়ে গোপালনগরের কেউ এগিয়ে আসে না। কারণ মাধুরী আর তাঁর মা এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে একেবারেই ইচ্ছুক নয়।
অভিজিতদের আত্মীয়স্বজনরাও প্রায় সবাই ইন্ডিয়ায় চলে গেছেন। অনেক আগেই। তাঁর এক মামা ছিলেন। কলকাতার ক্ষুদিরাম বোস রোডে থাকতেন। এখন তার সঙ্গেও অভিজিৎদের কোনো যোগাযোগ নেই। কারণ ওরা খুবই শিক্ষিত আর ধনী। আর মামাদের ওই একই বক্তব্য: মাটির মায়া ছেড়ে তোরা চলে আয়। কারণ ওই দেশটা আসলে আমাদের না। দেশের জন্য তোরা জীবন দিয়ে দিলেও ওই দেশে তোরা সম্মান পাবি না।
অভিজিতের ওই মামার বাবাও ছিলেন খুবই শিক্ষিত একজন মানুষ। ১৯৪৯ সালে মেট্রিকুলেশন করে ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৬৫ এর পাক-ভারত যুদ্ধের লগ্নে দেশ ছেড়ে তিনি যে ভারতে একেবারেই চলে গেলেন, আর এলেন না।
পরে সেই মামার বাবা চাকুরি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন প্রথমে জাপানে এবং পরে জার্মানীর একটি কোম্পানীতে। ওই জার্মানীতেই পরে তিনি মারা গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে বাস করা অভিজিত তাঁর সেই মামা বা মামার বাবাদের মতো ওই দৌড়ে কখনোই শামিল হতে পারেনি।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পরে বাংলাদেশের এই ছোট্ট গোপালনগর গ্রামে ঘটা ঘটনাগুলো অভিজিতের এখনো মনে রয়েছে। ওদের গ্রামে তখন পুলিশও চলে এসেছিলো। কিন্তু আসার আগে পর্যন্ত যা ঘটেছিলো, ভুলেনি সে। আজও।
সেদিন বিকেলবেলার খেলাধুলা শেষে ক্লান্ত শরীরে কিছু ডালপুরি কিনে খাচ্ছিলো অভিজিত। সঙ্গে তার বন্ধু বীরভদ্রও। দুজনে মিলে ওই ডালপুরি ভাগাভাগি করেই খাচ্ছিলো। আর ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সে তখন দেখে এসেছিলো তাঁর মা চালকুমড়ো ভেজে সর্ষে ভাজা দিয়ে মাখছে। কতোক্ষণে ঘরে গিয়ে সেই খাবার খাবে, ওদিকেই মন পড়েছিলো অভিজিতের। হঠাৎ দেখলো, চিত্ত ও অমিয়দের বাড়ির দিকে পাশের গ্রামের মাদ্রাসার কিছু ছাত্র লাঠিসোঁটা নিয়ে খুব দ্রুত গতিতে দৌড়ে যাচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্রদের ওই দলে লোক ছিল তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন। এই ঘটনা দেখে অভিজিৎরাও সে সময়ে সেদিকে দৌড় দেয়।
ততক্ষণে ওদের সামনে পড়লেন অন্য পাড়ার আশরাফ চাচা। তিনি আবার রাজনীতিও করেন। তার পার্টির নাম কমিউনিস্ট পার্টি। এই পার্টিকে গোপালনগর এলাকায় কেউ তেমন গুরুত্ব দেয় না। অভিজিৎদের প্রতিবেশী সেই আশরাফ চাচা চিৎকার করে বীরভদ্রদের ধমক দিলেন, বীরভদ্র তোরা কই যাস। তাড়াতাড়ি পালা। ওরা জঙ্গি। ওরা তোদের হিন্দুদের খুন করে ফেলবে, তোরা পালা।
বাজারে একসময় সেলাইসুতার দোকানও ছিলো অভিজিৎদের সেই আশরাফ চাচার। এখন নেই। অভিজিৎ তখন বললো, চাচা ওরা জঙ্গি কেন হয়েছে? আর ওরা হিন্দুদের মারবে কেন?
আশরাফ চাচা বললেন, কারণ ওরা মুসলমান নয়, ওরা মুসলমান জঙ্গি। ওরা জীবন্ত মুসলমানেরও রগ কেটে দেয়। আর তোরা তো হিন্দু। এখন আবার কী না ইন্ডিয়ার হিন্দু জঙ্গি গুন্ডারা অযোধ্যায় বিখ্যাত সেই বাবরি মসজিদ ভাঙ্গছে। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলমান জঙ্গিরাও এমন করে হিন্দুদের ওপর ক্ষেপছে
গোপালনগর গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গি পোলাপানের কোপে প্রথমে কতল হলো অমিয়দের বাড়ির রক্তজবা আর বেলিফুলের গাছগুলো। চিত্তের কাকীর ব্লাউজের বাইরে বেরিয়ে থাকা পিঠে শক্ত করে কয়েকটি কিল মারলো ইসলামী একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মী মতিন। হাত থেকে শাক ফেলে বড় পুকুরের ঝোঁপের দিকে দৌড় দিলো রমা। টুপি পরা লাঠি হাতে এতো লোক আসতে দেখে আগেই গাছে উঠে বসেছিলো নীতিশ। কৃষ্ণার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। কৃষ্ণা লুকিয়েছে পানের বরজে। কৃষ্ণার চোখের জল পানপাতা বেয়ে টপটপ করে মাটিতে নামে। কৃষ্ণাকে পেলে ওরা ধর্ষণও করতে পারে। কারণ ওদের শেখানো হয়েছে, এই কাজে ওদের সওয়াব জুটবে। না করলে পাপ হবে। ওদের লিডারও সঙ্গে আছেন। এলাকার কিছু নিরীহ মুসলমানদেরও ওরা নিজেদের জায়েজ করতে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। আর ওই লিডারের কথাতেই ওরা নিমাই গাঙ্গুলিরও মাথা ফাটিয়ে দেয়। গাঙ্গুলি বাবু একটি কোলস্টোরে চাকুরি করেন। বাড়ি যাচ্ছিলেন চিত্তদের পুকুরপাড় ধরে। এই গাঙ্গুলিবাবু অনেকদিন ভারতের কোচবিহার ও জয়নগরে ছিলেন। কিন্তু ওখানে তার থাকতে ভালো লাগে না। তাই ফিরে আসা।

দেলুর মাধুরীর পেছনে লাগা একদিনের ঘটনা নয়। কয়েক বছরের পুরনো। তখন মাধুরীর বাবাও বেঁচে ছিলেন। কিন্তু বিষয়টিকে এতো বেশি পাত্তা দেওয়া হয়নি আগে। তাছাড়া মাধুরীর বাবাও জানতেন, দেলুদের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি লে.কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদদের কেমন যেন আত্মীয়তা রয়েছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে সাধারণ বিষয়াদি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই উত্তম।

বছর তিনেক আগে মাধুরী যখন গ্রামের হাইস্কুলে পড়ে, তখন একবার স্কুল থেকে ফেরার পথে এই দেলোয়ার হোসেন দেলু সামনে দাঁড়িয়েছিলো তাঁর সাইকেল নিয়ে ইটখোলার কাছে। ইটখোলার আকাশ ছোঁয়া চিমনি দিয়ে তখন ধোঁয়া উঠছিলো ভীষণভাবে। দেলু তখন মাধুরীকে বললো, মাধুরী ঐ চিমনীর ধোঁয়া বের হয় আমার বুকের আগুন থেকে। তোকে না পেয়ে আমার বুকে আগুন লেগে গেছে।

মাধুরী তখন বলেছিলো, ওই ইটখোলা তো আপনার চাচার। বন্ধ করে দেন। আমরাও এই বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে বাঁচি। আপনার চাচার ট্রাক্টরগুলো তো আমাদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তাগুলোও ভেঙ্গে দিয়েছে। এমন সুন্দর গ্রামটাকে ধুলাবালি দিয়েও শেষ করে দিচ্ছে।

দেলু তখন বলে, আমার চাচারে নিয়া কোনো কথা কইস না মাধুরী। চাচা জানলে তোর বাপেরে শুদ্ধ...। দেলু আর কথা বাড়ায় না। মাধুরী বলে, ওসব জানি। আপনার চাচার কিছু গুন্ডা আছে। আর তার সঙ্গে পুলিশের খুব ভালো সম্পর্ক এবং ওই তালগাছ পর্যন্ত জমিগুলোও তার। কিন্তু তাই বইলা গ্রামের মানুষ তারে এতোটা ইজ্জত করে না দেলুভাই আপনি যতোটা ভাবছেন।

দেলু বলে, মাধুরী মুখ সামলাইয়া কথা কওয়া শিখিস। আমি তোরে ভালোবাসি বইলা চাচার বিরুদ্ধে বলা এইসব কথা হজম করলাম। অন্য কেউ হইলে...। জানস মাধুরী, চাচা আগামীতে চেয়ারম্যান ইলেকশন করবো? মাধুরী দেলুর এই কথায় আর কান না দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। দেলু তখন খোলা মাঠের রাস্তায় মাধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে, মাধুরী তুই ইন্ডিয়ার বিএসএফের মতো নিষ্ঠুর হইস না। ঝরাইস না তুই আমার বুকের রক্ত ।

মাধুরীও চিৎকার করে জবাব দেয়, বিএসএফ আমার বাপ লাগে না। ওদের সঙ্গে আমার তুলনা দিবেন না। আর আপনি যে আজিজ কাকার মেয়ে রহিমার সঙ্গে প্রেম করেন, ওই কথাটাও আমি জানি।

আজ পাঁচদিন মাধুরী আর কলেজে যায় না। মাধুরী বলেছে, আর যাবেই না। লেখাপড়াও ছেড়ে দেবে। মাধুরীর ছোটভাই বারীন সব শুনে। তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মাধুরী কলেজে গেলে না গেলে বারীনের কোনো লাভ-ক্ষতি আছে কী না, সেটা সে অতো তলিয়ে দেখতে শিখেনি। তার আছে হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টের কিছু অসুখও। তাই সে বেশিকিছু ভাবতেও পারে না। তার ভালো লাগে রাজেশ্বরী দিঘির ঘাটে বসে পানকৌড়ির মৎস্য শিকার দেখতে, বাজারের বটবৃক্ষের বোর্ডে লাগানো সিনেমার পোস্টার দেখতে এবং ইন্ডিয়ান হিন্দী সিনেমার নায়িকা মাধুরীর ‘এক দো তিন’ গানের সঙ্গে যে নাচটা তার বোন মাধুরীও প্রায় সবটা শিখে নিয়েছে, সে নাচটা দেখতে, আর ক্ষুদ্র টুনটুনিগুলো কিভাবে পাতা সেলাই করে নিজেদের বাসা গড়ে, তা দেখতে। বাড়ির কেউই তার উপর কোনো বিষয়ে বিশেষ ভরসা রাখে না।

এমন সময় হঠাৎই মাধুরীদের গোপালনগর গ্রামে রটে গেলো অভিজিৎকে বাজারের কাছে বেঁধে রেখেছে দেলোয়ার হোসেন দেলু। যে যার মতো ছুটে গেলো। গিয়ে দেখলো অভিজিতের ছোঁড়া ইটে দেলুর মাথা কেটে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে। এলাকার মনু ডাক্তার সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছেন। কাছেই অভিজিতকে পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে। সবাই দেখছে তাঁকে ভীষণ কৌতূহল নিয়ে। অভিজিতের শম্ভুকাকা বললেন, অভি তুই দেলুভাইয়ের মাথায় কেন ইট মারলি?
অভিজিতের প্রশান্ত জবাব, এমনি।
আর তখনই শম্ভুলাল দেলোয়ারের পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে বলেন, দেলু ভাই, এবারের মতো তাকে ক্ষমা করে দেন। সকল ক্ষতিপূরণ দেবে অভিজিৎ। আমরা করবো তার বিচার। ক্ষতিপূরণও দেবো। এবারের মতো ক্ষমা করে দেন।

দেলুও শান্ত ও ধীর করে জবাব দেয়, ক্ষতিপূরণ? আমার শরীর থেকে যতোটা রক্ত ঝরছে, তোমার ভাতিজার শরীর থেকেও ততোটা রক্ত ঝরাবো। শম্ভুলাল দেলোয়ারের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেন, আমাদের ক্ষমা দেন দেলু ভাই। ক্ষমা করে দেন।

দেলু হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে, তাহের, তেতাল্লিশপাড়ার মুসা হাজ্জামকে খবর দে। আজ ডেডাইয়ার বাচ্চার মুসলমানি করামু। তার নাম রাখমু মনির পাগলার নামে-মনিরুল ইসলাম।

দেলুর মুখে এই কথা শুনে চর্তুদিকে হাসাহাসির ঢেউ বয়ে যায়। অনেকে মুখে মুখে ভীড় থেকে সায় দেয়, হ্যাঁ হ্যাঁ মালোয়ানের বাচ্চারে মুসলমানি করানো দরকার। খৎনা হোক হারামজাদার। ভীড় থেকে একজন চিকন সুরে বলে, অভিজিত্যারে মুসলমানি করাইতে পারলে মুসা হাজ্জাম বেহেস্তে যাইবো। এই কথার সঙ্গে সঙ্গে হাসির যেন নদী বয়ে যায়। এমনকি সদ্য মাথাকাটা রোগী স্বয়ং দেলুও হাসতে থাকে।

খবর পেয়ে বাজার থেকে দ্রুত ছুটে আসেন মিষ্টি দোকানদার সিদ্ধার্থবাবু। সবাইকে ঠেলে গিয়ে দেলুর হাতে ধরেন বলেন, দেলোয়ার, বাবা আমার কথা রাখো। এর বিচারের দায়িত্ব আমার হাতে দাও। আমি এর ন্যায্য বিচার করবো।

দেলোয়ার বলে, না না সিদ্ধার্থ কাকা। তার দায়িত্ব আপনি নিয়া বিপদে পড়ার দরকার নাই। ওই হারামী বিনা কারণে, বিনা দ্বন্দ্বে আমারে আজকে খুন করতে চাইছে। ভাগ্য ভালো, আসাদ দেইখা তারে ধইরা ফালাইছে। আমি তো চলন্ত হোন্ডায়। দেখতেও পাইনি। বাঁশবনে পালাইয়া গেলে কার বালে দেখতো। আমি মইরা পইড়া থাকলে লোকে ভাবতো, হোন্ডা একসিডেন্টে মরছে।

সিদ্ধার্থবাবু কতোক্ষণ চুপ থাকেন। তারপর বলেন, দেলোয়ার, বাবা তুমি আমার কথা রাখো। দেখো, আমি তার কী সাজার ব্যবস্থা করি। কী সমাধান দেই। তোমার আব্বা আমার স্কুলের বন্ধু ছিলেন। পরে তিনি হয়ে গেলেন তোমার দাদার মতোই এ এলাকার নেতা। আর আমি হয়ে গেলাম মিষ্টি দোকানদার। কিন্তু একসঙ্গেই তো খেলছি, বড় হইছি। তোমার দাদীর হাতের কতো খাওয়া খাইছি। আমার কথা রাখো, বিশ্বাস করে দেখো। কী সমাধান দেই। হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে অভিজিতের পিঠে এক লাথি মারে দেলু। সিদ্ধার্থ বলেন, দেলু বাবা একটা না পাঁচটা লাথি দাও, দশটা লাথি দাও কুত্তার বাচ্চারে। সবার সামনেই দাও। তখন শম্ভুলালের চোখের জল মুখমন্ডল বেয়ে টপটপ করে মাটিতে নামে। প্রবীণ সিদ্ধার্থের মুখমন্ডলে কৃতজ্ঞতার ছাপ এবং অভিজিতের চোখে আত্মপ্রকাশের ক্রোধ।
এই কৃতজ্ঞতা আর ক্রোধের অভিশাপে মাধুরীর কলেজে পড়ার ইচ্ছাও পুড়ে যায়। সেই থেকে আর মাধুরী কলেজে যায়নি কোনোদিনও। এমনকি লেখাপড়াও ছেড়ে দেয়। আরও আশ্চর্যের বিষয়: বাবা হারা মেয়ে অনিন্দ্যসুন্দরী মাধুরীর কলেজে যাওয়ার দায় আর এলাকার বিশ-ত্রিশ ঘর সনাতন ধর্মাবলম্বী নিতেও ইচ্ছা প্রকাশ করে না। সব শেষে মাধুরীর বাবার যুগ যুগের বন্ধু ও তার স্কুলের বাংলার শিক্ষক সিরাজুল ইসলামও তাকে বাড়িতে এসে কলেজে যাওয়ার বিষয়ে জোর আশ্বাস দেন। কিন্তু এতো ঘটনার পরও মাধুরী আর ভরসাই পায় না। অতি বিমর্ষ কণ্ঠে মাধুরীর মা সিরাজ স্যারকে বলেন, সিরাজ ভাই, আমাদের আপনি ক্ষমা করবেন। অনেক আগেই আমাদের একটি বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। ভগবান রক্ষা করেছেন। আমরা অনেক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, মাধুরী আর কলেজেই যাবে না।

রচনা:
ডিসেম্বর ২০০৬,
মিলন্তিকা,
ঠাকুরপাড়া,
কুমিল্লা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৭

স্বপ্নীল ফিরোজ বলেছেন:
সুন্দর।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৪

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখা গুলো অনেক আগের নাকি? এখন পোষ্ট দিচ্ছেন?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৭

জসীম অসীম বলেছেন: ঠিক, লেখাগুলো অনেক বছর আগেরই। কখনো কখনো পোস্ট দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.