নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃষ্টিতে আমার হাটঁতে ভাল লাগে কারন কেউ দেখেনা আমার চোখের জল।

আশিক হাসান

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

আশিক হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মালি -মরুভূমির রানী

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৪

আফ্রিকা মহাদেশের ৮ম বৃহত্তম দেশ মালি আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় আট গুন বড় অর্থাৎ ৪,৮০,০০০ হাজার বর্গ কিঃমিঃ নিয়ে দেশটি অবস্থান করছে মোটামুটি আফ্রিকার মাঝবরাবর । উত্তরে দেশটি একেবারে সাহারা মরুভূমির গভীরে বিস্তৃত অবশ্য সেটা উত্তর-পূর্বে আলজেরিয়া এবং উত্তর-পশ্চিমে মৌরিতানিয়া সীমান্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত । অন্যদিকে পূর্বে নাইজার , দক্ষিনে বুরকানা ফাসো এবং আইভরি কোস্টের সাথে সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। দক্ষিন পশ্চিমে গিনি আর পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে সেনেগাল ও মৌরিতানিয়া মালি কে স্থলবেষ্টিত করে রেখেছে। মালির ভূ-প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সম্পূর্ন আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির শুরুটা হয়েছে মালির মাঝামাঝি অংশ থেকে। অন্যদিকে মালির দক্ষিন পশ্চিম অংশ থেকে সবুজের ছোঁয়া বিস্তৃত হয়েছে নীচের দিকে অর্থাৎ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিন বরাবর। মালির ভূ-প্রকৃতির মাঝবরাবর চলে গেছে সাব-সাহারান অন্চল।


চিত্র: বর্তমান মালির মানচিত্র ।

মালির অধিকাংশ এলাকায় আবহাওয়া চরম রুক্ষ এবং বৈরীতা নিয়ে বিরাজ করছে, শুধু দক্ষিনের কিছু অংশে যেখানে কিছুটা সবুজের ছোঁয়া লেগেছে সেখানকার আবহাওয়া কিছুটা নমনীয়। মালিতে বছরে সাধারনত ৩টি ঋতু বিরাজ করে , জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এখানে বর্ষাকাল যদিও বর্ষাকাল বলতে আমাদের দেশে যেটা বুঝি সেটা এখানে একরকম নয় বরং মালিতে বর্ষাকালের এইসময়ের মাঝে কদাচিৎ বৃষ্টিপাত হয় ।তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির পরিমান বেশ ভালই হয় তবে এধরনের ঘটনা খুব কম। তবে সাধারনত বেশি বৃষ্টিপাতের পরিমানটা সেপ্টেমবারেই হয়ে থাকে। মালির গ্রীষ্মকাল শুরু হয় মার্চ থেকে এবং মে পর্যন্ত এই গরম একটানা থাকে, মে মাস হচ্ছে সাধারনত সর্বাধিক উষ্নতম মাস। মালির গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৪ সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে এবং সাহারা মরুভূমির কাছাকাছি এলাকার তাপমাত্রা সাধারন তখন হয়ে থাকে ৪৬ থেকে ৪৮ সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত। জানুয়ারীতে সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয় এই দেশে তবে সেটা কখন কখনও ১০ সেন্টিগ্রেডের নীচেও নেমে আসে। মালির প্রধান দুটি নদী নাইজার এবং সেনেগাল। নাইজার নদীটি, যা কিনা নাইজেরিয়া থেকে বের হয়ে নাইজার হয়ে উত্তরে এসে মালিতে প্রবেশ করে মপতি হয়ে রাজধানী বামাকো হয়ে গিনি পর্যন্ত চলে গেছে ,আর মপতি প্রদেশে নদীটি আরেকটি শাখা বনী নদী নামে দক্ষিনে আইভরিকোস্টে প্রবেশ করেছে। আর নদী সেনেগাল যা কিনা সেনেগাল সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়ে মালিকে পশ্চিমে সেনেগাল থেকে পৃথক করে উত্তরে প্রবাহিত হয়েছে।


চিত্র: মালি নদীসমুহের গতিপথের ম্যাপ।

জনসংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে মালির জনসংখ্যা এর আয়তনের তুলনায় অনেক কম। ২০১৬ পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১৮ মিলিয়ন । অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিঃমিঃ জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৪.৯৫জন (প্রায়)। মালির ৯০% জনসংখ্যার বাস মূলত দক্ষিনাংশে বাস করে নাইজার আর সেনেগাল নদীর অববাহিকা অন্চলে। মালির জনসংখ্যার প্রায় ৬৮% মূলত গ্রাম অন্চলে বাস করে এছাড়া ৫ থেকে১০% যাযাবরের ন্যায় পশুপালনের সাথে জড়িত এবং এরা মূলত গোত্র আকারে এক অন্চল থেকে অন্য অন্চলে নোমেডিক বা যাযাবরের ন্যায় পরিভ্রমন করে থাকে। সাধারনত আবহাওয়া এবং পানির উৎসের উপর ভিত্তি করে এরা স্থান পরিবর্তন করে থাকে।


চিত্র: ছবিতে একজন যাযাবর/নোমেডিক গোত্রের (হাউসা ফুলানী গোত্রের ) মালিয়ান কে দেখা যাচ্ছে মরুভূমিতে পশুপালনে ব্যস্ত।

২০০৭ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায় মালির জনসংখ্যার ১৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৪৮% ছিলো এবং ১৫-৬৪ বছর বয়সীরা ছিলো ৪৯% । অন্যদিকে ৬৫ এবং এর উপরে বয়স্করা ছিলো মোট জনসংখ্যার ৩%। মালির শিশু জন্মহার প্রতি ১০০০জনে ৪৯.৬ যা কিনা একজন মায়ের বিপরীতে প্রায় ৭.৪জন শিশুর সমান। কিন্ত অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিশুমৃত্যুহার দেশগুলোর মধ্যে মালি অন্যতম। ২০০৭ সালের একটি পরিসংখ্যানে জানা যায় গড়ে ১০০০ জনের মধ্যে জন্মের সময় ১০৬ জন শিশু মারা যায়। এদের নারী এবং পুরুষের গড় আয়ু যথাক্রমে ৫১.৫ এবং ৪৭.৬ বৎসর।


চিত্র: মালির রাজধানী বামাকোতে প্রেসিডেন্ট প্যালেসের সন্নিকটে এই ভাস্কর্য প্রমান করে শিক্ষার প্রতি মালিয়ানদের তৃষ্না।

মালির সরকারি শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এবং সাধারনত একটি শিশুর ৭ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ৯ বছরের জন্য এই শিক্ষাগ্রহন সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এই পদ্ধতিতে একজন শিশু তার সাত বছর বয়সে ছয় বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহন শুরু করে এবং পরবর্তী ছয় বছরের শেষে দুই তিন বছরের চক্রের মধ্যে তার মাধ্যমিক শিক্ষার মেয়াদ পূর্ন করে।
মালির একের পর এক অভ্যন্তরীন সন্ত্রাস এবং গৃহযুদ্ধের ঢেউ আর অব্যবস্থাপনার কারনে এত ভাল একটি শিক্ষা নীতি থাকা সত্বেও মালি আজ আফ্রিকার শিক্ষার হারের দিক থেকে একেবারের নীচের দিকে একটি দেশ ।



চিত্র: নাইজার নদীর বাঁকে ফরগো সোনারাই নামে একটি গ্রামের কিছু স্কুলফেরত মালিয়ান শিশুরা ।

মালির বেশীরভাগ পরিবারগুলির পিতামাতাদের আয় অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের শিশুদের ভর্তি করার করাক কারন শিক্ষা বিনামূল্যে হলেও সন্তানদের ইউনিফর্ম খরচ, বই ক্রয় এবং সাবির্ক একটি নিরাপদ পরিবেশ না থাকার কারনে শিশুদের স্বাভাবিক শিক্ষাগ্রহনের পরিবেশ দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে্। ইউএনের এক জরিপে দেখা গেছে সার্বিক শিক্ষার হার শতকরা ২৭-৩০ এর মধ্যে নারীদের মাঝে শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ১২ ভাগ।










চিত্র: ছবিগুলো মালির গাও প্রদেশের মরুভূমির থেকে নেয়া , মরুভূমির মাঝে মাঝে কাঁটা, লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছগুলো অসাধারন সব ল্যান্ডস্কেপ তৈরী করে । তারই কিছু খন্ডচিত্র।

চরম বৈরী আবহাওয়ার দেশ মালি যার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে বর্তমানে বিরাজ করছে বিশাল সাহারা মরুভূমি। শুধুমাত্র দক্ষিনের কিছু অংশে সবুজের দেখা পাওয়া গেলেও দেশের মধ্যভাগের অধিকাংশ স্থান সাহেল অন্চলে পড়েছে । এই সাহেল অন্চল যা কিনা উত্তরে সাহারা এবং দক্ষিনের সাব সাহারান অন্চলের মাঝামাঝি অংশ নিয়ে গঠিত ।


চিত্র: সাহেল অন্চল যা কিনা উত্তরে সাহারা এবং দক্ষিনের সাব সাহারান অন্চলের মাঝামাঝি অংশ নিয়ে গঠিত ।

বর্তমান মালি যদিও চরম দারিদ্রতা, অভাব আর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আজ পরিনত। কিন্ত নাইজার নদীর অববাহিকাকে কেন্দ্র করে একসময় গড়ে উঠেছিল মালির প্রাচীন সভ্যতা । বিশেষ করে মধ্যযুগে মালির রাজত্ব ছিলো সামরিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষমতার এক বিশেষ কেন্দ্রবিন্দু। মধ্যযুগে ইউরোপে যখন কালো মৃত্যু বা ভয়ন্কর মরনব্যাধি প্লেগের মহামারীতে লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুবরন করছে আর ইউরোপ যখন আপ্রান চেষ্টা করছিলো সেই অন্ধকার যুগ থেকে বেরিয়ে আসার। ঠিক সেসময় পশ্চিম আফ্রিকার এই মালি তখন এর ঐশ্বর্য আর প্রাচুর্যের সমারোহে এক স্বয়ংসম্পূর্ন রাজত্ব হিসেবে আফ্রিকার হৃদয় থেকে আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এক বিশাল সাম্রাজ্য হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলো


চলবে ....।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১

আল আমিন সেতু বলেছেন: ভাই , পরের পর্ব কবে আসবে? ভালো ই লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.