নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃষ্টিতে আমার হাটঁতে ভাল লাগে কারন কেউ দেখেনা আমার চোখের জল।

আশিক হাসান

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

আশিক হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা আলকেমিস্ট - বুক রিভিউ

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:৫৫


কিছু সিনেমা আছে অনেক পুরোনো অথবা স্থান যেখানে অনেকে গেছে অথবা কোন বই যা অনেকে পড়েছে। কিন্ত ঘটনাচক্রে কখনও এমনও হয় যে সেই পুরোনো সিনেমা, অনেক পরিচিত একটা জায়গা অথবা পুরোনো সেই বইটা হয়ত আমি বা আপনি কখনও পড়িনি। তবে আজ ব্রাজিলিয়ান লেখক পাউলো কোয়েলহোর রচিত আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনের উপলব্ধি নিয়ে লেখা অনবদ্য এক সাহিত্যকর্ম
'দ্যা আলকেমিস্ট' পড়ে মনে হল এতদিন পর কেন বইটা আমার হাতে আসলো। আরও আগে পড়ে নিতে পারলে হয়ত আরো ভাল হত।
বইটি অনলাইনে ইংরেজী এবং বাংলা অনুবাদ দুটোই পাওয়া যায় কিন্ত আমি অনুরোধ করব সম্ভব হলে ইংরেজী অনুবাদ টা পড়বেন। কারন বইটির মূল অর্থ বোঝার জন্য সেটা খুব জরুরী । আর তাছাড়া ইংরেজী অনুবাদের ভাষা বেশ ঝরঝরে এবং খুব সহজ করে লেখা যা অনেকের জন্য সহজ হতে পারে।

ছবি: ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো ।
যদিও পাওলো কোয়েলহোর আলকেমিস্ট বইটি তার দেশ ব্রাজিলে ১৯৮৮ সালে পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম প্রকাশিত করা হয়েছিল। এবং সেই সময় বইটি বেস্ট সেলিং লিস্টে না থাকলেও, পরবর্তীতে এটি আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকার মধ্যে স্থান করে নেয়। ১৯৯৩ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়া এ বইটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বইটির বিক্রি ক্রমশ বেড়েই চলেছে এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনুবাদ করা বইও এটিই।

এখন প্রশ্ন বইটিতে কি আছে?

বইটি এক সাদামাটা মেষপালক সান্টিয়াগোকে নিয়ে লেখা যে কিনা তার মেষপালকে নিয়ে আশ্রয় নেয় এক ভাংগা গীর্জায় এবং সেখান থেকেই গল্পের শুরু। সান্টিয়াগো ছিল এক সাধারন পরিবারের সন্তান , মা-বাবার শখ ছিলো ছেলে বড় হয়ে যাজক হবে । কিন্ত ষোল বছর পাঠশালায় সে ইতিমধ্যে ল্যাটিন আর স্প্যানিশের পাশাপাশি ধর্মত্বত্ত ও পড়ে ফেলেছে। কিন্ত সান্টিয়াগো , বাবাকে জানায় সে চায় বিশ্ব পরিভ্রমন করতে , ঈশ্বর আর পাপ-পূন্যর চাইতে এই পৃথিবীকে সে জানাটাকে বেশী গূরুত্বপূর্ন বলে মনে করে। ছেলের ইচ্ছাপূরনে বাবা বাধ সাধেনা বরং ছেলেকে এগিয়ে দেয় তিনটি সোনার মোহর বলে মেষপাল কিনে সে যেন দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। সান্টিয়াগো , মোহর নেয়ার সময় বাবার চোখেও দেখতে পায় বিশ্বভ্রমনে এক অদম্য ইচ্ছার চ্ছটা যা আজও তিনি গোপনে বয়ে বেড়াচ্ছেন আর যুগের পর যুগ ধরে সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছেন সেই স্বপ্নকে বুকের মাঝে আড়াল করে।

সান্টিয়াগো আবার ফিরে আসে বর্তমানে সেই ভাংগা গীর্জার মাঝে , তার চিন্তাচেতনার মাঝে খেলা করে তার মেষপাল যাদের শুধু ভাবনা খাবার আর পানি নিয়ে । অথচ এই জগৎ সংসারের কত বিচিত্র রহস্য আছে তার কিছুই তারা জানেনা । তার মেষগুলো যেমন জানেনা কেন সান্টিয়াগো এক বছর পর আবার সেই আন্দিয়ালুসাতে এসেছে , সেকি শুধু ভেড়ার উল বিক্রী করার জন্য ? আসলে সান্টিয়াগো এসেছে সেই এক বছর আগে দেখা উল কেনার দোকানের মালিকের মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য।



এরই মাঝে সান্টিয়াগো, পিরামিডের দেশে গুপ্তধনের সংক্রান্ত একটা স্বপ্নে দেখে যার অর্থ সে খুঁজে পায় তায়িফের এক জিপসী মহিলার কাছে এবং জানতে পারে সেই মিশরের পিরামিডে তার জন্য সত্যিকারের গুপ্তধন অপেক্ষা করছে। আন্দিয়ালুসা থেকে মিশরে যেতে হলে সান্টিয়াগোকে পাড়ি দিতে হবে বিশাল সাহারা মরুভূমি । এরপরও সে তার স্বপ্ন পূরনে হাল ছাড়েনা । এরপর শুরু হয় একে একে সান্টিয়াগোর জীবনে অদ্ভুত সব চরিত্রের আনাগোনা। আন্দিয়ালুসাতে দেখা মেলে বুড়ো রহস্যময় রাজা যে কিনা তাকে একপাল ভেড়ার বদলে দেয় দুটি অদ্ভুত দর্শন ছোট পাথর যা কিনা তাকে যে কোন বিষয়ে সির্ধান্ত নিতে হ্যাঁ অথবা না বলে দিতে পারবে। সেই পাথর নিয়ে এগিয়ে চলে সান্টিয়াগো একে একে ঘটতে থাকে সব অদ্ভুত ঘটনা । জীবন আর স্বপ্ন পূরনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি সান্টয়াগোকে মুখোমুখি করে জীবনে আধ্যাত্মিকতার সাথে এবং লেখকের অসাধারন লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেন আধ্যাত্মিকতার সাথে বাস্তব জীবনের সেতুবন্ধন। প্রতিটি ঘটনার সাথে মিল রেখে প্রতিটি সংলাপে ফুটে উঠেছে জীবনের অসাধারন সব সত্য। পাঠককে প্রতিটি ঘটনার সাথে লেখক এমনভাবে দাঁড় করিয়েছেন যেন একসময় পাঠকের মনে হবে গল্পের সান্টিয়াগো যেন সে নিজেই । নিজের জীবনের এরকম অনেক স্বপ্ন আমাদের যা আজও পূরনের জন্য আমাদের সাধ জাগে কিন্ত একই সাথে ভয় করে সেই স্বপ্ন পূরন করতে গিয়ে যদি ব্যর্থ হই।
সেই স্বপ্ন পূরনের কথা বইতে ফুটে উঠেছে ঠিক এইভাবে;

"If a person is living out his destiny, he
knows everything he needs to know.
There is only one thing that makes a
dream impossible to achieve: the fear
of failure."

অথবা

Tell your heart that the fear of
suffering is worse than the suffering
itself. And that no heart has ever
suffered when it goes in search of its
dreams, because every second of the
search is a second's encounter with God
and with eternity."

অসাধারন সব উক্তি যেন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । ঘটনাপ্রবাহে সান্টিয়াগোর সাথে দেখা হয় চোর, ক্রিস্টাল দোকানের এক বৃদ্ধ দোকানদার, এক ইংরেজ ব‌্যক্তির সাথে । এবং সেই গুপ্তধনের আশায় যখন সান্টিয়াগো এসে পৌঁছায় বিশাল এক মরুদ্যানে , সেখানে দেখা মেলে মরুর বেদুইন কন্যা ফাতিমার । এরপর ক্ষনিকের মোহে কিছুটা দিকভ্রান্ত হলেও ফাতিমা কথা দেয় অন্যান্য আরব কন্যাদের মত সেও প্রতীক্ষায় থাকবে সান্টিয়াগোর জন্য । যে স্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ফাতিমা চায়না তাদের ভালোবাসা সান্টিয়াগোর সে স্বপ্ন পূরনে বাধা হয়ে দাড়ায়। তাই সান্টিয়াগো যখন বলে ;

"I'll be back," the boy said.

"Before this, I always looked to the
desert with longing," said Fatima.
"Now it will be with hope. My father
went away one day, but he returned to
my mother and he has always come
back since then."

এরপর বিদায় নেয়ার সময় সান্টিয়াগো দেখে ফাতিমা কাঁদছে, জবাবে ফাতিমা বলে
"I'm a woman of the desert," she said,
averting her face. "But above all, I'm a
woman."



এভাবেই একসময় দেখা মেলে সান্টিয়াগোর সাথে এই গল্পের এক অসাধারন রহস্যময় চরিত্রের এক আলকেমিস্ট বা রসায়নবিদের সাথে। ঘোড়ায় চড়ে হাতে একটা বাজপাখী নিয়ে হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে গল্পে সেই রহস্যময় চরিত্র আলকেমিস্টের। যদিও গল্পের নাম আলকেমিস্ট রাখার ব্যাপারে হয়ত তার চরিত্রের প্রভাব সান্টিয়াগোর উপর বেশিমাত্রায় ছিল বলে হতে পারে। তবে আলকেমিস্টের সাথে সান্টিয়াগোর কথোপকথনে যেসব আধ্যাত্মিকতাবাদ ফুটে উঠেছে তা এক কথায় অসাধারন।

"when each day is the
same as the next, it's because people
fail to recognize the good things that
happen in their lives every day that the
sun rises."

"The sea has lived on in this shell,
because that's its destiny. And it will
never cease doing so until the desert is
once again covered by water."

"When someone makes a decision, he is really diving into a strong current that will carry him to places he has never dreamed of when he first made the decision."

"If a person is living out his destiny, he
knows everything he needs to know.
There is only one thing that makes a
dream impossible to achieve: the fear
of failure."



একমসয় গল্পের শেষপ্রান্তে আলকেমিস্ট বিদায় নেয় এরপর শুরু হয় সান্টিয়াগোর স্বপ্ন পূরনের জন্য শেষ তিন ঘন্টার যাত্রা , সে প্রতিমূহূর্তে আশা করে সামনের বালিয়াড়ি পেরুলেই সে তার স্বপ্নের পিরামিডের দেখা পাবে তারপর সেই কাংখিত গুপ্তধন। এবার বাকীটা আপনাদের পড়ার পালা তবে গল্পের শেষ চমক লেখক সেই শেষ তিনঘন্টার মধ্যই রেখেছেন। যা কিনা পাঠককে বাধ্য করবে গল্পের শেষ না দেখা পর্যন্ত ।

আলকেমিস্ট বইটা আপনাকে শুধু একটি গল্প হিসেবে নয় বরং জীবনের আধ্যাত্মিকতাবাদ যে বাস্তবজীবনেরই এক প্রতিচ্ছবি তা অনুধাবন করতে সাহায্য করবে। নিজের স্বপ্ন যা এখনও বাস্তবে রুপ দিতে পারেননি সেই স্বপ্ন পূরনে আপনাকে করবে দারুনভাবে উজ্জিবীত । এই আলকেমিস্ট গল্পে মোটিভেশনাল বিষয়টি দারুনভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। সবকিছু মিলিয়ে শুধু একটি কথাই আবার বলব "অসাধারন"।

নোট: গুগলে দ্যা আলকেমিস্ট পিডিএফ লিখে সার্চ করলেই বাংলা এবং ইংরেজী দুটোর অনুবাদই পাবেন।
ছবিগুলো ঘটনার সাথে মিল দেয়া হয়েছে এবং নেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।


মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:২০

ইমরান আশফাক বলেছেন: অসাধারন রিভিউ, বইটি পড়ার লোভ সামলাতে পারছি না আর। চেষ্টা করছি পিডিএফ (বাংলা) ডাউনলোড করার জন্যে।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

আশিক হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ আশা করি ভাল লাগবে বইটা পড়ে।

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:১০

রাজীব নুর বলেছেন: বইটি পড়েছি।
চমৎকার একটি বই।
আপনি খুব সুন্দর লিখেছেন।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

আশিক হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:০২

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:

উপন্যাস টা পড়া হইছিল অনেক আগে।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

আশিক হাসান বলেছেন: আশা করি ভুল বলিনি বইটা সম্পর্কে , ধন‌্যবাদ মন্তব্যর জন‌্য।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:০৪

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ই-বুক সংগ্রহে আছে। কয়েকবার পড়তে গিয়েও ছেড়ে দিয়েছি অনুবাদ ভালো হয়নি বলে। এখন আপনার রিভিউ পড়ে পড়ার লোভ জেগে উঠল। আজই পড়ার চেষ্টা করব।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪

আশিক হাসান বলেছেন: এবার আশা করি বইটা পড়ে ফেলবেন।

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩৬

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: অসাধারন বই ।পড়েছি

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:০০

আশিক হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ইংরেজিটা পড়িনি কিন্তু এর বাংলা অনুবাদ পড়েছি।
আপনার লেখা ভালো হয়েছে।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৪০

আশিক হাসান বলেছেন: আশা করি এবার ইংরেজী অনুবাদটা পড়বেন । ধন্যবাদ।

৮| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১১

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: কয়েকদিন আগেও বইটা নিয়ে ব্লগে রিভিউ পড়েছিলাম। ব্যস্ততার কারণে পড়া হয়নি। আপনার রিভিউ পড়ে ইচ্ছেটা আবারো জেগে তুলেছে।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৪১

আশিক হাসান বলেছেন: আপনার ইচ্ছেটা এবার সফল হউক এই কামনা করছি।

৯| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৩

লিযেন বলেছেন: ধন্যবাদ.....ডাউনলোড দিলাম..... =p~

১০| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৭

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: জীবন পরিবর্তনকারী চমৎকার একটা বই......

১৭ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:০২

আশিক হাসান বলেছেন: নিঃসন্দেহে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.