নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃষ্টিতে আমার হাটঁতে ভাল লাগে কারন কেউ দেখেনা আমার চোখের জল।

আশিক হাসান

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

আশিক হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইস্তাম্বুল একটি শহরের স্মৃতিচারন- বুকরিভিউ

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:০২

তুর্কি ভাষায় "হুজুন" শব্দের অর্থ হচ্ছে বিষন্নতা | হুজুনের উৎস আরবি ভাষা থেকে, হাদিসে এসেছে হুজন বা হাজেন | যে বছর হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রিয় স্ত্রী বিবি খাদিজা (রাঃ) এবং চাচা আবু তালিব দুজনকে একসাথে হারান সেই বছরকে বলা হয়ে থাকে Ām al-Ḥuzn বা বিষন্নতার বছর | সুফী দরবেশদের কাছে এই হুজুন মানে আধ্যাত্বিক কষ্ট-বোধ | কিন্তু এই কষ্ট-বোধ এর কারণ ছিল আল্লাহের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থাকার কষ্ট।

"হুজুন" শব্দটির সাথে পরিচয় হয় তুর্কি লেখক সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ওরহান পামুকের লেখা অসাধারণ এক স্মৃতিচারণ মূলকগ্রন্থ " ইস্তাম্বুল- একটি শহরের স্মৃতিচারণ " এর পাতা থেকে | পঞ্চাশ দশকে জন্ম নেয়া শিশু ওরহান পামুকের চোখ খুঁজে ফেরে অটোমান সাম্রাজ্যের যুগে ভেঙে পড়া পাশা'দের প্রাসাদ , দালানকোঠা আর শহরের ধ্বংসাবশেষ আর তার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া হুজুন কে | সেই শৈশব থেকে ওরহান পামুক কে তাড়িয়ে বেরিয়েছে এই হুজুন | "ইস্তাম্বুল- একটি শহরের স্মৃতিচারণ " বইতে ওরহান পামুকের সেই হুজুন বা বিষন্নতা গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে গিয়ে একসময় কখন যেন ওরহান পামুকের চোখে নিজের শহর ঢাকা'কে দেখতে শুরু করলাম |

ছবি: পঞ্চাশের দশকে ইস্তাম্বুলের ভেঙে পড়া জীর্ণ শীর্ণ কাঠের দালানকোঠা জানান দিচ্ছে অতীতের অটোমান সাম্রাজ্যের হারানো গৌরবের ইতিহাস

ছবি: অতীতের অটোমান আমলের কাঠের প্রসাদের বা ইয়ালির বাহারি নকশা জানান দিচ্ছে অতীতের হারানো জৌলুষতাকে

ছবি:গালাতা টাওয়ার - হারিয়ে যাওয়া অটোমান আমলের স্মৃতিচিহ্নের একটি।

ছবি:ইস্তাম্বুলে অটোমান স্থাপত্যের নৈন্দিকতার মাঝে যেন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা বা হুজুন লুকিয়ে আছে

সে সময়কার ইস্তাম্বুলের ভেঙেপড়া জরাজীর্ণ প্রাসাদ আর কাঠের তৈরী প্রাসাদ বা ইয়ালির সাথে মিশে থাকা হুজুনের মাঝে অতীতের জৌলুষতাকে খুঁজে পেতেন ওরহান পামুক | যে হুজুন বা বিষন্নতার চাদরে সারা ইস্তাম্বুল শহর আর তার অধিবাসীরা নির্জীব আর নির্লিপ্ততার মাঝে একের পর এক দিনরাত কাটিয়ে দিত, সেই একই হুজুনের রেশ ধরে ওরহান পামুক খুঁজে পেয়েছিলেন এক আনন্দময় বিষণ্ণতাকে | এ যেন পুরোনো গৌরবময় স্মৃতি রোমন্থনের এক অজানা আনন্দ |


ছবি:মধ্যদুপুরের ইস্তাম্বুলের রাস্তাটা মনে করিয়ে দেয় অনেকদিনের আগের সেই অতীত ইস্তাম্বুলের কথা।

ইস্তাম্বুল ভ্রমণের সময় সেই ওরহান পামুকের হুজুন বা বিষন্নতাকে কে উপলদ্ধি করলাম মধ্যদুপুরে নির্জন রাস্তায় একাকী পথিক বেশে, এই শহরের এক অজানা অচেনা সঙ্গীহীন নিঃস্বঙ্গ আমার 'আমি'কে | এই বিষন্নতায় ছিলোনা কোনো কষ্ট কিন্তু তারপর একে একরকম বিষন্নতায়ই বলা যায় |


ছবি:ইস্তাম্বুলের নগরী জীবনের অবিরাম ছুটে চলা মেট্রো রেল।


ছবি:ইস্তাম্বুলের বসফরাসের ধারে অটোমান স্থাপত্যের নৈন্দিকতার মাঝে যেন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা বা হুজুন লুকিয়ে আছে

ইস্তাম্বুল শহরের এই "হুজুন বা বিষন্নতা" খুঁজে পেয়েছিলাম কখনো রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড়ে, আবার কখনো বা মেট্রো রেলের একাকী কামরায় অথবা টপকাপি প্রাসাদের পাশে বসফরাসের দিকে তাকিয়ে খুঁজে পেয়েছিলাম সেই হুজুনকে | ওরহান পামুকের এই "হুজুন বা বিষন্নতার" চমৎকার বিশ্লেষণ যেন আমারই শৈশবের হুজুনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে আমার "আমি"কে | ওরহান পামুকের এই "হুজুন বা বিষন্নতা" মনে হয় আমারই মনের অজান্তে আমাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে আমার শৈশব থেকে তারুণ্যে হয়তো এখনো | আমাদের সবার মাঝের এই "হুজুন বা বিষন্নতা"কে সত্যিকার অর্থে আমরা কজন চিনতে পেরেছি ?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার লেখা পড়ে হুজুন হুজুন লাগছে

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪২

আশিক হাসান বলেছেন: অসুবিধা নাই ঠিক হয়ে যাবে ধৈর্য্য ধরেন।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:


দুনিয়ার হাজার বিষয় থাকতে কিসব হুজুন মুজুন কোথায় খুঁজে পান, কে জানে!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৭

আশিক হাসান বলেছেন: দুনিয়ার হাজার হাজার বিষয়ের মধ্যে হুজুন ও একটা বিষয়, আর যার যেটা ভাল লাগে । আর সবার যে একই বিষয় ভাল লাগবে সেটাও ঠিক না । মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
ইস্তাবুল যাওয়ার আমার খুব ইচ্ছা।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৪

আশিক হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। আমি এপর্যন্ত যে কটা শহর ঘুরেছি তার মধ্যে ইস্তাম্বুল এখন পর্যন্ত সেরা। আমার কাছে ইতিহাস সবসময় প্রাধান্য পেয়ে এসেছে, আর ইস্তাম্বুল এক অসাধারন শহর সেই অর্থে। এটা এমন একটা শহর যেখানে এসে মিলেছে একদিকে টার্কিশ কালচার, অন্যদিকে ইউরোপীয়ান কালচারের ছোঁয়া , সাথে আছে এশিয়ান আর আরবের ছোঁয়া। এতগুলো ভিন্ন জাতির মিশ্রন আর সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যর এযেন এক মিলনমেলা । পুরো শহরটি যেন টুরিস্ট স্পটে ঠাসা। অসাধারন।

৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কতদিন ছিলেন সেখানে?

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০৫

আশিক হাসান বলেছেন: আমি তিন ট্রিপে তিনবার লে ওভার নিয়ে শহর ঘুরে দেখেছি তবে থাকা হয়নি, ইচ্ছে আছে আবার সুযোগ পেলে বেশ কয়েকদিন থাকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.