নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইতিহাসের পাঠশালায়

আসিফ আযহার

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

আসিফ আযহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাঠশালায়: ৭ম অধ্যায়: ইতিহাসের পথে রোম (২য় অংশ)

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:১৯



৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহের সুচনা ঘটেছিল। এটা অন্যান্য বিদ্রোহ থেকে একেবারেই আলাদা। স্পার্টাকাস দক্ষিণ ইতালিতে রীতিমত একটি স্বাধীন রিপাবলিক স্থাপন করে ফেললেন। স্পার্টাকাস তিনশ রোমান সৈন্যকে ধরে এনে গ্লাডিয়েটরের মত তাদের একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে মৃত্যু পর্যন্ত লড়তে বাধ্য করেন। এতে রোমে আংতকের ঢেউ বয়ে যায়। এই সংকটের সময় কনসাল পদের প্রার্থী হতে কেউ রাজি হচ্ছিল না। রোমান বাহিনী শোচনীয়ভাবে র্স্পাটাকাসের বাহিনীর কাছে বারবার পরাজিত হচ্ছিল। অবশেষে ক্রাসাস নামে এক ধনী লোক কনসাল পদে বসে দীর্ঘ যুদ্ধের পরে স্পার্টাকাসের বাহিনীকে পরাজিত করেন। কিন্তু পরাজিত হলেও দাসরা ছোট ছোট খন্ডযুদ্ধ ও সমুদ্রে রোমান জাহাজ লুট করতে থাকে। ফলে রোমে খাদ্য সংকট দখা দেয়। এই খাদ্য সংকটের ফলে ভুক্তভোগী প্রলেতারিয়ানদের অসন্তোষ নতুন ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠার উপক্রম হল। নিরূপায় অভিজাত ও বণিকরা বাধ্য হয়ে সেনানায়কদের হাতে স্থায়ীভাবে ক্ষমতা তুলে দিতে সম্মত হল। রাষ্ট্রকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক একনায়কত্ব প্রতিষ্টায় বণিক ও অভিজাতরা সম্মত হল।

সমর নায়করাই তখন উভয়পক্ষের নেতায় পরিণত হয়েছেন। নাগরিকদের নেতা আর রাজনীতিবিদরা নন। সেনানায়কগন দুই পক্ষের যে কোন এক পক্ষে ভিড়ে গিয়ে স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্র“তি দিয়ে নিজের ক্ষমতায় বসার পথ প্রশস্ত করছেন। অন্য দিকে বণিক ও অভিজাতেরা রাজনীতি বাদ দিয়ে সেনানায়কদের হাত করে স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠছেন। এভাবে তারা ক্রমে আরও বেশি করে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিলেন। ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনৈতিক পদ্ধতিটি এভাবে সামরিক একনায়কত্বের জালে বন্দী হয়ে যেতে শুরু করে। এ সময়ে রোমান অভিজাতদের আর্থ-সামাজিক কর্তৃত্ব তলানীতে গিয়ে ঠেকে। দাসবিদ্রোহ এবং মেরিয়াসের মত বণিকপন্থী সেনানায়কের উত্থানের কারণে অনেক ভূস্বামীরই সর্বনাশ হয়। যেসব অভিজাতদের হাতে তখনও যথেষ্ট পরিমাণে ভূসম্পত্তি ছিল তারা বণিকদের সাথে সন্ধি স্থাপন করে দাস ব্যবস্থা কায়েম রাখার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে সামরিক এনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়। কারণ ল্যাটিফান্ডিয়ার উৎপাদন বাঁচাতে দাস শোষণ ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না।

সামরিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বে বণিক ও অভিজাতদের মধ্যে একটা চুক্তি হল। চুক্তিতে বণিকদের প্রতিনিধিত্ব করলেন ক্রাসাস এবং অভিজাতদের প্রতিনিধিত্ব করলেন জুলিয়াস সিজার ও পম্পেই। পম্পেই ও সিজার দুজনেই বিখ্যাত রোমান সেনানায়ক ও বিশাল সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। এরা আলেকজান্ডারের সাবেক সাম্রাজ্য ভুক্ত এলাকা ও ইউরোপের বিশাল অঞ্চলকে রোমান শাসনের পদানত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষরকারি তিনজনই একনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ক্রাসাসের পরে পম্পেই ও জুলিয়াস সিজার যৌথভাবে কনসাল নিযুক্ত হন। পম্পেই কনসাল হয়েছিলেন অভিজাতদের পক্ষ হতে আর জুলিয়াস সিজার কনসাল হয়েছিলেন দল বদল করে বণিক প্রতিনিধি হিসেবে, কনসাল হয়েই এরা প্রোকনসাল ক্রাসাসকে এশিয়া মাইনরে লুণ্ঠনের জন্য পাঠিয়ে দেন। যথারীতি নিজেরাও দেশ ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন ডাকাতির উদ্দেশ্যে। এ সময়ে সিজার ইউরোপের বিশাল ভূখন্ড দখলে আনতে সমর্থ হন। খ্রিস্টপূর্ব ৬০ সালের মধ্যে ক্রাসাস, সিজার ও পম্পেই রোমান সাম্রাজ্যের সর্বময় কর্তায় পরিণত হন। এদের সময়ে রোমান সাম্রাজ্য সর্বাধিক ব্যপ্তি লাভ করে। ইউরোপের মূল ভূখন্ড প্রথমবারের মত বিভিন্ন প্রাচীন অর্ধ সভ্য জাতির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে রোমান শাসন ও শোষনের আওতায় আনতে সমর্থ হন জুলিয়াস সিজার। মধ্য ও উত্তর ইউরোপ এই প্রথম সভ্যতার আওতায় আসে।

আলেকজান্ডারের সাবেক সাম্রাজ্যের প্রায় পুরোটাই নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছিলেন পম্পেই ও সিজার। রোমান সাম্রাজ্যের সীমানাকে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত করেন এরাই। এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ জুড়ে বিশাল ভূখন্ডকে এরা রোমান শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। আলেকজান্ডারের পরে বিশ্বব্যাপী একক আধিপত্য বিস্তারে তার সমকক্ষ হওয়ার যোগ্যতা সর্বপ্রথম অর্জন করেন জুলিয়াস সিজার। সিজারের সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের পরিধি আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্যের সমান হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্যের প্রধান দুটি অংশ মিসর ও সিরিয়াকে রোমান শাসনের পদানত করেন পম্পেই ও সিজার। রোম তখন পর্যন্ত ইউরোপের সবচেয়ে বড় শক্তি হলেও টলেমিদের মিসর ও সেলুসিড রাজ্য সিরিয়া এতদিন আংশিক বা পূর্ণভাবে স্বাধীনতা ভোগ করেছে। পম্পেই ৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেলুসিডদের সিরিয়া দখল করতে সফল হন এবং জুলিয়াস সিজার ৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের অনুগত ক্লিওপেট্রাকে মিসরের ক্ষমতায় বসান। অবশ্য এর আগেও মিসর কয়েকবার রোমের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল।

৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সেনাপতিরা নিজ নিজ এলাকার শাসনভার গ্রহণ করেন। অনিবার্য গৃহযুদ্ধের পর সেনাপতিরা নিজ নিজ এলাকায় রাজা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেন। সিরিয়া অঞ্চলের দখল নেন সেলুকাস নিকাটোর। এই সেলুকাসকে উদ্দেশ্য করেই ভারত সম্পর্কে আলেকজান্ডার বলেছিলেন, “সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!” সেলুকাসের অধীনে সিরিয়া একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়। এন্টিয়ক ছিল রাজধানী। সেলুকাসের বংশধরদের বলা হত সেলুসিড। তাই তাদের রাজ্যকে বলা হয় সেলুসিড রাজ্য। সিরিয়া ও আশপাশের কিছু অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল সেলুসিড রাজ্য। এর পাশাপাশি শক্তিশালী রাজ্যের মধ্যে ছিল টলেমিদের মিসর ও পার্থিয়া। বর্তমান ইরান অঞ্চলে ছিল তখনকার পার্থিয়া রাজ্য। জেরুজালেম কেন্দ্রিক ইহুদিদের জুডিয়া রাজ্য ছিল কখনও টলেমিদের অধীনে আবার কখনও সেলুসিডদের অধীনে ।

আলেকজান্ডারের মেসিডোনিয়ান সেনাপতি প্রথম টলেমি সটার (Soter) উপাধী গ্রহণ করে মিসরের রাজা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বংশধরদেরকেও টলেমি (Ptolemy) নামে ডাকা হয়। তবে তাদের একেকজনের নামের সাথে একেকটি আলাদা উপাধি যুক্ত আছে। প্রথম টলেমি থেকে শুরু করে দ্বাদশ টলেমি আউলেটসের কন্যা সপ্তম ক্লিওপেট্রার সময় পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর মিসর একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল। প্রথম টলেমি সটার লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ সিরিয়া ও সাইপ্রাস দখল করে টলেমি রাজ্যের অর্ন্তভূক্ত করেছিলেন। এমনকি ইজিয়ান সাগরের দ্বীপগুলিও দখল করে গ্রিসের মল ভূখন্ডে সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। দ্বিতীয় টলেমি ফিলাডেলফাসের (২৮২-২৪৬ খ্রি. পূ.) সময়ে টলেমি রাজ্য সর্বাধিক বিস্তার লাভ করে। তাঁর আমলেই আলেকজান্দ্রিয়ার কাছে ফারোজ দ্বীপের ঐতিহাসিক বাঁতিঘরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম এই আলেকজান্দ্রিয়ার বাঁতিঘর। তৃতীয় টলেমি ইউয়েরগেটস (২৪৬-২২১ খ্রি: পূ) মিসরের প্রতিদ্বন্দ্বী সেলুসিড রাজ্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চল সাময়িকভাবে দখল করতে পেরেছিলেন। চতুর্থ টলেমি ফিলোপেটর (২২১-২০৫ খ্রি: পূ) সেলুসিডদের শক্তিশালী প্রতিআক্রমণ ব্যাহত করতে সমর্থ হন। তাঁর পুত্র পঞ্চম টলেমি ইপিফেইনস (২০৫-১৮০ খ্রি. পূ.) সাবালক হওয়ার আগেই সিংহাসনে বসেন।

এ সময়ে কার্থেজের সংগে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধে রোমানরা জয়লাভ করে। যুদ্ধজয়ী রোম প্রথমেই নাক গলায় মিসরের ব্যাপারে। ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সিনেট একটি পুরনো চুক্তির দোহাই দিয়ে নাবালক রাজা পঞ্চম টলেমির অভিভাবক হিসেবে একজন রোমান অভিজাতকে পাঠায় মিসরে। পঞ্চম টলেমির সময়ে মূল মিসরের বাইরের অধীনস্ত অঞ্চলগুলি হাতছাড়া হয়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইহুদি রাজ্য জুডিয়া। ১৯৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পঞ্চম টলেমি জুডিয়ার কর্তৃত্ব সেলুসিডদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সিরিয়ার সেলুসিড রাজারা অবশ্য জুডিয়াকে বাগে আনতে যথেষ্ট প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। এর কারণ ইহুদি বিদ্রোহ। ১৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেলুসিড বংশীয় চতুর্থ রাজা অ্যান্টিওসাস ইপিফানি জেরুজালেমের ধর্মগৃহে সংরক্ষিত ধনরত্ন লুট করায় এবং এ ধর্মগৃহকে গ্রিক দেবরাজ জিউসের মন্দিরে পরিণত করায় ইহুদি বিদ্রোহ শুরু হয়। ম্যাকাবিস পরিবারের নেতৃত্বে ইহুদিরা প্রচন্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অ্যান্টিওসাসের বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ইহুদিরা ধর্মগৃহ পুননির্মাণ করে। রোমানরাও জুডিয়া কব্জা করতে যেয়ে ভয়াবহ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। শক্তিশালী মিসরকে করদ রাজ্যে পরিণত করতে সফল হলেও ক্ষুদ্র জুডিয়া রোমান সাম্রাজ্যের গলার কাঁটায় পরিণত হয়। ৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পম্পেই সেলুসিড রাজ্য জয় করে সিরিয়ান প্রদেশ প্রতিষ্টা করেন। এরপর পম্পেই নজর দেন জুডিয়ার দিকে। জুডিয়াকে রোমের অধীনস্ত দেশের পর্যায়ে নিয়ে আসতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এর ফলে রোমান সাম্রাজ্য মিসরের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত হল।

পম্পেই সিরিয়ায় প্রোকনসাল আউলাস গেবিনিয়াসকে গর্ভনর নিযুক্ত করে রোমে ফিরে যান এবং জুলিয়াস সিজারের সাথে যৌথভাবে কনসাল নিযুক্ত হন। এ সময়ে মিসরের অজনপ্রিয় ও বিলাসী রাজা দ্বাদশ টলেমি আউলেটস গদি রক্ষার জন্য পম্পেই ও সিজারের দ্বারস্ত হন। ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে পম্পেই ও সিজার আউলেটসের কাছ থেকে মিসরের পুরো বছরের রাজস্ব আয়ের সমপরমাণ অর্থ আদায় করেন। কিন্তু এতে রক্ষা হয় না। কারণ এত বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতে গিয়ে আউলেটস কৃষক প্রজাদের উপর করের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেন। পম্পেই ও সিজার ঘরে বসেই যে ডাকাতির অর্থে ভেসে গিয়েছিলেন তার দায় গিয়ে পড়ল মিসরের গরীব প্রজা ও কৃষকদের ওপর। এমনিতেই কর দিতে দিতে তাদের নিজেদের ফলানো ফসলের প্রায় সবটাই চলে যায় রাজা আর ধর্ম ব্যবসায়ী পুরোহিতের ভাঁড়ারে। এর ওপর আরও কর চাপিয়ে দিলে তাঁরা বাঁচবে কী খেয়ে? তাই রাজার ক্ষমতা আর পুরোহিতের ধর্মীয় চোখ রাঙ্গানী উপেক্ষা করে তারা বিদ্রোহে নামতে বাধ্য হয়। আলেকজান্দ্রিয়ার নাগরিকরাও আউলেটসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। উপায়ান্তর না দেখে আউলেটস দেশভাগ করে রোমে পৌঁছান।

এ সময় সিজার বেঁরিয়েছেন ইউরোপ জুড়ে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে। পম্পেই আউলেটসকে রোমে অতিথি হিসেবে অভ্যর্থনা জানালেন। আউলেটসের অনুপস্থিতির সুযোগে মিসরের অধিবাসীরা তার জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং কোন কোন এলাকায় তাঁর বোনকে শাসনভার অর্পণ করে। রোমান সিনেট মিসরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পক্ষপাতী ছিল না। ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আউলেটস মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন রোমের সিদ্ধান্তের জন্য। অবশেষে ৫৬-৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে সিরিয়ার রোমান গভর্নর প্রোকসনাল গেবিনিয়াস জুডিয়া থেকে আক্রমণ চালিয়ে মিসর দখল করে রোমান পুতুল আউলেটসকে সিংহাসন বসান। এই অভিযানে গেবিনিয়াসের অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান ছিলেন মার্ক এন্টনি। গেবিনিয়াসও মিসরের রাজকোষ থেকে বিপুল অর্থ লুট করেন।

মিসর তখন নামেমাত্র স্বাধীন। মাত্রাতিরিক্ত লুণ্ঠনের অর্থ যোগাতে গিয়ে প্রজাদের জীবন অত্যন্ত দুঃসহ হয়ে ওঠে। ফলে তীব্র জনঅসন্তোষের মুখে গেবিনিয়াস মিসর ত্যাগে বাধ্য হন। আউলেটস তাঁর প্রভুদের হাতে যে অর্থ তুলে দিয়েছিলেন তার ঋণ শোধ করার জন্য প্রজাদের মাথায় দুঃসহ শোষণের বোঝা চাপিয়ে দেন। সকল পুতুল শাসকের বৈশিষ্ঠ্যই হল প্রভুকে সন্তুষ্ট করার জন্য জনগণের মাথায় চাপিয়ে দেয় দুঃখের বোঝা। রাজরাজড়াদের ইতিহাসের পুরোটাই হল নারকীয় শোষণ ও অত্যাচারের বিপরীতে লাগামহীন ফূর্তি, অপচয় আর বিলাসীতা। আর অন্য রাজ্য দখল ও লুণ্ঠনের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা অর্থাৎ যুদ্ধের ইতিহাস। অন্য রাজ্য দখলের মানে হলো সেখানকার প্রজাদের ঘাড় ভেঙে যে কর অন্য রাজা আদায় করত তা নিজের অধিকারে নিয়ে আসা। তাই যুদ্ধ ও দখল বেদখল ছিল ইতিহাসের হাজার হাজার বছর জুড়ে এক নিরন্তর চলমান প্রক্রিয়া, যা ছিল জীবনের অত্যন্ত স্বাভাবিক অংশ এবং এর কোন শেষও ছিল না। আজও তা থেমে নেই।

হাজার হাজার বছরের পুরনো কৃষি জমিতে পরিপূর্ণ মিসর সে সময়কার তুলনায় যথেষ্ট সম্পদশালী ছিল। আলেকজান্ডারের সৈন্যবাহিনী ফিনিশীয়দের বাণিজ্য কেন্দ্র টায়ার (Tyre) ধ্বংশ করার ফলে, আলেকজান্দ্রিয়া সেই বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধে রোমানরা কার্থেজকে পরাজিত করলে আলেকজান্দ্রিয়া ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অপ্রতিদ্বন্ধী কেন্দ্রে পরিণত হয়। নীল নদ থেকে খাল কেটে লোহিত সাগরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে পণ্যদ্রব্য সমুদ্রপথে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ায় রপ্তানীর ব্যবস্থাও হয়েছিল। তাই কৃষির পাশাপাশি রাজস্বের অন্যতম উৎস ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। সেই আমলে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত মিসরে। রাজস্ব আয়ের বিশাল উৎস ছিল মিসর। তাই সম্পদে ভরপুর মিসরের ক্ষমতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ কাড়াকাড়ি মারামারি ছিল শাসক মহলের স্বাভাবিক চিত্র। এ কাড়াকাড়িতে যিনি ক্ষমতা থেকে ছিটকে যেতেন বা ছিটকে যাওয়ার মত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেন তিনি ভীনদেশী রোমান পরাশক্তির সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতে মোটেও দ্বিধা করতেন না। এজন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ভীনদেশী শেকলে বাঁধা পড়লেও তাদের কোন মাথাব্যাথা ছিল না। কারণ প্রজাদের ঘাড় ভেঙে ঐশ্বর্য্যরে পাহাড়ে বসে লুটেপুটে খাওয়ায় যে মজা, তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুর্ভাগ্যের কাছে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিতান্ত তুচ্ছ বিষয় তাদের কাছে। তাই রোমান শক্তি সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে টলেমি রাজারা সমানে নির্লজ্জ ছিলেন।

অষ্টম টলেমি ইউয়েরগেটস ১৬২ ও ১৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিদ্রোহী আত্মীয় স্বজনদের সামলানোর জন্য রোমের সহায়তা গ্রহণ করেন। দশম টলেমি আলেকজান্ডার রোমান বিত্তবানদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ধার করেন ক্ষমতা পূণর্দখলের জন্য। ৮১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান কনসাল সূল্লা একাদশ টলেমিকে মিসরের গদিতে বসান। দ্বাদশ টলেমি আউলেটসের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। আউলেটস যখন মিসরের ক্ষমতায়, রোম তখন দাস ও প্রলেতারিয়ান বিদ্রোহ এবং ভীনদেশী অর্ধসভ্য যাযাবর জাতিগুলোর আক্রমণের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেকটাই সমর্থ হয়েছে। একনায়করা ক্ষমতায় এসে নতুন নতুন দেশ দখলে ঝাপিয়ে পড়েছে। পম্পেই সেলুসিড রাজ্য ও জুডিয়া জয় করে মিসরের সীমানায় পৌঁছে যান। এ অবস্থায় আউলেটস পম্পেইর সেনাবাহিনীর জন্য টাকা পয়সা ঘুষ দিয়ে কোন মতে রাজ্য রক্ষা করেন।

কিন্তু মিসর ছিল রাজস্ব আয়ে ভরপুর ও বিত্তবান। তাই মিসর দখল করা ছিল রোমান একনায়কদের জন্য কর্তব্য। ক্রাসাস, পম্পেই ও সিজার তিনজনই মিসর দখল করা কর্তব্য মনে করতেন। কিন্তু এমন সময়ে আউলেটস নিজেই এসে এমন ধরা দিলেন যে তার আর দরকার হলো না। অভ্যন্তরীণ কাড়াকাড়িতে নিজের গদি রক্ষার জন্য সাহায্য চেয়ে আউলেটস পম্পেই ও জুলিয়াস সিজারের সামনে টাকার বস্তা খুলে দিলেন। এই বিপূল পরিমাণ অর্থ সিজার ও পম্পেই ঘুষ নিয়েছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ সালে। সিরিয়ার গভর্নর প্রোকনসাল গেবিনিয়াস পরের দফায় ঘুষ নেন এর চেয়েও বেশী। জুলিয়াস সিজার, পম্পেই ও গেবিনিয়াস মিসরের রাজকোষ হতে যে পরিমাণ অর্থ লুন্ঠন করেন তা যে কোন দেশ দখল হতেও পাওয়া যেত না। এই লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতা আউলেটসের কন্যা সপ্তম ক্লিওপেট্রার সময়েও চলতে থাকে। আউলেটস তাঁর কন্যা সপ্তম ক্লিওপেট্রা ও ত্রয়োদশ টলেমিকে মিসরের সিংহাসনের জন্য উত্তরাধিকারি মনোনীত করে যান। ক্লিওপেট্রা তাঁর নাবালক ভাইকে বঞ্চিত করে নিজেই ক্ষমতায় জুড়ে বসেছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৫১ সালে ক্লিওপেট্রা মিসরের সিংহাসনে বসেন। তাঁর সময়েও মিসর রাজস্ব আয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তাঁর আমলে ফেলাহিন (Fellahin) নামে মিসরীয় কৃষকের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৯০ লক্ষের মধ্যে। এদের কাছ থেকে যে রাজস্ব আদায় হত তা লুটে খাওয়ার জন্য রাজমহলে ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ কাড়াকাড়িতে ক্লিওপেট্রা প্রথমে উতরে যান। টলেমিদের প্রথা ছিল রাজা ও রাণী মুক্তভাবে সিংহাসনে বসবেন এবং রাজাই হবেন প্রধান ব্যক্তি। এজন্য সিংহাসনের দাবীদার ভাই-বোন কিংবা ছেলে ও মায়ের মাঝে প্রতীকীভাবে বিয়ে হত রাজা-রানী সম্পর্ক স্থাপন করে যৌথভাবে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য। ক্লিওপেট্রা ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন তাঁর ১০ বছর বয়সী ভাইকে বিবাহের মাধ্যমে। কিন্তু তিনি ভাইকে সিংহাসনে আরোহনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন। ক্লিওপেট্রাও তাঁর বাবার মতই রোমান শাসনের অনুগত ছিলেন। রোম সাম্রাজ্য তখন দেশ জয়ে বিপুল বেগে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে রোমানরা কিছু সংকটের মুখোমুখিও হয়। ৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিরিয়ার গর্ভনর থাকাকালীন প্রোকনসাল ক্রাসাস এশিয়া মাইনরের বিথিনিয়া অঞ্চল লুট করতে গিয়ে নিহত হন। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে পার্থিয়ান সাম্রাজ্যের যৌথবাহিনীর আক্রমণে রোমান বাহিনী পরাজিত হয়। ক্রাসাসের পরে সিরিয়ার গর্ভনর নিযুক্ত হন বিবুলাস। সিরিয়ার সীমানার ভেতর থেকে পার্থিয়ান সৈন্যদের উৎখাতে বিবুলাসকে সহায়তা করতে ক্লিওপেট্রা সম্মত হয়েছিলেন।

ইতোমধ্যে রোমান সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছিল। ত্রয়ী শাসকদের মধ্যে ক্রাসাস মারা গেলে সিজার ও পম্পেই দুজনেই একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। রোম, সিরিয়া ও মিসরে পম্পেই প্রভাবশালী ছিলেন। আর জুলিয়াস সিজার ইউরোপ জয় করে বিপুল শক্তির অধিকারি হয়েছেন। গল দেশ অর্থাৎ ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে যাযাবর অর্ধসভ্য জাতিগুলোকে বিতাড়িত করে তিনি ইউরোপের মূল ভূখন্ডকে নিরংকুশভাবে রোমান লুণ্ঠনের অধীনে নিয়ে আসেন। এমনকি ইউরোপের উত্তরের ব্রিটেন উপদ্বীপও তিনি দখলে নিয়ে আসেন। স্পেন তো কার্থেজের সংগে যুদ্ধের সময়েই হস্তগত হয়েছিল। ফলে দক্ষিণের সিসিলি দ্বীপ পুঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরের ব্রিটেন পর্যন্ত ইউরোপের মূল ভূখন্ড জুড়ে রোমান সাম্রাজ্যও বিস্তৃত হল।

সিজারের দখলের আগে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে কোন সভ্য রাষ্ট্র ছিল না। ছিল অর্ধসভ্য শিকারি টিউটন জাতিগুলোর রাজত্ব। দুর্ধর্ষ টিউটনরা সিজারের বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়। ফলে ইউরোপে নিরংকুশভাবে সভ্যতা বিস্তার লাভ করে। এর আগে বার বার টিউটনরা রোমানদের সভ্য এলাকায় ঢুকে লুটপাট চালাত। এদের ভয়ে রোমানরা সবসময় ভীত থাকত। দুর্ধর্ষ শিকারি যোদ্ধা জাতি অধ্যূষিত ইউরোপ, পুরোপুরি সভ্যতায় প্রবেশ করে সিজারের অভিযানে বিজয়ের মাধ্যমে। আজকের ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডে সভ্য অর্থনৈতিক জীবনের সুত্রপাত ঘটায় রোমানরা। পুরো ইউরোপকে সভ্যতার বাঁধনে বাঁধেন জুলিয়াস সিজার। অবশ্য রাশিয়া ছাড়া। এখানে সভ্যতা বলতে শিকার ও সংগ্রহ অর্থনীতির স্থলে উৎপাদন অর্থনীতিকে বোঝাচ্ছে। সভ্যতা মানেই যে মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা তা নয়। বরং সভ্যতার মানে হলো যাযাবর আদিম শিকারি জীবন ছেড়ে উৎপাদনমূলক অর্থনৈতিক জীবনে প্রবেশ। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ নয় বরং প্রকৃতিকে নিজের প্রয়োজন মেটাবার কাজে ব্যবহার করাই হল সভ্যতার মূলমন্ত্র। তবে মানুষের মুক্তির নিশ্চয়তা সভ্যতা দিতে পারে না।

মানুষের এক দলের ওপর আরেক দলের শোষণ-নিপীড়ন সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসের অনিবার্য অংশ। এই সভ্যতার সুফল ভোগ করেছে যারা শোষক, যারা বড়লোক, তারাই। যারা ক্রীতদাস, যারা গরীব, তারাই সভ্যতার বলী হয়েছে। তবুও সভ্যতা এ অর্থে গৌরবের যে তা মানুষকে যাযাবর জীবন থেকে মুক্তি দিয়েছে। জুলিয়াস সিজার ইউরোপ জুড়ে সভ্যতাকে বিস্তৃত করেন। তার প্রভাবে অর্ধ সভ্য যাযাবর জাতির অনেকেই সভ্য জীবনে প্রবেশ করেছে। তবে তা মূলত যুদ্ধবন্দী ক্রীতদাস হিসেবে।

ইউরোপ জুড়ে শোষণ ও লুণ্ঠন চালিয়ে সিজার যেভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠেন তাতে তাঁর একনায়ক হওয়ার বাসনাটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও সুইজারল্যান্ড অঞ্চলকে তিনিই প্রথম রোমান শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। অতএব সিনেটের ক্ষমতায় তাঁর একচ্ছত্র প্রতিপত্তি চাই। এক্ষেত্রে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্ধী অপর কনসাল পম্পেই। তাই সিনেট ক্ষমতায় নিরংকুশ আধিপত্য পেতে হলে পম্পেইকে হটানো প্রয়োজন। পম্পেই নিজেও সিজারকে হটিয়ে একনায়ক হিসেবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে প্রস্তুত। তাই গৃহযুদ্ধ আবারও অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। সিজারের সমর্থনে আছে রোমান বণিক শ্রেণি আর পম্পেইর সমর্থনে আছে অভিজাত ভূস্বামী শ্রেণি।

খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হল। সিজার গলদেশ অর্থাৎ ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে রোমে তার অনুচরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এরা প্রলেতারিয়ানদেরকে সিজারের পক্ষে টানতে সমর্থ হয়। ৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিজার দেশে ফিরে এসে পম্পেইকে হটিয়ে রোম দখল করে নিলেন। বণিকভজা সিজারের বিজয়ে অভিজাত ভজা পম্পেই তাঁর সমর্থক সিনেটর ও অভিজাতদের নিয়ে বলকান অঞ্চলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। সেখান থেকে তারা গৃহযুদ্ধ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে থাকে। রোম ত্যাগ করার আগেই পম্পেই সামরিক সাহায্যের জন্য তাঁর এক পুত্রকে আলেকজান্দ্রিয়ায় ক্লিওপেট্রার কাছে পাঠান। ক্লিওপেট্রা এ আহ্বানেও সাড়া দিয়েছিলেন। ৬০টি জাহাজ এবং ৫০০ গেবিনিয়ান সৈন্য পম্পেইকে সাহায্য করার জন্য পাঠানো হয়। পারিবারিক ভাবে ক্লিওপেট্রা পম্পেইর কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন। কারণ ৫৫-৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে পম্পেইর অনুগ্রহপুষ্ট সিরিয়ার রোমান গভর্নর গেবিনিয়াস ক্লিওপেট্রার পিতা দ্বাদশ টলেমি আউলেটসকে মিসরের ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্টিত করেছিলেন। গেবিনিয়াস মিসর ত্যাগ করার সময়ে তাঁর সৈন্যবাহিনীকে আউলেটসের অধীনে রেখে যান। এরা আউলেটসের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্টায় সহায়ক হয়েছিল। এদেরকে বলা হত গেবিনিয়ান সৈন্য। এ সৈন্যদের থেকেই ৫০০ জনকে ক্লিওপেট্রা পম্পেইর সাহায্যার্থে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া পম্পেইর সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্যশস্যও পাঠিয়েছিলেন।

পম্পেইকে সরাসরি সাহায্যদানের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসীরা ক্লিওপেট্রার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। কারণ জনসাধারণ রোমানদের প্রতি প্রচন্ড বিরূপ মনোভাব পোষন করত। এর কারণ ক্লিওপেট্রার পিতার সুবাধে রোমানরা যেভাবে মিসরের সম্পদ লুট করেছিল তাতে অধিকাংশ জনগনই জর্জরিত হয়েছিল। জনসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন স্তর ছিল। সর্বাধিক শোষিত ছিল ক্রীতদাসেরা, তারপর কৃষক প্রজারা, উঁচু স্তরে ছিল নাগরিকরা। নাগরিক মানে হল অভিজাত ভূস্বামী ও বণিকরা। এরা সকলেই রোমান লুণ্ঠনের ভুক্তভোগী ছিল। দ্বাদশ টলেমির রোমান মদদে ক্ষমতায় ফিরে আসা এরা ভাল চোখে নেয়নি। রোমানদের দ্বারা জাতীয় লুণ্ঠন ও শোষণের শিকার ছিল ক্রীতদাস-প্রজা থেকে শুরু করে অভিজাত ও বণিক পর্যন্ত সকলেই। জাতীয় শোষণ এমন একটি ব্যাপার যাতে শোষিত দেশের অভ্যন্তরীণ শোষক ও শোষিত শ্রেণি উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেজন্য রোমের মিসর সম্পর্কিত নীতি এবং রোমান গৃহযুদ্ধের সাথে মিসরকে জড়িত করায় আলেকজান্দ্রিয়াবাসীরা ক্লিওপেট্রার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করলেন ক্ষমতাবঞ্চিত ক্লিওপেট্রার রাজকীয় প্রতিপক্ষ।

(পরবর্তী পোস্টে বাকী অংশ পড়ুন)

লেখক: আসিফ আযহার, শিক্ষার্থি, ইংরেজি বিভাগ, শা.বি.প্র.বি.

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০৮

রাতুল_শাহ বলেছেন: অনেক নাম, মনে থাকছে না। তবে পড়তে ভালো লাগছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.