নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবি বসে , ভালোবেসে , কেদো না , হে বেদনাএকে করো শক্তি , এ সময় আর পাবে না।সময় থাকতে , বলো কথা , আশা আর আনন্দের,বেচে আছি বলেই তো , এতো কথা আমাদের।

আসিফামি

আমি একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ , পড়তে ভালো লাগে, লিখতে ভালো লাগে , ভালো লাগে মানুষের কথা শুনতে আর মানুষের সাথে কথা বলতে । যত ভাবে বাংলাদেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ব্যপারে , প্রতিটা ক্ষুদ্র প্রয়াসের সাথে থাকতে ভালো লাগে

আসিফামি › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আহমেদ ঃঃ ভাবতে খুব ই ভালো লাগে যে আমরা উনার মতো এক কিংবদন্তীর সময়ের মানুষ, পাঠক

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৩



আমরা না চাইতেই সব নায়ক-নায়িকাদেরকে পেয়ে গেছি সারাদিনের জন্য ডিশ টিভির কল্যাণে স্কুলে থাকতেই; টিভি, কম্পিউটার মোটামুটি সহজলভ্য হয়ে গিয়েছিল; নতুন নতুন প্রযুক্তির জাদুতে আমরা মোহিত। বইকে সবাই আদিকালের কোন বিষয় ভাবতে শুরু করেছিলাম। বইয়ের ভবিষ্যত নিয়ে প্রকাশক, লেখক ছিলেন শঙ্কিত। যারা বই ভালবাসে, তারা শোকে ছিলাম; আর আমরা যারা বই পড়তাম না, তারা ভেবেছিলাম- বই নাই, ভালোই তো… স্কুলের ঝামেলাও একদিন এভাবে শেষ হয়ে যাবে। মহাভারত টিভিতে দেখা গেলে কে পড়তে যায় হাজার পাতার মহাকাব্য! এরমধ্যে পেলাম হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস সমগ্র-১, এসএসসি পরীক্ষার পর।বই যে এত টানতে পারে! অবাক হলাম- দুই দিনে পুরো একটা সমগ্র শেষ।এত বড় একটা সমগ্র শেষ করেও খুশি হইনি; এই প্রথম বই শেষ করে মনে হলো- “আহা, শেষ হইয়া গেল ! এখানে লেখক কেন শেষ করিল?” তৃষ্ণা তো শেষ হলোই না, বরং বাড়িয়ে দিল। হুমায়ূনের যা লেখা পেয়েছি, গোগ্রাসে গিলেছি।জোর করে নয়, চরম আনন্দের সাথে; নিজের কথা মনে করে। এমন মানুষও বাংলাদেশে বই পড়া শুরু করল, যারা বই পড়ার ব্যাপারে বোরিং ফিল করত অথবা জীবনেও কোন বই পড়ে নাই। যে মানুষই বই মেলাতে যেত, বইমেলাতে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার মত করে চোখ বন্ধ করে আগের হুমায়ূনের বই একটা কিনে নিত, তারপর অন্য কিছু।যারা পারত না, তারাও অপেক্ষা করত ভীড়টা কখন হালকা হবে! বাংলাদেশে বই পড়াকে সবার জন্য আনন্দের বিষয় করেছিলেন এই মানুষটি; যাকে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জন্য সর্বকালের সেরা একজন ব্যক্তিত্ব। যিনি বাংলাদেশকে, আমাদেরকে, আমাদের সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেন। আর আমি নিজেকে, আমরা অনেকেই নিজেদেরকে অনেক অনেক ভাগ্যবান মনে করি এজন্য যে, উনার লেখনীর সম-সাময়িক আমরা। ভাবতে খুবই ভালো লাগে যে আমরা উনার মত এক কিংবদন্তীর সময়ের মানুষ, পাঠক।







একজন মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশে এই দলের সদস্য অনেক, যারা শিক্ষিত এবং যে কোন দেশের একটা বড় অংশ। উনি খুব ভালোভাবেই তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। আমিও সেই দলের। আমাদের ছোট ছোট আশা ভরসা, হাসি কান্নার ছবি তিনি শব্দ দিয়ে আঁকেন অত্যন্ত সহজ সরলভাবে, কৌতুকের ছলে। সাহিত্যের ভাষা নয়, প্রতিদিন বলা-শোনা ভাষা দিয়ে। পড়তে গিয়ে বার বার মনে হতে থাকে নিজের কথা।থেকে থেকে চমকে উঠি- ওই চরিত্রটা তো আমিই। নিজের অনেক কষ্টের ব্যাপারও তখন হাসির খোরাক যোগায়, এক কাপ চায়ের ব্যাপারটাকে তখন মনে হয় দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ। ভাত, ঘি দিয়ে আলুভর্তাকে মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেয়ামত। জীবনকে নতুন করে জানা হয়। আর জীবনের ছোট ছোট ব্যাপারগুলো, যেগুলো আদতে মনে হয় ছোট, অদেখা বিশালত্ব করে দেখা দেয় আমাদের কাছে।উনি জীবনকে দেখতে শেখান নতুন করে। রঙ চায়ে তাই তো কাঁচা মরিচ কেটে দিয়ে যখন খাই, নতুন উদ্ভাবনের আনন্দ নিয়ে হুমায়ূনকে মনে পড়ে। আর আমরা ঢাকাবাসী তো আরও বেশি করে আনন্দ পাই, যখন তিনি বলেন নিউ মার্কেটের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কথা, ধানমন্ডির কথা।মনের ভেতর সব ছবির মত স্পষ্ট হয়ে উঠে। জীবনের জটিল ব্যাপারগুলো এত সহজভাবে বলেন তিনি, সবাই মনে করে আমিও লিখতে পারব। আসলে আর কেউই সহজ ব্যাপারগুলা সহজে বলতে পারেন না। এখানেই উনি সবার থেকে আলাদা। মনে হয়, উনার কথাই সহজ এবং সত্য।







আমার পড়া শেষ দু’টি বই হলো ‘মধ্যহ্ন’ আর ‘দেয়াল’।একটা বিশেষ সময়ের কাহিনী, তখনকার মানুষের চিন্তাভাবনা, তার উপর ভিত্তি করে সমাজের একটা মোটামুটি ছবি ফুটে উঠেছে মধ্যাহ্নে। ধর্ম এখানে একটা নায়ক, আর তা কীভাবে আরেকজনকে প্রভাবিত করে, নিজের প্রয়োজনে কীভাবে সমাজপতিরা সাধারণ মানুষের কাছে ফতোয়া পরিবর্তন করে আলেমদেরকে পাশ কাটিয়ে; টাকার জোরে কে কখন কার মালিক বনে যায়, এসব ফুটে উঠেছে এই বইতে।সাথে শাওনের সাহায্য নিয়ে, ঠিক ওই সময় দুনিয়াতে কোথায়, কী কী বড় ঘটনা ঘটেছিল, সেটাও তুলে আনা হয়েছে, যা উপন্যাসটাকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। হুমায়ূন মনে হয় আরও একটু করে কঠোর হচ্ছিলেন, আরও, অনেক কিছু জানাতে চাচ্ছিলেন আমাদের, অনেক কিছু বোঝাতে চাচ্ছিলেন তিনি।খুলে দিতে চেয়েছিলেন আমাদের দেখার গভীরতাকে, বাড়াতে চেয়েছিলেন বাংলাদশের মানুষের বোঝার ক্ষমতাকে।আমি নিশ্চিত, সুনীলের মত সময়ভিত্তিক বিশাল কিছু উপন্যাস পেতাম আমরা তার হাত থেকে, বিশেষত ১৯৫০ থেকে পরবর্তী ব্যাপারে।হয়ত অনেকেই লিখবেন, কিন্তু হুমায়ূনের মতো সাবলীল, সচল, বিশ্বাসযোগ্য করে কি কেউ পারবেন? এরকম একটা ছোঁয়া তিনি দিয়েছেন ‘দেয়াল’ উপন্যাসে।৭১ থেকে ৭৫’এর কিছু ঘটনাকে অনায়াসে, ছবির মত লিখে গেছেন তিনি।নিজেকেই আবার ওটার একটা চরিত্র করে এনেছেন, মহাভারতের বেদব্যাসের মত কিছুটা। আমি খুঁজছি তার আরেকটা ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস- ‘বাদশাহ নামদার’। কোন একদিন আবার শুরু থেকে উনার সব লেখা পড়ব, উনার লেখার কালক্রম অনুসারে।এখনও ঠিক করিনি কবে।উনার গড়া নুহাশ পল্লী হোক একটা বিরাট পাঠাগার।আশা করি সব প্রকাশনী তাদের প্রকাশ করা সব বই সেখানে সযত্নে রাখবেন।তার অন্যান্য প্রতিভার ব্যাপারগুলো তো কিছুই বললাম না।তবে একটা ব্যাপার তিনি করে দেখিয়েছেন- বাংলাদেশে তিনি অনেক অনেক মানুষের মধ্যে বেঁচে আছেন, হিমু হয়ে, মিসির আলি হয়ে, শুভ্র হয়ে, নীলা হয়ে, আরও অনেক অনেক অনেক....।

আর যারা হুমায়ূন হয়ে আছেন তাকে ভালোবেসে, গভীর মমতায়, আমরা তাদেরকে খুঁজছি…।

তার কাছাকাছি যাবার জন্য...।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: এই প্রথম বই শেষ করে মনে হলো ; আহা শেষ হইয়া গেলো?!
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.