নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবি বসে , ভালোবেসে , কেদো না , হে বেদনাএকে করো শক্তি , এ সময় আর পাবে না।সময় থাকতে , বলো কথা , আশা আর আনন্দের,বেচে আছি বলেই তো , এতো কথা আমাদের।

আসিফামি

আমি একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ , পড়তে ভালো লাগে, লিখতে ভালো লাগে , ভালো লাগে মানুষের কথা শুনতে আর মানুষের সাথে কথা বলতে । যত ভাবে বাংলাদেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ব্যপারে , প্রতিটা ক্ষুদ্র প্রয়াসের সাথে থাকতে ভালো লাগে

আসিফামি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প ঃ শ্যমল কান্তির চোখ

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

Story : শ্যমল কান্তির চোখ



শহীদ বাড়িতে একমাত্র ছেলে । বাবা কিছু করেন না । মা একটা বিদেশি এন জি ও তে আছেন; ওই পয়সাতেই তাদের কোনো মতে চলে যেতো ; ভালো ছাত্র ছিলো ; আর স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশুনা চালাতে সমস্যা হয় নাই, কিন্তু টানাপোড়েন ছিলো সব সময় ই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে , এই সমস্যা অনেকটাই ঘুচে গেলো , টিউশনির টাকায় সংসারেও সাহায্য করতে পারলো ও ; ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দিলেন পাশের পর ই , ছেলে কে ধরে রাখতে নিজের পছন্দে আগেই বিয়ে দিয়ে দিলেন, শহরে পড়তে গেছে ছেলে , শহুরে মেয়ে দেখে যাতে ভুল পথে না যায় , মায়ের আশংকার মন, তাই বিয়ে দিয়ে দিলেন আর শহীদ ও আপত্তি করলো না। কারণ মেয়ে ব্যপারটা নিয়ে ভাবার অবকাশ ই তার নাই। তাই ভাল ,কি মন্দ বুঝার অবসর নাই তার; তার লক্ষ্য স্বাবলম্বী হতে হবে ;নিজের একটা পরিচইয় সমাজে দাড় করানোই তার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য




বাবা , পেপার নিয়ে বসে আছেন, চা সামনে , লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা,পুরো বাসা দেখা যাচ্ছে , পুরনো টাইপের বাসা
মা , সকালে রেডি হয়ে বের হচ্ছেন, একটু উচু স্বরে কথা বলছেন , ব্যস্ত , কিন্তু শহীদ এর সাথে কথা বলছেন , একটু শাসন আর আদরের স্বরে
শহীদ বই নিয়ে টেবিলে বসে আছে , নোট লিখছে



ছাত্রকে পড়াচ্ছে
নাস্তা আসছে , ধনী লোকের ঘরে
শহীদ আগ্রহ ভরে আড়চোখে তাকাচ্ছে ,
মাসের টাকাটা দিলেন ।
টাকা হাত বদল হলো ।



সকালে ভোরে উঠা শহীদের অভ্যাস /শহীদ নামাজ শেষে , ফজর , ঢুকলো , দারোয়ান সালাম দিলো, উঠলো উপরে, বউ এর সাথে পানি নেই , ঝগড়া , বিরক্ত/ কিন্তু দারোয়ান কে কিন্তু তার ই বলার কথা , পানির মোটর ছাড়ার জন্য

- কি হইলো ? পানি নাই কেন? এই দারোয়ান তো পুরা ফাকিবাজ
- এতো সকালে তো সবাই উঠে না/ তোমারই তও বলে আসার কথা
- সব কাজ আমি করলে , তুমি কি কর সারাদিন ঘরে
- একদিন সারাদিন তুমি থেকে দেখো কি করি ?

শহীদ নিচে নেমে উচ্চস্বরে পানি ছাড়তে বললো ।গোসল সেরে বের হলো ক্লাস নেবার জন্যে । সকাল থেকেই আজকে বাধা আসছে । কিন্তু ক্লাসে সময় মতো পৌছতে হবে, আজ নির্ঘাত বাস মিস হবে ।
টিচার্স রুমে যাবার পথে চোখ পড়লো একটা ক্লাসে ; ক্যম্পাসের প্রিয় শিক্ষক শ্যমল স্যর ; ক্লাসে পিন পতন নিরবতা; মন্ত্র মুগ্ধের মতো সবাই কি জানি শুনছে ; মাঝে মাঝে কথা বার্তা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী আর শ্যমল স্যরের মধ্যে ; শহিদ নিজেও পেয়েছিলো শ্যমল স্যরকে; কিভাবে এতো ভালো ক্লাস কেউ নিতে পারে , আজো সে ভাবে ; একবার তো তার নিজের বিশাল টিউশনি সে মিস করলো শুধু শ্যমল স্যরের ক্লাসের জন্য যা সে কখনো ছাড়ে না , যা তার পরিবারের , তার নিজের থাকা-খাওয়ার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত; ইংলিশ মিডিয়ামের বড়লোক বাপের সন্তান , অনেক টাকার অফার ছিলো , তার দুইটা টুইশনির সমান। কিন্তু স্যরের ক্লাস ছিলো বিকালে ; আতিফ খুব রাগ করেছিলো; অনেক কষ্টে সে এটা ম্যনেজ করেছিলো , শহীদ এর জন্য
আতিফঃঃ-- এটা একটা কথা কইলি? এতো কষ্টে যোগাড় করলাম? ৮ হাজার টাকা। কত মানুষ জানোস এই টাকা বেতন ও পায় না। আর তুই গেলী না। আঙ্কেল আমার উপর খুব রাগ করেছেন

শহীদ---- শ্যমল স্যরের ক্লাস ।।দোস্ত ।।..।।..।…………….।..।..।…………।।…।।…।।…।।…।।…
( একটা মৃদু হাসি দেয়া , বুঝা যায় , শ্যমল স্যরের ক্লাসের গুরুত্ব তার কাছে , অনেক বেশি )
( এর পর ক্রিং পড়লো , ক্লাস শেষের । শ্যমল স্যরের দিকে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়ে, নিজের ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো শহীদ ।

অনেক দূর যেতে হবে । অনেক দূর যেতে হবে তাকে ।



শহীদ স্যর ক্লাসে ঢুকলো ।সবাই দাড়ালো

শঃ বসো সবাই । আমাকে তো তোমরা সবাই দেখেছো , যখন আমি শেষ বর্ষে ছিলাম, আমারো প্রথম ক্লাস আজকে । ডাটাবেস এর উপর পড়াবো আজকে । সবাই বই খুলো, আর নোট নিয়ো , কোনো প্রশ্ন থাকলে , কাগজে লিখে আমাকে দিয়ো , পরের ক্লাসে উত্তর দিবো!!
ছাত্ররা কেউ কেউ এনেছে বই, কেউ আনেনি , নোট খাতা খুলেছে, পিছনের টেবিলের কারো কারো ভাব হচ্ছে , দেখি কি হয়, মজা দেখি, এরা সকাল বেলা ,মাত্র ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে ক্লাসে এসেছে, এটেন্ডেন্স এর ব্যপারটা না থাকলে , এরা ক্লাসেও আসতো না ;আর সামনের সারিতে একদল বসেছে, স্যর যাই বলবে তারা তা লুফে নিবে, অবস্থা তাদের এমন যে স্যর কাশি দিলেও নোট খাতায় তারা লেখে “স্যর একটা কাশি দিলো” , কারণ তাদের লিখার খাতার পাতায় তাদের কলম , তাদের হাত তাদের মগজের আগে চলে, আগে লেখে পরে চিন্তা করে,এতে আসলে কোনো লাভ হয় কিনা আমি জানি না ।আমি পেছনের সারি থেকে এক-দুই আগে আছি । পেছনের সারিটা আসলে বেশ মজার পুরো ক্লাস কে দেখা যায় । কে কি করে , ক্লাস আসলে মনোযোগি কিনা, মোবাইল এ ফেইসবুকিং করছে কে, ইশারাতে কারা কথা বলছে ,কেউ ঝিমুচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।মনে হয় যেনো একটা মুভি দেখছি । কম ইন্টারেস্টিং না এটাও।
কিন্তু কথা অনেক সময় ভালো ভাবে শুনা যায় না , তাই দুই সারি সামনে বসেছি

শহীদ ভাই ( সরি, থুক্কু , শহীদ স্যর, আমরা যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন ভাই বলতাম, এখন নাকি ভাই বললে উনি এমন ভাবে তাকান যেনো , কেউ তাকে গালি দিলো , মানুষের সাইকোলজিটা কি? ভাই বললে কি ক্ষতি হয় একজন স্যরের , তাও যারা তাকে সত্যিই বড় ভাই হিসাবে পেয়েছিলো , এতে কি এদের কোনো সম্মাণ বাড়ে , নাকি? জোর করে সম্মাণ নেয়াটা কি সম্মাণের কোনো কাজ )
শঃ সবাই ৩৬ পৃষ্ঠাতে যাও , ঐ খানে আর্কিটেকচার আছে, পরীক্ষাতে এখান থেকে আমি একটা প্রশ্ন অবশয়ই করবো ।আর্কিটেকচার টা তো থাকবেই ধরো ১০মার্ক নিশ্চিত। তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখবে সবাই

( সামনের সারির কাউকে কাউকে মনে হইলো কেউ তাদেরকে ফ্রি মিষ্টি দিয়েছে, ১০ নাম্বারের জন্য যেনো তারা অনন্তকাল অপেক্ষা করছিলো। এই ডাটাবেস আর্কিটেকচার ছবি একে দিলেই ১০ নাম্বার । এটা খায় না পরে তাতে কিসসু যায় আসে না। আমি বুঝলাম না, কেনো পড়তে হবে , এটা আমাদের কী কাজে আসবে দেখে , নাকি পরীক্ষাতে আসবে দেখে তার কথা শুনতে হবে, পরীক্ষাটা কি? ক্লাসের যতটুকু আগ্রহ ছিলো , চলে গেলো , আমি যা শিখছি তা , কিভাবে আরেক জনকে , বা কারো ব্যবসাকে বা কারো কাজকে কিভাবে সহজ করবে , এটা কে বলবে, এটার দরকার কেনো, দরকার ছাড়া তো কোনো বিষয় আবিষ্কার হয় নাই , নাকি স্যর নিজেই জানে না, অবশ্য জানবে কেমনে, চার বছরের লিখাপড়া শেষ , চার দেয়ালের বাইরে যায় নাই, বই কিছু ছিলো পড়ে গেছে, কেনো পড়েছে সেইটাও জানে না , জানে শুধু নাম্বার পাইতে , ফার্স্ট বয় হতে হলে এটা জানতে হবে, না বুঝলে মুখস্থ, পারলে অঙ্ক ও সব মুখস্থ ; সবাই জানতো গ্রেডিং ভালো , নাম্বার সবার থেকে বেশি , টিচার হবে, তাই উনিও আর বেশি কিছু চিন্তা করেন নাই, ঘুরছেন ফিরছেন কয়েকদিন, তার পর এসে যোগ দিসেন, একটা চাকরি পাইসেন তাতেই খুশি, কারণ উনার অনেক ক্লাসমেট ই এখনো চাকরিতে ঢুকেন নাই বা ঢুকবে ; তাই ক্যম্পাসের এই আবদ্ধ জায়গা থেকে তিনি বের হতে পারেন নাই, এখনো দেখছি তাই; ডাটাবেস একটা বিশাল ব্যপার, সারা দুনিয়া এটা নিয়ে কাজ করছে, নতুন নতুন অনেক কিছু এসেছে এর সাথে, কিন্তু উনার দৌড় ক্লাসে যা পড়িয়েছে বা নোটে যা ছিলো, এটা পরীক্ষায় আসবে , আমরা লিখবো, নাম্বার দিবেন , উনার কাজ শেষ; ক্লাস নিলে টাকা, পরীক্ষার হলে পাহার দিলে টাকা, শেষে খাতা দেখলে আরেকটা টাকা, এর বাইরে কি শহীদ ভাই কিছু ভাবতে পারছেন না?!!)

শহীদ ভাই, ৩৬ নাম্বারের পৃষ্ঠা খুলে লিখা শুরু করলেন লিখেই গেলেন, আমি দেখলাম অনেক কিছু লিখছেন, বোর্ড ভরিয়ে ফেলছেন ; বাইরে দিয়ে দুইজন সিনিয়র স্যর চলে গেলেন, একটু উকি দিলেন, শহীদ ভাই হাত উচিয়ে সালামের ভঙ্গি করলেন, ভাবখানা এমন যে পড়িয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছেন সবাইকে, সবাই মুগ্ধ হয়ে হা করে দেখছে, আসলে আমি তো জানি, সবাই কিছু বুঝতেসে না দেখে হা হয়ে দেখছে বোর্ড এর দিকে, সামনের সারির কয়েকজন তো , তো এমনভাবে লিখাটা তুলছেন , যেনো ট্রেন ধরতে হবে, আরে গাধারা , এটা বইতেই আছে, উনি শুধু ৩৬ পৃষ্ঠার লিখা গুলো বোর্ড এ লিখছেন , চিন্তাশূণ্য ছাত্রের জন্য এমন শিক্ষক ই আদর্শ ; আমি ভাবছি যেইটা বইয়েই আছে সেইটা উনি কেনো লিখে যাচ্ছেন, হয়তো এই রকম একটা ক্লাসে বোর্ডটা খালি খালি থাকলে মানায় না। )

হঠাত করে , বাইরে আমার প্রিয় শ্যমল কান্তি স্যর আসলেন, আমাদের প্রকৌশলের অংক ক্লাস নেন ; তাকে দেখে বুঝলাম, ক্লাস শেষ হবে ৪৫ মিনিট কিভাবে গেলো বুঝলাম না, উনি বোর্ড এ এখনো লিখছেন , বার বার বই ইয়ের দিকে তাকাচ্ছেন, হাতের লিখা চমতকার , শহীদ ভাই, ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন, ক্যলিগ্রাফিতে ভালো করতেন ।
শঃঃ আজকের পড়াটা তো তাহলে বুঝেছও সবাই
সামনের সারির ছাত্র সকলঃ জ্বি স্যর। স্যর এখান থেকে কয়টা প্রশ্ন আসবে? একটা ফুল সেট হবে,
শঃ পরীক্ষার আগে জানাবো ; কিন্তু ক্লাস্টা ভালো করে ফলো করো । আর ৩৭ থেকে ৫৬ পৃষ্ঠা সেলফ , নিজে পড়ে নিবে ;
আমিঃ স্যর , ৩৬-৫৭ পুরোটা টো পুরো চ্যপ্টার , পুরো টাই পড়তে হবে?
শঃ পুরোটাই পড়তে হবে, আমি আজকে শুরু করে দিলাম, একটূ মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বুঝবে। কিছু না বঝলে আমার কাছে ,নেক্সট ক্লাসে জানাবে ,

বলতে বলতে শহীদ স্যর বের হয়ে গেলেন , ভঙ্গি এমন যেনো বের হতে পারলেই বাচেন ; যেনো কাধ থেকে একটা বোঝা নামলো

শ্যমন কান্তি স্যর কে সালাম দিলেন,
কান্তিঃ কি শহীদ, কেমন লাগছে, শিক্ষক জীবন?
শঃ অনেক পরিশ্রম স্যর, আপ্নেরা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন স্যর,
কান্তি ঃ তেমন কিছু না , কষ্ট করি তোমার মতো ভালো ছাত্রদের যাতে সাহায্য করতে পারি ; শিক্ষক হিসাবে এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তির জায়গা ; কষ্টটা আর কষ্ট থাকে না ।
শঃ স্যর ,এটা আপ্নে আমাদেরকে ভালোবেসে বলেন ;
কান্তিঃ তোমাদের মতো ছাত্রদের দেখলে আমাদের অনেক গর্ব হয় ; বুকটা ভরে যায় আনন্দে ; তোমরা আছো বলেই তো আমরা আছি ; তোমাদের ছাড়া তো আমরা কিছুই না ;
শঃ স্যর , দোয়া করবেন , যাতে আপনার মতো ভালো শিক্ষক হতে পারি
কাঃ যেই কাজ ই করো আনন্দের সাথে করো, তুমি পড়াতে আনন্দ পেলে, তোমার ছাত্ররাও পড়তে মনোযোগি হবে; নিজেকে ছাত্রের জায়গা থেকে দেখতে পারলেই তুমি উপলব্ধি করতে পারবে তোমার করণীয় , শিক্ষক হিসাবে
পিঠ চাপড়ে দিলেন শহীদের । আনন্দের সাথে শহীদের দিকে তাকালেন । মুখে অর্জনের হাসি ;

শঃ স্যর ,আমার আরেকটা ক্লাস আছে , আমি গেলাম, বিকালে কমন রুমে দেখা হবে
কাঃঃ ভালো থেকো; কথা হবে আরো

আমি দূর থেকে দেখছি , কথা শুনা যাচ্ছে, আসলে শহীদ ভাই ঠিক ই বুঝতেসে যে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে , ক্লাসটা ঠিক ক্লাস হলো না, শ্যমল কান্তিস্যর যখন আমাদের কে পড়ায় , আমরা মন্ত্রমুগ্ধ এর মতো শুনতে থাকি ; কারণ আমরা জানি আমরা কোথায় যাচ্ছি, কি শিখছি , কেনো শিখছি

কান্তিঃ কি খবর তোমাদেরঃ আজকে একটা মজার জিনিস শিখাবো ; ভাবতেই আমার খুব ভালো লাগছে, I am excited. এই যে আমি কথা গুলো বললাম না , এইটা কিন্তু ৫০০ বছর পরেও কেউ , আবার অবিকল আমার ভাষায় শুনতে পাবে
পুরো ক্লাস স্থির হয়ে শুনছে স্যরের কথা , শুধু রবি ছাড়া , পলকহীন চোখে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, সে এই দুনিয়াতে নাই , বাংলাদেশ তো নাই কনফার্ম , এই দিকে কান্তি স্যর যেনো কোনো নাটকের ক্লাইমেক্স দৃশ্য এর কথা বলছেন , দক্ষ অভিনেতার মতো তার চোখ, মুখ, অঙ্গিভঙ্গিদিয়ে তার ডায়ালগ বলে যাচ্ছেন । প্রথম সারির যারা খাতা কলম নিয়ে ছিলো লিখা ভুলে হা করে তাকিয়ে আছে
কান্তিঃ কারণ এটাতো একটা সিগন্যল ; ফোনে কথা বলছ এটা সিগ্ন্যল না?
সবাইঃ জ্বি স্যর
কাঃ আর শক্তির কি বিনাশ আছে?
সবাইঃ না স্যর
কাঃ তার মানি, এযাবতকালের সব কিছুই আছি , সব কথাই ,রূপান্তরিত ভাবে , কিন্তু আছে তো ? ! আমরা মুজিবের কথাও শুনতে পারি আবার, যদি সিগন্যল্টা ধরতে পারি, আবার শুনতে পারি নূহ এর ডাক , পারি না, অথবা মুহাম্মদের বিদায় হজের ভাষণ
পারি, কতো কাজ হবে তখন বুঝতে পারছো । আমার তো ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে , পুরো একটা ইন্ডাস্ট্রি দাড়ীয়ে যাবে এটার জন্য , যেমন মোবাইলে কথা বলার জন্য একটা পুরো টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেলো
ওয়াকিলঃ স্যর , আমাদের পূর্ব পুরুষের কথাও ? আমার দাদা? আমার দাদি ?
( আমি বুঝেছী , ওয়াকিল কি বলতে চায়, আমার ক্লোজ বন্ধু সে, মা মারা গিয়েছে ছোট কালেই, মা এর কথাই হয়তো বলতে চাচ্ছিল , কারণ ওর চোখ দেখেই আমি বুঝেছি , ছল ছল করছিলো ওটা )
কান্তিঃ অবশয়ই ; কিছুই তো হারায় নাই ; বিজ্ঞান পারবে একদিন ; এটা হলে কি হবে বলো তো?
আমিঃ তাহলে তো আর কে কি বলেছিলো , কে সত্যি , কে মিথইয়া সব বের হয়ে যাবে
কান্তিঃ অবসহয়ই বের হবে ; সঠিক তরংগ , কম্পাঙ্ক দিয়ে , ধরা যাবে, যেমন সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে তুমি ধরো তোমার দরকারি রেডিও চ্যনেল
সায়মাঃ দারণ তো স্যর।
কান্তিঃ অবশুয়ই দারণ; বিজ্ঞান আমাদের সবসময় দারণ কিছুই দিয়েছে, সারা পৃথিবীর যে কাউ কে আমরা চাইলেই দেখতে পাচ্ছি , থাকুক সে আমেরিকা অথবা আগার গাও , পোলাস্কা অথবা পঞ্চগড়, রাশিয়া অথবা রাজশাহী , নিউজিল্যন্ড অথবা নোয়াখালি।কথা বলতে পারছি, যেনো পাশাপাশি বসা। যা আগে কেউ ভাবে নাই, শব্দ তরংগ নিয়েও এটাই হবে, ভাবতে অবাক লাগবে, লাগছে, কিন্তু এটাই হবে
আমিঃ কিন্তু এটার কাজ কি আগিয়েছে,? কিভাবে করবেও এটা? সিগ্নাল টাকে তো কিছুটে কনভার্ট করতে হবে ? এটাকিভাবে করে?
কান্তিঃ
এই তো এখন তুমি বিজ্ঞানির মতো প্রশ্ন করলে, যেকোনো কিছুকে আমাদের একটা লিখিত রুপ দিতে হবে, যত রকম সিগনাল ই হউক, সেইটা যাই হউক, এটাকে একটা গাণিতিক সূত্রে ফালানো যায়, যেইটা আবিষ্কার করেছেন, ফুরিয়ার নামে একটালোক; উনি দেখালেন সে কোনো সিগন্যল্কে গাণিতিক সমীকরণে ফালানো যায় ; সেইটাই হচ্ছে আজকে আমাদের আলোচণার বিষয় ; ফুরিয়ার সিরিজ ;
কখন ক্লাসের ৩০ মিনিট চলে গেলো বুঝলাম ই না । কিন্তু অসীম আগ্রহ তৈরি হলো; কিছুক্ষণ স্যর কিছু টিপস দিলেন। সারাদিন পরে বন্ধুরা এইটা নিয়ে খুব মজা করলাম, আড্ডা দিলাম, মানিককে আজকে খুব ভয় দেখালাম, বুললাম , “শুনো মানিক , বাবাজি, তুমি যে ১০ জনের সাথে প্রেম করছো , ওইটাকিন্তু ধরা খেয়ে যাবে , যদি বিয়ের পরে তোমার বউ কে সেইটা শুনাই“
মানিকঃ ধুর , ফালতু কথা এটা হবে না, বললেই হইলো , এটা হয় নাকি, আন্দাজি
আমিঃ হতেও পারে, বরিশাল আর ঢাকার দুইজন মানুষ প্রেম করবে , কথা বলবে , সামনা সামনি দেখা না হয়েই; এইটাও কেউ ভেবেছিলো কখনো, কিন্তু সেইটা তো হচ্ছেই
মানিক, বিরক্তি নিয়ে , চলে গেলো, দেখলাম লাইব্রেরিতে ঢুকছে, হা হা, নিশ্চিত আজকে সে ফুরিয়ার সিরিজ, এইসব নিয়ে বিস্তর পড়তে যাচ্ছে

সবাই দেখলাম খুব আড্ডা দিচ্ছে, কথা বলছে, এই ক্লাস নিয়ে, ফুরিয়ার সিরিজ নিয়ে, শব্দ নিয়ে, এবং খুব আনন্দ নিয়ে

শ্যমল কান্তি স্যর জানেন পড়াতে হয় কিভাবে? জোর করলেন না, পরীক্ষার ভয় দেখালেন না, কিন্তু সবাই পড়তে বসে গেলো, ভাবতে লাগলো বিষয়টা নিয়ে

এমনি এমনি তিনি জনপ্রিয় টিচার হন নাই।
স্যর যখন ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন , দেখলাম উনার মধ্যে একটা তৃপ্তির ভাব, আর বোর্ড টা প্রায় পুরো ফাকা ; শুধু লিখা
“Whose Voice you want to listen? Can Fourier Series help?”

আপডেটঃ ১৩-২-২০১৭


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.