নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে শিশুরা! আমাদেরকে তোমরা ক্ষমা করো না

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫

কি করতে পারেনি মানুষ, কোথায় মানুষের অক্ষমতা? সর্বত্র শুধু তাদেরই জয়-জয়কার। আজ থেকে মাত্র কিছুদিন আগেও মানুষ পৃথিবী সম্বন্ধে অনেক কম জানত। উত্তর মেরু- দক্ষিণ মেরুকে ভাবত দেও- দানবের দেশ, মেঘের গর্জনকে ভাবত দেবতাদের লড়াই। কিন্তু সেই মানুষ আজ জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এতটাই উন্নতি করেছে যে সেই উত্তর মেরু- দক্ষিণ মেরু তাদের পদানত। দিনের পর দিন মানুষ সেখানে বসবাস করছে নিশ্চিন্তে। মুহূর্তেই তারা আসা- যাওয়া করতে পারছে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায়। দুর্ভেদ্য পাহাড়-পর্বতও আজ তাদের কাছে হার মেনেছে। দুর্গম অঞ্চলের মানুষের সাথে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারছে, দেখতে পারছে। শূন্যতা ভেদ করে মহাকাশে ছুটছে মনুষ্য নির্মিত রকেট। বিভিন্ন গ্রহে পদার্পন করছে তাদের তৈরি মহাকাশযান। প্রতিনিয়ত ছবি ও ভিডিও পাঠাচ্ছে তারা। তারা স্বপ্ন দেখছে সেখানে বসবাস করার। উপগ্রহ থেকে পাঠানো হচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। অন্যদিকে আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ, উলঙ্গ থাকা মানুষগুলো, যারা নিজেদের গৃহ বানাতে না পেরে রোদে পুড়ত, বৃষ্টিতে ভিজত- তারা আজ আকাশ ছোয়া সুরম্য অট্টালিকা বানিয়েছে, জীবনকে আরামদায়ক করার জন্য হাজারো যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছে। সর্বত্রই তারা আজ বিজয়ী, সৃষ্টি জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গর্বিতও বটে।
কিন্তু মানুষ একটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এ ব্যর্থতার পরিমাণ আকাশসম। তারা পৃথিবীতে মারামারি, কাটাকাটি, যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ক্রমান্বয়ে তারা যত শক্তিশালী হয়েছে ততই তারা জড়িয়েছে বড় বড় যুদ্ধে। বিগত এক শতাব্দীতেই তারা দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়েছে। আর স্বাধীনতা, সীমান্ত, ধর্ম-বর্ণ নিয়ে যুদ্ধের পরিমাণতো অসংখ্য। এই যুদ্ধে প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে। ধ্বংস হচ্ছে তাদের কষ্টে গড়ে তোলা নগরের পর নগর।

ইদানীং যুদ্ধের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশু হত্যা। আগেও যুদ্ধে নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হত্যা হয়নি তা নয়। তবে সেটা আনুসঙ্গিক ক্ষয়-ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ইদানীং শিশুদেরকে হত্যা করে যুদ্ধে সুবিধা লাভ করা যুদ্ধের একটি মৌলিক অংশে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানে সেনা পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩২ জন শিশু হত্যা করেছে তেহরিক-এ- তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামক একটি উগ্রপন্থী দল। এ হামলায় স্কুলের কর্মচারী-শিক্ষকসহ নিহত হয়েছেন আরো ৯ জন। হামলায় জড়িত ৬ জন তালেবানও নিহত হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। পাকিস্তানে একসাথে এতগুলো শিশু হত্যার শোক বইছে এখনও। ঘরে ঘরে এখনো কান্নার রোল। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মানুষও তাদের সাথে সমব্যথী হয়েছেন। নিন্দা জানাচ্ছেন তালেবানদের এই ঘৃণ্য কাজের প্রতি। অন্যদিকে এই ঘটনার রেশ না কাটতেই অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের কেয়ার্নস শহরে ঘটেছে আরোও একটি নৃশংস ঘটনা। সেখানে একটি বাড়ি থেকে আটটি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের অধিকাংশকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। সে দেশের গোয়েন্দারা জড়িতদের খোঁজে তদন্তে নেমেছে। এর আগে নাইজেরিয়ায় বোকোহারাম নামে একটি উগ্রপন্থী দলও স্কুলগামী মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ এভাবে শিশুদের উপর হামলা, অপহরণ, হত্যা যেন যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোন স্বার্থ উদ্ধারে অথবা যুদ্ধে সুবিধা লাভের জন্য নিষ্পাপ, নিরপরাধ শিশুদেরকে এভাবে জিম্মি করা, হত্যা করা কোনো মানবিকতার পর্যায়ে পড়ে না। সেটা সভ্য মানুষের সন্তান হোক কিংবা অসভ্য বর্বরের সন্তানই হোক। শিশু মানেই নিষ্পাপ। তারা যুদ্ধের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু তবুও কথিত এই সভ্য দুনিয়ায় সেটা বার বারই ঘটছে এবং সেটা করছি আমরাই। অথচ আমরা নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবি করছি। কিন্তু সেটা কী কখনো সভ্যতা হতে পারে? আর মানুষগুলোকেও কী সভ্য মানুষ?

স্বীকার করে নিলাম, আমি আপনি সেসব করছি না কিংবা করবও না। কিন্তু তাই বলে কী আমাদের শিশুরা নিরাপদ হয়ে গেল, তারা কী হুমকির ঊর্ধ্বে উঠে গেলো। মোটেও নয়। বরং দিন যত যাচ্ছে ততই আমাদের সন্তানরাও সেই সব ঘটনার মুখোমুখি হবে- এমন শঙ্কা বেড়ে চলছে। আমরা আমাদের শিশুদেরকে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি। তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পক্ষে আমাদের কাছে কোন যুক্তি থাকতে পারে না। আমরা এর দায়ও এড়াতে পারি না। কোনভাবেই ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যও আমরা নই। তাই আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে সেইসব শিশুদের কাছে বলতে চাই, হে শিশুরা! তোমরা আমাদের এ অপরাধ, এ ব্যর্থতাকে কোনদিনও ক্ষমা করো না। সুন্দর একটি পৃথিবী না গড়ে তোমাদেরকে এর আলো দেখানো, এখানে পাঠিয়ে নির্মমতার সাথে হত্যা করার দায় থেকে কোনোদিন আমাদেরকে মুক্তি দিও না। আমাদেরকে তোমরা অভিসম্পাত কর, যাতে আমাদের গর্ব, আমাদের সভ্যতার অহঙ্কার ধুলোর সাথে মিশে যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.