নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মবিশ্বাস:এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান- ২য় পর্ব (একটু বড় সাইজের)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

(প্রথম পর্বের লিংক) এবার একটু বড় করে দিতে হলো। কারণ, কিছু মানুষ আছে যারা পুরোটা না পড়ে এবং না বুঝেই মন্তব্য করে বসে আশা করি এবার পড়ার পর বিরূপ মন্তব্য করার কিছু থাকবে না।



রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মকে নিয়ে কী করা হবে?



এক কথায় এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে: যুগে যুগে ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণে, তাই ধর্মকে মানুষের কল্যাণেই কাজে লাগাতে হবে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ, ধর্মকেও যদি আমরা একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি তাহলে ধর্ম ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব ঘুঁচে যাবে, ধর্ম ও রাষ্ট্র হাত ধরে পথ চলবে এবং স্বভাবতই মানবজাতির সকল অন্যায় অশান্তির সমাধান হয়ে যাবে।

(চলবে)

সর্বপ্রথম পাঠককে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, প্রচলিত ধর্মগুলোই মানুষের জীবনে অনেকাংশে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এর কারণ এগুলো শত-সহস্র বছর ধরে বিকৃত হতে হতে বর্তমানের রূপ ধারণ করেছে এবং সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় সেগুলোকে পুঁজি করে বিভিন্ন ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির স্বার্থের হাতিয়ারে পরিণত না হলে ধর্ম থেকে মানুষ আজও প্রভূত কল্যাণ লাভ করত। সামনে দু'একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করব।



বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে এক শ্রেণির ধর্মাশ্রয়ীর দ্বারা ধর্ম এখন মানুষের সামষ্টিক জীবনে কল্যাণের চেয়ে ধ্বংসই সাধন করছে বেশি। তাছাড়া বর্তমান জীবনব্যবস্থায় ধর্মকে যেভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তথাকথিত ভাব-গাম্ভীর্য আরোপ করে উপাসনা, পরলোকগত নেতাদের কবর জেয়ারত ও কোর’আন খানি, ঈদ, পূজা-পার্বণে বাণী দেওয়া, উপাসনালয় পরিদর্শন করা, হজ্ব-তাওয়াফ, চেহলাম, অনুষ্ঠানের শুরুতে তেলাওয়াত ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে সেখান থেকে উঠে এসে মানবসমাজে কল্যাণকর ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ ধর্মের নেই।

আর ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের সঙ্গে কেবল আখেরাতের যোগাযোগ, পার্থিব জীবনের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই, এভাবে ধর্মকে গুরুত্বহীন করে রাখা হলেও ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মকে অপব্যবহারকারী রাজনীতিকরা মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে যুগে যুগে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে এসেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যাকেও বৈধ করে ফেলা হয়েছে। এক সম্প্রদায়কে আরেক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, ধর্মের নামে গণহত্যা, গণধর্ষণ, সর্বস্বপহরণ করা হয়েছে। বহু জাতিই এমন নির্মমতার শিকার হয়েছে।



ইহুদি জাতির কথা বলতে পারি। সেই ৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার বছর এই ইহুদি জাতির ইতিহাস কী? তাদের ইতিহাস হচ্ছে এই যে, ইউরোপের যে দেশেই তারা আশ্রয় নিয়েছে, বসতি স্থাপন করেছে, সেই দেশের সমস্ত মানুষ তাদের অবজ্ঞা করেছে, ঘৃণা করেছে। অনেকে শুকরকে যেমন ঘৃণা করে- তেমনি ঘৃণা করেছে। শুধু ঘৃণা করেই তারা ক্ষান্ত হয় নি। কারণে-অকারণে মাঝে মাঝেই ইউরোপের খ্রিষ্টানরা দলবদ্ধ হয়ে ইহুদিদের বসতি আক্রমণ করে তাদের পুরুষদের হত্যা করে মেয়েদের বেঁধে নিয়ে গেছে, সম্পত্তি লুটপাট করে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।



এই কাজটা ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরা প্রতিটি ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রে এতবার করেছে যে ইউরোপীয় ভাষায় একে বোঝাবার জন্য একটি নতুন শব্দেরই সৃষ্টি হয়েছে- Pogrom, যার আভিধানিক অর্থ হলো Organised Killing and Plundered of a Community of People, বাংলায় “সুসংগঠিতভাবে সম্প্রদায় বিশেষকে হত্যা ও লুণ্ঠন।” দু’হাজার বছর ধরে ইহুদিদের উপর ঐ Pogrom চালাবার পর শেষ Pogrom চালালেন হিটলার। তিনি ইউরোপের ইহুদিদের উপর চরম অত্যাচার করলেন ও ছয় মিলিয়ন অর্থাৎ ৬০ লক্ষ ইহুদিদের হত্যা করালেন (যদিও এ সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে)।



একইভাবে একসময় সনাতন ধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কোপানলে ছারখার হয়ে গিয়েছিল মহামতি বুদ্ধের অনুসারীরা, পোপ দ্বিতীয় আরবানের ফতোয়ায় ক্রুসেডে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরা, আবার ইউরোপের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে স্পেন থেকে মুসলিমদের নির্মূল করে আটশ’ বছরের ইসলামি সভ্যতার নামগন্ধ মুছে ফেলেছিল,

বসনিয়াতে গণহত্যার পাশাপাশি দুই লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করে সার্ব খ্রিষ্টানরা জারজ সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করেছিল। একই জাতীয় Pogrom আজ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসরাইল ও পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ইরাকেই হত্যা করা হয়েছে ১০ লক্ষ মুসলিম। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যা-ই মনে হোক না কেন এ সমস্ত হামলার পেছনে মূল ইন্ধন যে ধর্ম এ সত্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।



এটা সম্ভব হয়েছে শুধু এজন্যই যে, ধর্ম খুব সংবেদনশীল একটি বিষয়, এ ব্যাপারে মানুষ খুবই অনুভূতিপ্রবণ। মানুষ তার হৃদয়ের গভীরে স্রষ্টা, ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মপ্রবর্তকগণের প্রতি সযত্নে শ্রদ্ধা লালন করে। ধর্মের উপর আঘাত হানলে মানুষ উত্তেজিত হয়ে হেন কর্ম নেই যা করতে পারে না। এই উত্তেজিত করার কাজটি খুব নিপুণভাবে করতে পারে ধর্মের ধ্বজাধারী, লেবাসধারী পুরোহিত-আলেম শ্রেণি। এটা চরম সত্য যে, ধর্ম থেকে পার্থিব স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে শুধুমাত্র ধর্মব্যবসায়ীরা। তারা পার্থিব স্বার্থ ছাড়া ধর্মের কোনো কাজই করতে রাজি নয়। কিন্তু সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ ধর্মকে পরকালীন জীবনের পথ ও পাথেয় মনে করে, ধর্মের প্রতিটি কাজ তারা করে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে। ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে হাতিয়ার হিসেবে মানুষের এই নিঃস্বার্থ ধর্মপরায়ণতাকে ব্যবহার করে, মানুষের ঈমানকে, ধর্মীয় চেতনাকে ওয়াজ করে উত্তেজিত করে ভুল পথে প্রবাহিত করে। কোটি কোটি ভোটার ভোটদানকালে তাদের ধর্মবিশ্বাস (ঈমান) দ্বারা প্রভাবিত হয়। ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষকে বলে যে, অমুক ব্যক্তি ইসলামের শত্রু, কাফের, তাকে হত্যা করলে সেটা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ হিসাবে গণ্য হবে। অথবা বলে যে, অমুক দল ধর্মদ্রোহী, তাদেরকে মারলে জান্নাত নিশ্চিত, তাদের দ্বারা নিহত হলে শহিদ, বাঁচলে গাজি।



মানুষ সরল বিশ্বাসে তাদের কথায় ভুল পথে পা বাড়ায় এবং হত্যাকাণ্ডসহ বিবিধ সহিংস ঘটনা ঘটায়। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে দিয়ে অধর্মের কাজ করানোর চেয়ে বড় পাপ ও প্রতারণা আর হতে পারে না। কারণ তাদের কথায় পবিত্র জেহাদ মনে করে আখেরাতে পুরস্কারের আশায় মানুষ ধর্ম-পরিপন্থী কাজগুলো করে। কিন্তু বাস্তবে সে হয় চরম ক্ষতিগ্রস্ত। সে তার ইহকাল-পরকাল দুটোই হারাবে। আর যারা তাদের ঈমানকে হাইজ্যাক বা লুট করে এভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবে, হাশরের দিন আল্লাহর কাছে তাদেরও জবাব দিতে হবে, সঙ্গে আরো বহু মানুষের পাপের বোঝাও তাদেরকে বহন করতে হবে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কেই বলেছেন, আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল (সুরা বাকারা-১৭৫)।





কিন্তু সেটা তো আখেরাতের বিষয়, বর্তমানে এই ধর্মজাত ফেতনা থেকে আমাদের মুক্তির উপায় কী? এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষের ধর্মবিশ্বাস (ঈমান)-কে সঠিক পথে পরিচালিত করা। আবারও বলছি, ধর্মকে বাদ দেওয়া যাবে না, অবজ্ঞাও করা যাবে না বরং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে (To right direction) পরিচালিত করতে হবে। আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানসহ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকলেই কমবেশি ধর্মপ্রাণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের একটি বিরাট অংশকে ইতোমধ্যেই ধর্মব্যবসায়ীরা বিভ্রান্ত করে ফেলেছে। সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আন্তধর্মীয় ভুল বোঝাবুঝি ও বিদ্বেষভাব এত প্রবলভাবে আছে যা বিশেষ বিশেষ ঘটনায় প্রকট আকার ধারণ করে। ১৯৪৭ এর দেশভাগ ছিল ধর্মভিত্তিক, কারণ ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের ফলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা এতটাই নৃশংস রূপ ধারণ করেছিল যে, একটি ভূখণ্ডে বসবাস করা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। তারপরও দাঙ্গা নিয়মিতই চলমান ছিল। একাত্তরে তার চরম রূপ আমরা দেখেছি যে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ও সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের নামে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। একাত্তরে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের এ সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণই ছিল ধর্ম।





ধর্মীয় উন্মাদনা থেকেই জঙ্গিবাদের সূচনা হয়। জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির ভয়াবহ পরিণাম আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ দেখে আসছি, নিকট অতীতেও (২০১৩) দেখেছি। ভবিষ্যতে যেন আমাদের দেশে আবারও কোনো প্রকার ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি ধর্মের নামে উন্মাদনা সৃষ্টি করে জননিরাপত্তা ও দেশকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে, তাই যত দ্রুত সম্ভব ধর্মের এই অপব্যবহারের দ্বার রুদ্ধ করা উচিত। অতীতে দেখা গেছে- সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করেন নি, তারা ব্যাটন ও বুলেটের দ্বারা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন এমন মনোভাবই প্রদর্শন করেছেন। তারা ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্ররোচিত বৃহত্তর জনসংখ্যার ঈমানকে খাটো করে দেখেছেন, অবজ্ঞা করেছেন। ফল হয়েছে এই যে, ধর্মব্যবসায়ীরা দেশজুড়ে এমন অরাজক পরিস্থিতি, অচলাবস্থা ও গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে যা বিশ্বময় সমালোচনার ঝড় তুলে দিয়েছে এবং এদেশের মানুষকে মৌলবাদী, উগ্রবাদী হিসাবে চিত্রিত করেছে, পাশাপাশি জনজীবনকে অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাই এ ধারণা করা বিরাট বড় ভুল যে, সাধারণ মানুষ অশিক্ষিত, কূপমণ্ডূক, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, মান্ধাতার আমলের বাসিন্দা। তাদের সেন্টিমেন্টকে খাটো করে দেখলে বিপর্যয় সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকেই যাবে।



ধর্মীয় অনুভূতির চাবি আর কোনোভাবেই স্বার্থান্বেষী ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে রাখা যাবে না। রাখলে সিরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশগুলোতে যা হচ্ছে সেটা এখানেও যে হবে না তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না।



কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে জুমার দিনে মসজিদগুলোতে পাহারা দিতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে- এ পরিস্থিতি ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু মানুষের ঈমানকে সঠিকপথে পরিচালিত করা হলে তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে মসজিদের মুসুল্লিদের পাহারা দিতে হবে না, বরং মুসুল্লিরাই বিনে পয়সায় আত্মা থেকে দেশ ও দেশের সম্পদ পাহারা দেবে।



ধর্মবিশ্বাসকে অস্বীকার করে কল্যাণ রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না। পশ্চিমা বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’র শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে আমাদের সমাজেও তথাকথিত মুক্তমনা, শিক্ষিত ও উন্নাসিক একটি শ্রেণির প্রাদুর্ভাব হয়েছে যারা বলে থাকেন ধর্ম কুসংস্কার, ধর্ম প্রাচীন যুগের সমাজপতিদের তৈরি করা জুজুর ভয়, স্রষ্টা বলতে কেউ নেই, পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম সবই মানুষের কল্পনা। তারা ধর্মের প্রভাবকে, ধর্মের গন্ধকেও মানবজীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে চান। রাষ্ট্রপরিচালকগণও অনেক ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন। তাদের কথা ও কাজের দ্বারা যখন মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে তখনই সমাজে দাঙ্গা ও গোলোযোগ সৃষ্টি হয়।



আমাদেরকে অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, এই তথাকথিত মুক্তমনারা যতই বলুন, বইয়ে আর ব্লগে লেখালিখি করুন না কেন, মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য, অধিকাংশ মানুষই এসব কথা শুনবে না। এ কথা বিগত কয়েক শতাব্দীতে শত শতবার প্রমাণিত হয়েছে। ইউরোপে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উদ্ভবের পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদেরও উদ্বোধন ঘটে যা কম্যুনিজমের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাসা বাঁধতে সক্ষম হয়। পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধর্মহীন, এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক যুগে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকেই ধর্মের প্রতি সন্দিহান করে তোলা হয়েছে, আর রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে তো বহু আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। বিগত শতাব্দীতে কম্যুনিস্ট শাসনাধীন এলাকাগুলোতে নাস্তিক্যবাদী দর্শনের যে রমরমা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তাতে করে নাস্তিক্যবাদী চিন্তানায়ক ও রাষ্ট্রনায়করা ধারণা করেছিলেন যে এবার বুঝি স্রষ্টার ধ্যান-ধারণাকে মানুষের মন-মগজ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা সম্ভব হবে। কিন্তু কার্যত সেটা সম্ভব হয় নি।



কারণ,

ক) যিনি সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ সেই স্রষ্টার রূহ বা আত্মা প্রত্যেকের ভেতরে আছে। স্রষ্টাকে বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট রকম উপাদান প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যেগুলো পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ আয়াত, নিদর্শন বা মো’জেজা বলেছেন। এসব দেখার পরও মানুষ অন্ধের মতো নাস্তিকে পরিণত হবে না। আল্লাহর নাজেলকৃত ধর্মগ্রন্থগুলোর বেশ কয়েকটি এখনও মানুষের কাছে আছে যেগুলো স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করছে। মানুষ সেগুলো সম্মানের সঙ্গে পড়ছে, জানছে, বিচার বিশ্লেষণ করছে। এগুলোর স্বর্গীয় বাণীসমূহ মানুষের আত্মার গভীরে প্রভাব ফেলছে। অধিকাংশ মানুষ সেগুলোকে মাথায় করে রাখছে, সন্তানকে যেমন যত্ন করা হয় সেভাবে যত্ন করছে। সুতরাং মানবজাতিকে ধর্মহীন করে ফেলার চেষ্টা অপ্রাকৃতিক, বাস্তবতাবর্জিত, নিতান্তই অর্বাচীন ও মূঢ়তাসুলভ পরিকল্পনা।





খ) অতীতে হাজার হাজার হয়তো লক্ষ লক্ষ বছর মানুষকে শান্তি দিয়েছে ধর্ম। এই ইতিহাস মানুষের জানা আছে। সময়ের সেই বিশাল ব্যাপ্তির তুলনায় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির শাসনামল এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র এবং এগুলোর অভিজ্ঞতাও শান্তিময় নয়। ধর্মের শাসনে প্রাপ্ত সেই শান্তির স্মৃতি মানবজাতির মন থেকে মুছে যায় নি। অধিকাংশ মানুষ এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে একমাত্র স্রষ্টার বিধানেই শান্তি আসা সম্ভব। কাজেই যুগের হাওয়া তাদেরকে যতই অন্য দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুক, তারা শান্তির আশায় বারবার ধর্মের পানেই মুখ ফেরায়। উপরন্তু প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই ভবিষ্যদ্বাণী আছে যে, শেষ যুগে (কলিযুগ, আখেরি যামানা, (The Last hour), আবার ধর্মের শাসন বা সত্যযুগ প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ বৈরিতা থাকবে না, কোনো অবিচার, অন্যায় শোষণ থাকবে না, পৃথিবীটা জান্নাতের মত শান্তিময় (Kingdom of Heaven) হবে। এই বিশ্বাস থেকে অধিকাংশ মানুষ ধর্মের উত্থানই কামনা করে। এটা তাদের ঈমানের অঙ্গ, এ বিশ্বাস মানুষের অন্তর থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।





গ) শান্তির আশায় ধর্মের পানে ছুটে চলা মানুষকে ফেরাতে চাইলে স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন হবে ধর্মের বিকল্প এমন একটি জীবনব্যবস্থা প্রণয়ন যা তাদেরকে সেই কাক্সিক্ষত শান্তি দিতে পারবে, একই সঙ্গে দেহ ও আত্মার প্রশান্তি বিধান করতে পারে। কিন্তু সত্যি বলতে কি সেটা মানুষ আজ পর্যন্ত করতে পারে নি এবং কোনো কালে পারবেও না। বহু চেষ্টা করেছে কিন্তু সবই মাকাল ফল। শান্তির শ্বেতকপোত গণতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক কারো হাতেই ধরা দেয় নি। [ধরুন, যদি কোনো ব্যক্তিকে বলা হয় যে, তুমি কীভাবে মরতে চাও? গুলি খেয়ে না বিষ খেয়ে? বাঁচার কোনো পথ নেই, কেবল মরার জন্য দু’টো পথ। ঐ মানুষটিকে একটা না একটা পথ বেছে নিতেই হবে।] মানুষের আবিষ্কৃত জীবনব্যবস্থাগুলোকে যত সুন্দর সুন্দর নামেই ডাকা হোক না কেন তা হচ্ছে মানবজাতির সামনে মৃত্যুর বিকল্প পথ। জীবনের পথ একটাই; আর সেটা হলো ধর্ম অর্থাৎ স্রষ্টাপ্রদত্ত দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।



বর্তমান স্রষ্টাবর্জিত জীবনদর্শন মানুষকে কেবল নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর জীবন উপহার দিয়েছে। কাজেই মানুষ এখন জীবন রক্ষার আশায় ধর্মের দিকেই যেতে চাইবে, কেননা তাদের বস্তুত শান্তি দরকার। সুতরাং মানুষকে ধর্মহীন করার যে চেষ্টা করা হয় সেটা কোনোদিন সফল হয় নি, হবেও না। এখন একটাই করণীয়, মানুষের ঈমানকে, ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে চালিত করা।



প্রথমেই কয়েকটি মৌলিক বিষয় মানুষকে জানাতে হবে যেমন- ধর্মের আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণ। ধর্মব্যবসা সকল ধর্মে নিষিদ্ধ। ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে ধর্মব্যবসায়ীরা কীভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে, কীভাবে মানুষের ইহকাল ও পরকালকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, কীভাবে তারা মিথ্যা ফতোয়াবাজি ও ধর্মের অপব্যাখ্যা দ্বারা সমাজে অন্যায়, অশান্তি, দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িকতা বিস্তার করছে আর নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে এসব বিষয় সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। এটা করতে পারলে তারা আর ভবিষ্যতে ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা উত্তেজিত হয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়াবে না। ধর্মব্যবসায়ীরা তাদের আচার-অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্মের অপব্যবহার থেকে বিরত হতে বাধ্য হবে। সমাজ ধর্মব্যবসার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। পাশাপাশি ধর্মের গায়ে লেগে থাকা অধর্মগুলোকে চিহ্নিত করে ধুয়ে ফেলে ধর্মকে নির্মল করতে হবে। ধর্মের সত্য ও সুন্দর রূপটিকে যদি মানুষের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে আলো ও অন্ধকার, সাদা ও কালো পৃথক হতে সময় লাগবে না।





অতঃপর মানুষের ঈমানকে ইতিবাচক পথে, ন্যায়ের পথে, মানবতার কল্যাণে, মানুষের মুক্তির জন্য, জাতীয় উন্নতি-প্রগতির কাজে লাগাতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। এটা সহজবোধ্য যে, কোনো একটি কাজ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় করা যদি অসম্ভবও হয়ে দাঁড়ায়, আপামর জনতা যদি তাদের ধর্মবিশ্বাস থেকে সেটা করতে উদ্যোগী হয় তাহলে রাষ্ট্রের বিনা খরচে খুব সহজেই করা সম্ভব। ধরুন, সরকার সিদ্ধান্ত নিল যে, প্রতিটি গ্রামে হতদরিদ্র, অক্ষম মানুষদের জন্য একটি করে পাকা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ৮৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে সরকারকে বিরাট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, বৈঠকের পর বৈঠক করতে হবে, বিদেশীদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হবে, ট্যাক্স বাড়াতে হবে, টেন্ডার দিতে হবে, সেখানে দুর্নীতি হতে পারে, টেন্ডারবাজদের মধ্যে মারামারি হবার সম্ভাবনা থাকে। এক কথায় সরকারের উপর বিরাট একটা চাপের সৃষ্টি হবে। ফলে এ উদ্যোগ হয়তো আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।



আর যদিও বা হয়, সেই ব্যয়িত অর্থের অতি ক্ষুদ্র অংশই বাড়িটির নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে এবং সে বাড়ি কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু এ কাজটিই অতি সহজে করে ফেলা সম্ভব হবে যদি মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। যদি প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দাদেরকে এটা বুঝানো যায় যে, আমরা সবাই আমাদের গ্রামের দুস্থ আশ্রয়হীন মানুষের থাকার জন্য ঘর তৈরি করে দিলে আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুল আমাদের উপর খুশি হবেন। এ ঘরের বিনিময়ে আল্লাহ পরকালে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাঁর জান্নাতে আমাদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেবেন। নিরাশ্রয় মানুষগুলো আমাদের জন্য দোয়া করবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করাই আমাদের প্রকৃত এবাদত- এই সত্যটি জানলে এভাবে মানুষগুলো যার যা সামর্থ আছে তা নিয়ে এগিয়ে আসবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এ কাজে আত্মনিয়োগ করবে তাহলে সরকারি আর্থিক সহায়তা ছাড়াই শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এবং বিনা দুর্নীতি, বিনা টেন্ডারবাজিতে ৮৫ হাজার গ্রামে পাকা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়ে যাবে।



শুধু কি তাই? এ কাজে মুসলিম-সনাতন-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই অংশ নেবে, তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হবে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি। সকল ধর্মেই পরহিতব্রতের কথা, ‘মানবতার কল্যাণই মুক্তির পথ’- এ কথা বলা আছে। তাই ধর্মকে উপাসনালয়ের অচলায়তন থেকে বের করে মানুষের কাজে লাগাতে হবে। এভাবেই ধর্মবিশ্বাস একদিকে যেমন পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলবে, পরকালকেও সাফল্যমণ্ডিত করবে।



আজ আমরা পদ্মাসেতু নিয়ে চিন্তিত। অথচ ১৬ কোটি মানুষের জন্য কল্যাণকর এই সেতু নির্মাণকে সহজ করে দিতে পারে ধর্মের সঠিক ব্যবহার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, ধর্মকে ব্যবহার করেই আজ অনেক জাতীয় সম্পদ, ব্রিজ, সেতু, রাস্তাঘাট, রেললাইন পর্যন্ত ধ্বংস করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ধর্ম আজ জাতীয় উন্নতি অগ্রগতির পরিবর্তে ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে ধর্মের প্রতি মানুষের ঘৃণা, বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক।



কিংবা ধরুন বাংলাদেশে এক কোটি দরিদ্র মানুষ আছে যারা পরনির্ভরশীল, অনেকে ভিক্ষাজীবী। একজন মানুষের সারাদিনে খাবারের খরচ একশ টাকা ধরলে দৈনিক লাগবে একশ কোটি, মাসে লাগবে তিন হাজার কোটি। এত টাকা বছর জুড়ে যোগানো কি সরকারের সাধ্যের মধ্যে? না। কিন্তু বাকি পনের কোটি মানুষকে যদি বোঝানো হয়, এই মানুষগুলো তোমাদেরই দরিদ্র ভাই। প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে তুমি নামায, রোযা করলেও লাভ নেই, তুমি তো মোমেনই হতে পারবে না। সুতরাং বাঁচতে হলে ওদের খাওয়াও। আল্লাহ তোমাদেরকে জান্নাত দিবেন। তোমাদের অর্থ-সম্পদ ধর্মব্যবসায়ীদের দিও না, দরিদ্র মানুষকে দাও। এয়ারকন্ডিশনযুক্ত টাইলসের মসজিদ বানানোর দরকার নেই, আল্লাহর রসুল খেজুর পাতার ছাউনি দেওয়া মসজিদে থেকে রাষ্ট্র চালিয়েছেন। ওই টাকা দিয়ে এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে খাওয়াও। এভাবে যদি চেষ্টা করা হয়, দেখা যাবে রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে থাকা ঐ এক কোটি মানুষের জন্য রাষ্ট্রকে কোনো চিন্তাই করতে হবে না। আজও হাজার হাজার এতিমখানায় লক্ষ লক্ষ শিশু বড় হচ্ছে মানুষের দানের টাকায়, ধর্মকে বাদ দিলে এই ব্যয় তখন সরকারকেই যোগাতে হবে। যদি এতিমখানায় দানকৃত অর্থে ধর্মব্যবসায়ীদের কালো থাবা না পড়ত তাহলে নিঃসন্দেহে অর্থ উপচে পড়ত।



অনেকে মনে করতে পারেন যে, এভাবে দরিদ্র মানুষকে যদি কর্ম বাদেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া যায় তবে তো সমাজ কর্মবিমুখ মানুষে ভরে যাবে, সমাজে আরও দরিদ্রতা নেমে আসবে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই ইসলামসহ সকল ধর্মই কর্মের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছে। বৈরাগ্যবাদ ও আলস্য উভয়ই ইসলাম নিষিদ্ধ করে, কারণ এতে সমাজের ভারসাম্য ধ্বংস হয়ে যায়। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা যদি মানুষ পায় তবে তারা প্রচণ্ড গতিশীল ও কর্মমুখী হবেই। কোনো ধর্মেই অলসতার কোনো স্থান নেই।



এখানে মহানবীর একটি ভাষণ লক্ষ্য করুন। তিনি বলেছেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি, জীবিকা হাসিল করার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে জোর চেষ্টা কর এবং তোমাদের প্রচেষ্টার পরিপূর্ণতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া কর। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, কোনো মো’মেনের সত্তাকে দুনিয়ায় বেকার এবং অনর্থক সৃষ্টি করা হয় নি। বরং তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কর্ম ও কর্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত। কর্ম ও প্রচেষ্টার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অল্পে সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার অর্থ এ নয় যে, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা এবং নিজের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া। নিশ্চয় আল্লাহর উপর ভরসা রাখা আমাদের প্রধান কর্তব্য। কিন্তু রেযেক হাসিল করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা নিতান্তই জরুরি বিষয়।

আমি তোমাদেরকে অবহিত করছি যে, দুনিয়ায় যত নবী-রসুল এসেছেন তাদের সবাই জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করতেন এবং নিজেদের বোঝা অন্যের চাপিয়ে দিতেন না। অতএব, তোমরাও জীবিকা উপার্জনের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা কর। কায়িক শ্রম, কুলির কাজ করা এবং লাকড়ির বোঝা নিজের মাথায় ওঠানো অন্যের কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম। যার জীবিকা উপার্জনের সামর্থ্য রয়েছে অন্যের কাছে চাওয়া তার জন্য খুবই অপমানজনক। সে দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত এবং শেষ বিচারের দিনও তাকে এমন অবস্থায় হাযির করা হবে যে তার চেহারায় গোশত থাকবে না। আমি পরিষ্কারভাবে তোমাদের বলছি, যার কাছে একদিনের খাদ্যও মজুদ রয়েছে তার জন্য হাত পাতা অবশ্যই হারাম। আমি জানি কোন কোন সুফিসাধক ভিক্ষাবৃত্তিকে জায়েয বলেন, কিন্তু ইসলাম হাত-পা গুটিয়ে বসা এবং ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম আমাদের হুকুম দিয়েছে যে, ‘দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাও এবং আল্লাহর করুণা সন্ধান করো (সূরা জুমাহ-১০)।’ যে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বাঁচবে, নিজের পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ করা ও প্রতিবেশীর সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য হালাল উপায়ে জীবিকা হাসিল করবে সে কেয়ামতের দিন পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। দুনিয়াতেও তার জন্য সম্মান ও প্রতিপত্তি রয়েছে।” (ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মহানবীর ভাষণ বই থেকে)



ধর্ম যেমন অর্থশালী মানুষকে দান করতে শেখায়, তেমনি দরিদ্র মানুষকে ভিক্ষা না করে কর্ম করতে শেখায়। কোনো ধর্মই ভিক্ষাবৃত্তিকে বৈধতা দেয় না। ইসলামের এ শিক্ষার দরুণ পরিবারের কর্মক্ষম সকলেই আর্থিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে তেমনি অর্থের স্রোত উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে বৈষম্য লাঘব করবে।





শ্রীগীতায় বলা হয়েছে, “তুমি নিয়ত কর্ম (অপরিহার্য কর্ম, জীবিকার্জনের কর্ম) কর; কর্মশূন্যতা (বেকারত্ব, কর্মবিমুখতা) অপেক্ষা কর্ম শ্রেষ্ঠ, কর্ম না করিলে তোমার দেহযাত্রাও নির্বাহ হইতে পারে না।” (কর্মযোগ অধ্যায়- শ্লোক-৮)।





এবার দেখুন বাইবেলে ঈসা (আ.) কী বলেছেন- “আল্লাহ মানুষের শ্রম বিনিয়োগকে কপালের লিখন করে দিয়েছেন। আইয়ুব, যিনি আল্লাহর নবী বন্ধু ছিলেন তাঁর কথায়, ‘পাখির জন্ম যেমন উড়ে বেড়াবার জন্য, সাঁতার কাটার জন্য মৎস্যকুল, ঠিক তেমনি মানুষের সৃষ্টি হয়েছে শ্রমিকরূপে, কর্ম করে যাবার জন্য।’

আল্লাহ মানুষকে আদেশ করেছেন এই মর্মে, ‘তেমার কপালের ঘামের বিনিময়ে তুমি খাদ্য সংগ্রহ করবে!’ আর আইয়ুব (আ.) এর বাণী হলো: ‘মানুষের জন্মই হয়েছে কাজের জন্য!’ অতএব যে মানুষ নয় সেই-ই শুধু এই নির্দেশের ঊর্ধ্বে। নিশ্চিতই যাবতীয় পণ্যের এত উচ্চমূল্যের কারণ হলো বেশ কিছু সংখ্যক মানুষের বেকারত্ব ও নিষ্কর্মাবৃত্তি। যদি এরা কর্মতৎপর হতো, কেউ কাজ করত কৃষি ক্ষেতে, কেউ মাছ শিকার করত পানিতে, তবে জগৎ প্রাচুর্যে পূর্ণ হয়ে যেত। কর্মের জগতে এই শূণ্যতা সৃষ্টির জন্য নিশ্চয়ই ভয়ঙ্কর হাশর দিবসে তাদের কঠোর জবাবদিহি করতে হবে।” (বার্নাবাসের বাইবেল- অধ্যায়-১১৪)।



ধর্মের এ শিক্ষাগুলি যে সমাজের তরুণরা পাবে তাদের মধ্যে অবশ্যই প্রচণ্ড গতিশীলতা, কর্মমুখিতা ও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। সামগ্রিকভাবে জাতি উন্নতি ও প্রগতির শীর্ষে আরোহণ করবে।



আবার রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য জনগণের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়। সেই কর আদায়ে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। কিন্তু তাদেরকে যদি বোঝানো যায় যে রাষ্ট্রের উন্নয়নে দান করলে সেটা তার আখেরাতের সঞ্চয় হবে, তাহলে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও শ্রম মানুষ স্বেচ্ছায় প্রদান করবে।



এভাবে একটা একটা করে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, তবে পাঠকের বোঝার জন্য এ কটিই যথেষ্ট হবে বলে মনে করি। অনেকে মনে করতে পারেন, এই যে সবাইকে বলা হবে, এই কাজ করলে জান্নাতে যেতে পারবে এটা কি সত্য, নাকি মিথ্যা? এটা মিথ্যা নয়, অবশ্যই সত্য। সকল ধর্মে আমাদের এ কথার অবশ্যই স্বীকৃতি মিলবে যে, মানুষের কল্যাণে কাজ করাই ধর্ম। এর বিনিময়েই স্রষ্টা পরজীবনে মানুষকে উত্তম প্রতিদান দিবেন বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সুতরাং মানুষের ঈমানকে নেয়ামত বা আশীর্বাদ হিসাবে ঐক্যবদ্ধ জাতিগঠনে, মানবতার কল্যাণে, জাতির উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে, তবেই মানবজীবনের সার্থকতা আসবে। এটাই আমাদের কথা।



ভারী ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায় আবার এটম বোমাও বানানো যায়। এটম বোমা পৃথিবীর জন্য হুমকি কিন্তু বিদ্যুৎ আশীর্বাদ। তেমনি ঈমানকে ভুল পথে নিয়ে গেলে যেমন জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হতে পারে, তেমনি সেই ঈমানকে সঠিকপথে প্রবাহিত করা গেলে আখেরাতের সাথে সাথে পৃথিবীকেও সুন্দর করা যাবে। যে ঈমান দুনিয়ার কাজে লাগবে না তা হাশরের দিনেও কাজে লাগবে না। এজন্য আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে মানুষকে দোয়া করতে শিখিয়েছেন যে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবনকে সুন্দর করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিন”।



এখানে আগে দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর করার কথা বলা হচ্ছে। এখানে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন হাসান, হাসান- অর্থ সুন্দর (উন্নতি, প্রগতি, শিক্ষা, ন্যায়-নীতি ইত্যাদি)। যার দুনিয়া সুন্দর নয়, তার হাশরও সুন্দর হবে না কারণ আখেরাতের জীবন দুনিয়ার জীবনের প্রতিফলনমাত্র।



অতীতে বারবার মানুষের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। মানুষের ঈমান এমন একটি সম্পদ যেটাকে আমরা যদি সঠিক পথে ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে সেটা অবশ্যই বিপথে-কুপথে পরিচালিত হবে। সেটা থেমে থাকবে না। কারো না কারো দ্বারা সেটা প্রভাবিত হবেই। যুগে যুগে সেই কুপথে পরিচালিত করার কাজটিই করেছে উগ্রপন্থী, ধর্মব্যবসায়ীরা, অপ-রাজনীতিকারীরা এবং অন্যান্য স্বার্থবাদীরা। এভাবে মানুষ তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে বিভিন্নভাবে ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষ জায়গা-জমি বিক্রি করে মানুষের কল্যাণে ব্যয় না করে পরকালীন মুক্তির প্রত্যাশায় ধর্মব্যবসায়ীদের হাদিয়া বা নজরানা দিয়েছে। এভাবে বহু ধর্মব্যবসায়ী ধনকুবের বনে গেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ নিঃস্বার্থভাবে তাদের আনুগত্য করেছে কেবলই ধর্মকে ভালোবেসে। সে ভালোবাসা অপাত্রে পড়েছে, নিষ্ফল হয়েছে।



এখন মানুষকে বোঝাতে হবে- মানবতার কল্যাণে কাজ করাই তোমার প্রকৃত এবাদত, এই এবাদতই আল্লাহর কাম্য, এটা করলেই জান্নাত সুনিশ্চিত। (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রচলিত বিকৃত ইসলাম ও ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোস উন্মোচন করে সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করার জন্য যে আদর্শিক উপকরণ তথা কোর’আন হাদীস, ইতিহাস, দলিল ভিত্তিক যুক্তি প্রমাণ প্রয়োজন তা আল্লাহর করুণায় যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। আমরা গুটিকয় মানুষ নিজেদের সীমিত সামর্থ্যে এ কাজটি করার চেষ্টাও করে যাচ্ছি। কিন্তু এত বৃহৎ কাজ করার জন্য যে প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন তা কোনো ব্যক্তি বা দলের একার উদ্যোগে করা কোনোকালেও সম্ভব নয়।



এটা তখনই সম্ভব হবে যখন রাষ্ট্রশক্তিসহ সমস্ত জাতি সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসবে। কল্যাণ-রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসাবে সেটা করা সরকারের দায়িত্ব এবং এতে রাষ্ট্রেরই কল্যাণ। মানুষকে এ বিষয়গুলো যদি যথাযথভাবে বোঝানো যায় তাহলে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আর রাষ্ট্রের জন্য হুমকি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। জাতির কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে ধর্মই হবে সুশীতল শান্তির আধার।

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


ধর্ম হিলো রাজতন্ত্র ও সমান্তবাদের বিরুদ্ধে অসহায় মানুষের প্রতিবাদ মাত্র; আজকে ধর্ম একটা পুরাতন ইতিহাস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: সেটা আপনার ব্যক্তিগত অভিমত মাত্র। বাস্তবতা হচ্ছে ধর্ম আবার তার স্বরূপে ফিরে আসছে। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:

"লেখক বলেছেন: সেটা আপনার ব্যক্তিগত অভিমত মাত্র। বাস্তবতা হচ্ছে ধর্ম আবার তার স্বরূপে ফিরে আসছে। মতামতের জন্য ধন্যবাদ। "

-আফগানিস্তান, পাকীস্তান, সিরিয়া, ইরাক, মিশরে যা আসছে সেটা সন্ত্রাস।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৪২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধর্ম সভ্যতার শত্রু নয়, ধর্মব্যবসায়ীরা শত্রু। এটা মাথায় রেখে এগুতে হবে আমাদের।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৪৭

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমার মূল বক্তব্য এটাই। অল্প কথায় নির্যাসটা বলে দেওয়ার জন্য প্রোফেসর সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:০০

স্বপ্নাতুর পুরব বলেছেন: "এটা তখনই সম্ভব হবে যখন রাষ্ট্রশক্তিসহ সমস্ত জাতি সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসবে"

লেখককে ধন্যবাদ এমন গঠনমূলক, যৌক্তিক ও সুন্দর একটা লেখা উপহার দেবার জন্য ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:১২

উড়োজাহাজ বলেছেন: এছাড়া শান্তির দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। আপনার জানা আছে কী?

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৩৯

স্বপ্নাতুর পুরব বলেছেন: দ্বিতীয় উপায়েরও উপায় বের করতে গবেষণার পর গবেষণা চলছে বিজ্ঞানমহলে, দার্শনিক মহলে । সমাধানের খাতায় পাতাভর্তি শুধু অসমাপ্ত অংক । সেই অসমাপ্ত অংক দিয়েই আবার জীবনে প্রয়োগ করে একের পর এক শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে । কই, আজওতো কোনো শান্তি চোখে পড়লোনা । সারাপৃথিবীর কথা না হয় বাদই দিলাম, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কী বলে?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: কিন্তু এই দৃষ্টিটা আছে কয় জনের?

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১৬

বিপ্লব06 বলেছেন: ধর্মকে বাদ দিয়ে চলা মুস্কিলই হবে। ধর্মকে বাদ দিলে অন্যয় কিছুকে আবিষ্কার করতে হবে যেটা বেসিকালি ধর্মকে রিপ্লেস করবে।

একসাথে থাকার জন্য একটা কমন গ্রাউন্ড খুব দরকার। আর ধর্ম হল সেই কমন গ্রাউন্ড!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৮

উড়োজাহাজ বলেছেন: কিন্তু বিকল্প নতুন কিছু আবিষ্কার করতে মানুষ সক্ষম নয়। যাই করা হবে সেটাই ব্যর্থ হতে বাধ্য।


একসাথে থাকার জন্য একটা কমন গ্রাউন্ড খুব দরকার। আর ধর্ম হল সেই কমন গ্রাউন্ড-সহমত।

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৬

বিপ্লব06 বলেছেন: আপনি বেশ হাই কোয়ালিটির একটা লেখা লিখছেন। আপনার পয়েন্ট অফ ভিউই যে রাইট এইটা নিয়ে আরগু করে সেইটা নষ্ট কইরেন না।

আরগু করে কারো পয়েন্ট অফ ভিউ চেঞ্জ করা যায় না। যারা লজিক একসেপ্ট করার তারা এমনিতেই করবে।

শুভকামনা!

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫১

উড়োজাহাজ বলেছেন: আপনার কথা সঠিক। এই চাদগাজী বেটা একটা ফালতু লোক। যেখানে সেখানে অপ্রাসংগিক মন্তব্য করবে। এর ইতিহাস আমি জানি। বয়স্ক বুড়ো ভাম। বহু নিক নিয়ে এই পর্যন্ত ব্লগিং করেছে। উল্টা-পাল্টা মন্তব্যের কারণে সব কটিতে ব্যান খেয়েছে। তবু ছ্যাচড়ামো বন্ধ হয় নি। এখন আমার ব্লগে আসা বন্ধ করে দিয়েছি। বুড়ো ভাম ইজ ব্লকড ফ্রম মাই ব্লগ।

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১৪

আশালিনা আকীফাহ্‌ বলেছেন: আমাদের সমস্যা হলো আমরা সাধারন মানুষ ইসলাম সম্পর্কে খুব কমই জানি। আর যে টুকুই জানি তাও ভুলে ভরা। আমরা সহীহ হাদীস বা কুরআন তাফসীর পড়ে দেখিনা ইসলাম কত সুন্দর । আমাদের জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য সকল কিছুই রয়েছে ইসলামে। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে যা যা দরকার আমাদের জন্য সব কিছুই খুঁজে পাবেন এখানে। আর মহান আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যে বিধান দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম বিধান দেয়ার সাধ্য কারো নেই। মহান আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫১

উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম।

৯| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১১

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: অতীতে হাজার হাজার হয়তো লক্ষ লক্ষ বছর মানুষকে শান্তি দিয়েছে ধর্ম।
কথাটা একটু ভিন্ন ভাবে বলি।

অতীতে হাজার হাজার বছর মানুষ শান্তি খুজতে সুর্য, চন্দ্র, আগুন, পর্বত ইত্যাদির ভেতর ঈশ্বরকে খুজেছে, পরে পাথরের যুগ থেকে ধাতব যুগে এসে 'অদৃশ্য ঈশ্বর' পর্যায়ে এসে বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন রিজিওনে প্রধান ধর্মগুলো বিস্তার লাভ করেছে।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: আপনি যেভাবেই বলুন না কেন- ধর্মকে অস্বীকার করার উপায় আছে কি?

১০| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
আমি মোটেই ধর্মকে অসম্মান বা অস্বীকার করি না।
আমি একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বি।
ধর্ম আসলে বিশ্বাসের ব্যাপার। আপনাকে বিনা তর্কে বিনা শর্তে ধর্ম মানতে হবে।

আর বিজ্ঞান বা ইতিহাসে ধর্মকে খুজতে গেলে পদে পদে কন্ট্রাডিকশন পাবেন, ধর্মে নবি-পুরোহিতদের নানাবিধ অন্ধকার দিক খুজে পাবেন। বিজ্ঞান দিয়ে যাচাই করা হলে ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থগুলো ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

সুতরাং বিনা তর্কে বিনা শর্তে যার যার ধর্ম পালন করে যান,
তোমারটা ভুল আমার ধর্ম সঠিক, এটা বলা চলবে না।
আর বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা, তাদের কাজ স্বাধীন ভাবে করতে দেন।
না বুঝেই তাদের কাফের ধরে নিয়ে তাদের সাথে তর্ক করা ঠিক হবে না।
আলচিত ইরানী লেখকের বইটি প্রকাশে বাধা দেয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২১

উড়োজাহাজ বলেছেন: ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে বিরোধিতা দেখা দেওয়ার কারণ ধর্ম নয়, ধর্মের নামে যে ব্যাখ্যা সৃষ্টি করা হয় সেটার জন্য। কিছু কিছু ব্যাপার ধর্মে থাকে রূপকভাবে। সেটাকেই আক্ষরিক অর্থে ধরে বসে থাকার কারণেই সমস্যা দেখা দেয়।

ধর্ম একটা মানদণ্ড ঠিক করে দেয়। কিন্তু প্রথম অবস্থায় প্রদত্ত নির্দেশনাকে আজীবনের জন্য ধরে রাখার কারণেই পরবর্তীতে বিজ্ঞানের সাথে সংঘাত বাধে। অথচ মানদণ্ড হিসেবে ধরে রাখলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

১১| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন জ্ঞানগর্ভ সময়োপযোগী যুক্তি, প্রজ্ঞা আর সত্যের সম্মিলনে এক দারুন আলোর ইশারা- যে খোঁজে তার জন্য।

উপরে দেখলাম -জ্ঞানকানারা অলরেডি অজ্ঞানতা জাহির শুরু করে দিয়েছে। ;)

লেখাটি প্রিয়তে রাখলাম ভবিষ্যতের জন্য।

আর একটি বিষয় কি বাদ পড়ে গেছে! ধর্মকে অধর্মরুপে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা যারা করছে তাদের ব্যপারটা।

ভোগবাদ আর পূজিবাদ তাদের স্বার্থেই মানুষের কৃচ্ছতা, অল্পে সন্তুষ্ঠি আর আন্তরিক সেবপরায়নতায় ভীত হয়। আর তাই তারা বেশি বেশি ভোগের বাজার তৈরি করতে গিয়ে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসাবে পায় ধর্মকে।
তাই ঘুরপথে ধর্মই প্রয়োজনহীন তত্ত্বে নিজেদের হায়েনা মূখোশ আড়াল করতে- যা খুশি তা বলার নামে স্বেচ্ছাচারিতাকে মুক্তমনা নামে ব্রান্ডিং করছে।

যে জন্য করজে হাসানা বন্ধ করতে সরকার আইনের অপপ্রয়োগ করে অথচ সুদ ভিত্তিক হাজার হাজার সমিতিকে প্রশ্রয় দেয়!!!

সাংস্কৃতিক আগ্রাহস এই ক্ষেত্রে সবচে বড় অস্ত্র তাদের। মানুষের মন, মনন, মগজকে যত সহজে সংস্কৃতি দিয়ে বশিভুত করা যায়- অন্য কিছূতে তেমন নয়।
আর তাই সেটাই প্রয়োগ করছে ধর্মকে ধূয়ে মুছে দিতে। আর বিপরীতে ধর্মের :ধ্বজাধারীরা বিশেষত ইসলামের.. তারাতো লাক্ষ মাইল দূরে এই সত্য অনুভব থেকে। জায়েজ নাজায়েজের বেড়াজালে আটকে। অথচ জীবেনর যে শৌলিক বোধে শান্তি তা নাটক, সিনেমা, গানে, যদি প্রধান্য বিস্তার করতে মানুষ আপনাতেই সেই সত্যকে বুকে লালন করত।

ধর্মের বড় শত্রু তাই নাস্তিক নয়! তারা সামনের বরকন্দাজ মাত্র। তাদের চালাচ্ছে সেই স্বার্থবাদী, পূজিবাদী, ভোগবাদী লোভি শ্রেণী যারা স্রেফ নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেশে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ লাগিয়ে বেড়াচ্ছে! আর কচকচে নাম আর চেতনার ধূয়া দিয়ে নিজেদের হায়েনা মূখোশ লুকিয়ে বিশ্ব নিয়ন্ত্রনে শত বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আমার এরকমটা মনে হয় তাই শেয়ার করলাম। বেশি বলে ফেলেছি :P

আসলে আপনার লেখাটাই ভেতরকে জাগিয়ে দেয় কেমন। :)

+++++++++++++++++++++

০১ লা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০৩

উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু। দু:খের বিষয় হচ্ছে সত্য গ্রহণ করার মত মানসিকতা মানুষের নষ্ট হয়ে গেছে। কোন এক দেশে গুড় আর সন্দেশের দাম একই- এই জাতীয় একটা গল্প আপনার জানা আছে কি না জানিনা। আমাদের অবস্থা হয়ে গেছে ঠিক তেমনি। এখানে সত্যের দাম নেই। অবশ্য এ জন্য সাধারণ মানুষই এককভাবে দায়ী বিষয়টি এমন নয়। ক্রমাগত তাদেরকে ভোতা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। তাদের আত্মা, দেহ মনে পংকিলতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সত্য পা ফেলার জন্য যে স্থানটুকু থাকা লাগে তা অবশিষ্ট নেই।

তবে একেবারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অন্ধকার যত গভীর হয় আলোর রেখা ততই ঘনিয়ে আসে। সত্য পা ফেলার স্থান পেয়েছে। সত্য এগিয়ে চলতে শুরু করেছে। হৃদয় পরিষ্কার রাখুন, একদিন তার দেখা পাবেনই পাবেন-যদি বেচে থাকেন। হতাশ হবেন না। আশা রাখুন।

আর এক লেখায় সব বলা সম্ভব নয়। আপনার বক্তব্যগুলোও গ্রহণ করে নিচ্চি।

১২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন:
ধরে নেই আমি এক সভ্যতা বিবর্জিত দ্বীপে জন্মাইছি, যেখানে আমরা ধর্ম কি সেটাই জানিনা। সেখানেও নিজেদের মধ্যে সাম্যের জন্য কিছু নীতি থাকবে, মানবীয় অনুভুতিি গুলো থাকবে। ধর্ম মানুষের মুল্যবোধকে আরো বিকশিত করে, মানিবিক দিকগুলোকে আরো উতকর্ষের দিকে নিয়ে যায়, সেটা যে ধর্মই হোক। অন্য সেন্সে সব ধর্ম সত্য হবার কথা নয়, যেকোন একটা সত্য হবার কথা। তাই বলে যে নিজের ধর্মে দৃঢ বিশ্বাস রাখে সে যদি অন্য সব ধর্মকে কচুকাটা করতে চায়, সেটাও ধর্মের দর্শনের বাইরে। ধর্ম অন্যভাবে চিন্তা করলে জীবন দর্শনই।

নাস্তিকতার মানে আমার কাছে টেম্পরারী লাইফ, আইলাম, এনজয় করলাম, মইরা গেলাম টাইপ। নাস্তিক হইলে জীবনে যেইটা করতে ভাল্লাগে ওইটাই করুক মানুষ, এতো নীতি ফলানোর তো মানে নাই। খুন ধর্ষন চুরি চামারী কইরা যদি মজা পায় তাই করুক। টেম্পরারী লাইফে মজাই তো আসল ব্যাপার হওয়ার কথা। পরকালে মাইর খাইয়া সাইজ হওয়ার মানসিক টেনশনতো নাই।

ধর্ম আমাদের লাইফকে ব্যালেন্সডই করে, ইমব্যালেন্সড না।

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম, তবে কথা হইলো খুন ধর্ষন চুরি চামারী কইরা যদি মজা পায় তাই করলে তাদেরকে দণ্ড পেতেই হবে। অর্থাত তাদেরকে শাসেস্তা করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় মানুষের সমাজ থাকবে না।


ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিক বিশ্বাস নিয়ে থাকলে কোন সমস্যা নেই। অন্যের উপর ঝামেলা বাধালেই যত বিপত্তি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: ধন্যবাদ। তবে আমি মনে করি না যে বাংলাদেশে কোন ধর্মের ধার্মিক মাুনুষ আছে। যা আছে সেটা রাজনীতি

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৩৬

উড়োজাহাজ বলেছেন: একেবারে নেই তা নয়। চোখ কান খোলা রাখুন, ধার্মিকদেরকে দেখতে পাবেন। তাদের লক্ষণ হচ্ছে নিজের খেয়ে হালাল রোজগার করে মানুষের জন্য বিনিময়হীনভাবে কাজ করে যাওয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.