নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাও দেশ প্রেম আফিমের নেশার মতই

১১ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪১

আমাদের দেশপ্রেম কেন জানি ফাও মনে হয়। ক্রিকেট নিয়ে আমরা যা করলাম এই কয়দিন! শত্রু-মিত্র প্রায় গলাগলি। পরীক্ষার সময় হরতাল অবরোধ যেখানে শিথিল হয় না, মানুষ মরে গেলে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বসে গেলেও যেখানে ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান থাকে সেখানে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারায় বিজয় উতসব করার জন্য তাতেও বিরতি টানা হয়েছে। জেল-জুলুমে জর্জরিত দলের নেতারাও পথে নেমে বিজয় উতসব করছেন। হ্যা, ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারানো একটা বড় এচিভম্যান্ট বাংলাদেশের জন্য। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তার মানে এই বিজয়কে ব্রিটিশদের ২/৩ শত বছরের শাসন-শোষণের জবাবের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ ভাবাটা কতটা মুর্খামী বা আবেগ সর্বস্ব কথা-বার্তা তার সীমা-পরিসীমা আমার বোধে আসে না। অন্যদিকে জামশেদ নামে এক পাকিস্তানি ক্রিকেটারের ফেক একাউন্ট থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটার রুবেলকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এবং বাঙালির বিজয় উতসবকে ৭১ এর বিজয় উতসব এবং ভারতের সহায়তা ছাড়া বিজয়ের সাথে তুলনা করায় আমাদের পিন্ডি চটকে গেছে। প্রতিবাদে ফেসবুক/ব্লগের নিউজ ফিডে তো এক ধরনের বন্যাই নেমে গিয়েছিল। তাকে নিয়ে নিউজের পর নিউজ হয়েছে। দেশের প্রথম সারির অনলাইনগুলোর মধ্যে বাংলানিউজ অন্যতম একটি। তারা নাসির জামশেদের ব্যক্তিগত জীবনী ঘেটে সে কবে কবে শাস্তি পেয়েছিল তা নিয়েও সংবাদ করে ফেলেছে। ভাল কথা। অন্যদিকে ভারতীয় (স্যাটায়ার নয়) জি নিউজ রুবেলকে কটাক্ষ করে এমনি একটা নিউজ ছাপায়। কই আমরাতো এ ব্যাপারে তেমন উচ্চবাচ্চ করলাম না! তবে কি ওরা আমাদের শত্রু বলে তাদের হাতে ধর্ষিত হতে চাই না আর অন্যদিকে বন্ধু দেশের কাছে বলাতকার হওয়ার জন্য সর্বদাই কাপড় উঠিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে থাকি? এ আমাদের কেমন দেশপ্রেম?

আমাদের দূর দেশের শত্রুদের সীমান্তবাহিনীতো আমাদের দেশের সাধারণ গরু ব্যবসায়ীদেরকে গুলি করতে পায় না, উলংগ করে পিটায় না, সীমানা অতিক্রম করে এসে ধরে নিয়ে যায় না। আমাদের দেশকে অনুগত করে ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতায় আমাদের সফলতা দেখে না হয় কিছু ক্ষোভের প্রশমন ঘটায় রমিজ রাজারা। কিন্তু তারাতো শারীরিকভাবে কিছু করতে পারে না। কিন্তু যারা প্রতিবেশী হয়ে, বন্ধুর বেশে আমাদেরকে গুলি করে, হত্যা করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের উপযুক্ত প্রতিবাদ কই? তাদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও কেন আমরা টু শব্দটি করতে পারি না? আমরা আসলেই কি দেশপ্রেমিক হতে পেরেছি?

আমরা এত আবেগপ্রবণ কেন? ক্রিকেটে একটি দেশেকে হারানো কি কখনো যুদ্ধ করে দেশ জয়ের মত বিষয়? ধরা যাক, সামনের ম্যাচে আমরা ভারতকেও হারাতে সক্ষম হলাম, তাতে কী আমরা বিএসএফের হাতে নির্যাতিত হওয়া থেকে মুক্তি পাব? না, মোটেও তা নয়। মূলত ক্রীড়া মানেই খেলার বিষয়, স্রেফ বিনোদন। কিন্তু সেটাকে এত উচু পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, ম্যাচ জিতে ব্রিটিশদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ ভাবা মূলত আমাদের মানসিক দৈন্যতারই সাক্ষর। জায়গামত কিছু করতে না পারার অব্যক্ত বেদনা আমরা ঢাকতে চাই ক্রিকেটে জয়ী হয়ে। অথচ মানসিক দিক দিয়ে সর্বদা আমরা ব্রিটিশদেরই গোলামী করছি। তাদের দেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। ক্রিকেটের বিজয় উল্লাস হবে, সেই সাথে এটাকেই প্রাকটিক্যাল বিজয় ধরে নিয়ে মগ্ন না হয়ে দেশকে শান্তি, শৃংখলা ও ঐক্যবদ্ধ করে তুলে আসল বিজয়ের দিকে ধাবিত হওয়াই হবে আমাদের দেশপ্রেমের প্রকৃত নিদর্শন। অথবা এই সস্তা আবেগ ধীরে ধীরে আমাদেরকে আফিমের মত বুদ করে দেবে। বিশ্বের বুকে আমরা একটা হাস্যকর আবেগসর্বস্ব জাতিতে পরিণত হবো। এই আফিম থেকে আমাদের মুক্তি মিলুক।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: আমাদের মত অশিক্ষিতের দেশেই এসব হয়!উন্নত বিশ্বে বা শিক্ষিত দেশে এসবের বালাই নেই।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

উড়োজাহাজ বলেছেন: সহমত পোষণ করছি।

২| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: খেলার মধ্যে রাজনীতি ঢুকানোর রপক্ষপাতি নাই আমি। খেলা খেলাই ।বৃহৎ আসরে বৃহৎম্যাচে জয়লাভ করাতে আমরা খুশি । বা আমি খুশি ব্যাস । আমার কবিতা বৃটিশ দূর্গ বলতে শুধু ক্রিকেটটিমকে বুঝিয়েছি । অন্য কিছু নয় ।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সবার সেরা হবে সেই প্রত্যাশা থাকলো ।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমিও সেটাই মনে করি। কিন্তু অতি আবেগীদের ব্যাপারে আমার এই পোস্ট।

আপনার কবিতাটা পড়া হয়নি। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

মাহাদি হাসান বলেছেন: মারাত্নক জায়গায় ধরে ফেলেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ। জাতি-রাষ্ট্র থিওলজিক্যাল প্রজেক্ট হয়ে গেল কিনা আমারা এখনকার পড়াশোনার বিষয়টা অনেকটা এই ব্যাপারকে ঘিরেই। (আফিম প্রসঙ্গে বললাম)
কেন রাজনৈতিকভাবে অবাস্তব অলীক কল্পনাকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করতে চায় সেটাও খুব ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট। নিজেদেরকে পুড়িয়ে মারে কলকারখানায় যে সাম্রাজ্যবাদের পুঁজির বিকাশের জন্য, ওয়ালমার্ট সহ নানা বড় বড় করপোরেশনের হাতে এখনও যখন শ্রমিক শ্রেনীর বধ হচ্ছে কারখানাগুলোতে, আজ যারা উল্লিসিত তাদের ভূমিকা কি সেক্ষেত্রে। এই মধ্যবিত্ত এতটাই বিচ্ছিন্ন কেন।
আজও যারা লাইন ধরে ব্রিটিশ এম্বেসির সামনে, দেশে যারা আজও ইংলিশ মিডিয়ামে পাঠ করাই আধুনিকতা জ্ঞান করে, যে দেশের আইন আদালতের ভাষা কৃষকের ভাষা হয় নি আজও, সেই দেশের কাল্পনিক এই উল্লাস খুবই ইন্টারেস্টিং! বিস্মিত হই যখন গার্মেন্স শ্রমিকরা নিজেদের বেতন ভাতার জন্য আন্দোলন করে তখন এরাই সেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে শিল্পখাতকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।

হাস্যকর বিষয় হল খুব সহজেই এরা শোষন শাসনের বিরুদ্ধে রফাদফা করে ফেলছে, ক্রিকেটে হারালেই ফেলানীর মত হাজার হাজার সীমান্ত হত্যার ঘটনা, লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্নত্যাগ যুদ্ধে, অথবা ১৯৪৭ পর্যন্ত বিট্রিশ শাসন শোষন থেকে আজ অবধি তাদের শোষন শাসনের প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে। এ ধরনের উজবুক পৃথিবীর আর কোথায় পাবেন।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

আসলে আমাদের তরুণ সম্প্রদায়কে কেমন যেন বায়বীয় বিষয় দিয়ে মাতিয়ে রাখা হচ্ছে, ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে, সস্তা আবেগে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তরুণদের কাছেও নিশ্চয় এসব ভাল লাগছে! আমি পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে চিন্তিত। এখনই তাদের গতিরোধ না করতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫

ভোরের সূর্য বলেছেন: একদম সঠিক কথা বলেছেন। দেশ রসাতলে যাচ্ছে,পরীক্ষা পিছাচ্ছে, পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা কিংবা বিনা বিচারে ক্রস ফায়ারে হত্যা হচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষ কেউ প্রতিবাদ করে রাস্তায় নামে না অথচ খেলায় বাংলাদেশ জিতেছে কিন্তু দেখেন কত মানুষ কাতারে কাতারে গলায় গলায় মিলে আনন্দ প্রকাশ করছে অথচ দেশের স্বার্থে নিজেদের ভাল নিরাপদ জীবনের স্বার্থে আমরা কেউ এক হতে পারছিনা।

অনেকেই হয়তো বলবেন খেলায় রাজনীতি ঢুকাবেন না। না এখানে সেটা ঢুকানো হচ্ছে না কিংবা এভাবে একসাথে আনন্দ প্রকাশের বিরোধীতাও করা হচ্ছেনা কিন্তু আমাদের তরূন সমাজের উচিত এভাবে একসাথে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে নিজেদের দেশে কে দুর্নীতিমুক্ত এবং শুদ্ধ রাজনীতির দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬

উড়োজাহাজ বলেছেন: এই উচিতওয়ালারা কিছু করছে না কেন সেইটা নিয়েও কিন্তু আমার প্রচণ্ড রাগ আছে। কি বোর্ড চাপা ক্ষানিকটা কমিয়ে কি আমরা কিছু করতে পারি না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.