নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশ্বর আজ ক্ষুৎ-পিপাসা নিয়ে ভাসছেন অথৈ সাগরে..

১৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫


খবরের কাগজ, অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শ্রম ও আশ্রয়ের খোঁজে সাগর পাড়ি দেওয়া মানুষ আর অবৈধ অভিবাসীদের খবর ভাসছে। হাড়-জিরজিরে কঙ্কালসার এসব নারী, শিশু ও পুরুষগুলোর হৃদয়বিদারক চিত্র অনেককে কাঁদিয়ে তুলছে। খবরে জানা যাচ্ছে, কোন দেশই এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতে রাজী হচ্ছে না। কোন দেশের তীড়ে ভীড়তে গেলেই তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, গুলি করা হচ্ছে। এমনকী তাদেরকে ধরে নিয়ে গভীর সমুদ্রেও ছেড়ে দিয়ে আসা হচ্ছে। ক্ষুৎ-পিপাসায় ক্লান্ত-বিধ্বস্ত এসব মানুষ দিনের পর দিন অথৈ সাগরে ভাসছে। বাধ্য হয়ে নিজেদের প্রশ্রাব পান করছে এসব মনুষ্য সন্তান। এই মানুষগুলোকে বাঁচাতে অনেকেই আকুল আবেদন জানাচ্ছেন রাষ্ট্রনায়কদের প্রতি। কিন্তু কেউই তাদেরকে গ্রহণ করতে রাজী হচ্ছে না। মানবতার সামান্যতম ছোঁয়াও তাদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে না। তবে কী মানবতা বিবেচিত হয় জাতীয়তার ভিত্তিতে? এ কেমন মানবতা যা নিজেদের মত অনুভূতিসম্পন্ন মানুষকে বাঁচাতে পারে না শুধু ভিন্ন জাতীয়তার কারণে? তুমি আমার দেশের মানুষ হলেই তোমাকে আমি তোমাকে বাঁচাব, আর আমার দেশের মানুষ না হলে তাতে আমার মানবতা ঘুমিয়ে থাককেব- এ কেমন মানবিকতা? যেসব ধর্মান্ধ নিজ ধর্মের মানুষ না হলে পীড়িত মানুষদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে না আমরা তাদের ধার্মিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি, ঠিক অনুরূপভাবে যারা স্বজাতী নয় বলে মানুষকে সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে মেরে ফেলে তবে তাদের পরিচয় কী হতে পারে? এই মানুষগুলোর অধীনস্ত সভ্যতাকে কী সভ্যতা বলা যায়, অথবা এই মানুষগুলো কি নিজেদেরকে আদৌ সভ্য বলে দাবী করতে পারে, আদৌ কি নিজেদেরকে ধার্মিক হিসেবে দাবী করতে পারে?

কিন্তু ডাঙ্গায় থাকা মানুষগুলো যেভাবে বিলাসী ভোজনে নিজেদের উদরপূর্তি করছে, যে ধরনের আয়েশী জীবন-যাপন করছে, তাদের নির্মিত বড় বড় অট্টালিকাগুলো যখন আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতা করছে, শহর-নগরগুলোর বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানী যখন ছড়িয়ে পড়ছে দিগন্ত রেখা ছাড়িয়ে- সেসব দেখে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়, আমরা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হই যে এই সভ্যতার প্রগতিকে। হ্যাঁ, এই যান্ত্রিক প্রগতি, মঙ্গল-মহাকাশ জয় করার জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয়, পারমাণবিক বোমার স্তুপ, জংগি বিমানের বহর, ক্ষেপনাস্ত্রের সম্ভার, বার্ষিক সামরিক বাজেট দেখে আমরা সত্যিই স্বীকার করতে বাধ্য হই যে এই সভ্যতা তার চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছে গেছে। এই সভ্যতার নব নব আবিষ্কার, উষর মরুতে উদ্যান বানিয়ে, একই জমিতে দ্বিগুণ-তিনগুণ ফসল উৎপাদন করে কৃষিতে বিপ্লব, কল-কারখানার মাধ্যমে শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হওয়ার পরেও নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে সাগরে ভাসতে থাকা এই গুটি কয়েক মানুষকে ঠাঁই দেওয়ার যোগ্যতা যাদের হয় না, সেই প্রগতিকে আর উন্নতিকে আর যাই হোক মানবিক সভ্যতা বলে স্বীকার করা যায় না। বরং এটাকে একটা পাশবিক সভ্যতা বলাই শ্রেয়।

পাশবিক সভ্যতা এই জন্য যে এই সভ্যতার সভ্য মানুষগুলো পৃথিবীর বুকে কল্পিত সীমানা এঁকে, কাটাতারের বেড়া দিয়ে মানুষগুলোকে বন্দী করে কোথাও আটকে দিচ্ছে আবার কোথাও মাইলের পর মাইল ভূ-খণ্ড জনমানবহীন করে রেখে সেখানকার উৎপাদিত শস্য ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ গুটিকয়েক মানুষ রাজার হালে ভোগ করছে। পাশবিক সভ্যতা এই জন্য যে এরা বছরে কোটি কোটি টন উদ্বৃত্ত খাদ্য সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে খেতে না পেরে, এরা টনকে টন টম্যাটো নষ্ট করে টম্যাটো উৎসব করে। এ ছাড়াও আরও কত কী উপায়ে খাদ্যের অপচয় করা হয় যার অনেক কিছু আমাদের মত এই ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষ ধারণাও করতে পারে না। অথচ সেই একই আকাশের নিচে আমাদেরই মতই অনুভূতি সম্পন্ন কিছু মানুষ যখন সাগরে ভাসছে খাদ্য ও পানি ছাড়া, বাধ্য হয়ে নিজেদের প্রশ্রাব নিজেরা খাচ্ছে তখনও আমরা তাদেরকে জাতীয়তার দোহাই দিয়ে তীরে উঠতে না দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছি নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। এই প্রগতির ভাগীদারগণ ভাবছে তাদেরকে আশ্রয় দিলে নিজেদের ভোগ-বিলাসে ভাগ বসবে।

অথচ এ সংক্রান্ত খবরগুলো যখন নিউজফিড আর ওয়েব পোর্টালগুলোর অধিকাংশ স্থান দখল করেছিল, ঠিক তখনি আরো একটা খবর ভাসছিলো যে- ফিনল্যান্ডে কোন দম্পত্তি বাচ্চা গ্রহণ করলে মাত্র এক ইউরোর বিনিময়ে তাদেরকে একটি করে প্লট দেওয়া হবে। মানুষ বাড়ানোর জন্য কিছুদিন আগে অনুরূপভাবে রাশিয়া নববর্ষের রাতে যারা বাচ্চা ধারণ করবে তাদেরকে পুরষ্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছিল।

একদিকে মানুষের অভাবে বিরান ভূমি, ভবিষ্যৎ ধারাবাহিকতা রক্ষা নিয়ে শংকা আর অন্যদিকে ক্ষুদ্র ভূ-খণ্ডে ধারণ ক্ষমতার বাইরে গিজগিজ করা মানুষগুলোর একটি অংশ একটু ভালো খাবারের আশায় কিংবা একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট ট্রলার ও নৌকায় করে পাড়ি দিচ্ছে অথৈ সাগর। এত বড় এই অবিচার, এই জুলুমের পরেও কীভাবে নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবী করতে পারে মানুষ? আদৌ কি তারা মানুষ বলে বিবেচিত হতে পারে?
বিবেচিত না হলেই বা কী আসে যায়, এরা রীতিমত নিজেদেরকে ধার্মিক মনে করছে। ঠিকই স্বর্গপ্রাপ্তির আশায় নিয়মিত মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডায় ঈশ্বরকে খুঁজতে যাচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলীশান মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা আর গীর্জা বানিয়ে ঈশ্বরকে সেখানে ঢুকাতে চাচ্ছে। সত্যিই কী ঈশ্বর সেখানে থাকেন? না, ঈশ্বর থাকেন আর্ত-পীড়িতের মাঝে, ঈশ্বর থাকেন দু:খী মানুষের মাঝে। তাই ঈশ্বরকে আজ পাওয়া যাবে সাগরে ভেসে থাকা ঐ মানুষের মাঝে। অভুক্ত ও ক্ষুৎ-পিপাসা নিয়ে ঈশ্বর আজ ভাসছেন সাগরে। স্বর্গ ধান্ধাকারীরা যদি সেই মানুষগুলোকে বাঁচাতো তবে তারা খোদ ঈশ্বরকেই বাঁচাতো [হাদীসে কুদসী দ্রষ্টব্য]। সেই সাথে এরাও বাঁচাতে পারতো নিজেদেরকে। সাগরে ভেসে থাকা ঐ মানুষগুলোর প্রতি সদয় হলে ঈশ্বরও তাদের উপর সদয় হতেন। নতুবা অভুক্ত ঈশ্বরের ক্রোধ এই ‘সভ্য’ মানুষের উপর তাদের এই অমানবিকতার শোধ নেবেন। তাদের ভেবে দেখা উচিত ঈশ্বরের ক্রোধের কয় মুহূর্ত তাদের এই মেকী সভ্যতাকে তছনছ করে দিতে দরকার হতে পারে। এর নিকট নজীর (নেপাল) কি তাদের সামনে নেই?

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৮

হাসান বিন নজরুল বলেছেন: মুসলমান আজ তার নামের মধ্যেই অস্তিত্ব ধরে রেখেছে... কাজে এরা একেকটা ইহুদী সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে।

১৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

উড়োজাহাজ বলেছেন: বরং তার চেয়েও বেশিই নয় কী?

২| ১৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

জেকলেট বলেছেন: আমরাই আমাদেরকে এই পরিনতির দিকে নিয়ে গিয়াছই। আযোগ্যতাই যখন যগ্যতা, নিজেদের মধ্য থেকে তাকেই নেতা নির্বাচন করি যে সবচেয়ে লোভী, অযোগ্য ভোটের আগেরদিনের ৫০০/১০০০ টাকা আমাদের খাচে অনেক বড়। অযথা বংশের গৌরব, অহংকার, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, নিজের ভিটে-মাটিতে পরিশ্রম না করে তা নিয়ে অহংকার করা, কাজকে কাজ হিসেবে না দেখে তাকে ছোট করে দেখা, নিজে পরিশ্রম করে উপার্জনের থেকে অন্যের কাছে হাত পাতাকে লজ্জা জনক মনে না করা। পড়া লেখায় চরম অনীহা আর কত বলব???

অযথা আল্লাহ, ভগবান, ইশ্বরকে, অন্য দেশকে এখানে টেনে আনার কোন মানে নাই।

১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:০২

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমি অস্বীকার করছি না যে এর পেছনে নিজেরা দায়ী নই। কিন্তু এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা সর্বোপরি এই দুরবস্থার জন্য আজকে যারা সুখে আছে তাদের কোন দায় নেই? এমনকি আমি যদি দুর্গতদের ঘাড়েই দোষ দেই, তারপরও চোখের সামনে এতগুলো মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করার দায় কি ডাঙার অধিবাসীদের নেই? তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে এই দুর্গতিকে জায়েজ করে নিশ্চুপভাবে বসে থাকা যাবে? এটাই কি মানবতা?

৩| ১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:০৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: নিজেদের এই পরিণতির জন্য তো নিজেরাই দায়ী! খেতে পায়না কিন্তু বাচ্চা হওয়াবে কয়েক গন্ডা, কাজ শিখবেনা তাকে মুখে খাবার তুলে দিতে হবে। বেকার সমস্যার ব্যাপারে সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। জাতি হিসেবে আমরা দুনিয়াতে সবচাইতে অশিক্ষিত, অভদ্র পরশ্রীকাতর, হিংসুটে, অলস দুর্ণীতিবাজ জাতি! এর জন্য কি আল্লাহ দায়ী? মোটেই না।

১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৫২

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমার লেখায় কোথাও কী এসবের জন্য আল্লাহকে দায়ী করেছি?

৪| ১৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬

মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: মানবিক একটি পোস্ট। ধন্যবাদ। কিছু মানুষ ভূল বুঝবেই। এটা মেনেই নিতে হবে। এরা অন্তর্নিহিত অর্থ না বুঝে শুধু কাই কাই করবে।

১৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:০১

উড়োজাহাজ বলেছেন: হ্যাঁ, সেটা আমি জানি এবং মানিও বটে।

৫| ১৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:০৯

মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: ঈশ্বর থাকেন ভদ্রপল্লীতে। মানুষের জীবন নিয়ে তাঁর কোন মাথাব্যাথা নেই। যা ঘটবে প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটবে। জীবন্সমৃত মানুষগুলোর প্রতি অনিশ্বেস শুভকামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.