নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজকের বাংলাদেশের সমস্যার মূল কারণ

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৬

আজকে বাংলাদেশের অস্থির অবস্থা এবং বিভক্ত জনগোষ্ঠী ও জাতীয় অনৈক্যের অন্যতম কারণ মূলত দেশের শাসনতন্ত্র এবং এর সংবিধান। তবে দুটো কারণই এক সূত্রে গাঁথা। আমাদের দেশ বর্তমানে গণতান্ত্রিক সিস্টেম অনুসরণ করছে। গণতান্ত্রিক সিস্টেমের নীতি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত অনুসারে যে কোন পক্ষ সংবিধানকে যখন তখন কাটা-ছেড়া করতে পারে। এই শক্তি প্রয়োগ করে ১৯৭২ সালে সংবিধান চালু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বহুবার একে সুবিধামত কাটা-ছেড়া করা হয়েছে। ঠিক কতবার কাটা-ছেড়া করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই। যে কেউ গুগলিং করে কিংবা যারা এ সম্বন্ধে জ্ঞান রাখেন তারা নিশ্চয় সেটার হিসেব রেখে থাকবেন। সুতরাং আমি সেগুলো উল্লেখ করে অহেতুক তথ্য ভারে পোষ্টটিকে ভারাক্রান্ত করতে চাচ্ছি না।

মজার বিষয় হচ্ছে এই যে- সংবিধান কাটা-ছেড়ার অধিকার রয়েছে সেটা আবার সেই সংবিধান অনুযায়ীই সিদ্ধ। অর্থাৎ সংবিধান বলছে আমাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে যত খুশি কাটা-ছেড়া করতে পার। সেই সুযোগটা নিয়েই বার বার সেটা করা হয়েছে। কখনো মেজর কাটা-ছেড়া আবার কখনো মাইনর কাটা-ছেড়াসহ পরিবর্তন আনা হয়েছে মূলনীতিতেও। পারস্পরিক সাংঘর্ষিক এই মূলনীতি নিয়েও ঝামেলা আছে। কিন্তু আমি আজকে সেদিকে যাব না। আমার আজকের কথা সংবিধানের পরিবর্তন এবং কাটা-ছেড়া নিয়ে।

সর্বশেষ যে (সম্ভবত পঞ্চদশ) সংশোধনী আনা হয়েছে সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুবিধাটি বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যে ব্যবস্থাটি করা হয়েছে তাতে যে কোন ক্ষমতাসীন সরকার তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিজের অধীনে নির্বাচন করে নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে রাখতে পারবে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটা খুবই সম্ভব। বর্তমানে যে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে নেই তাদের মতে আদতে সেটাই হয়েছে। পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য তারা দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা-আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু সংবিধান তাদেরকে সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনার অধিকার দেয়নি। তাই তারা চেষ্টা-প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যে সকল কার্যক্রম করেছে তা সংবিধান বহির্ভূত হিসেবে গণ্য হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সে ধরনের কার্যক্রমে আইনের লংঘন হওয়ায় তাদেরকে এখন বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলে তারা এখন দাঁড়াতেই পারছে না। সর্বদা দৌড়ের উপর আছে।

দ্বিতীয়ত, বিভক্ত, ঐক্যহীন এই অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়েছে ২০১৩/১৪ সালের সময়টিতে। বিশেষ করে অনলাইন তৎপরতা এর পেছনে স্ফুলিংগ তৈরি করেছে। রাজপথে যখন ঠায় থাকার অবস্থায় ছিল না তখন তারা সেই ক্ষোভের প্রশমন করার চেষ্টা করেছে অনলাইনে লিখে। এসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে অনলাইনে সক্রিয়রা দুইটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। আর মৌলিক যুদ্ধক্ষেত্রটা রাজপথের চেয়ে অন্তর্জালই স্থান দখল করে নেয়। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব বাইরের জগতেও পড়ে। বাস্তব জগতে খুন-খারাবী দিয়ে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অবস্থা এমন আকার ধারণ করে যে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনলাইন জগতকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তারই অংশ হিসেবে সর্বশেষ ফেসবুক, ভাইবারসহ অতি ব্যবহৃত কিছু কিছু ওয়েবসাইট সরকার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এরও আগে সরকার অনলাইন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫৭ ধারা নামে পরিচিত ভয়ংকর কঠিন একটি আইন তৈরি করে। কিন্তু তাতেও কাজ খুব একটা কিছু হয়নি। এখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি করে অনলাইনে ‘আপত্তিকর’ তথ্য পোস্টকারীদেরকে শনাক্ত করণে তথ্য আদান-প্রদানের কোন একটা সমঝোতায় পৌছাতে পেরেছে বলে পুনরায় ফেসবুক খুলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি এখন সেই তথ্যের ভিত্তিতে ৫৭ ধারার প্রয়োগ চলার পথ সুগম হয়েছে। যার নমুনা আমরা দেখতে পেলাম ফেসবুক খোলার দিনেই 'মজা লস?' নামে একটি মাস লাইকড পেজের এডমিনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে।

অনলাইন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব সৃষ্টি করা, ব্যক্তিগত মানহানীমূলক প্রচারণা, সম্মানীত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ট্রোল করা, তাদের কথা বিকৃত করা, স্যাটায়ার লিখা, একে অপরকে হুমকি দেওয়া এগুলোই মূলত অনলাইন কার্যক্রমে বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যারা এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদেরকে অবশ্যই ধর-পাকড়ের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নতুবা আমাদের জাতীয় ঐক্য এখনো যতটুকু আছে, অদূর ভবিষ্যতে তার কিছু অংশও অক্ষত থাকবে না। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের শাস্তি ৫৭ ধারার মত কঠোরতার বিপক্ষে আমার অবস্থান।

আর এ ধরনের কার্যক্রম করার পরেও যারা যে কেউ গ্রেফতার হলেই মুক্তি চাই, দিতে হবে বলে অনলাইনের পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন, এর পক্ষে মানবাধিকার, মত প্রকাশের অধিকার বলে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন তারাও মূলত এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা, সম্মানীত ব্যক্তিতের নামে কুৎসা রটানো, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করা কখনোই মত প্রকাশের স্বাধীনতা হতে পারে না। এ ধরনের কার্যক্রম অরাজকতা ছাড়া আর কিছুই না। যদি মত প্রকাশের নামে যার যা ইচ্ছা তাই লেখা বা বলার অধিকার দেওয়া হয় তবে কোন জাতিই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। তাছাড়া কিছু কিছু সময় থাকে যখন মানুষ মতপ্রকাশ থেকে নিবৃত্ত করতে হয়। রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থায় সব অধিকার স্থগিত করা হয়। জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হওয়া এমনি একটি জরুরি বিষয়।

এ প্রসঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সদ্য ফাঁসি দেওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির একটি বক্তব্য প্রাসংগিক বলে মনে হচ্ছে। ব্যক্তি হিসেবে তিনি যেমনই হয়ে থাকেন না কেন, তার কিছু কিছু কথা কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না। তাকে আমার কাছে সত্যিকার অর্থে চলচ্চিত্রের একজন সেই মানের ভিলেন মনে হয় যে কখনো কখনো নায়কের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে উঠে (এ প্রসংগে ব্যাটম্যান সিরিজের দ্যা ডার্ক নাইট চলচ্চিত্রের ভিলেন জোকারের কথাটি মনে আসে)। সালাহউদ্দিন কাদের কোন এক প্রসংগে বলেছিলেন যে, রাজনীতি করি বলে এর মানে এই না যে আমরা আমাদের পায়জামার ফিতা খুলে জনগণের মশারী বেধে দিতে হবে।' আমিও একই সুরে বলতে চাই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে- জাতীয় ঐক্য চুরমার করতে সব কথা বলার স্বাধীনতা দান করতে হবে। মত প্রকাশের অধিকার মানে এই নয় যে, ব্যক্তিগত আক্রমণ, মানহানী, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ মেনে নিতে হবে। সেটা কতটা ক্ষতিকর বিষয় তা ভুক্তভোগী মাত্রই উপভোগ করে থাকবেন।

সাংবিধানিক ত্রুটি-বিচ্যুতি, কাটা-ছেড়ার সুযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠদের সুবিধা অর্জনের চেষ্টা থেকে উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং পক্ষ-বিপক্ষের অনলাইন লড়াই আজকে আমাদেরকে বিভক্ত জাতি হিসেবে একটা নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। আসলে মানুষ এমন কোন সংবিধান রচনা করতে পারে না যা চিরকালের জন্য কনস্ট্যান্ট, অপরিবর্তনীয়। ফলে এ থেকে স্বার্থবাদীরা স্বার্থোদ্ধারের লোভে স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে যায়, যেমন করে ব্যর্থ হয়েছেন অন্তর্জালে বিচরণকারীরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমা মাপতে। এ জন্য অবশ্যই তাদেরকে দণ্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যেও জাগ্রত করতে হবে। না হলে সেটা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তার হতেই থাকবে। শক্তিশালী জাতিগুলোর মাতালদের মধ্যে সেই সচেতনতা অটুট থাকলেও এদেশের তথাকথিত শিক্ষিতদের মধ্যে সেটার যথেষ্ট অভাব আছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:

"আজকে বাংলাদেশর অস্থির অবস্থা এবং বিভক্ত জনগোষ্ঠী ও জাতীয় অনৈক্যের অন্যতম কারণ মূলত দেশের শাসনতন্ত্র এবং এর সংবিধান। "

-সমাধান সহজ, শাসনতন্ত্র না মানলেই হলো!
আপনি কি শাসনতন্ত্র মেনে চলেন?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫০

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমার একার মানা না মানাতে কিছুই আসে যায় না চাঁদ সাহেব। লাইনে থেকে আলাপ করেন। পোস্টের ধারে কাছে থাকেন। বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে বাচ্চা মানুষের মত কথা বলবেন না।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:

পোস্টার ১ম বাক্যের ধারে কাছে আছি তো?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

উড়োজাহাজ বলেছেন: তাহলে আমার দেওয়া প্রথম প্রতি উত্তরের শেষ লাইনটা আপনার জন্য উপযুক্ত হয়ে গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.