নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অজানা প্রহর

অশ্রুত প্রহর

বাস্তবতা বড়ই কঠিন। স্বপ্নের মাঝেই বাস করা উচিৎ। বাস্তবতা বুঝতে গেলেই জীবন অনেক জটিল হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু স্বপ্নের মাঝেই কি বাস করা যায়? :)

অশ্রুত প্রহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃঅপ্রত্যাশিত ভাবে হারিয়ে যাওয়া

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮

খুব সকালে খারাপ স্বপ্ন দেখে ফিজার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফিজা চিৎকার করে ঘুম থেকে ওঠে।

অরপা দৌড়ে গিয়ে ফিজার রুমে ঢোকে। অরপা ফিজার বড় বোন। অরপা আর ফিজার বয়সের ব্যবধান অনেক। দুজনের সম্পর্ক মা আর সন্তানের মত। দুই বোনের মাঝে খুব মিল। এক বোন আর এক বোনকে ছাড়া একদম থাকতেই পারে না।

ফিজা স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। ফিজার স্বপ্নগুলো হল আকাশ ছোঁয়ার মত। ওর একটাই পরিকল্পনা জীবনে অনেক কিছু করতে হবে। ফিজা বিশ্বাস করে ওর জন্য একটি সুন্দর ভবিষৎ অপেক্ষা করছে। অথচ সে জানে না তার জীবনটা যে সুতোর মত, যেকোন সময় ছিড়ে যেতে পারে।

একটা জটিল রোগ ফিজার শরীরে বাসা বেধেঁছে।

যাইহোক, প্রতিদিনই ফিজার দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়।

অরপা জিজ্ঞাসা করল ফিজার দুঃস্বপ্নের কথা।

কি হয়েছে ফিজা?

আবারও কি একই স্বপ্ন দেখেছিস?

আপু স্বপ্নের ভিতর দেখলাম তোমার কাছে থেকে অনেক দূ্রে সরে যাচ্ছি। বিশাল আকৃ্তির ঘূর্নিঝড়ের কবলে পড়ে গিয়েছি। দেখলাম ঐ ঘূর্নিঝড় তোমার কাছে থেকে আমাকে অনেক দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। স্বপ্নের ভিতর তো্মার হাত ধরার অনেক চেষ্টা করি কিন্তু চোখের পলকে আমাকে তোমার কাছে থেকে বহুদূরে নিয়ে গেল।

অরপা বললঃ ধুর বোকা! আমার কাছ থেকে তোকে কেউ কখনও দূরে সরিয়ে নিতে পারবে?

আমি তোর হৃদয়ের মাঝেই থাকবো। ঘূর্নিঝড়ের এতবড় সাহস! তোকে আমার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে নেবে আর আমি সেটা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে দেখবো?

আমি কিছুই করব না? ওটা দুঃস্বপ্ন ছিল। কোন ঘূর্নিঝড় তোকে আমার কাছে থেকে দূ্রে সরাতে পারবে না। রাতের আধারের সঙ্গে ঘূর্নিঝড় চলে গেছে।

দেখ কত সুন্দর সকাল, বাহির থেকে কত সুন্দর পাখির গুঞ্জন শো্না যাচ্ছে।

তুই আর আমি একসাথে থাকব সবসময়।



এখন ওঠ ফ্রেশ হয়ে নে, একসাথে আমরা নাস্তা করব। এরপর আমাকে জরুরি কাজে বাহিরে যেতে হবে। রত্না খালাকে আমি বলে গিয়েছি কোন সমস্যা হলে তিনি আমাকে ফোন করবেন।

আমার হাতে সময় খুব কম। এই সল্প ক্ষনের মাঝে আমার যে সব কাজ সেরে নিতে হবে।

কথায় আছে, Make hay while the sun shines…

ফিজা জিজ্ঞাসা করলঃ আপু তুমি কি কিছু দিনের জন্য কোথাও যাচ্ছ?

আমিও তো্মার সাথে যাব। আমাকে তো্মার সঙ্গে নিয়ে যাবেনা?

অরপা হেসে বললঃ ওখানে ছোটরা আগে যায় না। ঐখানে যে বড়দের আগে যেতে হয়।

এখন থেকে একটু-একটু করে একা থাকার অভ্যেস কর।

আমি তোর কাছে না থাকলেও সবসময় আমাকে তোর সঙ্গেই পাবি।

কি কিছু বুঝলি? যাক, এতসব বোঝার এখন দরকার নেই। সময় আসলে সব বুঝতে পারবি।

ফিজা বললঃ As deep As well. কিছুই বুঝিনি আপু।



অরপা খুব ভাল ছবি আঁকে। এর পাশাপাশি একজন অধ্যাপিকা। কোন ছবি যদি তাকে আঁকতে দেয়া হয় হুবহু সেইরকম ছবি সে আঁকতে পারে।

আর এই ছবি আঁকার সূএপাতে ইরেশের সাথে অরপার পরিচয়।

ইরেশ একজন আর্কিটেক্ট। খুবই ব্রিলিয়ান্ট। অবশ্য ইরেশের খুব ইচ্ছে ছিল একজন বড় মাপের আর্টিষ্ট হবে। কিন্তু ইরেশের বাবার প্রেসারে আর্টিষ্ট হওয়া আর হল না। ইরেশের একটাই দোষ কারোও উপর কখনও জোর খাটিয়ে কথা বলতে পারে না। যে যেটা বলে সেটাই সে মেনে নেয়।

এই কারনেই প্রিয় সবকিছু অনেক দূরে চলে যায়।

Nero fiddles while Rome burns...

অরপা ইরেশকে বলল ওদের নির্ধারিত একটা কফি হাউজের সামনে আসতে। সেখান থেকে দুজন একটি সরকারি ব্যংকে যায়। অরপা ফিজার নামে একটি ফিক্সড ডিপোজিড করিয়ে রেখেছে। ইরেশকে দায়িত্ব দিয়েছে মেচিউর প্রিয়ড এলে এটা ভেঙ্গে ফিজাকে বিয়ে দিতে হবে।

ইরেশ বললঃ তুমি এমন না করলেও পারতে! আমি তো ফিজার বড় ভাইয়ের মত।

আমি কি পারতাম না ওর জন্য কিছু করতে!

অরপা বললঃ আমি ওর বড় বোন। বড় বোন হিসেবে আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে।

তুমি আমকে কথা দেও আমার সাথে এই দায়িত্বটা পালন করবে!

আচ্ছা এটা তুমি কি কথা বললে? দায়িত্ব কি শুধু তো্মার? এই দায়িত্ব আমাদের।

তো্মাকে আমি কতটা ভালবাসি সেটা তুমি জানো? যদি জানতে তাহলে এমনটা বলতে না। আরে! আমি জানি তো! আমিও তো্মাকে অনেক ভালবাসি।

তাই তো তো্মার উপর আমি এতটা ভরষা করতে পারি।

অরপা এসব ভেবে এখনি কেন মাথা খারাপ করছো?

আমি আছি না! আমি থাকতে তো্মার চিন্তা কি?

অরপা এই কথা শুনে একটু শান্তির নিশ্বাস ফেলল।

এখন মেড্যাম চলেন দুজনে গিয়ে কফি খাই। লাঞ্চ খাওয়ার অফার করছি না । জানি আপনি ফিজার সাথে লাঞ্চ করবেন।



অরপা আর ইরেশ কফি হাউজে গেল, পরিবেশ সেইরকম রোমান্টিক। এই রোমান্টিক পরিবেশের সাথে দুজনে খুব রোমান্টিক মুডে চলে গেল। কিন্তু এর মাঝেও অরপা একটাই চিন্তা ফিজা ভাল আছে তো! ঔষধ খাচ্ছে তো!

কি বেপার কি ভাবছো? খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে তো্মাকে!

অরপা বললঃ হুম! ফিজাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। ভয় হয় আমার কখন কি হয়ে যায়।

ইরেশ ফোন বের করে ফিজাকে কল করল!

ফিজা ফোন রিসিভ করল।

অবশেষে হোবু শালির কথা মনে পরল? আপু আপনার সঙ্গে আছে আর আমাকে নিয়ে বড়ই চিন্তিত। তাই না?

ইরেশ হেসে বললঃ এই দেখ মেয়ের কি কান্ড আমি হা করার আগে হাইকোর্ট এর খবর জেনে গিয়েছে। হুম! তো্মার আপু তো্মারই কথা ভেবে একাকার। আমার তো কোন পাত্তাই নেই।

আচ্ছা বলতো ফিজা আমার কথা কি এরকম বাসায় বসে ভাবে?

জি ভাইয়া আপু যতক্ষন বাসায় থাকে শুধু আপনার কথাই বলতে থাকে।

দেখেছো কি ফাজিল মেয়ে আমার সাথে ফাইজলামি করে।

জি ভাইয়া আমি সত্যি বলছি আপু বাসায় থাকলে সে শুধুই আপনার নাম নেয়। ফিজা ডাকতে গিয়ে ইরেশ বলে ডাক দেয়। বুঝতে পেরেছেন।

এরপর কি কিছু শুনতে চান?

হ্যা শুনতে চাই। তুমি ঔষধ খেয়েছ?

রত্না খালা তো্মার সাথে আছেন?

জি ভাইয়া রত্না খালা আমার সঙ্গেই আছেন। চিন্তার কোন কারন নেই আপুকে বলে দিয়েন।

অরপা হাসছে , ইরেশ ফোন রেখে বললঃ তুমি হাসছো কেন?

এখানে হাসির কি হল?

আরে আমি তাকিয়ে দেখলাম শালির সাথে আপনার কত ভাব।

শালি মানে? ফিজা আমার ছোট বোন। আমি তো আমার ছোট বোনের সাথে কথা বলেছি ।

এই কথা শুনে অরপার চোখে কিছুটা জল চলে এল।

একি তুমি কাদঁছো?

ধন্যবাদ! ফিজাকে আপন ভাবার জন্য। এভাবেই সবসময় ফিজাকে আপন ভেবো।





সময় খুব দ্রুত এগিয়ে চলছে। ফিজার অপারেশনের সময় চলে আসল।

আর মাএ দুইদিন বাকি। এই দুইদিন চলবে দ্রুত বেগে।

ফিজা অরপার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আপু আমার খুব ভয় করছে।

কেন? এত ভয় কিসের? ছোট একটা অপারেশন। সল্পক্ষনে সব ঠিক হয়ে যাবে।

আপু কেন জানি মন মানছে না। মনে হচ্ছে ঐ স্বপ্নে দেখা ঘূর্নিঝড় সত্যি সত্যি তোমার কাছে থেকে আমাকে অনেক দূরে সরিয়ে নেবে।

কিছু হবেনা। তোকে আমার কাছে থেকে কেউ দূরে সরাতে পারবে না।

আল্লাহ নিজেই চান আমি যেন তো্র সাথে থাকি সবসময়।

হাসপাতালে ফিজাকে ভর্তি করা হল। অরপা শুধু ফিজার দিকেই তাকিয়ে আছে।

ফিজা জিজ্ঞাসা করলঃ আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছ আপু?

তোকে দেখছি মন ভরে।



ফিজার হার্ট ট্রান্সফার সাকশেসফুল হয়। ইরেশ ফিজাকে নিয়ে বাসায় আসল।

ফিজা ওর আপুকে খোঁজ করছে। কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।

ভাইয়া আপু কোথায়?

এই সময় আপুর কি কাজ?

কয়টা বাজে?

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল এগারটা।

বুঝতে পেরেছি আপু কলেজে। কিন্তু আজ আপু কলেজে গেল কেন?

আপু কি জানে না আমি বাসায় ফিরব?

ফিজা তুমি রেষ্ট নেও। রত্না খালা আরও সাতদিন বাসায় থাকবেন।

রত্না খালা একজন নার্স।

বাসায় এই জন্য নার্সকে রাখা হয়েছে যেন চব্বিশ ঘন্টা ফিজার খেয়াল রাখতে পারেন।

ইরেশ বললঃ ফিজা এখন থেকে আমি তো্মাদের বাসায় থাকব।

ফিজা হতভাগ হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল।

তারমানে আমাকে না জানিয়ে আপনারা বিয়ে করে ফেলেছেন কিন্তু এত তারাতারি?

আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না আপনারা?

ও হ্যা! এখন বুঝতে পেরেছি এই কথাটা আপণাকে দিয়ে আমার কাছে বলাচ্ছে,

তাই সে আজ কলেজে।

ইরেশ তখন কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছিল না। শুধু বললঃ তোমার আপু কোথাও যায় নি । সে তোমার সঙ্গেই আছেন।

ফিজা কথাটা ঠিক বুঝতে পারেনি।

ইরেশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে বাহিরে চলে গেল।

হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল।

ইরেশ আকাশের দিকে তাকাল।

বৃষ্টির ফোটাগুলো তখন ইরেশের গায়ে পড়ছিল।

আর চোখ দিয়ে বিন্দু-বিন্দু জল ঝড়ছিল।

What is looted can not be blotted…















!!!! গল্পটি কাল্পনিক!!!!





মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩০

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মর্মস্পর্শী উপস্থাপনা!

তবু ভালো থাকুক সকল মানুষ!

শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ। সবসময়।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০০

অশ্রুত প্রহর বলেছেন: সকল মানুষই ভাল থাকতে চায় কিন্তু ভাল ভাবে থাকা অনেক সময় যে ভারী হয়ে দাড়ায়। শুভকামনা রইল।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:২৩

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চমৎকার গল্প , শেষটা খালি ভয়াবহ শূন্যতা রেখে গেল। তিনজনের একটি সুন্দর পরিবারও হতে পারতো। সমস্যা হচ্ছে বাস্তব জীবন কোন রূপকথা না।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২২

অশ্রুত প্রহর বলেছেন: গল্পটি চমৎকার লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসলে গল্পটির সমাপ্তি অন্যভাবে ঘটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু হল না। রূপকথার মত যদি রূপ দিতাম তাহলে হয়ত বা আপনার কাছে থেকে চমৎকার কথাটি শুনতাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.