নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু বলতে চাই কিছু লিখেত চাই

মনুআউয়াল

মনুআউয়াল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮

২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ রবিবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ।ছাত্রলীগের কুৎসিত রূপটি আরেকবার প্রকাশ্য রূপ ধারণ করল বিশ্বজিৎকে নিয়ে।প্রিন্ট মিডিয়ায়ও হত্যাদৃশ্যের ছবিসহ প্রকাশিত খবরে বলা হয় যে, হত্যাকারীরা সবাই শাসক লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের 'মর্দে-মোমিন'। এতে 'মাটিতে বাড়ি না পড়তেই গুনাহগার চমকে ওঠার' মতো চমকে উঠলেন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বললেন, না, এরা ছাত্রলীগের কেউ নয়! একবার নয়, একাধিকবার তিনি বলেছেন এ কথা। অথচ দেশের বিশ্বাসযোগ্য ও বহুল প্রচারিত দৈনিকগুলো ছাপল সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর ১১ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে ছাপা হলো 'নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরাই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম ওই জাতীয় দৈনিকের কাছে বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে আসেন।' সংবাদের শিরোনাম ছিল_ 'হামলাকারীরা ছাত্রলীগ কর্মী'। এ সংবাদ প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই যেন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নিলেন।

আবার বললেন, না ওরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৩ ডিসেম্বর 'ড. আলমগীরের একই কথা' শিরোনামে লিখল 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রলীগ কোনোভাবেই জড়িত নয়।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবস্থান যদি এমন হয় পুলিশ তার কর্তব্যকর্ম নিয়ে তো বিভ্রান্ত-বিচলিত হতেই পারে। পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা কাগজে-কলমে সংসদীয় গণতান্ত্রিক হলেও শাসকদের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরশাদের আমল থেকে এ পর্যন্ত (নব্বই-পরবর্তী কথিত সংসদীয় গণতান্ত্রিক আমলেও) যারা যখন ক্ষমতায় থেকেছেন কেউই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেননি। বিশেষ করে পুলিশকে ব্যবহার করছেন দলীয় লেঠেল বা ঠ্যাঙারে বাহিনী হিসেবে। আইন, বিবেক ও মানবিকতার লেশ-চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের আচরণে। অন্যায় আচরণ করতে গিয়ে কারও বিবেক বাধা দিলেও, প্রাণ কাঁদলেও শেষ পর্যন্ত নত হন কর্তার ইচ্ছার কাছে, আত্দসমর্পণে বাধ্য হন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময় যেমন খুব কাছে থেকেও পুলিশ ছিল দর্শক, হত্যাকাণ্ডের পরও ছাত্রলীগকে বাঁচাতে মরিয়া। পত্র-পত্রিকায় তেমন খবরই বেরিয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় হামলা ও হত্যাকারীদের ছবি বার বার প্রচার হওয়ার পরও বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে! দেশ-দুনিয়ার চতুর্দিক থেকে বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও নিন্দা-ধিক্কারের মুখে অভিনব কায়দায় মিডিয়ায় এক বিবৃতি এলো প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের নামে। বিবৃতিতে তিনি বললেন, 'বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত খুনিদের পরিবার জামায়াত-শিবির-যুবদলের সঙ্গে যুক্ত। তাদের কেউই ছাত্রলীগের কর্মী নয়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি ও জামায়াত দায়ী। মানুষ হত্যা করে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ওপর দোষ চাপানো তাদের (বিএনপি-জামায়াত) ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।' এটি সম্পূর্ণই একটি রাজনৈতিক বিবৃতি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এখন সরকারি কর্মকর্তা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে তার বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি তার পক্ষ থেকে প্রচার করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল বৈঠকের কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণকে জানাতে পারেন। কিন্তু নিজে স্বনামে নিজের কোনো বক্তব্য দিতে পারেন না।

নিজের রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বক্তব্য দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এটা তার এখতিয়ারবহিভর্ূত অনধিকার চর্চা। এটা সরকারি চাকরিবিধিরও লঙ্ঘন। এই একটা অভিযোগেই রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা ভোগকারী একজন সরকারি কর্মচারীর চাকরি চলে যেতে পারে। কিন্তু যে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সিনিয়র সচিব থাকাকালে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে আমলা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন, সে সরকারের শাসনামলে সরকারি কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবেরও কিছুই হয়নি, হবে না। পুরস্কার হিসেবে তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদাও পেয়ে যেতে পারেন বা মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন। এ থেকে বোঝা যায়, বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে শাসকদলের ক্যাডারদের আড়াল করে বিএনপি-জামায়াতকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার একটা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয় খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছেন, মৌলবাদীরা একটা হিন্দু ছেলেকে বেছে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। একদম ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত। অভিযোগের আঙ্গুলটা তিনি মূলত তুলেছেন অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াত জোটের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলে চিত্রিত করছেন পর্যবেক্ষকরা।

তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী একদিকে আত্দরক্ষার চেষ্টা করছেন, অপরদিকে সজ্ঞানে এই ঘটনায় বিরোধী দলকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার পথ খুঁজছেন। কিন্তু এত প্রত্যক্ষদর্শী, এত সাংবাদিক, এত সংবাদপত্র ও টিভি ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দেওয়া যাবে কি করে? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বলেও মন্তব্য করছেন বিরোধী দলের অনেকে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের যে সব মুখ পত্রিকার পাতায় এবং টিভি পর্দায় দেখা গেছে সেখানে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কেউ ছিলেন বলে গোয়েন্দরাও কাউকে শনাক্ত করেনি। অনেকে সঙ্গত কারণেই সন্দেহ করছেন যে, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায়ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে দেওয়ার কোনো অশুভ পরিকল্পনা হয়তো সরকারের আছে। মীর্জা ফখরুলেরও আরেকটি মামলা বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্বজিৎ যাচ্ছিল তার কর্মস্থলে। হঠাৎ পড়ে যায় ‘অবরোধ’ বিরোধীদের কোপানলে। দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী দোতলায় এক দোকানে। গুন্ডারা ছুটল সেখানে। ধরে এনে রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে লাঠিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করল। অতঃপর বিজয় উল্লাস করতে করতে চলে গেল। বিশ্বজিৎ বারবার বলেছে ‘আমি শিবির নই, আমি হিন্দু’। কারণ সে ভেবেছিল হিন্দুরা সরকারী দলের ভোটব্যাংক হেতু সে মুক্তি পাবে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বিশ্বজিৎ চলে গেল। কিন্তু সত্যিই সে বিশ্বকে জিতে নিল। সবার অন্তরে সে স্থায়ী মমতার আসন দখল করে নিল। হত্যাকারীরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারী দলের ছাত্র ক্যাডার। যে পিতারা তাদের সন্তানদের মানুষ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের জন্য ঢাকায় টাকা পাঠাতেন ছেলে মানুষ হবে বলে, পরে পত্রিকায় ও টিভিতে ছেলের হন্তারক ছবি দেখে প্রত্যেকে ঘৃণায় ছি ছি করেছেন ও তাদের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন। ইতিমধ্যে হত্যাকারী শাকিলের পিতা আনছার মিয়া হার্টফেল করে গত ১৫ই ডিসেম্বর শনিবার সকালে বরিশাল মেডিকেলে মারা গেছেন।
বিশ্বজিৎ যদি মুসলমান নামের কেউ হ’ত, তাহলে নির্ঘাৎ তাকে ‘শিবির’ বানিয়ে ছাড়তো। যেমন চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগ নেতারা বলছে যে, হত্যাকারীরা জামাত-শিবিরের ক্যাডার। তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়।
২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীরা ঢাকায় অনুরূপ নিরীহ এক বয়স্ক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে তার পিঠের উপর দাঁড়িয়ে নেচেছিল জামায়াত-শিবির মারার আনন্দে। সেই দল এখন ক্ষমতায়। অতএব কে এদের ঠেকায়। তবে এইসব পোষা গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য লেখক ফারূক ওয়াসিফের একটা সুন্দর পরামর্শ আছে। যেটা অনুসরণ করা যায়। গত ১২ই ডিসেম্বর ‘প্রথম আলো’-তে তিনি লিখেছেন, ভেবেছিলাম বিনা কারণে বা বিনা বিচারে নিশ্চয়ই নিহত হব না। কিন্তু সপ্তাহ দু’য়েক আগে সেই বিশ্বাসও টলে যায়। রাত সাড়ে ১১-টায় মোহাম্মদপুরের আদাবরের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা চারজন। বাড়ির সামনে এক চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি। হঠাৎ একটি সাদা গাড়ি থেকে চার-পাঁচজন ৪০-৪৫ বছর বয়সী লোক নেমেই লাথি-ঘুষি মারতে থাকল। তারা বলছিল, অ্যারা শিবির, শ্যাষ কইরা ফালা’। আমাদের তিনজন ছিলাম সাংবাদিক। সবাই পরিচয়পত্র দেখালাম, বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু তারা উত্তেজিত। আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম.খা. আলমগীর যুবলীগের প্রতি শিবির প্রতিরোধের আহবান জানিয়েছিলেন। আদাবর এলাকায় এই গ্রুপটি সম্ভবতঃ সেই জোশেই ... টগবগ করছিল। ক্যাডার, ছিনতাইকারী আর সরকারী বাহিনীর সাথে তর্ক করলে বিপদ বাড়ে, এই হুঁশ থাকায় উচ্চবাচ্য না করে প্রহার সইলাম। ভাবছিলাম ক্যাম্পাসে শিবির প্রতিরোধ করেছি, জীবন নাশের হুমকির মুখেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এই তার পুরস্কার! বা শিবির হলেই কি কাউকে এভাবে মারা যায়? দেশপ্রেমিক সৈনিকদের (?) ধন্যবাদ, তারা আমাদের প্রাণে মারেনি। সেদিন রাতে আমরাও বিশ্বজিৎ হয়ে যেতে পারতাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহবানের এমনই তেজস্ক্রিয়তা! আমাকে প্রহৃত হয়ে আর বিশ্বজিৎকে ছিন্নভিন্ন হয়ে সেই তেজের শিকার হ’তে হয়। তারপরও তিনি সম্পূর্ণ দায়মুক্ত’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ১৩ই ডিসেম্বর’১২ একই পত্রিকায় ‘রাজনৈতিক বর্বরতা’ শিরোনামে লিখেছেন, শিবিরের উত্থান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৬ সালের ২৬শে নভেম্বর তারা ছাত্রদলের আব্দুল হামীদের হাতের কবজিসহ কেটে নিয়ে কিরিচের মাথায় গেঁথে সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে তাদের হিংস্রতার মাত্রা জানান দেয়। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক নেতা ডঃ এনামুল হকের ছেলে ছাত্রদল কর্মী মূসাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ছাত্রদলের চবি সভাপতি হেলালীকে ১০জনে মিলে টেবিলের উপর চেপে ধরে দু’জনে তার চোখ উপড়ে ফেলতে চেষ্টা করে। এমন সময় প্রক্টরের হস্তক্ষেপে সে রক্ষা পায়। চট্টগ্রাম পলিটেকনিকের ছাত্রদল কর্মী যমীর ও জসীমকে জবাই ও গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে শিবিরকর্মীরা’।
দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র রাজনীতির নৃশংসতার খতিয়ান যদি এভাবে পেশ করা হয়, তাহলে তা সহজে শেষ হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল ১৫ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ‘পশু বানানোর কারখানা’ শিরোনাম দিয়ে লিখেছেন, কি অসাধারণ রাষ্ট্র! কি অসাধারণ রাজনীতি! এই রাজনীতি হলে সীট পেতে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল করতে শেখায়। সীট অব্যাহত রাখতে জোর করে মিছিলে গিয়ে দুই নেত্রীর বন্দনা করতে শেখায়। চাকরী-ব্যবসা পেতে হলে বা বড় নেতা হতে হ’লে লুটেরা বা খুনী হতে শেখায়। এই রাজনীতি ক্লাসরুম বাদ দিয়ে রাজপথ শেখায়, বই বাদ দিয়ে দরপত্র পড়া শেখায়, ... মানুষ নয়, পশু বানানোর দীক্ষা দেয়’। ... ‘আমাদের কেউ কেউ বোকার মতোই হয়ত ভাবি, এই পোড়া দেশে কখন আসবে সুদিন! এই দেশেই এসেছিল বাহান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর আর নববই! আমরা ... বলি। আছে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ভয় আর শিবিরের তান্ডব। আছে জেল-যুলুমের হুমকি, গুম হওয়ার শীতল আতংক! আছে বিশ্বজিতের নির্বোধ আকুতির মুখচ্ছবি। তবু আমরা হারব না’! তাঁর এই মহতী আশা নিয়ে সবাই বেঁচে থাকে। তাইতো তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদেরও একদিন সুদিন আসবে। তারা তো দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই রাজপথে শিবির প্রতিরোধে নেমেছিলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নির্দেশে তো সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনাবাহী গাড়ী ভাংচুর করতে যায়নি! মির্জা ফখরুল সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন। ৩৭টি মামলায় আসামী হয়েছেন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের অন্তত এতটা ভোগান্তি সইতে হবে না। বিরোধী দলের মহাসচিবের চেয়ে নিজ দলের খুনীদের মর্যাদা এখনো বেশী আছে এই রাষ্ট্রে। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে হয়ত একই রকম ঘটনা ঘটবে’।
বিশ্বজিৎ হৌক আর জামাত-শিবির হৌক প্রত্যেকে এদেশের নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার অবশ্যই অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। যদি এগুলো সরকারের পেটুয়া বাহিনী দ্বারা ভূলুষ্ঠিত হয়, তাহলে মিথ্যা এ স্বাধীনতা, মিথ্যা সব চেতনার বুলি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো ছিল একটাই। যালেমের বিরুদ্ধে মযলূমের স্বভাবগত প্রতিরোধের চেতনা। পাকিস্তানী শাসকরা যদি যুলুম না করত, আর ভারত সরকার যদি এই ক্ষোভকে কাজে না লাগাতো এবং রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে নেমে না পড়ত, তাহলে ইতিহাসটা কেমন হ’ত? যখন বর্বর টিক্কা খান হুংকার দিয়েছিল ‘আদমী নেহী, মেট্টি চাহিয়ে’ (মানুষ নয়, মাটি চাই), আর নিরীহ মানুষের উপর সমানে গুলি চালাচ্ছিল, তখন মানুষ যে যা পেয়েছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছিল। কারু আহবানে বা ঘোষণায় তারা যুদ্ধে নামেনি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। অথচ যালেমের বিরুদ্ধে মযলূমের এই পবিত্র চেতনাকে ছিনতাই করে নিয়ে সুবিধা লুটছে একদল মতলবী লোক। তাই তো দেখি বহু প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যারা ঘৃণায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ পর্যন্ত নেননি। কিন্তু দলীয় চেতনার চাপে সত্য চেতনা বিকশিত হ’তে পারছে কি?
প্রশ্ন হ’ল, মানুষের দীর্ঘশ্বাসের জবাব কি?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫৪

জাকারবেস্ট বলেছেন: আপনার পোস্টটির সাথে পুরোপুরি সহমত পোষণ করছি। সন্ত্রাসের মোকাবেলায় সন্ত্রাস কখনও বিকল্প হতে পারে না । এতে সন্ত্রাস ক্রমাগত বাড়ে । কিন্তু স্পাইডার ম্যান বা জেমস বন্ডদের সময়ে ফিল্ম বা মিডিয়ায় যে ভাবে হিরোইজমকে দেখান হচ্ছে ,তাতে হিরোর দ্বারা সন্ত্রাসেও আমরা আপ্লুত হই , হাত তালি দিয়ে উঠি।

তবে আপনার একটি মন্তব্ব্যে বিস্মিত হয়েছি । বিশ্বজিতের খুনিদের যখন নিজেদের দলের লোক না বলায় বা অন্য দলের লোক বলায় আপনি বললেন সরকারি দলটি তার উপর যে ভার সেটা লাঘব করেছে। সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু এদের গ্রেফতার করাটা কি তার ভার লাঘবের চেয়েও জরুরী ছিল না । যেখানে ইউনিভার্সিটি পর্জন্ত অ্যাকশনে গিয়েছে , সেখানে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে সরকার চুপ থাকল। এসব দেখে মায়ানমার সরকারের কথা মনে পড়ল । যখন রাখাইন বৌদ্ধরা সরকারি মদদে রোহিঙ্গা দের উপর নিপীড়ন শুরু করেছিল তখন বার্মার সরকার প্রধান বললেন রোহিঙ্গারা এদেশের নাগরিক নয়। এটা কি ভার লাঘব না দায়িত্ত এড়ান , বুঝলাম না ।
সর্বশেষ দেখলাম প্রেস সচিব বলেছেন ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে , হাই কোর্ট বলছে ১ জন , পুলিশ বলছে ৩ , কাকে বিশ্বাস করবেন । আরেক খবরে শুনলাম ছবিতে যারা ছিল তাদের গ্রেফতার করা হয় নি। গ্রেফতারে সরকারের দ্বিধা দন্দতা তার ভেতরকার অসততা কেই নির্দেশ করে।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৩

মনিরুলবেস্ট বলেছেন: আমাদের ভবিষ্যত কী হবে তা ভাবলে আসলেই শিউরে উঠতে হয়। বিশ্বজিৎ ও রাজনৈতিক দ্বৈতনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কিছু বুঝতে পারছিনা। যারা রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করে, তাদের এখনি বুঝার সময় এসেছে। নচেত এই রাজনীতির গ্য়রাকল থেকে উত্তরণের পথ নেই।

অশেষ ধন্যবাদ monuawal ভাইকে।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫

নাছিরুলবেস্ট বলেছেন: জবাব নেই।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৮

হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: la jaowab

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫০

মোসতফরকস বলেছেন: জামাত-শিবিরকে ঘৃণা করার কিছু কারণঃ
১। একাত্তুরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করা
২। ধর্মের নামে রাজনীতি করা
৩। শিবির মুখে আদর্শের কথা বললেও তাদের নৃশংসা সর্বজনস্বীকৃত

৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৩

জয় রায় ৫৪ বলেছেন: শ্মশানের নিরবতা

৭| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

বাপন রহমান64 বলেছেন: জামাত শিবিরের অর্থনৈতিক শক্তি ভেঙ্গে দেন

৮| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:০৮

সুরাইয়াখান বলেছেন: দীর্ঘশ্বাসের জবাব নেই, সাধারন মানুষের প্রশ্ন:::: কিছু প্রশ্নের যুক্তি যুক্ত উত্তর চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.