নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু বলতে চাই কিছু লিখেত চাই

মনুআউয়াল

মনুআউয়াল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশি জিহাদিদের নতুন প্রজন্ম

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:১৭


বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে খুব একটা শোনেনি মার্কিনিরা। যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করে সফল হোক বা বিফল হোক যেভাবে উচ্চ পর্যায়ের বিপুল পরিমাণ উচ্চ মাত্রার (হাই প্রোফাইল) হামলা চালানো হয়েছে তার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যোগসূত্র রয়েছে সংঘাতপ্রবণ এলাকা- আরব বিশ্ব, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত চেচেন প্রজাতন্ত্রের।
কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথমদিকে বাংলাদেশের ২৭ বছর বয়সী অভিবাসী আকায়েদ উল্লাহ নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত পাতালপথে হাতে তৈরি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে। ম্যাচের কাঠি ও পাইপ ব্যবহার করে সে এই বোমা তৈরি করেছিল। কিন্তু তার বোমাটি যথাযথভাবে বিস্ফোরিত হয় নি। এতে আকায়েদ উল্লাহ মারাত্মক জখম হয়।
অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় করার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তা সত্ত্বেও সে নতুন এক রকম যন্ত্রণার বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। তা হলো বাংলাদেশি জিহাদিদের উত্থান। জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে আকায়েদ উল্লাহ বলেছে, ইসলামিক স্টেটের পক্ষে সে বোমা হামলা চালিয়েছে। তার লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব মানুষকে সন্ত্রাসী করে তোলা। ওই ডিসেম্বর মাসেই লন্ডন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাইমুর জাকারিয়া রহমানের (২০) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। তাতে বলা হয়, সে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের গেটে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তেরেসা মে’কে আত্মঘাতী বোমা বুকে বেঁধে এবং ছুরি ব্যবহার করে হত্যা করতে চেয়েছিল সে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় বিদেশিদের কাছে প্রিয় এমন একটি রেস্তরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় ইসলামিক স্টেট। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র জড়িত। এ হামলায় জড়িতদের মধ্যে রয়েছে তামিম চৌধুরী। সে অন্টারিওতে রসায়নে গ্রাজুয়েট। তার পিতামাতা বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়ে কানাডায় বসবাস করছিলেন। হামলাকারী আরেকজন হলো মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি। সে হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। সে জাপানের কিয়োটোতে ব্যবসায় প্রশাসনের ওপর পড়াশোনা করেছে। হলি আর্টিজানের পাঁচ হামলাকারী ১১ ঘণ্টায় ২০ জনকে জিম্মি করে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। এর মধ্যে নয় জন ছিলেন ইতালির নাগরিক। সাতজন জাপানি। দু’জন বাংলাদেশি। একজন ভারতীয় ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। নিরাপত্তা রক্ষীরা ওই বেকারিতে ঝড়োগতিতে প্রবেশ করার পর হামলাকারীরা মারা যায়।
এ হামলার মূল হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তামিম চৌধুরী। হামলার প্রায় দু’মাস পরে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। হামলাকারী ও সিরিয়ার ইসলামিক স্টেটের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সাইফুল্লাহ ওজাকি কাজ করেছিল বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। সে এখনো পলাতক রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশি যেসব জিহাদি ছিল তারা ছিল মূলত বিভিন্ন ইসলামিক স্কুলে শিক্ষায় শিক্ষিত। পক্ষান্তরে হলি আর্টিজানের হামলাকারীদের রয়েছে অভিজাত ব্যাকগ্রাউন্ড (প্রিভিলেজড ব্যাকগ্রাউন্ড)। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক আলী রীয়াজের বর্ণনায় বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের নতুন একটি প্রজন্মের আওতায় এরা। আলী রীয়াজ এদেরকে উচ্চ প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞানসম্পন্ন, উচ্চ শিক্ষিত বলে অভিহিত করেন। তিনি মনে করেন, তাদের পূর্বসূরিদের তুলনায় এদের রয়েছে গভীর বহুজাতিক যোগাযোগ।
ইসলামিক উগ্রবাদের প্রতি পশ্চিমাদের শৈথিল্যকে নিজেদের জিহাদি সমস্যা বলে দায়ী করেন অনেক বাংলাদেশি। তাৎক্ষণিকভাবে বলা যায়, ক্যালগারি ক্লাস্টার নামে একটি গ্রুপ সহ অন্য জিহাদি গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তামিম চৌধুরীর। ক্যালগারি ক্লাস্টারের সদস্যরা একই মসজিদে নামাজ আদায় করতো এবং সিরিয়ায় যুদ্ধ করার জন্য কানাডা ছাড়ে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ সুবিধার জন্য লন্ডন হয়ে ওঠে তাদের কাছে খুব প্রিয় জায়গা। এ জন্য লন্ডনকে বলা হয় লন্ডনিস্তান। এখানে রয়েছে কট্টরপন্থি ধর্মীয় প্রচারক। আছে পশ্চিমাদের বিস্তৃতি।
আলী রীয়াজ মনে করেন, সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করতে ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছে ৮৫০ জন বৃটিশ যোদ্ধা বা তারও বেশি। তার মধ্যে ১০০ জনই হতে পারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এর মধ্যে রয়েছে সাইফুল হক সুজন। সে একজন ছাত্র হিসেবে বৃটেনে গিয়েছিল। সিরিয়ার রাকা’য় যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় সে দু’বছর আগে নিহত হয়েছে। এই সুজন সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের সাইবার অপারেশন চালাতে সহায়তা করতো।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় উন্নততর কিছু করতে পারতো পশ্চিমা দেশগুলো। তবে বাংলাদেশের জিহাদি সমস্যাটি বিদেশিদের পায়ে ঠেলে দেয়া একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। গত চার দশক ধরে মরক্কো থেকে মিন্দানাও পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলোতে যেভাবে উগ্রবাদের জোয়ার দেখা গেছে বাংলাদেশ তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে নি। জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তাদেরকে আইনগত বৈধতা দিয়েছে, যা তাদের এক সময় ছিল না। ২০১৩ সাল থেকে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদেরকে ধারাবাহিকভাবে হত্যা করা হয় কুপিয়ে। এতে মুক্ত মত প্রকাশে শীতলতা দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পক্ষে দাঁড়ানোর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল, যে দলটি দৃশ্যত ধর্মনিরপেক্ষ তারা বলেছে, ইসলাম নিয়ে কথা বলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশের পাকিস্তানি ভাইয়েরা যেমনটি মনে করেন তেমনটি মনে করেন না বাংলাদেশিরা। পাকিস্তানে যেমন বলা হয়, শরিয়া কায়েম করে সমাজের সব সমস্যার সমাধান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ইসলামপন্থিরা, সেই ধারাটি বাংলাদেশিদের মধ্যে অতোটা গভীরে প্রথিত নেই। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। তবে পুরোটাই যে বধিরের কানে পৌঁছবে না এমন না। অন্য অনেক দেশের মতো অনেক ইসলামপন্থি তাদের লক্ষ্য আদায়ে সহিংসতা ব্যবহার করেছে।
অনেক দিক দিয়েই চ্যালেঞ্জটি সুপরিচিত। কিভাবে আপনি বৈধ ধার্মিকতা ও এর সবচেয়ে উগ্র মেনিফেস্টেশনের মধ্যে ব্যবধান বা সম্পর্ক নির্ধারণ করবেন? একদিন হয়তো আপনার ১৮ বছর বয়সী ছেলে ধর্মীয় দিকে ঝুঁকে গিয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারে। পরের ঘটনাটি জানেন, সারা বিশ্বের সব পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় তার ছবি ছাপা হতে পারে। কারণ, সে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করেছে।
আমাদের বেশির ভাগের জন্য ধার্মিকতা ও পাইপ বোমার মধ্যে সম্পর্ক খোঁজা একটি অসহনীয় বিলাসিতা হতে পারে। ব্রাসেলসভিত্তিক সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামে বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সেইগফ্রাইড ইঙ্গিত করেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি জিহাদিরা নতুন এক সূচনা ও আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন শুরু করেছে।
দুই বছর আগে নিউ ইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল এক বাংলাদেশি। তবে সে সফল হয় নি। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের জিহাদি ম্যাপে বাংলাদেশের নামটি প্রথম তুলে দিয়েছে আকায়েদ উল্লাহ। এক্ষেত্রে সেই যে শেষ কথা এমন কথা নেই।
(দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ২৯শে ডিসেম্বর প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:০২

নাঈমুর রহমান আকাশ বলেছেন:

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৪৯

সোহানী বলেছেন: এইগুলা পড়াশুনা করে কিভাবে ছাগল হয়, বুঝি না। পুরো আইএস এর পিছনের কলকাঠি কে নাড়ছে বা কারা এটা তৈরী করেছে বা কি উদ্দেশ্য সামনে রেখে এটা তৈরী হয়েছে তা এখন কম বেশী সবাই জানে। কিন্তু এ রাম ছাগলগুলা কেন জানে না? তামিমের ব্যাপারে আপডেট জানা ছিল না। এখানে তাকে মুক্ত করার জন্য কানাডা সরকার ও অভিবাসীরা অনেক চেষ্টা করেছিল। শেষ খবর জানতাম যে তাকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছিল। যাই হোক, এসব পোলাপানদের ধরে থাপড়ায়ে সোজা করা উচিত...... ফাজিলের সব দল।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪

NurunNabi বলেছেন: বিশ্বে দালাল আর মুনাফিক যত বাড়বে সমস্যা তত দেখা দেবে। কাদিয়ানী সম্প্রদায় ব্রিটিশ আশ্রিত কথিত খলিফা মির্যা মাসরূর আহমদ ব্রিটেনের কোলে বসে ইসলাম আর মুসলমানের বিরুদ্ধে অবিরাম ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে
কিন্তু এর প্রতিকার কোথায়? দুনিয়ার ১.৮ মিলিয়ন মুসলমানকে কাফের আখ্যায়িত করে ব্রিটেন প্রভুদের খুশি করে চলেছে। এদের রুখতে আপনাদের প্রস্তুতি কী কী রয়েছে? এসব উস্কানি থেকেই তো জংগি সৃষ্টি হচ্ছে।

৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ব্রেইন ওয়াশড আগে শুধু শব্দ হিসেবে জানতাম। কিন্তু এই জঙ্গিদের দেখে চাক্ষুস প্রমাণ পেলাম...

৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৪

অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: এইসব নব জঙ্গিদের দিকে তাকালে আয়নায় নিজের মুখটা দেখলেও ভয় লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.