নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজিম পরদেশী

কষ্ট মানুষকে নীরবে কাঁদায়.....

আজিম পরদেশী › বিস্তারিত পোস্টঃ

*** শবে বরাত বিরোধীতার জবাব ***

০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ৯:৩১

কিছু অন্ধ, দুষ্ট, রাবিশমার্কা জাকিরভক্ত লা মাযহাবীদের ইন্টারনেটে শবে বরাতের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করতে দেখে কিছু লেখার ইচ্ছা হল।
ওরা বলে শবে বরাত কোরআন হাদীসের কোথায়ও নাই??
আরে নব্য পন্ডিত শবে বরাত শব্দটা যে ফারসি সেই শিক্ষা না নিয়া লাফালাফি কর শরম নাই তোমাদের।
নামাজ শব্দটা যেই রকম ফারসি।
নামাজ,রোযা, শব্দগুলা যেই রকম কোরআন হাদীসের কোথায়ও নাই ঠিক তেমনিভাবে শবে বরাত কোরআন হাদীসে না পাওয়া নিয়া মাতলামী করাটা বাদরামীর সমান।
এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ এ না থাকার কারনে ছেড়ে দিবে?
খোদা, ফেরেশতা ইত্যাদি শব্দ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ এ না থাকার কারনে মহান আল্লাহ পাক ও ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অস্বীকার করবে? মূলত শবে বরাত, নামায, রোযা , খোদা ,ফেরেশতা ইত্যাদি ফার্সী ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত।
ফার্সী~ শব~ অর্থ রাত্রি এবং ~বরাত~ অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।
আবার কিছু লা-মাজহাবীরা বলে থাকে শবে বরাতের হাদীসগুলো নাকি সহিহ না।
সহিহ অর্থ শুদ্ধ আর এর বিপরীত শব্দটা দাড়ায় অশুদ্ধ।
কোরআন হাদীসের কোন বাণীকে কেউ অশুদ্ধ বললে সে কোন মার্কা মুসলমান তা মহিলারাও জানে।
হ্যাঁ আলোচনার তাগিদে যদি কিছুক্ষনের জন্য মেনে নেই হাদীসটা অশুদ্ধ নয় বরং জয়িফ অর্থ্যৎ দুর্বল।
তাহলেও শবে বরাতের ফজিলত অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই।
কারন কোন আমল প্রমাণের জন্য জয়িফ হাদীস যথেষ্ট।
আর ওইগুলা জাকির পূজারীরা জানে না জানলেও মানে না কারন
জাকির পূজা করতে করতে এখন ইমাম তাইমীয়া,ফখরুদ্দীন রাযী,আবু হানীফাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়।
শবে বরাত নিয়া এত বিরোধীতা কেন??
ওই দিন কি মানুষ নাচ গান করে,নাকি চোখের পানি ফেলে ,নামায পড়ে,কোরআন তেলাওয়াত করে।
তা সওয়াবের কাজ দেখলে চুলকায় কেন তোমাদের।
এখন যদি তোমাদের মত সবাই এই শবে বরাতের ফজিলত অস্বীকার করতো তাইলে ফলাফল এই দাঁড়াতো
যে ওই দিন অন্যদিনের মত মানুষ পাপাচার করতো,প্রতিদিনের মতো নামাজ ফাঁকি দিত।
আর যদি শবে বরাত কেউ মানতো তাইলে হয়তো অন্যদিনের মত নামাজ কাযা দিতোনা,
পাপাচার করতো না,আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো,
নিজের ভুল স্বীকার করে মহান আল্লাহর ইবাদত করতো ।
একদিনের জন্য হলেওতো নামাজ কালাম করতো।
তা তোমরা লা মাজহাবীরা যে প্রকৃত মুসলমান নও তার প্রমানের জন্য এটাই যথেষ্ট যে
নিজেরা আমল করবে না অন্যদেরও আমল করতে দিবে না।
শয়তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই জাকির নায়েক পূজারীদের আসল উদ্দেশ্য।
লা মাযহাবী অথবা জাকির পূজা বলতে কি বুঝায় তা একটু পরিস্কার হওয়া দরকার।
লা মাযহাবী ওরা যারা কোন মাযহাব মানে না।
সেইটা আবুবকরের মাযহাব হউক,ওমরের মাযহাব হউক অথবা ওসমানের মাযহাব হউক।
ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফঈ ,ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলীমের কথা না হয় বাদেই দিলাম।
ওদের কিছু আক্বিদার কথা বলি যা চৌদ্দশত বছরে কোন হক্কানী ইমাম ,আলেম ,উলামারা পোষন করেননি যেমন
(১)আল্লাহর আকার আছে ওনার হাত পা আছে।
(২)আল্লাফ সর্বত্র বিরাজমান নন কেবল আরশেই আছেন।
(৩)মহানবী (সাঃ) একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নন যেমনভাবে আমরা মানুষ।
(৪)ইব্রাহীম (আঃ) মুসলীম জাতির পিতা নন।
(৫)তারাবীর নামায ৮ রাকাত।
(৬)নবী করিম (সঃ) কবরে মৃত এবং কোন ক্ষমতা নেই ।ইত্যাদি
নামাজে একাধিকবার হাত তুলা, জোরে আমিন বলা ,
কিয়ামরত অবস্থায় পা ছড়িয়ে নামাজ পড়া,বিতরের নামাজ এক রাকাতের কথা না হয় বাদ দিলাম।
উপমহাদেশে এই লা মাযহাবীদের তৈরি করেছিলো ইংরেজরা
এবং তাদের নেতা আব্দুল হক বেনারশী ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে হারাম ফতোয়া দিয়েছিলো
যেমনভাবে কাদিয়ানীও দিয়েছিলো।
আর বর্তমানে মতিউর রহমান লা মাযহাবী ফতোয়া দিয়েছিলো আল্লামা শফী,চরমোনাই পীর,ফুলতলী,ফুরফুরা,ও জমাতে ইসলামীর বিরুদ্ধে।
জাকির পূজা বলতে জাকির নয়েকের অন্ধ ভক্তিতাকে বুঝায়।ওই লোক মানুষকে হেদায়াত দিতে গিয়ে নিজের কথাই ভুলে গেছে।
যেমন বিভিন্ন ফল দেখলেই আমরা বলে দিতে পারি এইটার ওই নাম ওইটার এই নাম।
সকল ধর্মের চিন্তাবিদদের দেখলেই আপনি বলে দিতে পারবেন কে কোন ধর্মের লোক।
তাদের লেবাস তাদের পরিচয় বহন করে ।
উদাহারন হিসাবে বলা যায় পপদের পোশাক দেখলেই বুঝা যায় ওনি খৃষ্টান ধর্মের ধর্মীয় ব্যাক্তি যেমন পপ বেনেডিক।
বুদ্ধদের পোশাক দেখলেই বুঝা যায় ওনি বুদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় ব্যাক্তি যেমন দালালাইমা।
হিন্দুদের দেখলেই বুঝা যায় ওনি হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় ব্যাক্তি যেমন শ্রী রবী শঙ্কর।
আর মুসলামদের দেখলেই বুঝা যায় ওনি মুসলীম ধর্মের ধর্মীয় ব্যাক্তি যেমন ইমাম সুদাইস,ইমাম সুরাইম।
কিন্তু ডাঃ জাকির নায়েকের পোশাক দেখে বুঝা মুসকিল ওনি আসলে কোন ধর্মের ধর্মীয় ব্যাক্তি।
নাকি সব ধর্মের মিশ্রন।যার কোন কোরআন হাদীসের সিলসিলা বা ক্রম রাসুল (সাঃ) পর্যন্ত নাই সেই লোক দেয় ফতোয়া আর অন্ধগুলা বিশ্বাস করে।
যাই হোক শবে বরাতের কথায় চলে যাই।
অতিথে কিছু লোক শবে বরাত নিয়া অতি বাড়াবাড়ি করতো আর এখন জাকিরভক্ত লামাযহাবীরা ছাড়াছাড়ির কাজে ব্যাস্ত।
আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়।
এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা যেমন ভুল, অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।
এ রাতের ফজীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যেমনি অপ্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে তেমনি বেশ কিছু হাদীছের স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে এ রাতের মাহাত্ম-গুরুত্ব ও আমলসমূহ স্বীকৃত-প্রমাণিত।তাইতো ওলী বুজুর্গ, আহলে হক্ব নবীর সাচ্চা উম্মত শবেবারাতের মর্যাদা দিয়ে এসেছেন। ওলামা-মুহাদ্দিছীন, আওলিয়া-বুযুর্গানেদ্বীন, ফুকাহা-আইম্মায়ে মুজতাহেদীনের কাছে এ রাতের গুরুত্ব-মাহাত্ম ও ফজীলত স্বতঃস্বীকৃত। তারা সুস্পষ্ট করে বলে গেছেন শবেবরাতে যে কোন ইবাদত একটি মুস্তাহাব ও ঐচ্ছিক আমল-এটাকে অস্বীকার করা বা গুরুত্বহীন বলা যেমনিভাবে কুরআন-হাদীছকে অস্বীকার করার নামান্তর ঠিক তেমনিভাবে একে পুঁজি করে নিজের পক্ষ থেকে বিদআতে সায়্যিআহ যুক্ত করা বা এটাকে পার্থিব কোন আনন্দ উৎসবের ন্যায় মনে করা সাংঘাতিক ধরণের গুনাহের কাজ।
শা’বান মাসের মধ্যবর্তী দিনের রাত শবে বরাত। পবিত্র কোরআন শরীফের সকল তাফসীর গ্রন্থ এবং হাদীসের প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহের অকাট্য দলিল দ্বারা এ রাতের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব প্রমাণিত। রাসূল পাক সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই নফল বন্দেগীর মাধ্যমে এ রাত উদ্যাপন করেছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় সাহারায়ে কেরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি সমগ্র বিশ্বে অত্যন্ত ভাব-গাম্ভীর্যত ও গুরুত্বের সাথে এ রাত পালিত হয়ে আসছে। মহান রাব্বুল আলামীন সকল মানুষ, স্থান ও সময়কে সমান মর্যাদা দান করেননি। বছরে যে কয়টি রাতকে অত্যন্ত ফজিলত ও মর্যাদা দান করেছেন তন্মধ্যে শবে বরাত একটি। বিভিন্ন তাফসীর ও হাদীসগ্রন্থে এ রাতকে ‘লাইলাতুল বারাত’ ও ‘লাইলাতুল নিসফি মিন শা’বান’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাফসীরে বাগাবী হযরত উসমান বিন মুহাম্মদ বিন মুগীরা বিন আখনাস (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে, এক শাবান থেকে অপর শাবান পর্যন্ত প্রত্যেক কাজের সময় নির্ধারণ করা হয় এ রাত্রে। এমনকি কোন ব্যক্তি বিবাহ করবে এবং তার সন্তান ও জন্মগ্রহণ করবে এবং কে মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় তার নাম মৃতদের তালিকায় চলে যায়। (তাফসীরে বাগাবী : ৪/১৪৮-১৪৯)হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহ তা’লা শা’বানের অর্ধেকের রাত্রে সকল ফয়সালা করে থাকেন এবং লাইলাতুল কদরে তা দায়িত্বশীল ফেরেশতাদের নিকট সোপর্দ করেন। (তাফসীরে বাগাবী : ৪/১৪৯)তাফসীরে রুহুল মা’আনী হযরত ইকরামা (রা.) ও অপর একদল মুফাসসিরীনে কেরামের মতে লাইলাতুল মাবারাকা হচ্ছে শাবানের অর্ধেকের রাত। তাকে লাইলাতুর রাহমাহ, লাইলাতুছ ছক, লাইলাতুল মুবারাকা ও ‘লাইলাতুল বরাত’ নামেও অভিহিত করা হয়। তারা এ রাতের ফজিলত সম্বন্ধে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে ইমাম ইবনে মাজা তার সুনানে এবং ইমাম বায়হাকী তার শুআবে ঈমানে হযরত আলী (রা.) থেকে নিম্নোক্ত হাদীস খানা বর্ণনা করেছেন। রাসূলে পাক ইরশাদ করেন, যখন শা’বান মাসের অর্ধেকের রাত হবে তখন তোমরা রাত্রে জাগ্রত থাকবে এবং দিনে রোজা রাখবে। কেননা আল্লাহ তালা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবর্তীণ হয়ে আহ্বান করেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করুক আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী রিযিক প্রার্থনা করলে আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন বিপদ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করলে আমি থাকে বিপদ থেকে রেহাই দেব। এরূপ আরও অনেক কিছু এমনকি ফজর পর্যন্ত এ আহ্বান চলতে থাকে। (রুহুল মা’আনী খ- ২৬ : পৃষ্ঠা ১১১) দ্বিতীয়ত: ইমাম তিরমিযী, ইবনে শাইবা বায়হাকী এবং ইবনে মাজা হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, এক রাত্রে আমি রাসূলে পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম-কে হারিয়ে ফেললাম। অর্থাৎ তিনি আমার বিছানা থেকে উঠে গেলেন। আমি তাঁকে তালাশ করে গিয়ে জান্নাতুল বাকীতে আকাশের দিকে মাথা উত্তোলনকারী অবস্থায় পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, হে আয়েশা! তোমার মনে কি এ ভয় হয়েছিল যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার সহিত অন্যায় ব্যবহার করবেন? আমি বললাম যে, আমি তা মনে করিনি, তবে আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। অতঃপর হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ তা’লা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন (অর্থাৎ দুনিয়ার আসমানের প্রতি মনোনিবেশ করেন) অতঃপর বণি কালবের ছাগল পালের পশমের চেয়েও অধিক গোনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। হযরত রাশিদ বিন সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন। আল্লাহ তা’লা পরবর্তী এক বৎসরে যতগুলো প্রাণ হরণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে তা মালাকুল মউত তথা হযরত আজরাইল (আ.)-এর প্রতি নির্দেশ প্রদান করে থাকেন। ইমাম আহমদ (রা.) তার মাসনাদে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ পাক শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে তার সৃষ্টি জগতের প্রতি মনোনিবেশ করেন। অতঃপর দু’শ্রেণীর বান্দাহ ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। এ দু’শ্রেণী হলো হিংসুক এবং অন্যায়ভাবে হত্যাকারী। (রুহুল মাআনী-খ- : ২৬/১১১)শবে বরাতকে বরকত শব্দ দিয়ে বিশেষায়িত করার বিভিন্ন কারণ হতে পারেÑ (১) ধর্মীয় ও পার্থিব উপকারের নিমিত্ত। এ রাত্রে পবিত্র কোরআন একত্রে অবতীর্ণ করা হয়েছে। (২) এ রাত্রে ফেরেশতা ও রাহমাতের অবতরণ হওয়া দোয়া কবুল হওয়া এবং ইবাদতের ফজিলতের আধিক্যতা। (৩) মাখলুকাতের রিযিক নির্ধারণকরণ, বিভিন্ন বিষয়ের ফয়সালাকরণ যেমনÑ জন্ম, মৃত্যু প্রভৃতি কাজের সময় নির্ধারণকরণ এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ শাফাআতের অধিকার প্রদান। আর এসব কারণেই এ রাত্রকে বলা হয় লাইলাতুল বরাত। (রুহুল মা’আনী খ- ২৬ : পৃষ্ঠা ১১২)তাফসীরে খাযিন মা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ তা’লা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন অর্থাৎ মনোনিবেশ করেন এবং বনী কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়েও অধিক গোনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। (খাযিন খ- ৪ : পৃষ্ঠা-১১২)। তাফসীরে রুহুল বয়ান রামদ্বান শরীফ, জিলহাজ মাসের দশ তারিখ এবং শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে রুহুল বয়ানে। (খ- ৮ : পৃষ্ঠা ৪০১) মুফাসসিরীনে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ‘লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা’ শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাতকে বুঝানো হয়েছে। উক্ত রাতের নাম চারটি-আললাইলাতুল মুবারাকা। এ রাত্রে আমলকারীদের জন্য অত্যাধিক কল্যাণ ও বরকত থাকার কারণে এবং আল্লাহ তা’লার দেয়া বারাকাত আরশ থেকে পাতাল পর্যন্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রতিটি বস্তুকে পরিবেষ্টন করে। যেমনিভাবে শবে কদরে হাযিরাতুল কুদস্ নামক স্থানে ফেরেশতাকুল সমবেত হয়ে থাকেন। লাইলাতুর রাহমাহ, (৩) লাইলাতুল বরাত, (৪) লাইলাতুস ছক। আর এ নামকরণের কারণ হচ্ছে তহশীলদার যখন খাজনা দানকারী থেকে খাজনা গ্রহণ করে তখন তাকে রসিদ প্রদান করে যে তোমার দায়িত্ব থেকে তা মুক্ত হয়ে গেল। তেমনিভাবে আল্লাহ তা’লা উক্ত রাত্রে তার মুমিন বান্দাদেরকে গোনাহ থেকে মুক্তি দান করেন। হযরত উমর বিন আব্দুল আযিয শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে নামাজ থেকে যখন মাথা উত্তোলন করলেন তখন তিনি সবুজ রং এর একটি চিঠি দেখতে পেলেন যার আলো আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত এবং তাতে লিখা রয়েছে এটা মহা পরাক্রমশালী বাদশাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রিয় বান্দা উমর বিন আব্দুল আজিজের দোজখ থেকে মুক্তির পরিত্রাণের সনদ। (রুহুল বয়ান খ- ৮ : পৃষ্ঠা ৪০২)। হাদীস শরীফে রয়েছে উক্ত শবে বরাতে একশ’ রাকআত নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তা’লা তার জন্য একশ’ জন ফেরেশতা মোতায়েন করবেন। তন্মধ্যে ত্রিশজন তাকে বেহেশতের সু-সংবাদ দান করেন, ত্রিশজন তাকে দোজখের শাস্তি থেকে নিরাপদে রাখেন। ত্রিশজন তাকে দুনিয়ার বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করেন। এবং দশজন তাকে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেন। হযরত মুজাহিদ (রহ.) হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আলী! শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে যে একশ’ রাকআত নামাজ এমনভাবে পড়বে যে প্রতি রাকাতে সূরায়ে ফাতেহার পর সূরায়ে ইখলাছ এগার বার। হুযুর বলেন, হে আলী আল্লাহর যে বান্দাই এ নামাজ পড়বে আল্লাহ তা’লা এরাত্রে তার সবগুলো হাজাত পূর্ণ করবেন যা সে চাইবে এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার নেক কাজগুলো লিপিবদ্ধ করবেন, মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। আর তা চলতে থাকবে বৎসরের শেষ পর্যন্ত। তাছাড়া আল্লাহপাক আদন নামক বেহেশতে সত্তর হাজার থেকে সাত লক্ষ ফেরেশতা মোতায়েন করবেন যারা বেহেশতে তার জন্য শহর ও সুরম্য অট্টালিকাসমূহ নির্মাণ করবেন, তার জন্য বৃক্ষরাজি রোপন করবেন। আর এ জান্নাত এমন এক স্থান যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কর্ণ কখনও শোনেনি এবং সৃষ্টি জগতের কেহ কোনদিন তা চিন্তাও করতে পারেনি। আর যদি এ বৎসরের কোন এক রাত্রে সে ইন্তেকাল করে, তবে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে এবং আল্লাহ পাক কুল হু আল্লাহু তিলাওতের কারণে প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে দান করবেন সত্তর জন হুর। (রুহুল বয়ান খন্ড ৮ : পৃষ্ঠা ৪০৩)। তৃতীয় : রাহমাত নাযিল হওয়ার কারণে কেননা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহ তা’লা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। (রুহুল বয়ান খ- ৮ : পৃষ্ঠা ৪০৩)। চতুর্থত : মাগফিরাত লাভ করার কারণে, কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’লা উক্ত রাত্রে, গণক, যাদুকর, হিংসুক, মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং বারবার যিনাকারী ব্যক্তি ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করে থাকেন। (রুহুল বয়ান খ- ৮ : পৃষ্ঠা ৪০৩)। পঞ্চমত : এ রাতে রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহ তা’লা শাফায়াতের ক্ষমতা দান করেছেন। ষষ্ঠত : আল্লাহ তা’লা এ রাতে বাহ্যিকভাবেই যমযমের পানি বৃদ্ধি করেছেন। আর তাতে আহলে হকের অন্তরে আল্লাহর মা’রিফাতের জ্ঞান বর্ধিত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। হাদীস শরীফে রয়েছে যে ব্যক্তি (নিম্নোক্ত) পাঁচ রাত্রে জাগ্রত থেকে এবাদত করবে তার জন্য বেহেশত অবধারিত (১) তারবিয়ার রাত অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৮ তারিখের রাত (২) আরাফার রাত (৩) কোরবানির ঈদের রাত (৪) ঈদুল ফিতরের রাত (৫) শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত। (রুহুল বয়ান খ- ৮ : পৃষ্ঠা ৪০৩)। তাফসীরে দুররুল মানসুর হযরত ইবনে আবু দ্দুনিয়া হযরত আতা বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যখন শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাত হয় মৃত্যুর দূত আজরাইল (আ.)-এর নিকট একটি কাগজ পেশ করা হয় এবং বলা হয় উক্ত তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের প্রাণ হরণ করুন, আর মানুষ কেহ বৃক্ষ রোপন করে, কেহ বিবাহ করে এবং কেহ বাড়িঘর নির্মাণ করে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। (দুররে মানসুর খ- ৫ : পৃষ্ঠা ৭৪০)। মালিকের রেওয়ায়তে খতীব কর্র্তৃক হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিতÑ আমি মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’লা চারটি রাত্রে তার কল্যাণ অবতীর্ণ করেন। (১) কোরবানির ঈদের রাত (২) ঈদুল ফিতরের রাত (৩) শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত/মৃত্যু রিযিক এবং যে হজ পালন করবে তা এ রাত্রে লিপিবদ্ধ ও নির্ধারিত করা হয় (৪) আরাফাতের রাত (ফজরের) আযান পর্যন্ত। (দুররে মানসুর খ- ৫ : পৃষ্ঠা ৭৪০)। বায়হাকী আরও উল্লেখ করেছেন, হযরত উসমান বিন আবিল আছ (রা.) নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত হয়, আল্লাহ তা’লা দুনিয়ার আসমানে মনোনিবেশ করেন তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, আছো কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছো কি কোন প্রার্থনাকারী? আমি তাকে দান করব। ব্যভিচারিনী এবং মুশরিক এ দু’ব্যক্তি ব্যতীত তিনি সকলকেই ক্ষমা করে দেন। (দুররুল মনসুর খ- ৫ : পৃষ্ঠা ৭৪১)। ইমাম বায়হাকী আরও উল্লেখ করেন যে, হযরত আলী (রা.) বলেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত্রে চৌদ্দ রাকআত নামাজ পড়তে দেখেছি। অতঃপর তিনি বসলেন এবং সূরা ফাতেহা, সূরা এখলাছ, সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি সূরা চৌদ্দবার করে পড়লেন, একবার করে পড়লেন আয়াতুল কুরসী ও সূরা তাওবার শেষ আয়াত। অতঃপর যখন তিনি অবসর নিলেন আমি এরূপ করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম, উত্তরে বললেন যে ব্যক্তি এরূপ আমল করবে তাকে বিশটি মকবুল হজের ও বিশ বছর নফল রোযা রাখার সমপরিমাণ সাওয়াব দান করা হবে। আর যখন দিনের বেলায় রোযা রাখবে, তার রোযা পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের মোট দু’বছর রোযা রাখার সমতুল্য হবে। (দুররুল মনসুর খ- ৫ : পৃষ্ঠা ৭৪২)। তাফসীরে কাবীর শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের চারটি নাম রয়েছে। (১) লাইলাতুল মুবারাকা (২) লাইলাতুল বরাত, (৩) লাইলাতুস ছক (৪) লাইলাতুর রাহমাহ। (তাফসীরে কাবীর খ- ২৭ : পৃষ্ঠা-২৩৭)। লাইলাতুল বরাত তথা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী প্রথমত: আল্লাহ পাক এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ সকল কাজের ফয়সালা করে থাকেন। দ্বিতীয়ত: এ রাতে এবাদতের ফজিলত অত্যাধিক যেমন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, এ রাতে যে ব্যক্তি একশ’ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তা’লা তার জন্য একশ’ জন ফেরেশতা মোতায়েন করবেন। ত্রিশজন তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবেন, ত্রিশজন দোযখের শাস্তি থেকে মুক্তি দিবেন, ত্রিশজন দুনিয়ার আপদ বিপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং দশজন শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন। তৃতীয়ত: রহমত অবর্তীণ হওয়া : যেমনÑ রাসূলে পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’লা এ রাত্রে বনী কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের সমপরিমাণ উম্মতকে দয়া করে থাকেন। চতুর্থত: মাগফিরাত লাভ : যেমন রাসূলে পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’লা গণক, হিংসুক, মদ্যপায়ী পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি এবং বার বার ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে এ রাত্রে ক্ষমা করে দেবেন। পঞ্চমত : আল্লাহ তা’লা রাসূলকে এ রাত্রে পরিপূর্ণ শাফায়াতের অধিকার দান করেছেন। আর তা হলো মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের তের তারিখের রাতে তার উম্মতের শাফায়াতের জন্য দোয়া করলেন আল্লাহ তা’লা এক-তৃতীয়াংশ দান করলেন, চৌদ্দ তারিখের রাত্রে দোয়া করলেন, আল্লাহ তা’লা দুই-তৃতীয়াংশ দান করলেন। অতঃপর পনের তারিখের রাতে দোয়া করলেন আল্লাহ তা’লা তাকে পরিপূর্ণ উম্মতের শাফায়াতের অধিকারী বানিয়ে দিলেন। (তাফসীরে কবীর খ- ২৭ : পৃষ্ঠা-২৩৮)।
শবে বরাত ও কোরআনঃ

পবিত্র কোরআনের ২৫ তম পারা ও ৪৪ নং সূরা “ দুখানের ” শুরুতে যে পাঁচটি আয়াত রয়েছে সে আয়াতগুলোই মূলত শবে বরাত ও পবিত্র কোরআন - এ বিষয়ক আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
১। তাফসীরে কবীর
২। তাফসীরে রুহুল মাআনী
৩। তাফসীরে রুহুল বায়ান
৪। তাফসীরে কুরতুবী
৫। তাফসীরে তবরী
৬। তাফসীরে বগবী
৭। তাফসীরে খাযেন
৮। তাফসীরে ইবনে কাসির ইত্যাদি
পবিত্র কোরআনের এ সমস্ত বড় বড় তাফসীর গ্রন্থগুলোর মাঝে বিচার বিশ্লেষণ করার পর অভিজ্ঞ আলেমদের নিকট এ কথা সুস্পষ্ট যে, উক্ত আয়াতের " লাইলাতুম মুবারাকাহ " (বরকতময় রাত) শব্দের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তাফসীর হলো শবে ক্বদর; শবে বরাত নয়। তবে সাথে সাথে জমহুর উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত এও যে, প্রথম মত অগ্রাধিকার পেলেও (অর্থাৎ শবে ক্বদর) দ্বিতীয় মতকে (শবে বরাত) উপেক্ষা করার কোন অবকাশ নেই।
শবে বরাত ও সাহাবায়ে কেরাম (রঃ)
শবে বরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীছসমূহের বর্ণনাকারিদের মধ্যে অনেক বড় বড় ( এক ডজনের মত ) সাহাবাও রয়েছেন। যাদের কয়েকজনের পবিত্র নাম নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
ক) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রঃ)
খ) হযরত আলী (রঃ)
গ) হযরত আয়শা (রঃ)
ঘ) হযরত আবু হুরায়রা (রঃ)
ঙ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর (রঃ)
চ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রঃ)
ছ) হযরত আউফ ইবনু মালিক (রঃ)
জ) হযরত মুআয ইবনু জাবাল (রঃ)
ঝ) হযরত আবু ছালাবাহ আল খুসানী (রঃ)
ঞ) কাছীর ইবনে মুররা আল হাজরমী (রঃ)
শবে বরাত ও তাবেয়ীঃ

শামের বিশিষ্ট তাবেয়ী যেমনঃ
ক) হযরত খালেদ ইবনে মা'দান (রহঃ)
খ) ইমাম মাকহূল (রহঃ)
গ) লোকমান ইবনে আমের (রহঃ)
প্রমূখ উচ্চমর্যাদাশীল তাবেয়ীগণ শা'বানের পনেরতম রজনীকে অত্যন্ত মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতেন এবং এতে খুব বেশী বেশী ইবাদত ও বান্দেগীতে মগ্ন থাকতেন বলে গ্রহণযোগ্য মত পাওয়া যায়।
সিহাহ সিত্তার বাইরেও অনেক ইমামগণ তাদের জগতবিখ্যাত বড় বড় হাদীসগ্রন্থে শবে বরাত ও তার ফজীলত নিয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ
১। ইমাম তাবরানী রচিত "আল কাবীর" এবং "আল আওসাত"
২। ইমাম ইবনে হিব্বান রচিত "সহীহ ইবনে হিব্বান"
৩। ইমাম বায়হাকী রচিত "শুআবুল ঈমান"
৪। হাফেয আবু নুআইম রচিত "হিলয়া"
৫। হাফেয হায়ছামী রচিত "মাজমাউয যাওয়ায়েদ"
৬। ইমাম বাযযার তাঁর "মুসনাদ" এ
৭। হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী রচিত "আততারগীব ওয়াত-তারহীব"
৮। ইমাম আহমদ তাঁর "মুসনাদ" এ
৯। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা
১০। হাফেয আব্দুর রাজ্জাক এর "মুসান্নাফ" এ
আমরা শবে বরাতের ফজীলত সম্পর্কিত বহু হাদীস দেখতে পাই।

শবে বরাতের ফজীলত সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে মুহাদ্দিসীনে কেরামেরা বরাবরই সনদসহ বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার মধ্যে কিছু হাদীসকে সহীহ, কিছুকে হাসান (সহীহের অন্তর্ভুক্ত), আর কিছুকে দুর্বল (কম মাত্রাসম্পন্ন) বলে রায় দিয়েছেন। মুহাদ্দিছগণ যদিও কোন কোন হাদীছের দোষ ত্রুটি আলোকপাত করেছেন কিন্তু কেউ সেগুলোকে ভিত্তিহীন জাল হাদীছ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ বলেন নি, এমনকি তারা কোন হাদীসের মতনকেও যঈফ বলেননি। উপরন্তু তারা উসূলে হাদিসের নীতি অনুযায়ী শবে বরাতের ফজীলত আছে বলে মত প্রদান করেছেন এবং এ রাতে সাহাবারা, সলফে সালেহীনরা ইবাদতে মগ্ন থাকতেন বলে তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
এসব মুহাদ্দিসীনদের মধ্যে অন্যতম হলেনঃ
১। হাফিয নুরুদ্দীন আলী ইবনে আবু বকর আল হাইসামী (রহঃ)
২। হাফিয ইবনে রজব আল হাম্বলী (রহঃ)
৩। ইবনু হিব্বান (রহঃ)
৪। আদনান আবদুর রহমান (রহঃ)
৫। ইমাম বায়হাকী (রহঃ)
৬। হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী (রহঃ)
৭। ইমাম বাযযার (রহঃ)
৮। ইমাম উকায়লী (রহঃ)
৯। ইমাম তিরমিযী (রহঃ)
১০। হামযা আহমাদ আয যায়্যান (রহঃ)
১১। ইমাম যুরকানী (রহঃ)
১২। আল্লামা ইরাকী (রহঃ) প্রমুখ।
উপরে উল্লেখিত সাহাবা, তাবেয়ীন, মুফাসসিরে কেরাম, মুহাদ্দিসীনরা ছাড়াও অনেক বড় বড় বুজুর্গানে দ্বীনও শবে বরাতের ফজীলত স্বীকার করেছেন এবং এ দিনে অনেক নফল ইবাদত করেছেন। যেমনঃ

১। উমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)
২। ইমাম আল শাফী (রহঃ)
৩। ইমাম আল আওযায়ী (রহঃ)
৪। আতা ইবনে ইয়াসার (রহঃ)
৫। হাফিয যয়নুদ্দীন আল ইরাক্বী (রহঃ)
৬। আল্লামা ইবনুল হাজ্ব আল মক্কী (রহঃ)
৭। ইমাম সুয়ুতী (রহঃ)
৮। ফিক্বহে হানাফীর ইমাম মুহাম্মদ ইবনু আলী আল হাসফাকী (রহঃ)
৯। ইমাম নববী (রহঃ)
১০। হাম্বলী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ আল্লামা শায়খ মানসূর ইবনু ইউনুস (রহঃ)
১১। আল্লামা ইসহাক ইবনুল মুফলিহ
১২। আল্লামা ইবনু নুজাইম হানাফী (রহঃ)
১৩। আল্লামা হাসান ইবনু আম্মার ইবনু আলী আশ-শারাম্বলালী আল হানাফী (রহঃ)
১৪। আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী (রহঃ)
১৫। আল্লামা আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী
১৬। শায়খ আলা উদ্দীন আবুল হাসান আল হাম্বলী (রহঃ)
১৭। মোল্লা আলী কারী (রহঃ)
১৮। ইমাম গাযালী (রহঃ)
১৯। হযরত বড়পীর আব্দুল ক্বাদের জ্বীলানী (রহঃ)
২০। ইমাম মুহাম্মদ আল জাযারী (রহঃ)
২১। মাওঃ ইসলামুল হক্ব মুযাহেরী (রহঃ)
২২। শায়খুল আদব হযরত আল্লামা এযায আলী (রহঃ)
২৩। ইমাম আহমাদ (রহঃ)
২৪। আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ)
২৫। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহঃ)
২৬। হাফিয মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনু আব্দির রহিম আল মুবারকপূরী (রহঃ)
২৭। মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ)
২৮। হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)
২৯। হযরত মাওলানা মুফতী আজীজুর রহমান সাহেব (রহঃ)
৩০। মুফতী আজম মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহঃ)
মুসলিম বিশ্বের মহামনীষীগণ কুরআন করীমের নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ, হাদীছের ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং প্রায় বড় বড় আলেম নিজেদের রচিত কিতাবাদীতে কেউ সংক্ষেপিত আকারে কেউ বা সবিস্তারে শবেবরাতের ফজীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাঁরা যেমন শবেবরাতে করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহ আপন আপন গ্রন্থে লেখেছেন তেমনি বাস্তব জীবনে রাতটিকে কিভাবে চর্চায় আনা হবে তার নমুনা দেখিয়ে গেছেন।

যেমনঃ

ক) পাঁচশত হিজরীর ইমাম গাযালী (রহঃ) রচিত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন ( الدين علوم احياء )
খ) ৬০০ হিজরীর প্রারম্ভে হযরত বড়পীর আব্দুল ক্বাদের জ্বীলানী (রহঃ) এর গুনিয়াতুত তালেবীন
( الطالبين غنية )
গ) ৭০০ হিজরীর ইমাম মুহাম্মদ আল জাযারী (রহঃ) এর আদদোয়াউ ওয়াস সালাত ফী যওইল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ ( والسنة القرآن ضوء فى والصلوة الدعاء )
ঘ) ৭০০ হিজরীর ইমাম আবু জাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে শারফুদ্দীন নববী (রহঃ) এর রিয়াজুস সালেহীন
( الصالحين رياض )
ঙ) এগারশত হিজরীর শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) এর মা ছাবাতা বিস সিন্নাহ ( بالسنة ثبت ما)
চ) তেরশত হিজরীর মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহঃ) রচিত মিফতাহুল জান্নাহ ( الجنة مفتاح )
ছ) চৌদ্দশত হিজরীর হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) এর ওয়াজ ও তাবলীগ ( وتبليغ وعظ )
জ) মুফতী আজম মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহঃ) এর হাকীকতে শবেবরাত ( براءت شب حقيقت )
অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থে লাইলাতুল বারাআত এবং মাহে শাবান প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শবেবরাতের তাৎপর্য, মাহাত্ম ও মর্যাদার উপর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাও (রহঃ) শবে বরাতের ফজীলতকে স্বীকার করেছেন। তিনি এও বলেছেন যে, সাহাবারা, তাবেঈনরা এবং সালাফরাও (পূর্ববর্তী) এই রাতের বিশেষ মর্যাদা দিতেন।
আবার আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর শিষ্য ইবনে রজব হাম্বলীও (রহঃ) এই রাতের ফজীলতের কথা উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে হাদীসের তাহকিক তথা বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সালাফী/আহলে হাদীছরা যার সবচেয়ে বেশি ভক্ত, যার কিতবাদি অনুবাদ করে তারা প্রচার করে থাকেন, সময়কালের বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ নাসিরউদ্দীন আলবানীও (রহঃ) শবে বরাতের কতিপয় হাদীসকে সহীহ বা হাসান বলেছেন।
ঠিক তেমনি তাঁরই শিষ্য বর্তমান যুগের খ্যাতিমান হাদীছ পর্যালোচক শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্বও শবে বরাতের ফজীলত সম্পর্কিত কিছু হাদীসকে সহীহ বা হাসান বলেছেন।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করে দাও, যেন তা পালন করতে পারি, আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত করে দাও, যেন এ থেকে বিরত থাকতে পারি।
আমীন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এরা হয় মূর্খ নয় জ্ঞানপাপী!!

কিছূক্ষ আগে একজন দেখলাম বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী রহ: কে বরছে তেলাপোকা!!!!!!!!!! নাউজুবিল্লাহ!

বোঝেন তাদের জ্ঞানে দৌড়! আর তাদের কাছে পূজ্য হল বিন বাজ!!! নামক বিকৃত রুচি মস্তিস্কের ফতোয়াবাজ ইহুদীর দালাল সউদ নামের সুবিধাবাদী পরিবারের স্বৈরচারিতা তাদের কাছে ইসলাম!!!!!

আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুন!!!

০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৩

আজিম পরদেশী বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই

২| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:২৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

সাফকাত আজিজ বলেছেন: বড় বিষয় হলো যদি কোনো একটা দিন কে ধার্য করে মানুষ নামাজ রোজা ও এবাদত বন্দেগী করে, বিশেক করে হালুয়া রুটি বিতরণ নিয়ে অনেকের চুলকানি, "আরে ব্যাটা হালুয়া রুটি বিলায়ে যদি মুসলমান-মুসলমান- ও অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে ভ্রাতিত্ব বারে তাতে ক্ষতিটা কি ?! আবার ওনারা নিজেদের বলে ফান্ডামেন্টালিস্ট"........................।

৪| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: যারা বিদাত মনে করে করতে দ্যান। ওরা হালুয়া রুটি না খাইয়া শিক কাবাব খাক, পয়সা না থাকলে পান্তাভাত। আমাগো কি। কান না দিলেই হইলো।

৫| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৪

অাবছার তৈয়বী বলেছেন: মাশাআল্লাহ খুব ভাল লিখেছেন। ওরা ফিতনাবাজ। ওরা সমাজদ্রোহী। ওরা নবী-ওলী বিদ্বেষী। ওরা সালফে সালেহীন এর চেতনা বিরোধী। ওরা ইসলামের কৃষ্টি-সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিরোধী। ওরা ধিকৃত বিকৃত খারেজীদের প্রেতাত্মা। ওরা কখনো ওহাবী, কখনো কওমী, কখনো সালাফী, কখনো মওদূদী কখনে আহলে হাদিস, কখনো তাবলীগি, কখনো হিজবুত তাহরীর, কখনো জেএমবি ইত্যাদি শিরোনামে আত্মপ্রকাশ করে। ওরা সমাজের ক্যান্সার। ওদের ওদের রুখতে হবে।

৬| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৮:৫১

ঢাকাবাসী বলেছেন: পড়তে পারিনি, বেশী বড় লেখা।

৭| ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২০

জোৎস্নাআলো বলেছেন: মাশাআল্লাহ খুব ভাল লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.