নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহ্নি শিখা

সাধারনই অসাধারন- এসো মানুষের কথা বলি

বহ্নি শিখা

I am ordinary man and banker in profession and love my man and land

বহ্নি শিখা › বিস্তারিত পোস্টঃ

খালের ধারের ছেলেটি

১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৫০

জাগরে সবাই মাঠে চল ।
শক্ত হাতে ধর হাল ।

জীবন খাতার স্মৃতির পাতাগুলি একটু মেলে ধরলেই যে সোনার ছেলের মুখ সফলতার সোনালী আভায় জ্বল জ্বল করে উঠে সেই ছেলেটিই কালী নদীর খালের ধারের -- বনি । পুরা নাম বনি বিশ্বাস, গরীব চাষী ঘরের ছেলে । বাবা আলী হোসেন বিশ্বাস একজন নিম্নবিত্ত সাধারন কৃষক- কৃষিই তার চৌদ্দ গুষ্ঠীর পেশা । মা মারিয়া বেগম , খুবই সরল সোজা পল্লী গেরামের গৃহিনী । আলী হোসেন বিশ্বাসের ছিল যৌথ অনেক বড় পরিবার -মা,বাবা ভাই বোন মিলে ১০/১২ জন । তার বাবা মাজাহার বিশ্বাস চাষ বাস ও গরু পুশে কোন রকম সংসার চালাত । তখন ছিল শুধু বুনা ধান, ধান ভাল না হলে সবাইকে উপোস করে না খেয়ে থাকতে হতো , গ্রামে খুব অভাব ছিল । ইরি ধান তখনও আবাদ হয় নি - কারণ জিকে ক্যানেল কাটা হয় ষাটের দশকে । কুমারখালী শহর খেকে গড়াই নদী পার হয়ে ৭/৮ মাইল দক্ষিণ পূর্বে কালী গাঁঙের তীরে ছিল মধুয়া গ্রাম , খুবই প্রত্যন্ত অজপাঁড়াগাঁ । কাঁচা রাস্তা আর নদী খালবিলে ভর্তি । লেখাপড়ার তেমন প্রচলন ছিল না । নদী খাল বিল পুকুরে প্রচুর নানা রকম মাছ পাওয়া যেত । কালী গাঙের সুস্বাদু টেংরা, চিংড়ি,পুটি,কালবায়োস, রুই,গজার মাছ, বাগুলাট খালের খলসা দাড়কো শরপুটি মাছ,লক্ষীপুরের পদ্মবিলের মাছ টাকি, শোল, মাগুর, শিং, বাইম মাছ, দর্গার বিল ও ছাইফোন দমদম খাল-ক্যানেলের বাম ও জিয়েল মাছের প্রচুর সমারহ ছিল। সত্যিকার অর্থে মাছে ভাতে বাঙালী । তবে ভাত কাপড়ের বেশ অভাব ছিল । আষাঢ় মাছ আসলেই ঘরে ঘরে অভাবের সাড়া পড়ে যেত ।

আলী হোসেন বিশ্বাস নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক হলেও তার ছিল বড় সংসার, পরিবারের লোকসংখ্যা প্রায় ১২/১৩ জন । আবার দুই সংসার মানে দুই বউ । ৬ ছেলে ও তিন মেয়ে । এত গুলো মানুষের ভাত যোগার করা ছিল কঠিন ব্যাপার । তিন বেলা ভাত যোগাতে আলী বিশ্বাসকে হিমশিম খেতে হত । অভাবের সংসারে তাই ঝগড়াঝাটি প্রায়ই লেগেই থাকত । ধান বানে চাল যোগাড় করা, তরকারী সংগ্রহ করা ও তেল লবণ এনে রাননা করা ছিল একটা কঠিন কাজ । সকালের নাস্তা ছিল মুড়ি বা পিয়াজ মরিচ দিয়ে পান্নতা ভাত, কখনও বা চাল পানি । অধিকাংশ সময় দুপুর ও রাতের খাবার ছিল শাক সবজি ডাল দিয়ে । মিঠ কুমড়া, চাল কুমড়া ও খেসারীর ডাল ছিল খুবই কমন । মাছ ভাত ছিল মাঝে মাঝে । বড় পরিবারে খাবার বিতরন করা ছিল কষ্টের ব্যাপার । এটা নিয়ে প্রায় সময়ই গানজাম লেগে যেত । নুন আনতে পানতা ফুরাই অবস্থা । এমনি অভাবের সংসারে তখনকার দিনে লিখাপড়া করা ছিল একটা বিলাসী ব্যাপার মাত্র । মধুয়া গ্রামে পঞ্চাশ ষাটের দশকে প্রাইমারী পাশকরা মানুষ ছিল হাতেগুণা মাত্র তিন চার জন-আলী হোসেন, সদর উদ্দিন ও আনসার আলী বিশ্বাস প্রমূখ । তারা কয়েকজন মিলে গ্রামের জমিজমার কাগজপত্র দেখাশুনা করত । গ্রামের সাধারন মানুষ জমির দলিলপত্র পর্চা নিয়ে হোসেনের বাড়ী চলে আসত তা দেখাতে । হোসেনের বড় পরিবার থাকলেও তাই তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল ও ছেলেমেয়েদর স্কুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । ছয় ছেলে ও তিন মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছেন , কেউ পড়েছে উপর ক্লাস পর্যন্ত আবার কেউবা চার পাঁচ
ক্লাস পড়ে ঝরে পড়েছে । ছয় ভাইয়ের মধ্যে বনি ছিল দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে মেধাবী । কিন্তু দেখতে সে ছিল লিকলিকে পাতলা চিকন ও মিষ্টি চেহারার । তার জন্মের নির্দিষ্ট দিন তারিখ খুঁজে না পেলেও ১৯৬৮ সনের পৌষ মাসের কোন এক রোববারে হবে হয়তবা । সে সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম গ্রহন করে নাই কিন্তু তার বুদ্ধি মেধা তাকে সোনালী ভবিষ্যতের দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।

একদিন দুদিন মাস বছর পেরিয়ে কালি গাঙের পানি অনেক গড়িয়ে বনির শৈশব কাল কেটে গেল নিভৃত পল্লী গাঁ মধুয়ার কাচারী পাড়ায় ছায়া সুনীবিড় কাজলা দীঘির বিশ্বাস বাড়িতে । পুকুরধাড়, কুয়ারপাড়, জিকি ক্যানেল, গাঙের ধার, মেঠোপথ, খালবিল,গলির ধারে ধুলাবালিতে খেলেধুলে পুকুর ক্যানেল গাঙে সাাঁতার কেটে মায়ের আঁচল ধরে পাচঁ ছয় বছর হয়ে গেল । কাকডাকা ভোরে উঠে বুড়ির গাছের আম কুড়ানো, বড়ো পুস্কনীর ধারের তাল কুড়ানো, গাঁঙের ধারে খুব সকালে রব্বেল আর ফটকে মাঝির তালোডুঙায় মাছ ধরা দেখা, সোনালী মিষ্টি রোদে ছোট চাচীর বারান্দায় বসে গুড় মুড়ি খাওয়া কি যে মজা ! দুপুরে কেনেলে ভাঙাপুল থেকে লাফ দিয়ে গোসল করা, বড় পুকরে সজনে ্আর বাদাম গাছ হতে ঝাপা গোছল করার কি যে আনন্দ । কখনও বা পুকুরের পানিতে খাপরামারা খেলা খেলতে যেয়ে দুষ্টামীর ছলে খেলার সাথী আসমানীর কপাল রক্তে ভিজিয়ে দিয়েছে- চাচার হাতে মার খাওয়ার ভয়ে পানার নীচে মুখ লুকিয়ে বিকেল সন্ধ্যা হয়ে যেত ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২৫

বহ্নি শিখা বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.