নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়। আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি, গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।

বাগান বিলাস

যাপিত জীবনকে নিয়ে ভাবনার অনেক উপাদান আছে। তবে সবকিছু ভাবতে পারি না। ভাবার সুযোগ পেয়েও অনেক অনুষঙ্গ নিজ প্রয়োজনে এড়িয়ে গেছি। অনেক বিষয়ে পরে ভাবা যাবে বলে ঐ পরিচ্ছেদে আর কখনও যাওয়াই হয়নি। তবে বারংবার আমি প্রকৃতির কাছে ফিরে গেছি। তার কাছে শিখতে চেয়েছি। প্রকৃতিও শেখালো ঢের। তবুও হয়তো আমার প্রত্যাশা ও শিখনফলে আছে হতাশা । ইচ্ছা ও প্রাপ্তির খতিয়ান খুব একাকী মিলিয়ে দেখি-কত কিছুইতো হলো না দেখা, হলো না কত শেখার শুরু । তবুও প্রাপ্তি কি একেবারেই কম? মোটেই না। পেয়েছিও ঢের। মনে তাই প্রশ্ন জাগে, যেদিন আমি আবার নিঃশ্বেস হয়ে যাব সেদিন কি প্রকৃতিও আমার মতো একা হয়ে যাবে? এর জবাবও প্রকৃতির বিবৃতিতেই পেয়েছি-না, ক্ষুদ্র জীবনের আঁচর প্রকৃতিতে বেশিক্ষণ মূর্ত থাকে না। অন্যকথায় প্রকৃতির মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দিন ভর করে থাকে না। তাই সে সহজ, তাই সে সমাদৃত! আমার বিবেচনায় একারণে প্রকৃতি সকল জীব ও জড়ের কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বাগান বিলাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শতাব্দীর শিল্প বিচিত্রা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৫



আমি সূচি শিল্পীর মতো দুই শতক কে জোড়া দিয়ে তৈরি করেছি
স্মৃতিময় সময়ের রুমাল।
সেকালের নকশীকাঁথার চেয়ে কম ফোঁড় নেই এখানে।
না দেখলে ঠিক বুঝানো কষ্টকর, কতো শতো কথার ডকুমেন্ট্রি ওটা।
আমার রুমালটা মাঝে মধ্যে বের করে রোদে মেলি,
ভ্যাবসা ভাবটা কেটে আবার মচমচে হয়
আমি সেলাইগুলোতে হাত বুলাই।

এইতো এখানে, নব্বই দশকের প্রধম বছর
কতো স্মৃতিময়। এখানেই ফুটেছিলো হলুদ করবি
বাঁশপাতা পোস্টারের নীচে গগনবিদারী মানুষের শ্লোগান
এইযে এই বাঁকে বাংলাদেশে জলোচ্ছ্বাসের মতো এসেছিল গণতন্ত্র।

লক্ষ্য করুন এখানে, এই জমিনে-
গফুর ব্যাপারির শেষ সম্বল ছিল একটা দুধেল গাই।
সে দুধ তাদের খাওয়ার সামর্থ ছিল না, বরং দুধটুকু বেচেই চলতো তাদের সংসার।
হঠাৎ ধরা পড়লো বৌয়ের অসুখ, অ্যানিমিয়া।
উপায়ন্ত না থাকায় সে গরুই বেচতে হলো।
হাটে গরু বেচে ফেরার পথে সে দিন তুমুল বৃষ্টি।
গফুরের তালি দেয়া ছেড়া ছাতায় বধ মানেনি শ্রাবণের অবাধ্য জল।
বৃষ্টি থেকে মাথাটা একটু আড়াল করতে এই বকুলতলায় সে একটু থামে।
দেখুন এখানে, এইযে এখানেই-
তার সব টাকা কেড়ে নেয় ওঁত পেতে থাকা হাইজাকার রা।
চোখে সমুদ্র ধরে ছেড়া শার্টে ভেজা বুকে সে নিরবে ফিরে এসেছিল ঘরে।
তিন দিন পর মারা যায় তার বৌ।
কোন সংবাদপত্র তা ছাপেনি। আমি যত্ন করে তা রুমালে তুলে রেখেছি।

এখানে তাকান। সুতার এ কাজটি বেশ মজাদার ।
মনে আছে, গত শতকের শেষ দিকে বিশ্বে আতংক ছড়ালো ওয়াইটুকে?
সবাই বললো, পরমানু বোমার উপর মানুষ হারাবে নিয়ন্ত্রণ।
সে দিনের মার্কিন প্রেসিডেন্টের কপালের ভাঁজ আমি সযত্নে তুলে রেখেছি এ রুমালে।
সুখের খবর কোন বিপত্তি ছাড়াই নতুন শতকের প্রথম প্রহরে
মানুষ আবারো পৃথিবী কে শাসনের ক্ষমতা ফিরে পায়।
তারা সব উদ্বেগ যেন বন্দী করে রেখেছিল শ্যাম্পেনের বোতলে
ওরা ওটা খুলে দেয়।
মস্কো, ম্যানহাটান, সিডনি, নিউইয়র্কের আতশবাজিতে জন্মলাভ করে নতুন শতাব্দী
আমার রুমাল সেই শতাব্দীর জন্ম ইতিহাস ধারণ করে রেখেছে।

এই ভাঁজটি হতভাগা অভিবাসী কুর্দি শিশু আয়লানের,
ভূমধ্যসাগরের বালুকাবেলায় তার মৃতদেহের উদ্দেশ্যে দেয়া কোটি মানুষের
মানবিক উচ্চারণের ফুলগুলো তুলে রেখেছি এখানে।

আমার রুমালে খুব যত্নে লিখে রেখেছি ইউএনএইচসিআরে এযাবৎ স্থান না পাওয়া
সকল উদ্বাস্তুর নাম এবং দুই শতাব্দী ধরে অস্তমিত সূর্যের ঠিকানা।

অনুগ্রহ করে কেউ কী আমাকে যোগাযোগ করে দিবেন ফ্রান্স সরকারের সাথে?
আমার মৃত্যুর পর প্রিয় রুমালটি ল্যুভর মিউজিয়ামে রেখে দিতে চাই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

খুবই ভাল লাগল কবিতাটি। খুব সুন্দর রুমালের বুনন! দ্রোহী মনের খেদ মেশানো তীর্যক কবিতা বাণ! দুর্দান্ত!

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০

বাগান বিলাস বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। দীর্ঘ কবিতা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.