নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়। আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি, গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।

বাগান বিলাস

যাপিত জীবনকে নিয়ে ভাবনার অনেক উপাদান আছে। তবে সবকিছু ভাবতে পারি না। ভাবার সুযোগ পেয়েও অনেক অনুষঙ্গ নিজ প্রয়োজনে এড়িয়ে গেছি। অনেক বিষয়ে পরে ভাবা যাবে বলে ঐ পরিচ্ছেদে আর কখনও যাওয়াই হয়নি। তবে বারংবার আমি প্রকৃতির কাছে ফিরে গেছি। তার কাছে শিখতে চেয়েছি। প্রকৃতিও শেখালো ঢের। তবুও হয়তো আমার প্রত্যাশা ও শিখনফলে আছে হতাশা । ইচ্ছা ও প্রাপ্তির খতিয়ান খুব একাকী মিলিয়ে দেখি-কত কিছুইতো হলো না দেখা, হলো না কত শেখার শুরু । তবুও প্রাপ্তি কি একেবারেই কম? মোটেই না। পেয়েছিও ঢের। মনে তাই প্রশ্ন জাগে, যেদিন আমি আবার নিঃশ্বেস হয়ে যাব সেদিন কি প্রকৃতিও আমার মতো একা হয়ে যাবে? এর জবাবও প্রকৃতির বিবৃতিতেই পেয়েছি-না, ক্ষুদ্র জীবনের আঁচর প্রকৃতিতে বেশিক্ষণ মূর্ত থাকে না। অন্যকথায় প্রকৃতির মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দিন ভর করে থাকে না। তাই সে সহজ, তাই সে সমাদৃত! আমার বিবেচনায় একারণে প্রকৃতি সকল জীব ও জড়ের কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বাগান বিলাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

জতুরসে রাঙাব তোমার পা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

দেখা হওয়াটা আকস্মিক, অনেক বছর বাদে।
আমি টাউন সার্ভিসের বাসে শিক ধরে লটকে আছি কোনোমতে
বেজায় ভিড়, ঢাকা শহরে এত লোক যে কোথা থেকে
আসে, আল্লা মালুম।
রামপুরা বাস স্টপে তুমি মলিন ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে উঠে এলে।
আনুমানিক বিশ বছর পর তোমাকে দেখে যারপরনাই চমকে গেলাম
বলা যায় আকাশ থেকে পড়লাম। আশাহত হলাম তারচেয়ে বেশি।
ধনকুবের বাবার ননির পুতুল সেই তোমার একসময়ের প্রচন্ড অহংকারী
মাখন-পেলব ধবধবে হাতে লাবণ্য নেই, জৌলুসও নেই।
তাতে ধরা বেমানান অফিস ফাইল। যা তোমার ঐশ্বর্য, অতীত, স্বপ্ন ও
প্রত্যাশার সাথে একদম যায় না। হিসেব মেলাতে পারি না কোনোমতে।
এ কেমন বাস্তবতা, মনে ধক করে উঠে। ভুল দেখছি না তো?

শুনেছিলাম ভালো বিয়ে করেছ।
সাত মহলা প্রাসাদে বসবাস, বিলাসী জীবন তোমার।
দামি গাড়ি হাঁকিয়ে নিয়মিত জিমে যাও
দেশের নামকরা নিউট্রিশনিস্টের ডায়েট চার্ট
আর বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডের প্রসাধন
পার্টিতে আর দশজনের চেয়ে তোমাকে আলাদা করে চেনায়।

কিন্তু চলন বলন তো তা বলে না। একী হাল?

মাধবীলতা আমাকে দেখেছে কি?
আমি আমার মধ্যে অড়াল হয়ে শামুকের মতো আত্নগোপনে যাওয়ার
উপায় খুঁজছিলাম।
তুমি আমাকে চমকে দিয়ে হুট করে ডেকে উঠলে আমার নাম ধরে-
ছুপা, কী খবর তোমার? এতো দিন পর! কোথায় আছ?
পাশের লোকেরা ভিড়ে, ভাদ্র গরমে ভিজে কাতর।
তারা এমন প্রসন্ন আলাপচারিতায় বিরক্ত হয়।
যাত্রীরা বিরক্তি নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে অপরাধী দেখার মতো আমাকে দেখে।
থাকছ কোথায়? কী কর? মাধবীলতার ফের প্রশ্ন।
আমার মুখে কোনো শব্দ আসে না। ভাষারা হয়ে যায় অচেনা।
আমি দেখি অহংকার উপচে পড়া তোমার কোঁকড়ানো চুলগুলোও
দারিদ্রতার কাছে হার মেনেছে। ওদের আর আগের মতো শানশওকত নেই।
তোমার উদাসীন কেশগুচ্ছে যেন ভর করছে দেদীপ্যমান নাটকীয়তা।
তোমার অভিজাত চিবুকে পরিশ্রান্ত জীবনের ছাপ।
দেখেই বুঝা যায় সংসারের ঘানিতে তুমি আমার মতোই বিপর্যস্ত।
তোমার পরিবর্তন দেখে আমার ভেতর নদীর চর ভাঙার মতো একে একে
ভেঙে যাচ্ছিল পুষে রাখা সব কল্পনার চাঙড়। স্বপ্ন ভঙ্গের নৈরাজ্যে
আমি নিজেই কেঁপে উঠছিলাম।

ক্যাম্পাসে তোমাকে চিনত সবাই একনামে।
মাধবীলতা।
মাধবীলতা ছিল একটা ব্র্যান্ড। তারুণ্যের ক্রেজ।
তোমার একটু কৃপাদৃষ্টি পাওয়ার জন্য চাতক পাখির মতো
হা হয়ে থাকত সবাই।
সাইকোলজির ক্রিসেন্ট, ফিজিক্সের রবিউল, ফুটবলার সোহরাব,
ছাত্রনেতা আলফাজ-কে ছিল না তোমার সমৃদ্ধ তালিকায়!
ওদের তুলনায় আমি ছিলাম একেবারে নস্যি।
সত্যি বলতে কী, ওদের সাথে আর্থিক সক্ষমতায়, আধুনিকতায়
কিংবা প্রেমিক যোগ্যতায় আমার কোনো
তুলনাই চলে না। সঙ্গতকারণেই আমার প্রেম ছিল মোড়কে আবৃত,
অনেকটা ডুমুরের ফুলের মতো, অদৃশ্য।
তবে তুমি সতর্ক হরিণীর মতো আমাকে ঠিকই বুঝতে,
নারীরা নাকি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনেক কিছু দেখে।
সারাদিন ক্লাস করে, টিউশনি করিয়ে সন্ধ্যায় লাইব্রেরির সামনে
যেতাম তোমাকে দূর থেকে এক নজর দেখার জন্য।
আমি মুগ্ধ চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
মাঝে মাঝে মনে হতো-
না, খুব ইচ্ছে হতো তুমি যে বেঞ্চটায় বসে চা খাও,
সেখানে বসে পায়ের উপর পা তুলে একদিন তুমি চা খাবে
আর আমি তোমার বিনা অনুমতিতে
চারুকলার গুণজ্ঞ ছাত্রের মতো জতুরসে রাঙাব তোমার পা।
তা সম্ভব ছিল না।
কারণ বন্ধু বেষ্টিত আড্ডায় তুমি থাকতে রানি মৌমাছির মতো, সকলের
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এরই কোনো এক ফাঁকে তুমি অব্যাখ্যেয়
আড়নয়নে আমাকে দেখতে।
মাফ কর মাধবীলতা
এ আমার চোখের ভুলও হতে পারে।
অথবা এটা তোমার নিছক একটা বালসুলভ খেলাও হতে পারে।
তবে এর স্থিতিকাল হতো মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
মাধবীলতা, সেটাই ছিল তোমার কাছে আমার
শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, শ্রেষ্ঠ শুভাশিস।
আর প্রায় সাথে সাথেই তুমি হয়ে যেতে হাড়হদ্দ বখিল, আকার ইঙ্গিতে
আমার পুরো সন্ধ্যাকেই তাচ্ছিল্যের এক তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে।

তোমার সাথে চলতে চলতে এক বর্ষায় ভিজব বলে
মেঘ দেখলেই কদম ফুলের মতো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম।
কিন্তু তোমার এক জলবিরোধী ছাতার কাছে
আমার সে অভীষ্ট ইচ্ছের বরাবর পরাজয় ঘটেছে।
তুমি চাওনি বলে তোমার জন্য মেঘ থেকে বৃষ্টিকে
কেড়ে নেয়ার সৌভাগ্য আমার কোনো কালেও হয়নি।

একই ক্লাসে পড়লেও তোমার সাথে নিয়মিত দেখা হতো না।
তুমি ক্যাম্পাসে নিয়মিত এলেও ক্লাসে নিয়মিত ছিলে না।
তোমার ভাবটা ছিল-আমার ক্লাস না করলেও চলে।
আত্মঅহমিকায় এটাকেও তুমি এক প্রকার ক্ষমতা মনে করতে।
সেকেন্ড ইয়ারে তুমি ননকলেজিয়েট হয়েও অদৃশ্য হস্তক্ষেপে
পরীক্ষায় বসতে পেরেছিলে। আমি কিন্তু তোমার এ দুঃসংবাদ
শুনে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
তোমার রূপ-রুচি-ফ্যাশন-ব্যক্তিত্ব, তোমার দম্ভ, তোমার ক্ষমতা
সবকিছুর সমন্বয়ে
তুমি ছিলে অনন্যা, তুমি ছিলে যেকোনো বিচারে এক নম্বর।
হঠাৎ কী হয়েছে তোমার মাধবীলতা?
ছন্দপতন কেনো? জুয়ায় হেরেছ কি?
আর জুয়ায় হারলে মানুষের এমন হয়?
আমার জানা নেই সত্যিই।

তুমি বললে, যাক দেখা হলো তাহলে শেষে। আসলে ছোট বাংলাদেশ।
কোনো না কোনোভাবে দেখা হয়েই যায়। আমি একটা ছোটখাটো চাকরি
নিয়েছি বিটিভিতে। পেটেভাতে চলে যায়। আমার দুটো ছেলে। বড়টা
ক্লাস ফোরে। ওদের নিয়েই কেটে যায়। সময় করে এসো।
নিজের সাথেই আলাপচারিতা শুরু করি।
পেটেভাতে চাকরি? এর মানে কী?
মাধবীলতাকে জীবন চালাতে তবে কী চাকরি
করতে হয়? এও বিশ্বাস করতে হবে?
আর ছেলেদের নিয়েই কেটে যায় সময়, এরই বা মানে কী?
সংসার?
আমার হিসেব কিছুই মেলে না।
আমি মুখ বন্ধ রেখে নিজের মধ্যে বেলুন ফাটানো শব্দে চিৎকার করি-
না, এ হয় না মাধবীলতা। তোমার সাথে আজ আমার দেখা হয়নি।
কোনোমতেই এ আমার মাধবীলতা হতে পারে না।

আমার পাশের সিটটা ফাঁকা হলো।
মাধবীলতা আমাকে সেখানে বসার জন্য অনুরোধ করল।
আমি নিজে না বসে তাকে বসিয়ে দিলাম।
মাধবীলতার চোখ ভিজে ওঠে। চোখ মুছে বলে, কী করছ?
-তেমন কিছুই না। ব্যবসা দাঁড় করাতে চেষ্টা করছি,
মার খেয়েছি দুবার।
সবশেষে শেয়ার বাজারে। হচ্ছে না।

আমার টিকাটুলি যাওয়ার কথা। আমার পা অসার হয়ে আসছে।
আমি পরের স্টপেজে পকেটমারের মতো নিরবে নেমে যাই,
উদ্দেশ্যবিহীন।
তাকে আমি কোনো ঠিকানা বলি না।
মাধবীলতাকে বলার মতো কোনো ঠিকানা আমার মনে আসে না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার মাঝে ভয়ানক এক হিংসুক বসবাস করছে

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৫

বাগান বিলাস বলেছেন: হা হা হা। মেনে নিলাম আমি হিংসুক।

আর মাধবীলতা?
সে ভালো থাকুক।

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৩

ওমেরা বলেছেন: মানুষের জীবনে ছন্দ- পতন ঘটতেই পারে।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

বাগান বিলাস বলেছেন: স্বাভাবিক। কোনো কোনো ছন্দপতন জীবনকে তাৎপর্যময় করে তোলে।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: মাধবীলতা নামটা সুন্দর । নামেই তার রূপ লাবন্য প্রকাশ পাচ্ছে । বাস্তবতা এমনি । সময়ের এক পিঠে সে ক্ষমতাবান আরেক পিঠে নিঃস্ব একা ।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪১

বাগান বিলাস বলেছেন: সঠিক বলেছেন। সময় বড়ই নির্মম। মৃত্যুকালে হলেও সে তা মানুষকে দেখিয়ে দেয়।

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১২

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: পড়তে শুরু করে শেষ করতেই হলো।
জীবন বড় অদ্ভুত।
কখন যে জীবনে কি নেমে আসে তা আমরা কেউ ধারনাও করতে পারিনা।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২২

বাগান বিলাস বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.