নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়। আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি, গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।

বাগান বিলাস

যাপিত জীবনকে নিয়ে ভাবনার অনেক উপাদান আছে। তবে সবকিছু ভাবতে পারি না। ভাবার সুযোগ পেয়েও অনেক অনুষঙ্গ নিজ প্রয়োজনে এড়িয়ে গেছি। অনেক বিষয়ে পরে ভাবা যাবে বলে ঐ পরিচ্ছেদে আর কখনও যাওয়াই হয়নি। তবে বারংবার আমি প্রকৃতির কাছে ফিরে গেছি। তার কাছে শিখতে চেয়েছি। প্রকৃতিও শেখালো ঢের। তবুও হয়তো আমার প্রত্যাশা ও শিখনফলে আছে হতাশা । ইচ্ছা ও প্রাপ্তির খতিয়ান খুব একাকী মিলিয়ে দেখি-কত কিছুইতো হলো না দেখা, হলো না কত শেখার শুরু । তবুও প্রাপ্তি কি একেবারেই কম? মোটেই না। পেয়েছিও ঢের। মনে তাই প্রশ্ন জাগে, যেদিন আমি আবার নিঃশ্বেস হয়ে যাব সেদিন কি প্রকৃতিও আমার মতো একা হয়ে যাবে? এর জবাবও প্রকৃতির বিবৃতিতেই পেয়েছি-না, ক্ষুদ্র জীবনের আঁচর প্রকৃতিতে বেশিক্ষণ মূর্ত থাকে না। অন্যকথায় প্রকৃতির মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দিন ভর করে থাকে না। তাই সে সহজ, তাই সে সমাদৃত! আমার বিবেচনায় একারণে প্রকৃতি সকল জীব ও জড়ের কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বাগান বিলাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক জীবন্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস।

১৮ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬


২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে একুশে পদকপ্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ৭১’র এক বীরত্বগাঁথার নায়ক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস আজ ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে জয়পুরহাট জেলার মহুরুল গ্রামে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃুত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

১৯৩০সালের ১ জানুয়ারি জয়পুরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এই শিক্ষাবিদ। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএ পাশ করে করাচীর সেন্ট্রাল সরকারী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ফলিত গণিতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করে করাচীতে নাজিমাবাদ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে ১৯৬৭ সালের ১৬ আক্টোবর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন।
.

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যা, তান্ডবলীলা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা দেখে অধ্যাপক মজিবর রহমান অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। ১০ মে ’৭১ মজিবর রহমান তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা নষ্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্মিদের ক্যাম্পে পরিণত করবার জন্য একটি ইংরেজিতে প্রতিবাদ লিপি দেন এবং মুসলমান হয়ে আর এক মুসলমানের উপর পাকবাহিনীর নির্মমতা দেখে নিজের নাম পরিত্যাগ করে নতুন নাম দেবদাস ধারণ করেন। প্রতিবাদ লিপি বা চিঠিতে তিনি পূর্বের নাম উল্লেখসহ পরিবর্তিত নাম দেবদাস উলে¬খ করেছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণহত্যাকালীন সময়ে তিনি যেখানে অবস্থান করবেন তার ঠিকানাও চিঠিতে উল্লেখ করেন। চিঠিতে তিনি লিখেন:

“This is to inform the authority that I am going to leave the Campus since the University Campus has , at the moment, been degraded to the state of military camp. I may come to the campus when university regains its status of sanctity and starts functioning as a university in true sense and when ...I hope to be kept informed about situation here in the address noted below, where I hope to spent these days of calamity, genocide and freedom movement. Please note change of my name and new name should be used in future communications.”
.

প্রশাসনিক তৎপরতায় অতিদ্রæত অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাসের চিঠি পৌঁছে যায় পাকিস্তানি সামরিক দপ্তরে। অবশেষে ১২ মে ১৯৭১ এই প্রতিবাদী অধ্যাপকের জীবনে নেমে এসেছিল সেই নির্মম পরিণতি, ঐদিন অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাসকে পাকিস্তানি আর্মিরা ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে যায়। রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে প্রায় চারমাস ধরে তাঁর উপর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর অকথ্য নির্যাতনে অধ্যাপক রহমান যখন বদ্ধ উন্মাদপ্রায় তখন ৫ সেপ্টেম্বর ’৭১ তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয় নাটোর ক্যাম্প থেকে, পাকসামরিক শাসকের সাধারণ ক্ষমার প্রেক্ষিতে। মুক্তির পর তিনি চলে যান জয়পুরহাটে।
.

দেশ স্বাধীন হলে অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে ৪ ফেব্রæয়ারি ১৯৭২। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর উন্নত চিকিৎসার অভাব, নাম পরিবর্তনের কারণে বেতনসহ আর্থিক পাওনাদি আদায়ে বিড়ম্বনা ও আইনি জটিলতা এবং ৭১ এর পাশবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে তিনি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। বেঁচে থাকলেও তিনি ছিলেন অনেকটা স্মৃতি বিভ্রম, যেন জীবন্ত শহীদ অর্থাৎ জীবিত থেকেও মৃত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অকৃতদার এই বুদ্ধিজীবী এভাবেই বেঁচে ছিলেন।
.

১২ আগস্ট ১৯৯৮ তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ত্যাগ ও অবদানের জন্য তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করে। ২০০৯ সালে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকাশক মফিদুল হক অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস উপর নির্মিত করেন একটি অসামান্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য তথ্যচিত্র ‘কান পেতে রই’ । স্বাধীনতা লাভের ৪৩ বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করেন যা তাঁর জন্য ও তাঁর পরিবারের জন্য এক বিরল পাওয়া। অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস কে নিয়ে ড. মো. হাসিবুল আলম প্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমদ খান সম্পাদিত ও সময় প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত “ জীবন্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান দেবদাস” শিরোনামে একটি গ্রন্থ ২০০১ সালের বই মেলায় প্রথম প্রকাশ পায়।

অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাসের মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও তাঁর উপর পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বিবরণ পাওযা যায় হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: অষ্টম খন্ড’র ৫৭৯ থেকে ৫৮২ পৃষ্ঠায় “অধ্যাপক মজিবুর রহমান আজ দেবদাস হয়ে বেঁচে আছেন” শিরোনামে নজরুল ইসলাম বুলবুলের লেখায়।

”যখন ক্রীতদাস: স্মৃতি ৭১ “ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ এ নাজিম মাহমুদ রচিত ৬০ থেকে ৬৪ পৃষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের সময় অধ্যাপক মজিবর রহমানের বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতা ও তার ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা পাওয়া যায়।

এছাড়া তাকে নিয়ে নাজিম মাহমুদ নির্মান করেছেন নাটক ‘ঠিকানা কোথায়’ যা বিটিভিতে ১৯৯৭ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রচারিত হয়েছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। এই বুদ্ধিজীবী মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

২| ১৮ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে মোল্লারা ও জামাত পরোক্ষভাবে মাদ্রাসায় পরিণত করায়, এই শিক্ষক ওখানে স্হান পায়নি পরে।

৩| ১৮ ই মে, ২০২০ রাত ৮:২২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। এই

৪| ১৮ ই মে, ২০২০ রাত ৮:২৩

আমি সাজিদ বলেছেন: স্মরণ করি সূর্য সন্তানদের, যাঁদের ত্যাগের ফলে স্বাধীনতা। উনার মৃত্যু সংবাদ শুনে খুব খারাপ লাগলো।

৫| ১৯ শে মে, ২০২০ রাত ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.