নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ ।। দীনবন্ধু মিত্রের "নীল দর্পণ"

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩


বইয়ের নামঃ নীলদর্পণ
লেখকঃ দীনবন্ধু মিত্র
ঘরানাঃ নাটক
মূল্যঃ একশত টাকা মাত্র।

প্রাসঙ্গিক কিছু কথাঃ
বাংলার স্বাধীনতা সূয অস্তমিত হওয়ার শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে।সময়কাল ১৮৬০ ইং।বের হয় 'নীল দর্পণ' নাটক।প্রথমে নাম ছিল "নীল দর্পনং নাটকং'।দীনবন্ধু মিত্রের পরিবর্তে ছদ্মনামে বেরিয়েছিল বইটি।

স্বাদেশিকতা, নীল বিদ্রোহ ও সমসাময়িক বাংলার সমাজ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে লেখা এ বইটি পরবর্তীতে ১৮৬১ ইং সনে "Nill Durpan,Or the indigo planting miror" নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়,প্রকাশক ছিলেন রেভারেন্ড জেমস লঙ।

জেনে রাখা ভালো,
১। এটিই প্রথম বাংলা নাটক,যা ইংরেজীতে অনূদিত হয়।
২। কোন বিদেশী প্রকাশক দ্বারা প্রকাশিত কোন বাংলা বইয়ের নামও "নীল দর্পন"।
৩। বিদেশী পত্রিকায় প্রথম কোন বাংলা বইয়ের উপর সমালোচনামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার দাবিদারও এই বইটি।

এই বইটির ইংরেজি অনুবাদ ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হওয়ার পর এবং দেশ বিদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন ও সমালোচনা শুরু হলে সরকার শেষ পর্যন্ত নীল কমিশন স্থাপন করতে বাধ্য হয়।যা নীলকরদের দৌরাত্ম্য থেকে দরিদ্র কৃষকদের বাচাতে সহায়ক হয়।

কাহিনী সংক্ষেপঃ
গ্রামের নাম স্বরপুর।গোলকচন্দ্র বসু এ গ্রামেরই সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত ও গৃহস্থ সম্পন্ন একজন।স্ত্রী সাবিত্রী, দুই পুত্র নবীন মাধব ও বিন্দু মাধব এবং দুই পুত্রবধূ সৈরিন্ধ্রী ও সরলতাকে নিয়ে তার সুখের সংসার।নবীন মাধব উদারচেতা,প্রজাবৎসল ও হৃদয়বান পুরুষ;বাড়িতে থেকেই বিষয়কর্মের দেখাশোনা করেন।তার ছোট ভাই বিন্দুমাধব কলকাতার কলেজে পড়াশোনা করে।

এই পরিবারের বাইরেএ আরেকটি পরিবারের কথাও নাটকে উল্লেখ আছে,সাধুচরনের পরিবার।স্ত্রী রেবতী, কন্যা ক্ষেত্রমনি আর ভাই রাইচরনকে নিয়ে তাদের সংসার।এই সংসারগুলোর সুখ স্থায়ী হয়নি বেশিদিন!কেন?

"বাড়া ভাতে ছাই তব বাড়া ভাতে ছাই
ধরেছে নীলের যমে আর রক্ষা নাই।"

ইংল্যান্ডে নীলের চাহিদা বেড়ে গেলে, বহু নীলকর ইংল্যান্ড থেকে এদেশে আগমন করে।তেমনি এক নীলকরের গ্রাসে পরিণত হয় তাদের ফসলী জমিগুলো।কিন্তু সমস্ত ভালো জমিতে নীল বুনলে তাদের সারা বছরের ভাত জুটবে কি করে?

নবীন মাধব কিছু জমি ফসলের জন্য ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালে নীলকর সাহেব গোলকবসুর নামে মামলা করে।কারন বাবাকে গ্রেফতার করলেই নবীন মাধব গোল বাধাতে সাহস করবেনা।বিচারের সম্মুখীন করা হয় গোলক বসুকে।কিন্তু বিচারের নামে হয় প্রহসন!শেষ পর্যন্ত লজ্জা আর লাঞ্চনা মাথায় নিয়ে কারাগারেই মৃত্যুবরন করে গোলক বসু।

ওদিকে বিবাহিত ক্ষেত্রমনির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে নীলকর সাহেবের।জোর করে কুঠিতে তুলে নেয় তাকে।সতীত্ব নাশের চেষ্টাকালে নবীন মাধব কয়েকজন অনুগত প্রজাকে নিয়ে ক্ষেত্রমনিকে উদ্ধার করে।কিন্তু তারপরও সাহবের লাথির আঘাতে সন্তান সম্ভাব্য ক্ষেত্রমনির অবস্থা ক্রমশই খারাপের দিকে যেতে থাকে।

বাবার শ্রাদ্ধের আগ পর্যন্ত পুকুর পাড়ের জমিতে নীল না বোনার জন্য নীলকরের প্রতি অনুরোধ জানায় নবীন মাধব,৫০ টাকা সেলামিও দিতে চায়।কিন্তু প্রতি উত্তরে নীলকর সাহেব মৃত বাবার উদ্দেশ্যে হীন মন্তব্য করলে ক্ষীপ্ত হয়ে নবীন মাধব সাহেবের বুকে পদাঘাত করে।ভাড়াটে লাঠিয়ালরা নবীন মাধবকে ঘিরে ফেললে নীলকর সাহেব লাঠি দিয়ে নবীনের মাথায় আঘাত করলে মাটিতে পড়ে যায় সে।

এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে ঘটনা,শেষ পর্যন্ত এক ট্রাজিক পরিনতির মাধ্যমে শেষ হয় নাটকের শেষ অঙ্ক।

পড়ার আমন্ত্রন রইল।

পড়া শেষ হলে, আপনার হয়তো সাদা চামড়ার নাক উচু ইংরেজদের বারবার উচ্চারিত "শালা" আর "বাঞ্চত" শব্দটিকে পায়ের জুতো কিংবা মুখের থুতু বানিয়ে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করবে সহস্রবার।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০

ক্লে ডল বলেছেন: ভাল লাগল আপনার বুক রিভিউ। :)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :)

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

খোলা মনের কথা বলেছেন: তখনকার সময়ের সাধারন মানুষের চিত্র। এখন ভাবলে গাঁ শিউরে ওঠে। সুন্দর লিখেছেন।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: গাঁ শিউরে উঠার মতই গল্প। পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে :)

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

জগতারন বলেছেন:
এই নাটকের কিছু অংশ আমাদের বাংলা পাঠ্য বইয়ের সিলেবাসের অংশ ছিল। সম্ভবত ক্লাস সেভেন অথবা এইট হবে। তখনি জানতে পারি নীল চাষের অপকারিতা সমন্ধে। আমি ছোট থাকতে আমার গ্রামের বয়জোষ্ঠ মুরব্বীদের কাছেও শুনেছি নীল চাষ ও নীলকদের অত্যাচারদের দৌরাত্মের কথা। যে জমিতে নীল চাষ করা হত সে জমিতে অন্য ফসল হতো না, দুই/তিন বছর বর্ষা (প্লাবন) হওয়ার পরে হয়তো ফসল ফলিত।
আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদের পাড়ে বন্দর; টেকের হাট-এ এই অত্যাচারী নীলকরদের কুঠী (নীলকুঠী) জমিদারদের কাচারি ঘর অবস্থিত ছিল। আমাদের বংশ পিতা শ্রদ্ধেয় এবাদুল্লাহ সাহেব আমাদের এলাকা থেকে এদের তারিয়ে দেয় এবং তাদের জমিদারি ও জায়গা দখল করে নেয়। অত্যাচারিরা কক্ষনও তামাদী হয়না কারন তারা অভিশপ্ত ও পাপিষ্ঠ আত্মা তাদের ধ্বংশ অনিবার।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২২

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: আপনার মন্তব্য ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.