নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনানন্দ দাশের \'বনলতা সেন\'

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩


“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের 'পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতোদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।”


জীবনানন্দ দাশের এ কবিতাটি পড়েননি এমন পাঠক খুব কমই পাওয়া যাবে। চারদিকে যখন অনুবাদ আর থ্রিলার সাহিত্যের জয়-জয়কার তখন আমি নিয়ে বসলাম কবিতার বই। হাতে নিলাম জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ। ১৯৪২ইং সনে প্রকাশিত এই গ্রন্থটিকে বলা হয় জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ রচনা। এর আদি সংস্করনে মাত্র ১২ টি কবিতা থাকলেও পরবর্তীতে সিগনেট সংস্করনে মোট ৩০টি কবিতা নিয়ে ‘বনলতা সেন’ প্রকাশিত হয়।

আধুনিক বাংলা কাব্য জগতে রবীন্দ্র প্রভাব থেকে বের হয়ে এক নবধারার স্রস্টা কবি জীবনানন্দ দাশ। তার হাত ধরেই জন্ম নিল গদ্য কবিতা।বাংলা কবিতা পেলো এক নতুন মাত্রা।তার দেখান পথেই আজও চলছে বাংলা কাব্য চর্চা।

গ্রন্থটির নাম ‘বনলতা সেন’ কিন্তু কে এই বনলতা সেন? বনলতা সেনের পরিচয় নিয়ে বাংলা সাহিত্যে কম গবেষণা হয়নি এবং তা আজও চলছে। বনলতা সেন কি কবির সৃষ্ট কাল্পনিক কোন চরিত্র নাকি বাস্তবেই তার অস্তিত্ব ছিল? তবে এ নিয়ে সব আলোচনার সার কথা হচ্ছে, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার মতই এক রহস্যময়ী নারী চরিত্র হিসেবেই আজও বেঁচে আছেন বনলতা সেন; নাটোরের বনলতা সেন!

প্রকৃতির আতিথ্য গ্রহনের যোগ্যতা সবার থাকেনা। তবে জীবনানন্দ দাশের তা ছিল, তাই তো তার এক একটি কবিতার শরীর নির্মিত হয়েছে প্রাকৃতিক বুননের মাধ্যমে। এই গ্রন্থটিতেও তেমন কিছু উদাহরণ দেখা যায়। তিনি গাছের ছায়ায় বসে গান করেছেন, রোদের মায়ায় বাধা পড়েছেন, ভোরের আলোয় হেসেছেন কিংবা শিশিরে পা ভেজাবার অপেক্ষায় থেকেছেন!

তার প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় তিনি তুলে ধরেছেন নানা উপমার মাধ্যমে। যেমন-
“আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো
গেলাসে - গেলাসে পান করি,
এই ঘাসের শরীর ছানি- চোখে চোখে ঘষি,
ঘাষের পাখনায় আমার পালক,
ঘাষের ভিতর ঘাস হ’য়ে জন্মাই কোন এক নিবিড় ঘাস-মাতার
শরীরের সুস্বাদ অন্ধকার থেকে নেমে।”


কিংবা-

“তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-
নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালী ফুলের মতো অজস্র তারা,
শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে
সোনালী ডিমের মতো
ফাল্গুনের চাঁদ।”


বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দকে বলেছিলেন- ‘প্রকৃত কবি এবং প্রকৃতির কবি’।সেজন্যই হয়তো ‘কাঁচপোকা ও গঙ্গাফড়িং এর ঘুমানোর বর্ণনা’, ‘পেচার ধুসর পাখা’, ‘চিলের ডানায় রৌদ্রের গন্ধ’, ‘হিম কমলালেবুর করুন মাংস’ – এমন শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে কবি আমাদেরকে প্রকৃতির প্রকৃতি ও স্বাদ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

প্রকৃতির প্রাণ স্পন্দনের উৎস সন্ধানের জন্য কবি ছুটে বেড়িয়েছেন অশোকের ধূসর জগত থেকে ব্যাবিলন, নিলেভ, মিশর কিংবা গ্রীস থেকে সিংহল পর্যন্ত!

“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে”


গ্রন্থটির নাম ‘বনলতা সেন’ হলেও আরও ক’জন নারী চরিত্রের দেখা পাওয়া যায়।যেমন- সুচেতনা, শ্যামলী, সুরঞ্জনা। তবে এগুলো যেন বনলতা সেনের ই প্রতিশব্দ মাত্র।জীবনের সব লেনদেন শেষে আবারো তিনি ফিরে গিয়েছেন তারই কাছে-
শরীরে ঘুমের ঘ্রাণ আমাদের-ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;
‘মনে আছে?’ শুধালো সে- শুধালাম আমি শুধু, ‘বনলতা সেন?’


লিখতে গেলে আর অনেক কিছু লিখা যায়, তাই আর লিখছিনা,তবে আমন্ত্রন সবাইকে জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ এর হাত ধরে রূপসী বাংলার রুপ নতুন করে আরো একবার দেখে আসার জন্য!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০৯

blackant বলেছেন:
খুব ভাল লেখা। আপনাকে অভিনন্দন!

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫১

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :)

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৫

জাহিদ অনিক বলেছেন: জীবন বাবুর কবিতাগুলো একটু অন্য রকম ।
প্রকৃতির কাছাকাছি চলে যাওয়া যায় ।

নক্ষত্রের প্রভাব আছে তাঁর কবিতায় ।

ধন্যবাদ । তবে বনলতা সেনের আরো একটু বিস্তারিত বর্ননা আশা করেছিলাম।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৯

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ইচ্ছে আছে একদিন শুধু বনলতা সেন কে নিয়েই লিখব। ধন্যবাদ :)

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৪

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: আমার প্রিয় কবি!:)

তাকে নিয়ে লেখা আপনার পোস্টে আমার পক্ষ থেকে লাইক:)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১০

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.