নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গায়ে এখনও দেশী মাটির গন্ধ...কানাডাতে আসার সাথে এই ব্লগে লেখালিখি জড়িয়ে আছে। ২০০৭ এ আসি। সে সময় থেকেই লিখি। এখন ফেবুতে বেশি এক্টিভ। ফেবু: fb.com/bdidol9x/ পেজ: fb.com/bdidol5x

বিডি আইডল

ফেবু: facebook.com/bdidol3x ফেবু পেজ: facebook.com/bdidolx

বিডি আইডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেপ্টেম্বর, ২০০৮ - ইতিহাসের ঘটনাবলী

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৩

৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল থেকে পিজি হাসপাতাল চত্বরে নেতা-কর্মীরা ভীড় জমাতে থাকে। বেলা ১১.০০টা নাগাদ হাসপাতাল চত্বর কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ডি ব্লকের ভবনে ঢুকতে আরো কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির পর যারা এতোদিন নিজেরদেরকে আড়াল করে রেখেছিলেন তারাও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। দুপুরের দিকে ক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের হাতে পিজি হাসপাতাল চত্বরে লাঞ্চিত হন যুবদল সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু ও সাবেক শিা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। ওই ঘটনার পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় মুক্তি পান বিএনপি’র ভবিষ্যৎ কর্ণধার তারেক রহমান। হাসপাতালের ডি ব্লকের চারতলায় তার কেবিনের সামনে থেকে কারারী উঠিয়ে নিয়ে মুক্তি দেয়া হলো তাকে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ডি ব্লকের বাইরে অবস্থান করছে। হাসপাতাল চত্বর জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। মুহুর্মুহু স্লোগানে পিজি হাসপাতাল এলাকা তখন মুখরিত। আনন্দের বন্যায় ভাসছে সবাই। সবার চোখ ডি-ব্লকের চারতলায় সেই জানালাটির দিকে। সেখানে শুয়ে ছিলেন তারেক রহমান। মুক্ত হবার পর পরই তিনি জানালায় হাত বাড়ালেন। উড়ালেন শান্তির কপোত। হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালেন। নেতা-কর্মীদের প্রচন্ড ভীড়, ধাক্কা-ধাক্কি, ঠেলা-ঠেলি, সে এক হুলস্থুল কান্ড।

৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সরকারি এক আদেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির মেয়াদ আরো একমাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একই দিনে উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন আবেদন করবেন তখনই জামিন পাবেন।

এদিন হাসপাতালে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন জামায়াত সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। তারা দু’জন প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন বলে ৫ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার খবরে বলা হয়। এদিনের পত্রিকার খবরে বলা হয় মুক্তি পেলেও তারেক রহমানের কেবিন ঘিরে কড়াবড়ি আরোপ করা হয়েছে। তার সঙ্গে সাাৎ করতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বচসার কথারও উল্লেখ করে পত্রিকাগুলো।

৬ সেপ্টেম্বর থেকে নিবাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তৃতীয় দফা সংলাপ শুরু করে। প্রথম দিনে ওয়ার্কাস পার্টিসহ চারটি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়।

৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকাল ‘হাওয়া ভবন টিমের সদস্যরা সক্রিয়’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় তারেক রহমানের কারা মুক্তির পর হাওয়া ভবনের পুরনো টিমের কয়েকজন সদস্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারেককে ঘিরে নেতৃত্ব দখলের পুরনো স্টাইলে নেমে পড়েছেন তারা। প্রতিবেদনে বলা হয় তারা এতদিন মূলত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহকে ঘিরে সক্রিয় ছিলেন।

৭ সেপ্টেম্বর আইনজীবীগণ গ্যাটকো ও নাইকো দুর্নীতির মামলায় বেগম জিয়ার জামিনের আবেদন করেন হাইকোর্টে। হাইকোর্ট ওই জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন ৯ সেপ্টেম্বর।

৮ সেপ্টেম্বর মহাসচিবের বাসায় প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করা হয। ব্রিফিং-এর আগে একটি বিশেষ বৈঠক হয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের। বিষয়বস্তু ছিলো নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আলোচনার আমন্ত্রণ। আগের দিন কমিশন চিঠি দেয়। এবারের চিঠিতে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব হিসেবেই সম্বোধন করা হয়। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, চেয়ারপার্সনের মুক্তির আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। এ দিনের বৈঠকে ছিলেন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী, সহ সভাপতি এম কে আনোয়ার, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, দফতর সম্পাদক রিজভী আহমেদ।

বৈঠকে চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকীকে প্রধান করে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় সংলাপে যাওয়ার বিষয়টি সঠিক পর্যালোচনা করে আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে একটি সুপারিশমালা মহাসচিবের বরাবরে উপস্থাপন করতে। বৈঠক শেষে মহাসচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

৯ সেপ্টেম্বর খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ১১ সেপ্টেম্বর বেগম জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন। দুপুরের দিকে খবর আসে যে, হাইকোর্ট তাকে সব মামলার জামিন দিয়েছেন। ফলে বেগম জিয়ার মুক্তি এখন হয়ে দাঁড়ালো সময়ের ব্যাপার। হাইকোর্ট থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সব মামলায় জামিন পাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে উৎফুল্ল নেতা-কর্মীরা বিএনপি মহাসচিবের ন্যাম ফ্যাটের বাসার সামনে দলে দলে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে মানিক মিয়া এভিনিউর ন্যাম ভবন এলাকা দলীয় নেতা-কর্মীতে কানায় কানায় ভরপুর হয়ে যায়। সবাই আনন্দে উদ্বেলিত। রাতে বিএনপি মহাসচিবের ন্যাম ফ্যাটের বাসায় বৈঠক বসে। চেয়ারপার্সনকে বরণ করার প্রস্তুতি গ্রহণই ছিলো এই বৈঠকের একমাত্র এজেন্ডা। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ চার দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এসে যোগ দেন। বৈঠকে বেগম জিয়ার মুক্তির দিন পুরো ঢাকা শহরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ছিল ১০০ ওয়ার্ড থেকে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দেয়া, বিশেষ কারাগার ও শহীদ জিয়ার মাজারে নেতা-কর্মীদের জমায়েত ইত্যাদি।

এদিন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যাওয়ার ভিসা পান তারেক রহমান। শোনা যাচ্ছিল বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবার পর তারেক রহমান বৃটেনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। তার আগে মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার দেখা হবে। এদিকে ৯ সেপ্টেম্বর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চার দলের এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপি মহাসচিব উপজেলা নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।

১০ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকেলের মধ্যে সবগুলো মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করে বিএনপি নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত হলেন যে, আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন। নেতা-কর্মীরা সবাই উৎফুল্ল। তারা অধীর আগ্রহে অপো করছেন কখন তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী মুক্তি পাবেন। প্রতীার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এ মুক্তি ছিলো বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। কেননা, আবেদন করে কোনো নির্বাহী আদেশে কিংবা প্যারেলে তিনি মুক্তি নেন নি। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত কর্তৃক জামিন পেয়েই তিনি মুক্ত হয়েছেন। দেশ ও জনগণকে ছেড়ে না যাওয়ার এই দৃঢ়তা আরো একবার প্রমাণ করলেন বেগম খালেদা জিয়া সত্যিকার অর্থেই আপোষহীন নেত্রী। তাঁর বেলায় এ অভিধা শতভাগ সার্থক।

১০ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ১২.০০ টায় বেগম খালেদা ঘুম থেকে উঠে পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে নেন। এরপর তার সাথে দেখা করতে যান ডিআইজি প্রিজন মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। ডিআইজি প্রিজন বেগম খালেদা জিয়াকে তার মুক্তির বিষয়টি অবহিত করেন। কখন মুক্তি দেয়া হবে সে সময়ও জানিয়ে দেয়া হয়। এরপরই তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। জামিনের কথা শুনে তিনি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে নামাজ পড়েন। ইফতারের আগ পর্যন্ত তিনি নামাজ, দোয়া, দরূদ ও কোরআন তিলাওয়াত করেন। ইফতার খেয়ে নামাজ আদায় করে তিনি কিছুণ বিশ্রাম নেন। এরপর টিভিতে খবর দেখে তিনি তারাবির নামাজ আদায় করেন। রাত এগারটার পর তিনি ইসলামিক বই পড়তে বসেন। কিছুণ বই পড়ে আবার তিনি নফল নামাজ, দোয়া দরূদ, কোরআন তিলাওয়াত করেন সেহরির আগ পর্যন্ত। সেহরি খেয়ে তিনি ঘুমুতে যান। সকাল ৯.০০টার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছগাছ করেন।

সব প্রস্তুতি নিয়ে কারাগার থেকে বের হবার আগে মহিলা কারারী, জেলারসহ অন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং তাঁর জন্য দোয়া করতে বলে বিদায় নেন। বিদায়ের সময় মহিলা কারারী শিউলী, শেফালী ও খোদেজা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের চোখ দিয়ে টপ টপ পানি পড়ছিল। উল্লেখ্য সাবজেল থেকে মুক্তির আগে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আইনজীবীদের ডেকে পাঠান বেগম জিয়া। সকাল ১০.০০টায় সাব জেলে যান এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও এডভোকেট ফাতিমা আনোয়ার। আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান ও ডিআইজি প্রিজন মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী আইনজীবীদের সাথে প্রয়োজনীয় নথিপত্র বিনিময় সম্পন্ন করে বেগম জিয়াকে বলেন, ‘ম্যাডাম আপনি এখন মুক্ত। আপনি এখন বাসায় যাবেন।’ আইনজীবীরা এরপরও বেগম জিয়ার সাথেই ছিলেন। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি সাবজেল থেকে বেরিয়ে আসেন।

খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এ খবরে শেরেবাংলা নগরে সকাল থেকেই নামে নেতা-কর্মীদের ঢল। সাবজেলের আসাদ গেট এলাকার ফটক হয়ে তারা যান শহীদ জিয়ার মাজারের দিকে। দলীয় পতাকা উড়িয়ে, মাথায় ব্যান্ড বেঁধে নেতাকর্মীরা আসেন বিজয় মিছিলে শামিল হতে। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সাবজেলে প্রবেশ করেন বড় পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও তার কন্যা জাইমা রহমান। আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সাবজেলের ভেতরে যান। এদিকে মুক্তির খবরে ঢাকা মহানগরীতে নামে উৎফুল্ল মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার। রাজধানী মহানগরীর সব পথ এসে মিলে যায় শেরে বাংলা নগরের পথে। চার দিক থেকে স্রোতের মতো আসতে থাকে মানুষ আর মানুষ। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। অবশেষে লাখো মানুষের দীর্ঘ প্রতীার অবসান হলো। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে অফ হোয়াইট রঙের একটি জীপে করে সাবজেল থেকে বেরিয়ে এলেন আপসহীন দেশনেত্রী, বিএনপি চেয়াপারসন, চারদলীয় জোটনেত্রী ও বাংলাদেশের তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অবসান হলো দীর্ঘ এক বছর আট দিন কারাজীবনের। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মতাসীন বর্তমান ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেন।

সাবজেল থেকে বেরিয়ে সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের ৭ নম্বর গেট দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে আসেন খালেদা জিয়া। এ সময তার গাড়ির সামনে-পেছনে ছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নিরাপত্তা। সামনে-পেছনে নিরাপত্তারীদের তিনটি করে ছয়টি গাড়ির মাঝখানে ছিল বেগম জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি। সাথে আরেকটি গাড়িতে দলীয় নেতারা। বেগম জিয়ার গাড়িতে ছিলেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, তারেক রহমানের চাচাতো ভাই মাহবুব আলামিন ডিউ ও এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েই জিয়ার মাজারে আসবেন এ খবরে আগে থেকেই শেরেবাংলা নগরে নামে জনস্রোত। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় ঠেলে জিয়ার মাজারে যেতে খালেদা জিয়াকে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়। এ সময় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীর প্রতি ফুল ছুড়ে শুভেচ্ছা জানায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। মাজার প্রাঙ্গণ জুড়ে এ সময় উন্মাতাল জনস্রোত স্লোগানে স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলে। বেগম জিয়া এ সময় স্লোগান মুখরিত জনতাকে হাত উঁচু করে দুই আঙুল দিয়ে বিজয় চিহ্ন দেখান। খালেদা জিয়ার গাড়ি এগোতে পারছিল না ঠিকভাবে। ঠিক দুপুর ১২টায় তিনি জিয়ার মাজারে পা রাখেন। পরনে তার সাদা শাড়ি আর চোখে খয়েরি রঙের সানগ্লাস। আবেগাপ্লুত নেতা-কর্মীদের ভিড় ঠেলে একেবারে মাজারের বেদিতে যেতে ২০ মিনিট লেগে যায় তার। ফুলের পাপড়ি এসে পড়তে থাকে খালেদা জিয়ার ওপর। নেতাকর্মীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। ১২টা ২০ মিনিটে তিনি মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মুনাজাত করেন। এ সময় খালেদা জিয়াকে কিছুটা মলিন এবং আগের চেয়ে কাবু মনে হচ্ছিল।

শহীদ জিয়ার মাজার থেকে তারেক রহমানকে দেখতে তিনি এরপর পিজি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে বেগম জিয়াকে আগারগাঁও থেকে শাহবাগ পিজি হাসপাতালে পৌঁছতে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগে। পুরো পথে তার গাড়ি বহরের আগে ছিলেন হাজার নেতাকর্মী। ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে গাড়ি বহরকে পথ দেখায়। হাজারো লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন রাস্তার দু’পাশে, আশপাশের ভবনে। পুরো রাস্তা জ্যামে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বেলা দেড়টার দিকে খালেদা জিয়া পিজি হাসপাতালে পৌঁছেন। হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকে তারেক রহমানের ৪৩২ নম্বর রুমে ঢুকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তারেককে দেখে তার মাতৃত্ব জেগে ওঠে। ছেলের মাথায় হাত দেন। গলা জড়িয়ে ধরেন। তারেক রহমানকে চেয়ে চেয়ে দেখেন আর সাদা রুমাল দিয়ে তিনি চোখ মুছতে থাকেন। ওই কে উপস্থিত সবাই এ দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পৌনে ২ ঘণ্টা তিনি ছিলেন ছেলের পাশে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। চিকিৎসকদের সাথেও কথা বলেন।

ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার কারণে নেতাকর্মীরা হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ সময় সেখানে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, শামসুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস ও ডা. জোবাইদা রহমান উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালে পৌনে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি।

৪টা ২০ মিনিটে পার্টি অফিসে আসেন খালেদা জিয়া। এর আগে পার্টি অফিসের সম্মুখভাগ নেতাকর্মীদের ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। খালেদা জিয়া পার্টি অফিসে দলীয় শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন নির্বাচন, সংলাপ ও দলের বিভিন্ন বিষয়ে। বিএনপি নেত্রী সংলাপ ও নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। একই সাথে বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই বলে সবাইকে জানিয়ে দেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে অপেমাণ নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ সময় নয়া পল্টনের পার্টি অফিসের ডানে-বামে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার নেতাকর্মী করতালির মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বরণ করে নেন।

খালেদা জিয়া পার্টি অফিসে এসে অসুস্থতার কারণে তারেক রহমানকে পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। খালেদা জিয়া বলেন, আবার যখন তারেক সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবে তখন সে দলের হয়ে কাজ করবে।

খালেদা জিয়া পার্টি অফিস থেকে ঢাকা সেনানিবাসের ৬ নম্বর শহীদ মইনুল রোডের বাসায় আসেন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়, যেখান থেকে তিনি ৩৭৩ দিন আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। যখন তিনি ক্যান্টমেন্টের বাসায় পৌঁছেন তখন বাসা ছিল অনেকটাই খালি। ডা. জোবাইদা রহমান আর তার মেয়ে ছাড়া বলতে গেলে ছিলেন তার বাসার স্টাফরা। বাসায় গিয়ে তিনি ইফতার করেন। এ সময তার সাথে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন তার আইনজীবী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান মেহেদী।

ওয়ান-ইলেভেনের পর নানা কারণে বিপর্যস্ত বিএনপি যেন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল। তার মুক্তির পর হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাঁধভাঙা জোয়ার তারই জানান দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার পর বেগম জিয়া যখন বেরিয়ে আসেন তখন পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য। মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শুরু করে আসাদ গেট, বিজয় সারণিসহ আশপাশ এলাকা মানুষের ভরে যায়। বেগম জিয়ার মুক্তিতে আবেগাপ্লুত কর্মীদের অনেককে ফুল ছিটিয়ে, স্লোগান দিয়ে, কেঁদে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ও আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়াই যে বিএনপি’র প্রাণশক্তি, এদিন আরো একবার তা প্রমাণ হলো। খালেদা জিয়ার মুক্তির তাৎণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান এম কে আনোয়ার বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তি বড় ধরনের একটা অগ্রগতি। এখন সরকার পরিবেশ সৃষ্টি করলে বেগম জিয়া সংলাপ ও নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার েেত্র এগিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে যে বিনা কারণে আটক করা হয়েছিল, সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো।

১২ সেপ্টেম্বর রাত ১০.০০টায় তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার সাথে লন্ডনে যান তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, ডা. জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা জামান বিন্দু, ভগ্নিপতি কমডোর (অব.) শফিউজ্জামান এবং তারেক রহমানের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কাজী মাযহারুল ইসলাম দোলন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬.০০টায় বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তারেক রহমান বিএসএমএমইউ ত্যাগ করেন।

বিমান বন্দরে পৌঁছেন সাড়ে ৭টায়। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭৩০০ ইআর বিমানটি জিয়া বিমান বন্দর ছেড়ে যায়।

তারেক রহমানকে বিমান বন্দরে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান, ইলিয়াস আলী, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, কায়সার কামাল, ফাতিমা আনোয়ার প্রমুখ।

আগের দিন বেলা পৌনে ২টায় পিজি হাসপাতালে মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা হয় তারেক রহমানের। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে হাসপাতালে তারেক রহমানকে দেখতে যান। মায়ের সাথে দেখা হওয়ার পরই তারেক রহমানের লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়। তারেক রহমান প্রাথমিকভাবে লন্ডনের হ্যামারস্মিথ ও কিংস ওক হাসপাতালের যে কোনো একটিতে ভর্তি হতে পারেন। জার্মানিতে তার প্রয়োজনীয় নিওরোলজি সার্জারি ও অর্থোপেডিক্সের সমন্বিত বিশেষায়িত চিকিৎসার সর্বাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এ কারণে জার্মানির ভিসাও সংগ্রহ করেছেন তিনি। গত ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ল্েয তার ভিসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরপর গত মঙ্গলবার তিনি প্রথম দফা বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। সে দিন রাত ১১টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফাইটে তার লন্ডন যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি যেতে পারেন নি। গত বুধবার তিনি দ্বিতীয় দফা বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেন। হাসপাতালে দলীয় নেতাকর্মীরাও তাকে বিদায় জানাতে আসেন। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টায় তিনি যখন হাসপাতাল থেকে বিমান বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে বিদেশ যেতে বাধা দেয়া হয়। তার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, সরকারের প থেকে তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে দলীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে তিনি এ আবেদন জানান। চেয়ারপার্সন ও স্নেহময়ী মা বেগম খালেদা জিয়া এ আবেদন গ্রহণ করেন।

মুক্ত বেগম খালেদা জিয়া বিকেলে দলের নয়া পল্টনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানান।

হাসপাতালে তারেক রহমানকে দেখতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু সময় সেখানে অবস্থান করেন। এর পর দলীয় কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় বারবারই বেগম জিয়া আবেগাপ্লুত ও কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেগম জিয়ার এ অবস্থায় হলরুম জুড়ে নীরবতা নেমে আসে।

বেগম জিয়া বলেন, আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, তারেকের অবস্থা ভালো নয়। তার দ্রুত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। তার চিকিৎসায় দুই-তিন বছর লেগে যেতে পারে। তারেক সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি থেকে অব্যাহতি চেয়েছে। দলের সিনিয়র নেতারা এ সময় দলের দায়িত্ব পালন করবেন। দলীয় নেতারাও সেটি অনুমোদন করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আমার দুই ছেলেকেই অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শেষ হয়ে যেতে বসেছে। এক ছেলে এখন বিদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এসময় দলীয় মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান অত্যন্ত জনপ্রিয় তরুণ নেতা। তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানান তিনি।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি লাভের পর ১২ সেপ্টেম্বর ’০৮ দৈনিক নয়া দিগন্তে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাতীয় অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান ‘শুরু হলো গণতন্ত্র উত্তরণে যাত্রা’ শিরোনামে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন লেখেন। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উক্ত প্রতিবেদনটি হুবহু নিম্নে দেয়া হল ঃ

“বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উত্তরণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এখন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে শেখ হাসিনাকেও একই প্রক্রিয়ায় মুক্তি দেয়া দরকার। যাতে তিনি দেশে এসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন। এই দুই নেত্রী নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ শুরু করলে দেশের মানুষের মধ্যে যে হতাশা বিরাজ করছে তা কেটে যাবে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, অক্টোবরের মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে। সুতরাং এখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা উচিত। একই সাথে সরকারের উচিত জরুরি আইন প্রত্যাহার করা। দুই নেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাজনীতি শুরু হবে। অর্থবহ নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে যতটা সম্ভব নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় দিতে হবে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তান সরকার নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এক বছর সময় দিয়েছিল। তাই আমার মনে হয় চলতি মাসেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা এবং নির্বাচনী মেনিফেস্টো তৈরির মতো কাজ করতে হবে, এ জন্যও তাদের সময় দরকার। এ ছাড়া দেশে যে সব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য এবং জনগণকে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি বোঝানোর জন্যও সময় দরকার হবে। এ জন্য নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সময়পেণ করার কোনো সুযোগ নেই।

মনে রাখতে হবে জনগণ নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছে। উচ্চাভিলাষী কোনো মহল বা ব্যক্তি যদি কোনো অজুহাত তৈরি করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করে তাহলে ’৬৯-এর মতো দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটবে। সে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান ট্রয়কা (আহমদদের) অসাংবিধানিক সরকার রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে ভেসে যাবে। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, এরশাদ ও পরভেজ মোশাররফের দৃষ্টান্ত থেকে তারা শিা গ্রহণ করবে। আমি সতর্ক করে বলতে চাই, বর্তমান মতাসীন মহল কোনো হঠকারী পদপে যেন না নেন। হঠকারী কোনো পদপে নিলে নির্বাচন শুধু ব্যাহত হবে না, দেশের স্বাধীনতাও বিপন্ন হতে পারে। আধিপত্যবাদী শক্তি এ রকম একটি সুযোগ খুঁজছে। এমনিতেই ভারত থেকে সাত ঘোড়া আনা এবং অশ্বমেধযজ্ঞ সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে। এ জন্য সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এ দেশের জনগণ শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আধিপত্যবাদীদের সব চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেবে।

দুই নেত্রীর ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা ফিনিক্স পাখির মতো। ফিনিক্স পাখি মেরে ফেললেও তারা যেমন নবশক্তি নিয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এ দুই নেত্রীও তেমনি নতুন শক্তি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবেন। সরকার বা বিশেষ মহলের উচিত হবে না দুই নেত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো চিন্তা করা।

বস্তুত খালেদা জিয়ার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের যে পথ শুরু হলো সে পথ আর থামানো যাবে না। বাংলাদেশের মানুষকে অনেকে ঠকাতে চেষ্টা করেছে। ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই ১৯৪৬, ১৯৫৫ ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আমাদের দেশের তথাকথিত অশিতি ভোটাররাই সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যদি সরকার এবং নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ আবারো সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে। আমার আরো দৃঢ় বিশ্বাস এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসীদেরই জয় হবে।

আশা করা যায়, অপরাজেয় এই দুই নেত্রী রাজনীতির েেত্র অভিজ্ঞতায় আরো পরিপক্বতা অর্জন করেছেন। ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন এবং গণতন্ত্র উত্তরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সম হবেন।”

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে তাৎণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি গণতন্ত্র বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দেশে-বিদেশে খুশির বন্যা বইয়ে যায় বিএনপি ও চারদলীয় জোট নেতা-কর্মীদের মধ্যে। দেশের অনেক স্থানেই মিষ্টি ও ইফতারি বিতরণ করা হয়।

দৈনিক নয়া দিগন্ত ১২ সেপ্টেম্বর, ’০৮ সংখ্যায় ‘এমন উচ্ছাস বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরেই মানায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

“পুষ্পবৃষ্টি চলছিল অঝোর ধারায়। ভাদ্রের এ গরমে কোথা থেকে এত ফুল এলো, কে জানে। ফুল আর ফুল। লাখো মানুষের পদভার। উচ্ছ্বাস-উৎসব-আনন্দ তাকে ঘিরে। কথায় নয়। স্লোগানে নয়। তিনি আসলেই ‘আপসহীন’ নেত্রীÑ সেটি ফের প্রমাণ করে কাল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বেরিয়ে এলেন জেল থেকে। বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে বলে যারা এত দিন বলেছেন, তাদের মুখে চুনকালি দিয়ে হাস্যোজ্জ্বল নেত্রী বেরিয়ে এলেন জেল ফটক থেকে। পেছনে পড়ে রইলো দুঃসহ একটি বছরের স্মৃতি। সামনে দেশ গড়ার দীপ্ত অঙ্গীকার। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি জানিয়ে দিলোÑ ‘নেত্রী আপনি ছিলেন। আপনি থাকবেন। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে আপনি ফিরে ফিরে আসবেন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে।’

কোনো রাজনৈতিক নেত্রীর মুক্তির খবরে এত বেশি মানুষ রাস্তায় এসে অভিনন্দিত করার ঘটনা স্বাধীনতা-উত্তরকালে এটাই প্রথম। স্মরণকালের মধ্যে এত উচ্ছ্বাস নিয়ে কেউ ছুটে আসেন নি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে। নেত্রীকে দেখে হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে নগর। কেউ কেঁদে ফেলেছেন আনন্দে। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

বেলা ১১টা ৪২ মিনিট। বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঘোষক এবং বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ছোটেন। মুক্ত জীবনের প্রথম পদপে তার সেখানে। পা রাখলেন মাজারে। পুষ্পবৃষ্টি ঝরছে। লোকে লোকারণ্য পুরো সংসদ ভবন এলাকা, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, রোকেয়া সরণি, মানিক মিয়া এভিনিউ। জিয়াউর রহমানের মাজারের গেটে এসে গাড়ি থেকে নামলেন বেগম জিয়া।

প্রতিটি জন্ম ও মৃত্যু দিবসে স্বামীর কবরে ফুল দিয়ে হয়তো তার মনে ভাসতো প্রিয় কোনো ণ। স্বজন হারানোর কষ্ট। জেলের পুরো একটি বছরে তার সে সুযোগ হয় নি।

চল্লিশ মিনিট লাগল ভিড় ঠেলে মাজারে পৌঁছতে। কবরের সামনে দাঁড়ালেন আনত মুখে। চোখ খুলে তাকালেন। রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা ছিল না তার। গৃহিণী হিসেবেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন। কিন্তু প্রিয়তম স্বামীর গড়া দলের প্রয়োজনে, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবার অনুরোধে তিনি আসেন রাজনীতিতে।

সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে জিয়াউর রহমানের মাজার। মাজারের দিকে তাকিয়েছিলেন খানিক। ফুল দিলেন। ফাতেহা পাঠ করলেন।

মাজার থেকে বেরিয়ে পড়ল বেগম খালেদা জিয়া জিয়ার গাড়ির বহর। ভাদ্র মাসের তপ্ত সূর্যটা তখন মধ্য আকাশে। রোদের আলো ঢুকে যাচ্ছে শরীরের ভেতর। তবু নেতাকর্মীরা ছুটছেন মিছিল নিয়ে। এ যেন ‘অগ্নিস্নানে শুচি’ হওয়ার চেষ্টা।

বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে উচ্ছ্বাসিত জনতা রওনা দিলো পিজি হাসপাতালের দিকে। সেখানে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান চিকিৎসাধীন।

এক বছর পর মা-ছেলের সাাৎ হবে। সে অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখবেন সবাই। সে জন্য জড়ো হলো জনতা। দেড়টার দিকে তিনি পৌঁছলেন পিজি হাসপাতালে। দেশের স্বার্থে পুত্রের সঙ্কটাপন্ন জীবনকে তুচ্ছ করা এক মা ছুটে এলেন সন্তানের শয্যাপাশে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবা, কেমন আছিস?’

সন্তানকে দেখে দুঃখ ভারাক্রান্ত মা। আনন্দে উচ্ছ্বাসিত মা। কপালে হাত রাখলেন। গাল ছুঁয়ে দিলেন। এ অনিন্দ্যসুন্দর মুহূর্তটা উপভোগ করার জন্যই বোধ করি কাল তার মুক্তি মিলেছিল। বেগম খালেদা জিয়া সন্তানের খবর নিলেন। দেশের জন্য সন্তানের এ অবস্থায় দুঃখিত নন তিনি। পরিবারের স্বার্থকে তুচ্ছ করে দেশকে ভালোবেসে বেগম জিয়া সব করতে পারেন। সেটি প্রমাণ করেছেন তিনি। সরকারি ও অদৃশ্য ছায়া শক্তির শত চাপের কাছে হার মানেন নি তিনি।

বেগম জিয়ার মায়ের মৃত্যুর সময়ও মা-ছেলের সাাৎ ঘটেনি। সন্তান ও মাকে আলাদা আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয় স্বজনের লাশ দেখার জন্য। তবে কাল মা-ছেলের সাাৎ হলো।

পিজি হাসপাতাল থেকে যখন তিনি বেরিয়ে এলেন তখন পৌনে ৪টা। ছুটলেন নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসে। চলমান সরকার যে অফিসের তদারকির দায়িত্ব দিয়েছিল তাদের ‘পোষ্য বিএনপি'কে। নেত্রী নয়া পল্টনে গেলেন ৪টা ২৩ মিনিটে। অফিসের দোতলায় তার নিজের চেয়ারে বসলেন তিনি। এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর এটাই তার প্রথম পার্টি অফিসে আসা। বাইরে লাখো নেতাকর্মীর ভিড়। বেগম খালেদা জিয়া ৫টা ৯ মিনিটে এসে বারান্দায় দাঁড়ালেন। হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালেন সমবেত জনতাকে। তুমুল করতালি ও স্লোগানে স্লোগানে নেতাকর্মীরা এর জবাব দিলেন। কিছুটা সময় দাঁড়ালেন তিনি।

ফিরে গেলেন অফিসে। সেখানে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে তিনি। বলেন, তারেক রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিচ্ছে। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। দু-তিন বছর অন্তত। তত দিন সে রাজনীতি করবে না। সুস্থ হলে আবার রাজনীতিতে ফিরবে।

সন্তানের অবস্থা দেখে একজন মায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকাটাই স্বাভাবিক। চোখে পানি। মুখটা লাল টকটকে। স্নেহময়ী একজন মা তিনি। চোখটা মুছে নিলেন। ফের সাংবাদিকদের মাইকে বললেন, সংলাপে যাবে বিএনপি। পরিবেশ নিশ্চিত হলে নির্বাচনে যাবে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

নেত্রী দৃঢ়তার সাথে জানালেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিযে তার দলই আগামীতে সরকার গঠন করবে।

তিনি জোটের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন।

পার্টি অফিস থেকে বেগম জিয়া বের হন ৫টা ২০ মিনিটে। ছুটলেন মইনুল রোডের বাসভবনের দিকে, যেখান থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময়ে প্রধানমন্ত্রী এ নেত্রী গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছলে এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারণা হয়। সবাইকে নিয়ে ইফতার করেন বেগম খালেদা জিয়া।

এরপর লাখো নেতাকর্মী ঘরে ফিরল। কোটি মানুষ জেনে গেল, বেগম জিয়া মুক্ত।”

দৈনিক নয়া দিগন্ত উক্ত সংখ্যায় ‘আপসহীন’ ইমেজ নিয়েই বেরিয়ে এলেন বেগম জিয়া’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সাংবাদিক জিয়াউল হক মিজানের লেখা এ প্রতিবেদনটির পাঠকদের জ্ঞাতার্থে নিম্নে হুবহু প্রকাশ করা হল :

“আপসহীন ইমেজ নিয়েই জেলখানা থেকে বেরিয়ে এলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। নব্বই-ছিয়াশির মতো আবারো প্রমাণ করলেন কোনো প্রতিষ্ঠিত শক্তির সাথে আপস করতে অভ্যস্ত নন তিনি। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের পট পরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক রাজনৈতিক নেতারা চাপের মুখে যেভাবে সরকারের সাথে বোঝাপড়া করছিলেন তারা দৃঢ়চেতা খালেদা জিয়ার মনোভাবে অনেকে বিস্মিতও হচ্ছিলেন। কিন্তু জনগণের নেত্রী আস্থাশীল ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতি, এ দেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতি।

দেশ-জাতির বিশেষ প্রয়োজনে একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের নামের সাথে ‘আপসহীন’ শব্দটি যুক্ত করতে সম হয়েছিলেন তিনি। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ১৯৮৬ সালের স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার প্রত্যয়ে অনড় থাকার মধ্য দিয়ে এ ইমেজের গোড়াপত্তন করেন তিনি। সর্বশেষ রাজনীতি-অর্থনীতির সব েেত্র তোলপাড় সৃষ্টিকারী সেনা সমর্থনপুষ্ট বর্তমান সরকারের দীর্ঘ অমানুষিক জুলুম নির্যাতনের মাঝেও অনড়-অবিচল থেকে বেগম জিয়া প্রমাণ করলেন সত্যিই তিনি আপসহীন।

সরকারের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে আরেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের বাইরে চলে গেলেন, অন্য দলের নেতারা যখন নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে সরকারের লিখে দেয়া বিবৃতিতে স্বার করছিলেন, নিজ দলের নেতাদের দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা চলছিল, বিদেশে যাওয়ার জন্য বেগম জিয়ার ওপর যখন একের পর এক অসহ্য চাপ আসছিল, আপসে রাজি করাতে যখন তার ছেলেদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছিল তখনো বেগম জিয়া ছিলেন পাথরের মতো অনড়। কারা অভ্যন্তরে প্রিয় সন্তানের কোমর ভেঙে দিয়েও চেষ্টা করা হয়েছিল সমঝোতায় বাধ্য করতে, সপরিবারে বিদেশে চলে যেতে। কিন্তু ‘মা’ খালেদা জিয়ার কাছে তখন বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল ‘দেশনেত্রী’ খালেদা জিয়ার পরিচয়টি। এর মাধ্যমে আবারো তিনি প্রমাণ করে দিলেন ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে এদিন মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘প্যারোল বা জামিন দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকার ও আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। গত বছর জুলাইয়ে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে আগ্রহী।’

১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সংস্কারবাদী নেতা এম সাইফুর রহমান ও লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসায় সাাৎ করেন। তারা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন এবং তাঁর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করেন। তারা তাদের অতীতের কার্মকান্ডের জন্য বেগম জিয়ার কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন।

বিএনপি’র বহিষ্কৃত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। সংস্কারপন্থি নেতা মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনই বিএনপি’র মহাসচিব এবং তিনি দলের সহ-সভাপতি হিসেবেই কাজ করবেন।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে মেজর হাফিজ বলেন, আমাদের সবার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার মুক্তিতে আমরা আনন্দিত। মুক্তির পর নেত্রীর বক্তব্যে তার প্রজ্ঞা ও বিচণতা প্রকাশ পেয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া মুক্তির পর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই। সবাইকে নিয়েই আমি কাজ করব। (সংগৃহীত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.