নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গায়ে এখনও দেশী মাটির গন্ধ...কানাডাতে আসার সাথে এই ব্লগে লেখালিখি জড়িয়ে আছে। ২০০৭ এ আসি। সে সময় থেকেই লিখি। এখন ফেবুতে বেশি এক্টিভ। ফেবু: fb.com/bdidol9x/ পেজ: fb.com/bdidol5x

বিডি আইডল

ফেবু: facebook.com/bdidol3x ফেবু পেজ: facebook.com/bdidolx

বিডি আইডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামের পদবীর ইতিহাস!!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫৪



এক লোক দোকানে দেখল তিনটি তোতা পাখি রাখা আছে বিক্রির জন্য। সে দাম জানতে গিয়ে অবাক হল যে, তিনটির দামই চড়া! তখন তোতা পাখির মালিক বলল-
মালিক : প্রথম পাখিটি ‘এমএস ওয়ার্ড’ পারে, তাই দাম দশ হাজার টাকা। দ্বিতীয়টি বিশ হাজার টাকা, কারণ সে ‘প্রোগ্রামার’!
লোক : তা বুঝলাম! কিন্তু তৃতীয়টির দাম পঞ্চাম হাজার কেন?
মালিক : স্যার, সত্যিকারে এটা কিছুই পারে না, কিন্তু বাকি দুইটি এটাকে বস ডাকে তাই!


যাক মূল বিষয়ে আসি। অধিকাংশ ব্যক্তি নামের শেষে একটি পদবী নামক পুচ্ছ যুক্ত হয়ে আছে। যেমন উপাধি, উপনাম কিংবা বংশসূচক নামকে সাধারণ ভাবে পদবী বলা হয়। বাঙালির জমি- জমা বিষয় সংক্রান্ত কিছু পদবী যেমন- হালদার, মজুমদার, তালুকদার, পোদ্দার, সরদার, প্রামাণিক, হাজরা, হাজারী, মন্ডল, মোড়ল, মল্লিক, সরকার, বিশ্বাস ইত্যাদি বংশ পদবীর রয়েছে হিন্দু -মুসলমান নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের একান্ত রূপ।

বাঙালি মুসলমানের শিক্ষক পেশার পদবী হলো-খন্দকার, আকন্দ, নিয়াজী ইত্যাদি। আর বাঙালি হিন্দুর শিক্ষক পদবী হচ্ছে দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, চর্তুবেদী ইত্যাদি।

দেখা যাক বাঙালির কিছু বিখ্যাত বংশ পদবীর ইতিহাস। যেমন-শিকদার, সৈয়দ, শেখ, মীর, মিঞা, মোল্লা, দাস, খন্দকার, আকন্দ, চৌধুরী, ভুইয়া, মজুমদার, তরফদার, তালুকদার, সরকার, মল্লিক, মন্ডল, পন্নী, ফকির, আনসারী, দত্ত ইত্যাদি।

শিকদারঃ সুলতানি আমলে কয়েকটি মহাল নিয়ে গঠিত ছিল এক একটি শিক। আরবি শিক হলো একটি খন্ড এলাকা বা বিভাগ। এর সাথে ফারসি দার যুক্ত হয়ে শিকদার বা সিকদার শব্দের উদ্ভব হয়েছে।এরা ছিলেন রাজস্ব আদায়কারী রাজকর্মচারী। শব্দকোষে যাকে বলা হয়েছে শান্তিরক্ষক কর্মচারী।এরা শিক বন্দুক বা ছড়ি বন্দুক ব্যবহার করতো বলে শিকদার উপাধী পেয়েছিল; সেই থেকে বংশ পরমপরায় শিকদার পদবীর বিকাশ ঘটে।

সৈয়দঃ সৈয়দ পদবী মূলত এসেছে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা ও হযরত আলীর বংশ ধর থেকে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগের এই বংশের সাথে কোনা যোগসূত্র না থাকলেও বাংলাদেশের অনেক মুসলমান পরিবার সৈয়দ বংশ পদবী ব্যবহার করে নিজেদের সম্ভ্রান্ত ও কুলীন মুসলমান বলে দাবি করে থাকেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে সৈয়দ পদবীর অপব্যবহার ও পক্ষেপণ ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। প্রকৃত পক্ষে সৈয়দ নন এবং পারিবারিক কোন কুলীন পদবীও নেই, অথবা পূর্ব পদবী ঐতিহ্য পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক এমন অনেক বংশ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিশেষে বাংলাদেশে সৈয়দ পদবী আরোপিতভাবে ব্যবহার শুরু করেছিলেন।

শেখ: শেখ আরবি থেকে আগত পদবী। সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের সম্মানসূচক বংশ পদবী শেখ। যিনি সম্মানিত বৃদ্ধ অথবা যিনি গোত্র প্রধান, তাকেই বলা হতো শেখ। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সরাসরি যাকে বা যাঁদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন, তিনি বা তার বংশ ধরও শেখ নামে অভিষিক্ত হতেন অথবা শেখ পদবী লাভ করতেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে যারা শেখ পদবী ধারণ করেন, তারা এ রকম ধারণা পোষণ করেন না যে, তারা বা তাদের পূর্ব পুরুষরা এসেছিলেন সৌদী আরব থেকে। বাঙালি সৈয়দ পদবী ধারীদের থেকে শেখ পদবীধারীদের এখানে একটা মৌলিক তাৎপর্যগত পার্থক্য রয়েছে। শেখ পদবী গ্রহণের নেপথ্যে রয়েছে ঐ পূর্বোক্ত চেতনা। নবীর হাতে মুসলমান না হলেও বাংলায় ইসলাম ধর্ম আর্বিভাবের সাথে সাথে যারা নতুন ধর্মকে গ্রহণ করে নেন; নও মুসলমান’ হিসেবে প্রাচীন ও মধ্যযুগে তারাই শেখ পদবী ধারণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাদের বংশের উত্তর সূরীরাই শেখ পদবী ব্যবহার করে এসেছেন। এমনিতে অন্য ধর্মের লোকের কাছে মুসলমান মানেই শেখ বা সেক। কেউ কেই শেখ কেউ সেক কিংবা কেউ বা শেখ এর রূপান্তর শাইখও ব্যবহার করে থাকেন।

মীর: মির বা মীর শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। আরবি শব্দ আমীর’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে মীর। সেই অর্থে মীর অর্থ দলপতি বা নেতা, প্রধান ব্যক্তি, সরদার ইত্যাদি। জিতে নেয়া বা জয়ী হওয়া অর্থে মীর শব্দের ব্যবহার হতো। তবে মীর বংশীয় লোককে সম্ভ্রান্ত এবং সৈয়দ বংশীয় পদবীধারীর একটি শাখা বলে গাবেষকরা মনে করেন।

মিঞা মিঞা মুসলিম উচ্চ পদস্থ সামাজিক ব্যক্তিকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত সম্ভ্রম সূচক শব্দ। এক অর্থে সকল মুসলমানের পদবীই হচ্ছে মিঞা। বাঙালি হিন্দুর মহাশয়’ এর পরিবর্তে বাঙালি মুসলমান মিয়া শব্দ ব্যবহার করে থাকে। মিঞা’ শব্দটি এসেছে ফারসি ভাষা থেকে। প্রভু বা প্রধান ব্যক্তি বুঝাতেও মিয়া শব্দের প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে গ্রামীন প্রধান বা সর্দার অর্থের মিঞা পদবী হিসেবে বাঙালি মুসলমান সমাজে ঠাঁই পেয়েছে।

মোল্লা: মোল্লা এবং মুন্সী বাঙালির দুটো জনপ্রিয় পদবী। তাদের প্রসার প্রায় দেশব্যাপী। বঙ্গীয় শব্দকোষ এ মোল্লা শব্দের অর্থ করা হয়েছে মুসলমান পুরোহিত। বস্তুত এভাবে মসজিদে নামাজ পরিচালনার কারনেও অনেকে মোল্লা উপাধি পেয়েছিল। প্রকৃত পক্ষে, মোল্লা হচ্ছে তুর্কি ও আরবি ভাষার মোল্লা থেকে আগত একটি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞান বিশিষ্ট মহাপন্ডিত ব্যক্তি। অন্য অর্থে মুসলিম পন্ডিত বা ব্যবস্থাপক বা অধ্যাপক হলেন মোল্লা। পরবর্তী কালে মসজিদে নামাজ পরিচারলনাকারী মাত্রই মোল্লা নামে অভিহিত হতে থাকে। এখান থেকেই সাধারণত বংশ পদবী হিসেবে তা ব্যবস্থার হওয়া শুরু হয়। তাঁরা সকল জ্ঞানের জ্ঞানী না হওয়া সত্ত্বেও মোল্লা পদবী ধারণ করে। যার ফলে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ প্রবাদের উৎপত্তি হয়েছে।

দাস: বাঙালি হিন্দু সমাজে দাস বা দাশ বংশ পদবীর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যে সমস্ত হিন্দু সম্পদায়ের মানুষ পদবীতে দাশ লিখেন তাদের পেশা ধীবর থেকে এসেছে বলে গবেষকরা মনে করেন। আর যারা দাস লেখেন তাদের পদবী স্রষ্টার ভূত্য চেতনা থেকে এসেছেন।

খন্দকার: মুসলিম সমাজের ফারসি শিক্ষক হিসেবে খোন্দকার বা খন্দকারের পরিচয় পাওয়া যায় । অন্য দিকে খোন্দকারের ‘ পদবী এসেছে সামন্ত সমাজ থেকে পেশাজীবী হিসেবে। সাধারণ ভাবে খোন্দকার বা খন্দকার অর্থ হচ্ছে কৃষক বা চাষাবাদকারী । মনে করা হয় ফারসি কনদহ ‘এর যার অর্থ কৃষি’সাথেকার যুক্ত হয়ে কনদহকার> খনদহকার>খন্দকার হয়েছে। ভিন্ন মতে, খন্দকারের মূল উৎপত্তি সংস্কৃত কন্দ> খন্দ যার অর্থ ফসল বলা হয়েছে। এই খন্দ এর সাথে কার যুক্ত হয়েও খন্দকার> খোন্দকার হতে পারে। এবং এতেও পূর্বের খন্দকার’ শব্দের উৎসের অর্থের তারতম্য ঘটছে না। আবার ফারসি ভাষায়, খোন্দকার বলে একটি শব্দ আছে যার অর্থ শিক্ষক। সেখান থেকেও খোন্দকার পদবী আসা বিচিত্র কিছু নয়। অথবা খোন্দকার শব্দের যে ভিন্নভিন্ন অর্থ তার সবগুলো মিলিত তাৎপর্য থেকেই বিভিন্নভাবে খন্দকার পদবীর উৎপত্তি হয়েছে।

আখন্দ খন্দকার ও আখন্দ বা আকন সমার্থক। আখন্দ ও আকন নামে যে সব পদবী তাও সম্ভবত খন্দকার পদবীরই রূপভেদ। খন্দকার>আখন্দ> আকন হয়ে থাকতে পারে। আবার ফারসি আখুন্দ থেকেও আখন্দ এসে থাকতে পারে। যার অর্থ শিক্ষক। তবে আকন্দ এসেছে আখন্দ থেকেই।

চৌধুরী: সংস্কৃত চতুধারী শব্দ থেকে এসেছে বাংলা চৌধুরী শব্দ। এর অর্থ চর্তুসীমানার অন্তগর্ত অঞ্চলের শাসক। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জমিদারদের পদবী হচ্ছে চৌধুরী। আবার অনেকে মনে করেন চৌথহারী’ যার অর্থ এক চতুথাংশ রাজস্ব আদায়কারী, সেখান থেকে উচ্চারণ পরিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে চৌধুরী’। সেদিক থেকে চৌথ আদায়কারী বা রাজস্ব আদায়কারী পদ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার রাষ্ট্র ব্যবস্থার। বঙ্গীয় শব্দকোষ বলছে, চতুর’ যার অর্থ তাকিয়া বা মসনদ, তার সাথে যুক্ত হয়েছে ধর’ (অর্থ ধারক) এবং এই দুয়ে মিলে হয়েছে চৌধরী’ আর তার থেকেই চৌধুরী’। তবে তা মূলত হিন্দী ও মারাঠি শব্দ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে চৌধুরী বংশ পদবী ব্যবহার করা হয় এদেশে। বৃটিশ-ভারতের প্রায় সর্বত্র এ পদবীর অস্তিত্ব ছিল। কারণ চৌধুরী ছিল সামন্ত রাজার পদবী।

ভূঁইয়া: এই বংশ পদবীটি এসেছে খোদ ভূমির মালিকানা অর্থ থেকে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় এর মধ্যে এ পদবীর প্রচলন আছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে যাঁরাই ভৌমিক’ বাঙালি মুসলমান সমাজে তারা ভূঁইয়া’ হিসেবে পদবী ধারণ করেছেন। মূল সংস্কৃত শব্দ ভৌমিক > (প্রাকৃত) ভূমিকা > (বাংলা) ভূঁইয়া > থেকে ভূঁইয়া বা ভূঁঞা এসেছে। প্রাচীন বড় জমিদার বা সামন্ত রাজার উপাধিও ছিল ভূঁইয়া। প্রকৃত পক্ষে কুলীন বংশ পদবীই ছিল তা। আবার যে সব মানুষ আগে স্থান বিশেষে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি ও চাষাবাদের পত্তন করেছে তারা স্থানীয় জমিদার রাজার কাছ থেকে ভূঁইয়া নামে অভিহিত হয়ে ঐসব জমি জমার স্বত্ব লাভ করেছে।

মজুমদার: মজুমদার’ পদবী মূল আসলে মজুনদার’। এর মূল ফারসি শব্দ হচ্ছে মজমু আনদার’। রাষ্ট্রের ও জমিদারির দলিল পত্রাদির রক্ষক রাজকর্মচারীর জন্যে এই পদবী সংরক্ষিত ছিল। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমগ্র বাংলাদেশে মজুমদার’ পদবীর ব্যবহার লক্ষনীয়।

তরফদার: আরবি তরফ’ এবং ফারসি দার’ মিলে তরফদার শব্দের সৃষ্টি। রাজ্যের খাজনা আদায়ের মহালে তদারককারী বা খাজনা
আদায়কারীর উপাধী ছিল তরফদার। এই পদবী ব্যবহারকারী গোষ্ঠীর পূর্ব পুরুষরা রাজকার্য পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন,
সেখান থেকেই এই বংশ পদবী উৎপত্তি ও প্রচলন। অন্যমতে তরফদার তরফের রাজস্ব আদায়কারী লোক; তরফের মালিক; পদবী বিশেষ।

তালুকদার: আমাদের দেশে পরিচিত একটি বংশ পদবী। বাংলাদেশে জমিদারির পরই তালুক ভূ-সম্পত্তির একটি বিভাগ। মোগল ও বৃটিশ আমলে রাজস্ব ও ভুমি সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে যে সমস্ত পদবীর উৎপত্তি ও বিস্তার তার মধ্যে তালুকদার’ হচ্ছে অন্যতম পদবী। তালুক’ শব্দ থেকেও এই পদবীর মর্মাথ উপলব্ধি করা সম্ভব। আরবি শব্দ তা’ আল্লুক’ যার অর্থ ভূ-সম্পত্তি এবং এর সাথে ফারসি দার’ যুক্ত হয়ে (তা’আল্লুক+দার) তালুকদার’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে, যিনি তালুকদার, তিনি জমি ও ক্ষুদ্র ভূ-সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিতেন সরকারের কাছ থেকেও যেমন, তেমনি জমিদারের কাছে থেকেও। ফলে তিনি হতেন উপজমিদার সেই অর্থেই এসেছে তালুকদার’।

সরকার: সরকার’ শব্দটি ফারসি থেকে আগত। এর অর্থ প্রভূ, মালিক, ভূস্বামী, শাসনকর্তা, রাজা। অর্থ আদায় ও ব্যয় সংক্রান্ত কর্মচারি ও সরকার। মোগল আমলে এদেশের স্থানীয় রাজকর্মচারিদের এ পদবী দেয়া হতো। মোট কথা প্রধান কর্মচারি এবং সম্পত্তি দেখাশুনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সরকার বলা হতো। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই এ পদবীর ব্যবহার আছে।

মল্লিক আরবি মালিক’ বা মলিক’ শব্দ থেকে এসেছে মল্লিক’ বংশ পদবী। ফারসি মালিক শব্দজাত মল্লিক ভূম্যাধিকারী বা জোতদারের উপাধি। গ্রাম প্রধান বা সমাজের প্রধান ব্যক্তি মালিক। আবার লিপিকুশল রাজকর্মচারিকে মোগল আমলে মল্লিক বা সুলেখক আখ্যা দেয়া হত বলেও আমরা জানতে পারি। হয়তোবা সেই থেকে মল্লিক বংশ পদবী এসেছে।

মন্ডল: বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সমাজে সমান ভাবে ব্যবহৃত হয় মন্ডল পদবী। বাংলাদেশে অতীত কাল থেকে গ্রামের অনানুষ্ঠানিক এবং সাধারণ ভাবে গ্রাম- প্রধানকে বলা হয় মন্ডল। বাংলা মন্ডলরা আগে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। মন্ডলীয় কাজ করে তারা অনেক অধিকার ভোগ করতেন। খাজনা আদায়কারী ও রায়তদের মধ্যস্থতা করা কিংবা গ্রামীন বিবাদ আপোস মীমাংসা করতে মন্ডলরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতেন। কোন কোন সময় তাদের অধীনে পাটোয়ারি, তহসিলদার, চৌকিদার ইত্যাদি কর্মচারী কাজ করতেন। সরকার ও রায়তদের মধ্যবর্তী মানুুষ হিসেবে মন্ডলরা অধিক পরিচিত ছিল।

ফকির: মুসলমানদের মধ্যে সন্ন্যাসবৃত্তি’ থেকেই এসেছে ফকির’ পদবী। মরমী সাধকরা গ্রহণ করতেন ফকির’ পদবী। এটি আরবি শব্দ, যার মূল অর্থ নি:স্ব। আবার আরবি ফকর শব্দের অর্থ দারিদ্র। এ থেকে ফকির শব্দের উৎপত্তি। ফকির এবং পার্শি দরবেশ ব্যক্তিগণ সাধারণত এদেশে ফকির নামে পরিচিত। বিশেষ কোন ধর্ম মতের একান্ত অনুসারী না হয়ে যারা সকল ধর্মের মূলনীতি নিয়ে আত্মতত্ত্বের সন্ধান করেন তাদেরকেও ফকির বলা হয়। আবার সুফি বা বাউল তত্বের ধারকরাও ফকির।

ঠাকুর: বাংলা শব্দের বিশেষজ্ঞ হরিচরণ বন্দ্যোপধ্যায়ের মতে- ঠাকুর শব্দের মূল হচ্ছে (সংস্কৃত) ঠাক্কুর’ তার থেকে (প্রকৃত) ঠকুর (বাংলা) ঠাকুর এসেছে। পদবীগত দিক থেকে তা ব্রাক্ষণের পদবী বিশেষ, এমনকি ক্ষত্রিয়েরও উপাধি এটি। মধ্য যুগের কাব্য চৈতন্য ভাগবত’ উদ্ধৃত করে লেখক বলেছেন, তা বৈঞ্চবেরও উপাধি। যেমন, হরিদাস ঠাকুর। পাচক ব্রাক্ষণও এক প্রকার ঠাকুর বলে পরিচিত। তবে আহমদ শরীফ সম্পাদিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান’ বলছে, সংস্কৃত ঠক্কুর থেকে ঠাকুর আসলেও এর মূলে ছিল তুর্কী শব্দ। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান উভয়েই এই পদবী ব্যবহার করে। এরকম শতাধিক বংশ পদবী রয়েছে আমাদের দেশে। বাঙালির পদবীর ইতিহাস বৈচিত্র পথ ও মতের এক অসাধারণ স্মারক হিসেবে চিহিৃত।

(মূল লেখাটির সুত্র বহু খুজেও বের করতে পারিনি। এটা বিভিন্ন ব্লগ ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হচ্ছে মাঝে, মাঝে। তথ্য সমৃদ্ব মনে হওয়াতে রেকর্ড হিসেবে আমার ব্লগে রেখে দিলাম)।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২৯

শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেছেন: মৃধা বাদ পড়েছে ভাই।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আসলেই তথ্য সমৃদ্ধ একটি লেখা ; আমি আগে পড়েছি বলে মনে পরে না ।
তবে পারিবারিক পদবীর ইতিহাস নিজের আগ্রহে খুঁজে নিয়েছিলাম ।

ধন্যবাদ চমৎকার শেয়ারের জন্য ।
আর হ্যাঁ
ফিরে আসায় শুভেচ্ছা !

৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য।

৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এসব কিন্তু আমাদের সাধারন জ্ঞান চর্চায়ই থাকতে পারত।
নিজেদের জানার চেনার জ্ঞান গুলো উপেক্ষা করে উগান্ডার রাজধানী কোথায় পড়ে
অফিসার হয়ে যাচ্ছে!!! ফলে শূন্যতা বাড়ছে পৌন:পুনিক হারে!!

বংশ পরিচয়ের কুষ্টিনামা ভাল লাগল :)

+++

৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:




বেশ তথ্য সমৃদ্ধ । বংশগুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । আগের মত জৌলুশ নেই ।

৬| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৩

হাফিজ রাহমান বলেছেন: ভেবেছিলাম, লেখক আপনি নিজেই। যাক, তবু সংগ্রহ করে হলেও সুন্দর একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। এ বিষয়ে বিশিষ্ট লেখক ড. মোহাম্মদ হান্নান এর একটি বই আছে। সেখান থেকে সহযোগিতা নিয়েও লেখাটি প্রস্তুত করা হয়ে থাকতে পারে। যা হোক, লেখাটির উপর আমি কিছু সংযুক্তি তুলে ধরছি।

১। সৈয়দ শব্দটির মূল ও শুদ্ধ উচ্চারণ হলো, সাইয়িদ। শব্দিট আরবী ভাষার। এর আভিধানিক অর্থ নেতা, কর্তা।

২। শেখ শব্দটির শুদ্ধ ও মূল উচ্চারণ হলো, শাইখ। এর আভিধানিক অর্থ হলো, বৃদ্ধ, বয়স্ক, প্রধান ব্যক্তি।

৩। মিয়াঁ শব্দটি ফারসী ভাষার শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ প্রভু, অধিপতি, ভদ্রলোক, মহাশয়।

৪। মোল্লা শব্দের আভিধানিক অর্থ
১. মোল্লা বি. (বিশেষ্য) মুসলমান পণ্ডিত পুরোহিত বা ব্যবস্থাপক। [তুর. মুল্লা] (অর্থাৎ তুর্কি পরিভাষায় মোল্লা শব্দটি হ্রস্ব উ কার যোগে মুল্লা উচ্চারিত হয়।) মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত- মোল্লার জ্ঞান ও ক্ষমতার পরিধি মসজিদের ভিতরেই সীমাবদ্ধ; (আল.) অর্থাৎ আলংকারিক অর্থে প্রবাদটির অর্থ করা হয়- লোকের জ্ঞান ও ক্ষমতা স্ব স্ব কর্ম ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
শৈলেন্দ্র বিশ্বাস কর্তৃক সংকলিত দেব জ্যোতি দত্তের সাহিত্য সংসদ প্রা লি ৩২ এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, কলকাতা ৭০০০০ হতে প্রকাশিত সংসদ বাংলা অভিধান ৫০৮
২. মোল্লা [মোললা] বি. (বিশেষ্য) ১ পরিপূর্ণ জ্ঞান বিশিষ্ট মহাপণ্ডিত ব্যক্তি (মোল্লা জামী, মোল্লা আলী কারী, মোল্লা আহমদ জিওন)। ২ আরবি ফারসি ভাষা ও ইসলামি শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তি। ৩ বংশীয় উপাধি বিশেষ (রফিজ উদ্দিন মোল্লা) গিরি বি মোল্লার কাজ বা কর্ম। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত বিণ (অর্থাৎ বিশেষণ) ( আল.) আলংকারিক অর্থে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে জ্ঞান ও শক্তি সীমাবদ্ধ। {আ. মুল্লা مُلاَّءٌ } (অর্থাৎ মোল্লা শব্দটির মূল রূপ হলো আরবী مُلاَّءٌ।
ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক ও শিব প্রসন্ন লাহিড়ী সম্পাদনায় বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান-১০০১
৩.
ملا- مولى كا بگاڑ (১) عالم فاضل ملا كى داڑهى تبرك ہى تبرك ميں گئى- (مثل) بے فائدہ اور فضول ہونيكى موقع پر بولتى ہيں- ملا كى دوڑ مسجد تك- (مثل) ہر شخص كى كوشش اسكے حوصلے اور مقدور تك ہوتى ہے-
مولوى فيروز الدين صاحب كا تاليف شده فيروز اللغا ৬৪৯
৪. মোল্লা [অ] n 1 a very learned man; doctor 2 priest 3 school master 4 judge; jurist; mullah ~ গিরি n profssion/ office of a mullah ~তন্ত্র n government by/ dominated by mullah -র দৌড় মসজিদ পর্যন্ত (derog) a mullah.s knowledge dose not extend beyond the mosque one.s knowledge is limited by one’s station of life.
(Bangla academy Bengali-English Dictionary-683)
মোল্লা শব্দের উপরোক্ত আভিধানিক আলোচনায় এর পারিভাষিক অথর্টি ফুটে উঠেছে। তবে দুটি অভিধানে মোল্লা শব্দের মূল ধাতু নিয়ে বিপরীত মুখী দুটি মত পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে মোল্লা শব্দের আরবী মূল রূপ বলা হয়েছে مُلاَّءٌ । আরবী এ শব্দটির ধাতুগত আরো গভীরতায় গেলে মোল্লা শব্দের মূল ধাতু দাঁড়ায় م ل ء । তবে আসল ব্যাপার হল, মুল্লা উচ্চারণের কোন শব্দ আরবী অভিধানগুলোতে পাওয়া যায় না। এমন একটি কমন শব্দকে আধুনিক-প্রাচীন কোন অভিধানকর্তা তাদের অভিধানে ধরবেন না -ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হবে। উপরন্তু আরবী ملأ (মালা-উন) ধাতুর অর্থের সাথে মোল্লা শব্দের অর্থের তেমন একটা সাযুজ্য নেই। এ দিক বিবেচনায় মোল্লা শব্দের আদি ও মূল রূপকে আরবী مُلاَّءٌ (মুল্লাউন) ধরে নিতে পারি না।
অন্য দিকে মওলভী ফিরুজুদ্দীন কৃত উর্দূ অভিধান ফিরুজুললুগাতে বলা হয়েছে, মোল্লা শব্দটি মূলত মওলা শব্দের অপভ্রংশ। আর আরবী মাওলা (المولى) শব্দের মূলধাতু হল و ل ى । আর وَلِىَ শব্দ থেকে বন্ধু হওয়া, মিত্র হওয়া, কিংবা কর্তৃত্ব করা, শাসন করা, ক্ষমতাসীন হওয়া ইত্যাদি অর্থ সৃষ্টি হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মোল্লা শব্দের ধাতুগত অর্থ এবং অভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের মাঝে বেশ সাযুজ্য লক্ষণীয়। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি, মোল্লা শব্দটি মূলত মাওলা শব্দের ভুল সিদ্ধ একটি শব্দ। মানুষের মুখে চলতে চলতে তার আদি রূপ ম্লান হয়ে গেছে। ভাষা সংস্কৃতির আবহমানতায় এরূপ নজীর ভুরি ভুরি বিদ্যমান। শব্দের ভাষাগত বিবর্তনে মানুষের মুখ চালনার বেশ বড় একটা দখল রয়েছে। একটি শব্দের ভুল ব্যবহার কিংবা অশুদ্ধ উচ্চরণ মানুষের ব্যবহার চালনায় এক কালে তা শুদ্ধতা এমনকি সাহিত্য পদমর্যাদাপূর্ণ শব্দের স্বীকৃতি লাভ করে। ভাষা-শব্দ মানুষের মুখের হাওয়ায় উড়ে তার রূপ বদলায়। ধারণ করে বিবিধ বিচিত্র রূপ। শব্দগত এমন রূপ বৈচিত্রের আবহ সব ভাষাতেই রয়েছে। এ থেকে মুক্তি কোন ভাষাতেই সম্ভব নয়।

৫। ফকির শব্দটি আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অভাবগ্রস্থ, মুখাপেক্ষী।

৭| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৭

সাগর শরীফ বলেছেন: খুব ভল ছিল +++

৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১১

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: নামের পদবী টুকটাক জানলেও এত বিস্তারিত জানা ছিলনা

তথ্য নির্ভর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:১১

ক্লে ডল বলেছেন: প্লাস!!!!

'কাজী' পদবীটা বাদ পড়েছে।

১০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:২২

সুমন কর বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

১১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৩

শৈবাল আহম্মেদ বলেছেন: ধন্যবাদ,
তবে পদবীগত দিক থেকে সমাজের মানুষের আচার আচরন ও স্বাভাব চরিত্রের কম বেশি পরিবর্তন দেখা যায়। এরকম ধরনের বহু উপাধী নিয়ে তর্ক বিতর্ক,সমালোচনা,মতভেদ,ঘৃণা,হিংসা ও মান মর্যদার ব্যপার ঘটে থাকে সমাজে। প্রকৃত্বার্থে এসকল উপাধী যেটাই হোক না কেন যে ব্যক্তি জ্ঞানী,নিরপেক্ষ,সৎ ও অন্যের মঙ্গলকামী-সেই ব্যক্তিই সঠিক বা ভাল। কেননা ভাল-মন্দ মানুষ পরিস্থিতির প্রভাবে সমাজে,পরিবারে ও রাষ্ট্রে এমন ভাবে সৃষ্টি হয়ে মিসে আছে যেন কোন ভাবে পদবী বা জাতী হিসাবে কখনও বিচার করা যায় না যে কে ভাল কে মন্দ। আবার কে কখন ভাল কখন মন্দ। তবে পদবী নিয়ে মাতামাতি করা যুক্তিসংগত না।

১২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

বানেসা পরী বলেছেন: হে হে। আমি তো অন্য কথা শুনে বড় হয়েছি।

ভুঁইয়া...
নেংটি পরে খুইয়া।

খন্দকার...
চোখে মুখে অন্ধকার।

মিঞা...
জলদি করেন বিয়া।

হা হা হা।
আসল সম্ভাব্য নাম। পদবীর ইতহাস জেনে ভাল লাগল।
তবে বলতেই হবে-
'জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল।'

১৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ভিনগ্রহের মানুষ বলেছেন: লেখাটি পড়ে নিজের জ্ঞানের পরিধি আরো বেশি সমৃদ্ধ করে নিলাম। লেখাটি পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.