নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গায়ে এখনও দেশী মাটির গন্ধ...কানাডাতে আসার সাথে এই ব্লগে লেখালিখি জড়িয়ে আছে। ২০০৭ এ আসি। সে সময় থেকেই লিখি। এখন ফেবুতে বেশি এক্টিভ। ফেবু: fb.com/bdidol9x/ পেজ: fb.com/bdidol5x

বিডি আইডল

ফেবু: facebook.com/bdidol3x ফেবু পেজ: facebook.com/bdidolx

বিডি আইডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭৭ সনের সামরিক অভ্যুত্থানের অজানা কাহিনী

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২১

একটি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল ঢাকা। আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জাপানেও। ঘটনা ঘটিয়েছিল জাপানি লাল ফৌজ। যাকে বলা হয় রেড আর্মি (Japanese Red Army - JRA)। জাপানের উগ্রপন্থি একটি গোষ্ঠী। ১৯৭৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর। ১৩৭ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু নিয়ে জাপান এয়ারলাইনসের একটি বিমান (Japan Airlines Flight 472) জঙ্গিরা ছিনতাই করে ঢাকায় জরুরি অবতরণ করে।



ঘটনার নেপথ্যে ছিল রেড আর্মির ৯ সদস্যের মুক্তি ও ৬০ লাখ মার্কিন ডলার আদায়। ঘটনা সুরাহায় ঢাকায় এসেছিলেন সে সময়ের জাপান সরকারের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হাজিমে ইশিই। তাঁর নেতৃত্বে সমঝোতা বৈঠকের সময়ই বাংলাদেশের বিমানবহিনীতে ঘটে নাটকীয় এক অভূত্থান।

হাজিমে ইশিই খুব কাছ থেকে সেই অভূত্থানের নানা ঘটনা অবলোকন করেছেন। হাজিমে ইশিই’র বয়ানে দেখে নেয়া যাক সে সময়ের ঘটনাবলী।

হঠাৎ গুলির আওয়াজ শোনা গেল। কী হয়েছে? তৎক্ষণাৎ কিছুই বুঝতে পারিনি। এটাই ছিল সেই সামরিক অভ্যুত্থানের সূচনার সংকেত, যার ফলে জাপান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাই ঘটনার গতি-প্রকৃতি একেবারে অন্যদিকে মোড় নিতে বাধ্য হয়।
ভোর পাঁচটা। কয়েক দিন ধরে অব্যাহত উত্তেজনাপূর্ণ ও ক্লান্তিকর ঘটনাবলীর দরুন ঢাকা বিমানবন্দর যেন মোটা চাদরের নিচে চাপা পড়েছে। সেই ভারী ঢাকনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলার মতো করে বাজুকা কামান ও মেশিনগানের শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে বিমানবন্দরের উপরের আকাশে। তখন আমরা সরকারি প্রতিনিধিদলের সব সদস্য না ঘুমিয়ে জঙ্গিদের মোকাবিলার পরবর্তী কৌশল নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কানফাটা আওয়াজ শুনে প্রথমে আদৌ বুঝতে পারিনি সেটা কিসের শব্দ। আর সেই শব্দ মনে হয় আস্তে আস্তে বিমানবন্দরের কাছে, অর্থাৎ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ভয় ও অস্বস্তিতে আমাদের মন ভরে গেল। এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদসহ বাংলাদেশি সামরিক অফিসারদের কাছ থেকে কিছু জানা যায়নি। যেন কিছুই হয়নি, এমন মুখ করে তাঁরা বরাবরের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

সামরিক অভ্যুত্থানের অবসানের পর আমরা জানতে পেরেছিলাম, ঢাকা বিমানবন্দর সেই সময় প্রায় বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাচ্ছিল। বিদ্রোহী সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের নিচে টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়েছিল। তা সত্ত্বেও এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ শান্ত মনোভাব বজায় রেখেছিলেন। তিনি সম্ভবত নতুন পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন, কিন্তু আমাদের কাছে সেটা গোপন রাখতে চেয়েছেন।
এক সময় বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ হঠাৎ আমাকে বললেন, ‘মি. ইশিই, আমি গিয়ে একটু ঘুমাবো। বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ১০০ ঘণ্টার বেশি সময় চলে গেছে। এর মধ্যে আমার বিশ্রাম নেয়ার কোনো সুযোগ হয়নি। আর পারছি না। দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে আসি, কী বলেন?’

তাঁর কথার ভঙ্গিতে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। আমি সরলভাবে বললাম, ‘অবশ্যই। আপনার বিশ্রাম নেয়া দরকার। তবে বিমানটি চলে যাবে না তো?’

‘না। আপনাকে আগেও বলেছি, আমাদের অনেক গাড়ি দিয়ে রানওয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ওরা কখনো উড়ে যেতে পারবে না। তাছাড়া জঙ্গিরা তাদের দাবি করা লোকজন ও টাকা পেয়ে স্বস্তিবোধ করছে। তারাও এখন একটু বিশ্রাম নিতে চাইবে। দুই পক্ষের উচিত হবে খানিকক্ষণ মাথা ঠা-া করে আবার আলোচনা শুরু করা। আপনি তো জানেন, আমাদের পাশে সব সময় আল্লাহ থাকেন।’

তবে যতটুকু পারেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন, আমার এমন মিনতিতে হাসিমুখে সায় দিয়ে মি. মাহমুদ নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে বেরিয়ে পড়েন। এটাই ছিল তাঁকে সেখানে প্রত্যক্ষ করার শেষ সুযোগ। তিনি আর নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে ফিরে আসেননি।

আবার কানফাটা গুলির আওয়াজ হলো। বিমানবন্দরের মূল ভবনের ভেতরে গুলি বিনিময় শুরু হয়ে গেল। পরে জানতে পারলাম যে, বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর মুখে এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ বিদ্রোহী সৈন্যদের হাতে প্রায় ধরা পড়েছিলেন, তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত উপ-রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার আমার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের কক্ষে ছিলেন। কিন্তু আমার অজান্তেই তিনি অন্যান্য সামরিক অফিসারের সঙ্গে সেখান থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।

ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে শুধু ভয় বাড়তে থাকে। ভোর সাড়ে পাঁচটা। এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদের একজন সহযোগী মাইক্রোফোন তুলে জঙ্গিদের ডাক দিলেন। তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেন আনসার চৌধুরী। দীর্ঘদেহী ও সুদর্শন তরুণ অফিসার। তাঁর মিলিটারিসুলভ চেহারা আমার বেশ ভালো লাগতো। তবে তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে জঙ্গিদের জানান, ‘সামান্য সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আপনাদের বিমানে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে আপনাদের বিমান থেকে ৩০০ মিটারের পরিধির মধ্যে যদি নিয়মিত বাহিনী-বহির্ভূত কোনো সৈন্য ঢুকে পড়ে, সে ক্ষেত্রে তাদের গুলি করে হত্যা করতে পারেন।’

কথাটা শুনে আমার মতো জঙ্গিরাও রীতিমতো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। কী উত্তর দেবে, বুঝতে না পেরে তারা কেবল গর্জনের মতো শব্দ করতে থাকে। তারপর তরুণ অফিসারটি চিৎকার করে বলেন, ‘তাদের গুলি করে হত্যা করতে পারেন!’

‘আপনি কি সত্যি সত্যিই বলছেন,’ জানতে চাইলো জঙ্গিরা।

‘হ্যাঁ, সত্যিই। আপনাদের নিজেদের নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে।’

তারপর আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে মি. চৌধুরী বললেন, ‘স্যার সামান্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে অচিরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না।’

এ কথা বলে তিনি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে বেরিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কখনো ‘অভ্যুত্থান’ কথাটা বলেননি। আমরা পরে জানতে পারলাম, বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বিদ্রোহী সেনাদের গুলিতে তিনি নিহত হন।

পরিস্থিতি এমন উত্তেজনাপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও আমরা জাপানিরা বুঝতে পারিনি যে, একই ভবনের মধ্যে হত্যাকা- চলছে। কারণ, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। রাত পার হয়ে সকাল হলে সবকিছু যখন পরিষ্কার দেখা যেতে শুরু করে, তখন প্রথম আমরা জানতে পেরেছিলাম পরিস্থিতির ভয়াবহতা।

আরো পড়তে চাইলে: Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: =Happy New Year=

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:১৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৬

সোহানী বলেছেন: জানতাম না। ভালোলাগলো শেয়ারিং।

৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩২

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: অবশেষে একটা পোস্ট B-))

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.