নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয়
একটা দুঃসংবাদ শুরুতে দিচ্ছি। আমার চাকরি নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই নেই। তোমাকে বলতে পারছিলাম না। বলতে লজ্জা পচ্ছিলাম বলেই যে বলিনি। তা কিন্তু না।
তুমি কস্ট পাবে সে জন্যেই বলতে পারিনি।
আমি কাওকে কস্ট দিতে চাই না। কিন্তু কেনো জানি আমার কারনেই মানুষ বেশী কস্ট পায়। আমার বাবা ছিলেন স্কুলের অংক শিক্ষক। তার মত অংক জানা লোক গোটা ময়মনসিংহে ছিলো না বলে কথাটা প্রচলিত ছিলো।
মেট্রিক পরীক্ষার সময় তিনি কত যত্ন করে আমাকে অংক শেখালেন। সেই আমি অংকে ফেল করলাম। অন্যসব বিষয়ে ভালো নম্বর। শুধু অংকে একুশ।
প্রথমবার আমি মেট্রিক পাশ করতে পারিনি শুধু অংকের কারনে। রেজাল্ট হবার পর বাবা সারাদিন মাথা নীচু করে রইলেন। তার দু'মাসের মাথায় বাবার মৃত্যু হলো।
আমি পরের বছর অংকে লেটার নম্বর নিয়ে পাশ করলাম। বাবা তা দেখে গেলেন না।
আমার মা সাদাসিধা মানুষ ছিলো। তিনি শুধু চেয়েছিলেন আমি একটা চাকরি করি এটা দেখে যেতে। মা দেখে যেতে পারেননি।
তিনি শুধু দেখেছেন আমি পাগলের মত চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছি। মা তখন খুব অসুস্থ। মৃত্যুশয্যা পেতেছেন।
রোজ দুপুরে একবার করে জিজ্ঞেস করেন,ও খোকন,"পিওন কি এসেছে?"
আমি বলি,হ্যা।
চাকরির কোন খবর আছে বাবা?
না কোন খবর নেই।
আমার ফুপু আমাকে বললেন খোকন তুই মিথ্যা করে বল চাকরি পেয়েছিস। দেখছিস না তোর মার কি অবস্থা?
আমি ফুপুকে বললাম,একজন মানুষ মরে যাচ্ছে। তাকে ভুলাবার জন্য আমি মিথ্যা বলবো না।
ফুপু কঠিন গলায় বললেন,তোর কপালে দুঃখ আছে । তুই মানুষ না তুই নিতান্তই গরু।
ফুপু মাকে গিয়ে বললেন,খুব ভালো সংবাদ। খোকনের চাকরি হয়েছে । চিঠি এসেছে।
মা আগ্রহের সঙ্গে বললেন,কই কই। চিঠি কই?
ফুপু মার হাতে কি একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। মা পড়তে জানতেন না। সেই তুচ্ছ কাগজ তিনি বুকে জড়িয়ে অনেকক্ষন কাঁদলেন। তোর বাবা বেঁচে থাকলে আজ কত খুশি হতো। কই খোকন আমাকে সালাম কর। এতো ভালো সংবাদ এসেছে মাকে সালাম করে দোয়া নিবি না?
আমি মাকে সালাম করলাম না। ভ্রান্তিকে প্রশ্রয় দিলাম না।
ফুপু মাকে বললেন,খোকন লজ্জা পাচ্ছে। সালাম করবে না। তুমি বিনা সালামে ছেলের জন্য দোয়া করো।
মা আমার জন্য দোয়া করলেন। নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে অসীম শোকরিয়া জানিয়ে তৃতীয় দিনের মাথায় মারা গেলেন। মৃত্যুর সময় ও সেই তুচ্ছ কাগজ তার হাতে ছিলো।
কিছু কিছু মানুষ বিচিত্র ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আমার ভাগ্য হচ্ছে আমি কখনো প্রিয়জনদের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারবো না।
তোমার চেয়ে প্রিয়জন আমার কে আছে? তোমার প্রত্যাশা যে আমি পুরণ করতে পারবো না তা আমি ধরে নিয়েই জীবন শুরু করেছি।
তুমি যে অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছো। সেই অস্থিরতা এবং সেই অস্থিরতার কারন আমার অজানা নয়। তোমার এই প্রচন্ড দুঃসময়ে আমি তোমার পাশে দাড়াতে পারছি না। কারন কিছু কিছু যন্ত্রনা আছে যা একা বহন করতে হয় এবং যন্ত্রনা জয়ের পথ বের করতে হয়।
প্রিয় আমার একমাত্র শুভ কামনা তুমি তোমার যন্ত্রনামুক্তির পথ নিজেই বের করবে। তোমাকে শুধু এই আশ্বাস দিচ্ছি তুমি যে পথই বেছে নাও আমার তাতে সমর্থন থাকবে।
সেই পথ যদি আমার জন্য তীব্র কস্ট ও গ্লানির হয় তাতেও ক্ষতি নেই। তুমি ভালো থাকো। তুমি কস্ট পেয়ো না।
আমি এখানে ভালো আছি বাবা যে স্কুলে চাকরি করতেন আমি সেখানেই চাকরি পেয়েছি। বেতন সামান্য। তবে এতেই চলে যাবে। পৃথিবীর কাছে আমার দাবী সামান্যই।
প্রিয় আমি আর শহরে ফিরে যাবো না। এখানেই থাকবো। আমার জন্য এই ভালো।
উপরের চিঠিটি হুমায়ন স্যারের লেখা আমার অনেক প্রিয় বই ছায়াবীথির। পড়ে দেখতে পারেন।
ডাওনলোড লিংকঃ
মিডিয়াফায়ারঃ ক্লিক করুন
4shared: ক্লিক করুন
box: ক্লিক করুন
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০১
ঠেলাগাড়ির পাইলট বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার একটা উপন্যাস।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০২
ঠেলাগাড়ির পাইলট বলেছেন: আসলেই
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৬
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: পড়তে হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৫
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: একটা চিঠিতেই বইয়ের রিভিউ হয়ে গেলো +
ভালো থাকবেন