নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথের মাঝেই পথ হারানো এক ক্লান্ত পথিক আমি, জীবনপথের ঠিকানা হারিয়ে ছুটে বেড়াই দিক-বিদিক, ছুটতে ছুটতে আজ বড্ড ক্লান্ত !!!

বেঙ্গল রিপন

পথের মাঝেই পথ হারানো এক ক্লান্ত পথিক আমি জীবনপথের ঠিকানা হারিয়ে ছুটে বেড়াই দিক-বিদিক, ছুটতে ছুটতে আজ বড্ড ক্লান্ত !!!

বেঙ্গল রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাগো বাহে... কুন্ঠে সবাই ?

৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫


নুরালদীন: ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া এক নায়ক
১৭৮২ সালের এক বিকেল।রংপুরের এক জমিদার বাড়ীর উঠানে লোকটির হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে।
গায়ে অসংখ্য ক্ষত।
সেই ক্ষত দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে এই ক্ষত চাবুকের।
শুধু এই লোকেরই নয় লোকটির আশে পাশে এরকম প্রায় বিশ জন লোক আছে যাদের বেঁধে রাখা হয়েছে।
সন্ধ্যা হয় হয়। এক লোক চিৎকার করল "পানি পানি"
কিন্তু কে কাকে পানি দিবে? সবারই তো হাত বাঁধা।
অনেকক্ষন পরে এক লোক এল। কর্কশ কন্ঠে বলল "কীসের এত চিৎকার চেঁচামেচি?"
এই লোকটিকে দেখে অনেকে ভয় পেল। দুপুরে এই লোকটিই তাদেরকে চাবুক দিয়ে পিটিয়েছে।
লোকটার হাতে এখনো চাবুক। জিজ্ঞেস করল "কে পানি চেয়েছে?"
শুকনা কন্ঠে একজন বলল "হামি"
চাবুক হাতে লোকটি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে পিপাসার্ত লোকটিকে চাবুক দিয়ে দুই ঘা দিল।
চিৎকার করে লোকটি কাঁদতে থাকল "আমার জমিতে ফসল হয় নাই। খাজনা কীভাবে দিব?
আমাকে পানি দেন। আজীবন আপনাদের গোলামী করব।
কথা দিচ্ছি আগামী বছর এই বছরের খাজনা সহ শোধ করে দিব।"
কিন্তু কে শোনে কার কথা। পানি না পেয়ে লোকটি কিছুক্ষন পরে মারা গেল।
চাবুক হাতের লোকটি বাকী সবার দিকে তাকিয়ে বলল "তোদের সবার পরিণতি একই হবে।"

কিছুক্ষণ পরে এক হোমড়া চোমড়া লোক এল।
সে এসে চাবুক হাতের লোকটিকে জিজ্ঞেস করল "এরা এখনো মরে নাই?"
চাবুকওয়ালা "একটা মরছে।বাকীগুলো মরার অপেক্ষায় আছে।"
বাইরে হঠাত শোরগোল শুরু হল। তুমুল হট্টগোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
হট্টগোলের মধ্যে "জাগো বাহে" শব্দ দুটো শোনা গেল।
বেঁধে রাখা কৃষকদের মুখে হাসি ফুটল। একজন বলল "জাগো বাহে। নুরালদীন এসেছে।
আমাদের মুক্তি করবেন।
জমিদারদের অতিরিক্ত খাজনার বোঝা থেকে আমাদের উদ্ধার করবেন।"
কিন্তু কে শোনে কার কথা। পানি না পেয়ে লোকটি কিছুক্ষন পরে মারা গেল।
চাবুক হাতের লোকটি বাকী সবার দিকে তাকিয়ে বলল "তোদের সবার পরিণতি একই হবে।
....খারাপ লোক। আমাদের পেলে শেষ করে দিবে।
জমিদারদের কোন সিপাহীকে সে বাঁচিয়ে রাখবে না।" তারা পালাতে পারল না।
এর মধ্যে নুরালদীনের বাহিনী চলে এল। দুই জনকে হত্যা করা হল। কৃষকদের মুক্তি দেয়া হল।
এতক্ষন যেসব কৃষক নির্যাতিত হচ্ছিল তারা সবাই নুরালদীনের বিদ্রোহী বাহিনীতে যোগ দিল।

মাত্র দুই দশক আগে পলাশীর আম্রকাননের বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ডুবে গেছে।
বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে মির্জাফরের বিশ্বাস ঘাতকতায় পরাজিত করে বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গর্ভনর ওয়ারেন হেষ্টিংস দেবী সিং নামক এক অত্যাচারী লোভী ব্যক্তিকে রংপুর অঞ্চলের ইজারাদার নিয়োগ করেন। দেবী সিং ইজারা পাওয়ার পর বেশি রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রজাদের উপর অত্যাচার করেন। অতিরিক্ত কর প্রদানে ব্যর্থ হয়ে দেবী চৌধারাণী সহ বহু জমিদার তাদের সম্পদ ও জমিদারী হারান। আর কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। খাজনা দিতে না পারায় দলে দলে কৃষকদের জেলে পাঠানো হয়।
সহায়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কৃষকদের ধরে এনে পিঠে চাবুকের কষাঘাত করা হয় ও কুড়ে ঘর আগুনে পুড়ে ছাই করা হয়।
এ সময় অনেকে মহাজনের দ্বারস্থ হয়। অনেকে বনে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
নারীদের উপর সীমাহীন অত্যাচার চালানো হয় এবং অনেককে জেলে পাঠানো হয়। কৃষককুল তাদের লাঙ্গল, বলদ, বাড়ি-ঘর সবই হারায়। এই নির্মম ও পাশবিক অত্যাচারের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য ১৭৮২ খ্রিষ্টান্দে রংপুর অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুন ধুমায়িত হয়ে উঠে। কৃষকরা প্রথমে দেবী সিংহের অত্যাচার বন্ধ ও অন্যান্য দাবী পুরণের জন্য রংপুর কালেক্টরেট গুড ল্যান্ডের নিকট দাবী জানায়।
গুড ল্যান্ড দাবী না মানায় এ অঞ্চলের নীপিড়িত মানুষ নুরালদীন নামক এক সংগ্রামী ও সাহসী কৃষককে নবাব হিসেবে ঘোষনা দিয়ে খাজনা দেবে না এমনকি ইংরেজ শাসন মানবে না মর্মে ঘোষণা দেয়।
কৃষকের নবাব নুরালদীন এক ফর্মান জারী করে দেবী সিংকে খাজনা দিতে বারণ করেন।

১৭৮৩ সালের রংপুরের এই কৃষক বিদ্রোহ পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম সহ সমগ্র এলাকায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীদের হাতে ডিমলার জমিদার মারা যান।
দেবী সিং ও গুড ল্যান্ড সেনাপতি ম্যাকডোল্যান্ড এর নেতৃত্বে এক দল সৈন্য রংপুরের কৃষক বিদ্রোহ দমন করার জন্য প্রেরণ করেন।
এই বাহিনী পথে পথে বিদ্রোহীদের বাঁধার সম্মুখিন হন এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে দেন।
নুরালদীনের বাহিনী ইংরেজ সৈন্যদের ঘাটি মোগলহাট আক্রমণ করে।
এ যুদ্ধে অদম্য সাহসী কৃষকের নবাব নুরালদীন আহত অবস্থায় বন্দী হন এবং ইংরেজরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এর পর দেবী চৌধারাণী, ভবানী পাঠক, কৃপানাথ, অনুক নারায়ন, শিব চন্দ্র রায়, চ্যারাগ আলী, শ্রী নিবাস প্রমূখ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধারানী পায়রাডাঙ্গা মঠ ও মন্দির স্থাপন করে সন্ন্যাসী বেশে আশ্রয় নিয়ে দিনের বেলা পূজা আর্চনা করত আর রাতের আধারে বেনিয়া ইংরেজদের উপর আক্রমণ চালাতো।
এই মঠ মন্দিরে সন্ন্যাসীগণ ছিলেন বৈদান্তিক হিন্দু যোগী। এই সন্ন্যাসীগণ ত্রিশূল ব্যবহার করতেন।
একটি সূত্র মতে বিদ্রোহীরা হিন্দু-মুসলমান ধর্মের মধ্যে ইংরেজ হটাও মন্ত্রে এক অপূর্ব সেতুবন্ধন রচনা করেন ও তাদের আচরণগত তার দৃশ্যমান ছিল। এই বাহিনীর যোদ্ধারা ছিলেন মোগল সম্রাজ্যের বেকার সৈন্য ও বাংলার ভূমিহীন নিপীড়িত কৃষক।

নুরালদীনরা পরাক্রমশালী ব্রিটিশ ওয়ার মেশীনের সামনে বেশীদিন টিকতে পারে নি সত্য।
কিন্ত নুরালদীন যে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে দিয়ে গিয়েছিলেন এই বাংলার বুকে – তাই ধীরে ধীরে সাওতাল বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ ইত্যাদি হয়ে সর্ব ভারতীয় সিইপাহী বিদ্রোহে রুপ নিয়েছিল একশো বছরের ও কম সময়ের মধ্যে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩

অশ্রুকারিগর বলেছেন: মীরজাফরদের নাম আমাদের কাছে যতটা পরিচিত ততটা পরিচিত নয় নুরালদীন, তিতুমীরদের ইতিহাস। সুন্দর লিখেছেন। পোস্টে ভাললাগা।

২| ৩০ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৩

কল্লোল পথিক বলেছেন:



অসাধারন পোস্ট।
পোস্ট+++++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.