নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা

বেপরোয়া বক্তা

আইনজীবী , সাবেক ছাত্রনেতা

বেপরোয়া বক্তা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘে ঢাকা তারা : একটি অনবদ্য চলচ্চিত্রের কথকতা

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০

কিংবদন্তী পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জীবন আর কর্মকে
উপজীব্য করে নির্মাণ করা হয়েছে মেঘে ঢাকা তারা
ছবিটি।বিগত ১০ বছরের মধ্যে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ
বাংলা ছবি এটি।ছবিটির মূল মেসেজ অনুধাবন করতে
হলে ঋত্বিক ঘটকের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে ধারণা থাকা
প্রয়োজন।ছবির মূল চরিত্র নীলকন্ঠ বাগচি এক
ভাগ্যতাড়িত সৃষ্টির নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষ।অত্যধিক
অবসাদ আর এলকোহল আসক্তির কারণে যাকে ভর্তি করা
হয় মানসিক হাসপাতালে।সেখানে তার পরিচয় ঘটে
ডাক্তারের সাথে।এই ডাক্তারের হয়ে ওঠেন নীলকন্ঠের
ফেলে আসা দিনের নীরব দর্শক।চোখের সামনে একে
একে ভেসে ওঠে দ্বিতী. মহাযুদ্ধ,দেশভাগ,দাঙ্গা,মনন্তর,গান্ধী,নেহেরু,রোমারোলা,ম্যাক্সিম গোর্কি,কৃষক বিদ্রোহ,নকশাল আন্দোলন,রিফিউজি,৭১
একে একে ইতিহাসের সব অধ্যায়গুলো।

পাবনার তরুণ কমরেড নীলকন্ঠ কলকাতায় এসে
অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়েন পিপলস থিয়েটারে।
কিন্তু আর দশজনের চেয়ে ভিন্ন এই বিপ্লবের স্বপ্নে
বিভোর তরুণটি পারেনা গড্ডালিকা প্রবাহে গা
ভাসিয়ে দিতে।প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর
হয়ে থাকা এই তরুণটি বন্ধুমহলে পরিচিত হয় এনার্কিস্ট
হিসেবে।যার উত্তাপ সহ্য করতে পারেনা অন্যেরা।ফলে
অন্যরা ধীরে ধীরে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে থাকে।
নাটক সে ভালবাসে।নাটককে সে ব্যবহার করতে চায়
পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে।কিন্তু নাটকের গণ্ডীতে
সে নিজেকে বেধে রাখতে পারেনা।বেছে নেয় সিনেমাকে।আবার নিজেই বলে,'সিনেমার চেয়ে বেশী কার্যকর কোন হাতিয়ারের সন্ধান পেলে সেদিন সিনেমাকে নিঃর্দিধায় লাথি মেরে চলে যাব'একদিকে সাংসারিক অভাব অনটন অন্যদিকে একের পর এক সিনামা ফ্লপের ফ্রাসটেসান তাকে পরিণত করে পাড় মাতালে।কর্মপাগল মানুষটি হাসপাতালেও চুপ করে থাকেন না।হাসপাতালের রোগীদের নিয়েও রচনা করেন প্রতিবাদী নাটক।সাঁওতাল রমণীর রুদ্র নৃত্যে গেয়ে ওঠেন শেকল ভাঙার গান।বঙ্গবালার মাথায় হাত দিয়ে আবার খুঁজে ফিরেন দেশবিভাগের রিফিউজিদের।

ছবিটির সবচেয়ে ভালো লাগা দিক হলো সময়ের পটভূমির
সাথে মানানসই ডায়ালগগুলো।শুরুতেই হাসপাতালের
কেবিনে নেয়ার পরে কেবিনের দিকে তাকিয়ে নার্সের
প্রতি স্বগত উচ্চারণ, "এখানেই তাহলে তারকাসুর বধ হবে।
শিব পার্বতীর সন্তান কার্তিকেরও জন্ম হবে।তা এখানে
আমার শাস্তি কদ্দিন ?"দেশবিভাগের কষাঘাতে নেহেরুর বেতার ভাষণকে উপেক্ষা করে পথের পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা ধর্ষিত এক নারীর মৃতদেহ কোলে তুলে তীব্র ঘৃণায় চিৎকার করে ওঠেন, "শূয়োরের বাচ্ছা"পাগলাগারদে লুকিয়ে থাকা নকশাল ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের
উদ্দেশ্যে ঘৃণামিশ্রিত কন্ঠে উচ্চারণ করেন,"ক্ষমতা থাকলে জিহাদ কথা বলবেই,রাষ্ট্র থাকলে রাষ্ট্রদ্রোহীতা থাকবেই"সহযোদ্ধারা কেন পাশে নেই ডাক্তারের এই প্রশ্নের জবাবে হতাশামিশ্রিত কন্ঠে প্রত্যোত্তর দেন,"সব শালা মিডিওকার বা সি আই এর দালাল হয়ে গেছে।কেউ কেউ গাড়ি,বাড়ি,টাকাপয়সা দেখলো,কেউ কেউ নীরবে চোখ ফিরিয়ে নিল,আর কেউ লড়তে লড়তে মরেই গেল।"এরকম অসংখ্য মর্মস্পর্শী উক্তি নিজেকে আটকে রাখে স্ক্রিণে।

সাদাকালোর অসাধারণ প্রয়োগ, হৃদয়কাড়া সঙ্গীত আর
ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক,শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়,অনন্যা
চট্টোপাধ্যায়,শুভাশীষ মুখার্জীর অনবদ্য অভিনয়,
অসাধারণ চিত্রনাট্য আর কমলেশ্বরের দক্ষ পরিচালনা
সব মিলিয়ে ছবিটি পরিণত হয়েছে মাস্টারপিসে।

যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা ……………

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২

চন্দ্রদ্বীপবাসী বলেছেন: আমি আমার জীবদ্দশায় কিছু 'অসাধারণ' সিনেমা দেখেছি, তার মধ্যে 'মেঘে ঢাকা তারা' অন্যরকম স্থান পেয়েছে।
ঋত্বিক ঘটকের চিন্তা-ভাবনা, বাংলার ব্যর্থ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা, এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং অপুদার অসাধারণ অভিনয় সব মিলিয়ে অনবদ্য। তবে দুঃখ সিনেমাটা চলে নি।

মানুষের সেই এক কথা, "কিছু মনে করো না গুরু। ওই তোমার বই বুঝি না, দেখি না।"

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

বেপরোয়া বক্তা বলেছেন: আপনা মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.