নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর

৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:০১

শহুরে ফোকলোর

নুরু মিয়ার বয়স কত কেউ জানেনা । কেউ বলে কোলকোন্দ হাটের বুড়া আমলীর সমান । কেউ বলে নদীর বয়স আর ওমার বয়স সমান ।
কেউ ডাকে দাদা, কেউ ডাকে জেটো, কেউ ডাকে বিটিশ বুড়া, কেউ ডাকে বাঘা বুড়া । আর ছোট ছোট দস্যি ছেলে মেয়ের দল ডাকে ব্যাঙ বুড়া । প্রতিটি নামের পেছনে একটা করে গল্প থাকলেও এই ব্যাঙ বুড়া নামের গল্প কেউ জানেনা । গ্রামের দস্যি ছেলে মেয়ের দল ছাড়া । বুড়া নুরুচার চেহারা তারা কিকরে ব্যাঙের সাথে মেলাল সেটা ওরাই ভাল জানে ।

বিটিশ আমল দেখেছেন তাই বিটিশ বুড়া ডাকে । রংপুরের ডিস্কিক্ট কালেক্টর সাহেব মাগ মাসের হ্যালত (শীতে) ঘোড়ার গাড়ীত চড়িয়া এলা এই কোলকোন্দত আইল । সেটা নুরু দাদা জানে । নুরুদাদা যখন এই গল্প বলে তখন মনে হয় জুম্মা জুম্মা সাতদিন আগের গল্প ।
কেটা বা আসিয়া খবর দিল ছোটরুপার ঘাটাত কাক বলে বাঘে ধরচে । তাই সে রাইতে আর কালেক্টর সাহেব না গেইল অংপুরত । তামবু খাটিয়া কোলকোন্দত থাকিল । বুড়া আমলীর তলত উয়ার তামবু খাটাল । চাপরাশী, গোমস্তারা সোহরাবের দোকানের মুখত তামবু খাটাল । বন্দুক নিয়া তামবুর চারপাকোত সিপাহীরা রাত ভরা ডিউটি করিল । খড়ি দিয়া আগুনের পোড় জ্বালাল । এলাহী কারবার । আইতোত পুতি পাটের আসর বসিল । সাধন বাউলের গান হইল । ম্যালাদিন আক্কার কতা সগ কি আর মনে থাকে ।

উপস্থিত শ্রোতার কেউ বলে ও দাদা বাঘে ধরার গপ্প কও এলা শুনি । নুরুদাদা বাঘে ধরার গল্প বলে । কি করে বাঘ তার পিঠে হাচড় দিয়েছিল মাছ মারিয়া আসার সময় জংগলের সুলটির মদে । যে দাগ আজও আছে । এমন গল্পের আসর ভাংগে সোহরাবের হাকে । নুরুদাদাকে বলে তুমি এলা গাও না ধুবার যান ? এই ফাকশা পড়া গল্প আর কত চালাইবেন ?

নুরুমিয়ার সব গল্পে ইতি আছে শুধু এই তিস্তা নদীর গল্প ছাড়া । এই নদী নুরুমিয়া দেখতে গিয়েছিলেন বিয়ান বেলা পান্তাভাত খায়া । সারাদিন হাটিয়া যায়া সন্ধার সময় ফুপুর বাড়ীতে উঠেছিলেন । ফুপু মালশিরা ধানের চাউলের ভাত আর বোয়াল মাছের ঝোল দিয়ে খাইয়েছিলেন । পরের দিন বিয়ান বেলা থেকে আবার দুপুর পর্যন্ত হেটে নদী দেখেছিলেন । সেই নদী একদিন এত কাছে এল নুরু মিয়ার সব নিয়ে গেল । দেড় দিনের হাটা পথের নদী এখন নুরু মিয়াকে দেখছে । হাত ডুবিয়ে দুধভাত খেতেন । জমির আইল দিয়া হাটিয়া বেড়াইলে চৌদ্দ পুরুষ বসিয়া খাইত । কি দিন ছিল । আর আজ মানুষের দানে চলেন ।

নুরুমিয়ার দু:খ কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছিল সেবার নেদারল্যান্ড থেকে একটা প্রতিনিধি দল এল । পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইন্জিনিয়ার মোজাম্মেল সাহেব পুরা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট গুলো তাদের দেখাচ্ছিলেন শেষটায় এলেন কোলকোন্দতে । এতখুশি ইন্জিনিয়ার মোজাম্মেল কে নুরু মিয়া কখনো দেখেনি । নুরু মিয়া বোঝেন ইন্জিনিয়ার মোজাম্মেল মাক্কুর (টাকার) গন্ধ পাইছে । ইন্জিনিয়ার মোজাম্মেলের টাকার গন্ধ, নুতন জুতার গন্ধ খুব প্রিয়। এমন গন্ধ পেলে ইন্জিনিয়ার মোজাম্মেল টং দোকানের জেন্নাত কে অদ্ভুত রকম চুদির ভাই সালা গালিটা দেননা । যে গালিটা নিয়ে জেন্নাত মাঝে মাঝে চিন্তা করে । জীবনে কত রকম গালি সে মানুষের শুনেছে কিন্তু চুদির ভাই সালা গালিটা সে কখনো শোনেনি । চুদির ভাই আলাদা ভাবে শুনেছে । সালাও আলাদা ভাবে শুনেছে । কিন্তু দুটো গালি মিলে একটা গালি বানিয়ে কেউ তাকে গালি দিতে পারে বা হতে পারে সেটা জেন্নাত কখনো ভাবেনি ।

ডাচের সেই প্রতিনিধি দল নুরু মিয়ার ফোকলা হাসির ভিডিও করলেন । সাথের এক বাংগালী ভদ্রলোক ডাচ দলের ভাষার তরজমা করছিলেন । বললেন এটা তো সামান্য নদী । আমরা সাগড় কে থামিয়েছি । এই নদী থেকে কারেন্ট হত এলাকার মানুষের বাড়ী বাড়ী আলোকিত হত ।

নুরু মিয়া এই আলাপ শুনবার পর থেকে সারাদিন নদীর পাড়ে দাড়িয়ে নিজেই নিজের সাথে কথা বলছেন । উয়ারা সাগড় থামে দিচে হামরা নদী থামবার না পাই । পানি থাকিয়া উয়ারা বিদ্যুত বানাইছে । আর হামরা নদী ভাংলে জুম্মার নামাজোত মোনাজাত ধরিয়া কান্দিনাম । আর আল্লাহক কইনাম তোমার জিনিস তুমি থামাও । হামার নিম্বর, চেয়ারম্যান, ইন্জিনিয়ার, এমপি, সগলাই খালি দোয়া করবার কলি ।

নুরু মিয়া যদি এই ভিডিও টি দেখত আর জানত ১৯২২ সালে এরা পানি থেকে বিদ্যুত তৈরি করছে । সেই বিদ্যুত বেচেতেছে । কি কথা বলত নিজের সাথে কে জানে ।

https://www.facebook.com/kibriazahid.mamun/videos/1887009614655614/


এটা বহমান নায়াগ্রা নদীর পানি । নদীর ওপারে আমেরিকা এপারে ক্যানাডা । ক্যানাডিয়ান স্যার এডাম বেক হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্লান্ট । বিদ্যুত তৈরি হচ্ছে পানি থেকে । নিজের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী করছে আমেরিকাতে । এরচেয়ে খরস্রোতা নদী আমাদের ছিল কিন্তু বিদ্যুত তৈরি করতে পারিনা । আমরা বিদ্যুত তৈরির জন্য সুন্দরবন ইজারা দিয়েছি ।

নুরু মিয়া ভিডিওটি এবং ছবিগুলো দেখলে জেন্নাতের দোকানে গিয়ে এক কাপ ফ্রেশপাতির চা খেত । যদি সে সময় ইন্জিনিয়ার মোজাম্মেল - চা খেতে আসত তাহলে জেন্নাত কে চুদির ভাই সালা কি চা বানিয়েছ বলে গালিটা দিত । সামান্য চা বানাতে পারনা । নুরু মিয়া হয়ত মনে মনে বলত তোমরা এতবড় ইন্জিনিয়ারের বাল, এমপির বাল তোমরা কোন বালটা ছিড়ছ । নদী হামার সগ খাইল । তোমার ছাওয়া শিখ্খিত হইল আর হামার ছাওয়া পাওয়ারা কেউ গার্মেন্টস করিবার যায়া আগুনোত পুড়িয়া মরিল । কেউ টেকার অভাবে বেশ্যা হইল । হামার মাতার উপরে ছাদ নাই । তুমি ঢাকাত বাড়ী গাড়ী করলেন । টেকা কি গাছ ঝোকা দিলে পড়ে ।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২৬

রসায়ন বলেছেন: এখন এই সমস্যার সমাধানও বের করতে হবে ।

৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

কিবরিয়া জাহিদ মামুন বলেছেন: রোজকিয়ামতের আগ পর্যন্ত আর সমাধান হবেনা । ধন্যবাদ মন্তব্য করবার এবং পড়বার জন্য ।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৯

ঢাকার লোক বলেছেন: বেশ ধারালো লেখা ! তবে কে শোনে কার কথা ?
তবে একটা বিষয়, আমাদের দেশের মতো সমভূমিতে নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরী করে প্রয়োজনীয় উচ্চতা (হেড) অর্জন সম্ভব নয় বিধায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা অনেকটা অসম্ভব . কর্ণফুলীতে পাহাড়ি এলাকা বলে সম্ভব হয়েছে, তবে সেটাও অনেক লোকের বসত ভিটা জমি জমা নষ্ট করে বলে তার কস্ট বেনিফিট আজ প্রশ্নবিদ্ধ !

৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৭

কিবরিয়া জাহিদ মামুন বলেছেন: নেদার কিন্তু পেরেছে সাগর কে ঠেকাতে । বিষয় সেটা । তাদের ল্যান্ডসকেপ ক্যানাডার মত পাহাড়ী না । ধন্যবাদ পড়বার জন্য মন্তব্যর জন্য ।

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: অতীত আর বর্তমান এই হলো পার্থক্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.