নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর - ভয়

২৫ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:১৫


ক্লাশ থৃ তে পড়ি । প্রয়াত মিনু স্যার একদিন ক্লাশে বল্ল, তোরা আজকের শিশু তোরা একদিন বড় হবি । বড় হয়ে এই দেশ চালাবি । আজকে এরশাদ সাহেব দেশের প্রেসিডেন্ট একদিন তোরা হবি প্রেসিডেন্ট। তোদের মধ্যে কেউ একজন হবে । আমি খুব আশায় বুক বাধলাম । কিন্তু স্যারের শেষ কথাটাতে আমার একটু খটকা লাগল ।
তোদের মধ্যে কেউ একজন হবে । তখন আমার ক্লাশ ফ্রেন্ড লেলিন, তইদুল, নুর আলম, বিপ্লব কুমার মহন্ত, কালিদাস, শামীম, লিখন, মটু রাজিব বাকীদের নাম মনে নাই । স্যার যেহেতু বল্ল কেউ একজন হবে তার মানে লেলিন, তইদুল, কালিদাস, বিপ্লব, শামীম, লিখন এদের ও চান্স আছে । বা ক্লাশের যাদের সাথে আমার জানাশুনা নাই তারাও হতে পারে ভেবে মনটা খারাপ হল ।

এরমধ্যে আবার সে সময় লেনিনের বাপের গাড়ী ছিল । লেনিনদের গাড়ি বিষয়টা ভাবতে মনটা খারাপ হল । খারাপ হরা মন নিয়ে
আমি অপেক্ষায় থাকলাম । আমি বা আমার ক্লাশের কেউ একজন প্রেসিডেন্ট হবো । এদিকে স্কুলের মন খারাপের মাঝে নিয়ন ভাইয়ের গল্প যেন আরও এককাঠী সরেস ।

নিয়ন ভাইয়ের মামার রকেট আছে । সেটা নাকি তার মামার বাড়ীতে তিনবিঘা জমির উপর নামে মানে ল্যান্ডিং করে । । নিয়ন ভাই ও নিয়ন ভাইয়ের ছোট ভাই আমার ফ্রেন্ড চয়ন - তারা দুজনি সেই রকেটে চড়েছে । খেলার মাঝে প্রায়ইশই সে গল্প বলে আমরা হা করে শুনি । কেমনটা লাগে ।
একদিনের গল্প নিয়ন ভাই বলতেছে আমি আর চয়ন রকেটে চড়লাম রকেটটা যখন অনেক উপরে গেল চয়ন অনেক কান্না করল । পরে আমি মামকে বল্লাম মামা আজকে আর রকেট না চালাই চয়ন যেহেতু কাদতেছে । তখন মামা একটা সুইচে চাপ দিল সাথে সাথেই রকেটটা সাই সাই করে নীচে নামল । তারপর মামা সেটাকে তার তিনবিঘা জমিতে পার্ক করল । গল্প শুনে হা হয়ে থাকা আমি চয়নকে বল্লাম রকেটটা এদিকে আনা যায়না ?
চয়নের উওর আনা তো যায় । মামাকে বললেই নিয়ে আসবে কিন্তু তিনবিঘা জমি কোথায় পার্ক করবার মত । আমি উওরে বল্লাম পশ্চিমের ফাকা জমিতে নামানো যাবেনা ?
চয়নের উওর না সেটা করলে রকেট নরম মাটিতে ঢুকে যাবে । কি একটা টেনশন ।


আমার মামার ট্রাক ছিল, ট্রাকটর ছিল, বাইক ছিল । নানীর বাড়ী গেলে সেগুলোতে চড়ার বেশ সৌভাগ্য হয়েছে । কিন্তু ট্রাকে, ট্রাকটরে, বাইকে চড়া আর রকেটে চড়া তো এক না ।

মনের দু:খে একদিন আম্মা কে বল্লাম বড় মামার রকেট নাই কেন ?
আম্মা ঝাড়ি মেরে বল্ল পড়াশুনার খবর নাই ওনি রকেট ওয়ালা হইছে । এতবড় একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয় আম্মা গুরুত্বই দিলনা ।
চয়ন কে বল্লাম রকেট টা কি তোমার মামা এদিকে আনবে বা আনলে আমাকে চড়তে নিবা ?
চয়ন বল্ল আনলে তো অবশ্যই নেব । কিন্তু চয়নের ফ্রেন্ড এবং আমার ফ্রেন্ড লিমন, তাজুল, ওরাও যদি চড়তে চায় । একসাথে সবার জায়গা কি হবে ? আচ্ছা অপেক্ষায় থাকি ।

এমন ভাবনা চিন্তার মাঝে মিনু স্যারের প্রেসিডেন্ট বিষয়ক ব্যাপারটা কারও সামনে বলা গেলনা । আবার কে কি বলে । অপেক্ষায় থাকি । বড় হয়ে তো একদিন প্রেসিডেন্ট হবই । আমি না হই সাথের কেউ হবে ।

সে সময় আমাদের এলাকার আকাশে মাঝে মাঝেই হেলিকপ্টার আসত । হেলিকপ্টার আসিবা মাত্র সেটার পেছনে দৌড়ানো আমাদের জন্য মহান বীরত্বের বিষয় । অনেকটা গড মাষ্ট বি ক্রেজি মুভির সেই গুহা মানবের মত । এমন বীরত্বের মাঝে পল্লব আমাদের সাথে হেলিকপ্টারের পেছনে দৌড়ে সে হঠাত করে রাস্তার কোথাও একটা বিড়ির মোতা বা টিপস হাতে নিয়ে বলত আল্লাহর কসম এই মোতাটা হেলিকপ্টার থেকে পড়ছে । আমরা বিশ্বাস করতাম । আর আপসোস করতাম ইস কেন
আমি পাইনা । সব সময় পল্লব ই পায় ।

নাইট রাইডার, ফল গাই, দ্যা টিম, দেখে বা প্রেসিডেন্ট এরশাদের ভোটের সময় টারজান দেখে পরের দিন বাংলা তরজমা পল্লব করত । যদি আমরা যদি বলতাম- না, তখন নায়ক তো এইটা বলছিল । পল্লব বলত আমি মেজভাইয়ার সংগে বসে দেখছি । মেজভাইয়া বলছে নায়কটা ওইটা বলছে ।
ভয়ে আর কথা বলা যাইতো না । মেজভাইয়ার সাথে বসে দেখছে সেইটারে তো আর ফেলে দেয়া যায়না । মেজভাইয়া নিশ্চই ইংরেজী অনেক ভাল জানে ।
তারপর শুক্রবারের জুম্মার নামাজ । মকবুল হুযুর বলত কাল কিয়ামতের দিন পাহাড় উড়বে । গাছপালা উড়বে । ঘরবাড়ী উড়বে । আবার টেনশন । রাতে ঘুমের আগে নানাবিধ টেনশন । যদি আমি ঘুমের মধ্যে থাকতে কিয়ামত হয় তাহলে কি হবে ?
আমি সহ উড়ব নাকি ?
উড়ে কোথায় যাব ? কে কে থাকবে সেখানে ?
কাউকে বল্লে না আবার কষায় থাপ্পর মারে । ভয়ে বলিনা । তারচেয়ে বরং অপেক্ষায় থাকি কিন্তু মনের ভয় যায়না ।

এই অপেক্ষায় থাকতে থাকতে প্রেসিডেন্ট আমার ক্লাশের কেউ হওয়া তো দুরের কথা আমার সময়ের কেউ হলনা । এরশাদের পর রহমান বিশ্বাস, সাহাবউদি্দন, বদরুদ্দিন, ইয়াজউদ্দিন, হামিদউদ্দিন সাহেবরা প্রেসিডেন্ট হল । আমরা বা আমাদের সময়ের কেউ এখনো হলনা । রকেটে চড়া হলনা । কালকের কিয়ামত হলনা । সিগারেটের টিপস কুড়িয়ে পাওয়া হলনা । যা হল সেটা ভয় পাওয়া ।

রাতের ভয় আর দিনের ভয় । পুরো রাস্ট্র ব্যবস্থা এমন ভয় দিয়ে সাজানো

https://www.youtube.com/watch?v=chUDPXVikoI

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:৩৪

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: অনেক দিন পর ব্লগে এলেন ! আপনার ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানুলুলু নিয়ে পোস্ট পাচ্ছি না কেন ?

২৬ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৩৭

কিবরিয়া জাহিদ মামুন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই খোজ নেবার জন্য । জীবন জীবিকা নিয়ে একটু দৌড়ের উপরে তাই সময় পাইনা লিখবার । ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।

২| ২৫ শে জুন, ২০২১ সকাল ১০:৩৭

কামাল১৮ বলেছেন: সময় শেষ হয়ে যায়নি,অপেক্ষা করেন।এমন সময় আসবে যখন সকালে একজন প্রসিডেন্ট তো বিকালে আরেকজন।তখন আপনার বন্ধুদের কেই একজন প্রেসিডন্ট হতেও পারে।

৩| ২৫ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১২:২৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ভয় দিয়েই মানুষকে বশ করে রাখতে চায় মানুষ। কারণ শ্রদ্ধা অর্জনের চেয়ে ভয় দেখানো বেশি সহজ। এতে কাজ আদায় করাও সহজ। কেয়ামতের ভয় আমারও ছিল। হুজুর বলতো প্লাবন হবে।শুধু মসজিদ ভেসে থাকবে। আমার ভয় ছিলো মসজিদ পর্যন্ত যাবো কিভাবে? আমি তো সাঁতার জানতাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.