নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখির ক্ষেত্রে আমার অলসতা প্রবাদতুল্য।
মন্টুর চোখে মুখে আনন্দ ঠিকরে পড়ছে। এবার শীতের ছুটিতে স্কুল থেকে বনভোজনে যাবে। কোন দিন যাওয়া হয় নাই। প্রতিবছর বাড়ির সামনের বড় পাকা সড়ক দিয়ে বনভোজনের অনেক বাস যেতে দেখেছে। সবাই গলা ছেড়ে গান গেয়ে, মাইকে গান বাজিয়ে আনন্দ করতে করতে যায়। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কতো দেখেছে সে। তখন মন খুব খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু এই বছর তার মন খারাপ হয় নাই। এইতো গত পরশু দিনও একটা বনভোজনের বাস যেতে দেখেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বরং এবার উপভোগ করেছে।
বনভোজনের জন্য জনপ্রতি চাঁদা ধরা হয়েছে ১০০ টাকা করে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই চাঁদা দিতে হবে। আজ সোমবার। মন্টু স্কুল থেকে ফিরে তার মাকে বলল।
-মাগো আমাগো স্কুল থাইক্যা এইবার বনভোজনে যাইব। আমিও কিন্তু যাইমু। ১০০ টাকা চান্দা ধরছে। বাপের কাছ থিকা তোমারে টাকা লইয়া দিতে অইব।
-কস কি তুই বাব? এতো টাকা তোর বাবজানে পাইব কই। অহন আর কেউ আগের মতো রিক্সায় চরবার চায় না। দেহস না আমাগো বাড়ির সামনে দিয়া বাস চলে। বেবাকতে বাসে কইরাই জেনে যাওনের যায়। তোর বাপের রোজিরোজগার আর আগের লাহান নাই।
-আমি জানি না মা। তোমারে টাকা লইয়া দিতে অইব।
মন্টুর চোখে পানি টল মল করছে। মায়ের বুকে তা আঘাত হানল। ছেলেকে বুকে টেনে নিল।
-কান্দিস না বাপ। দেহি তোর বাজান বাড়িত আইলে কমুনে তোরে ১০০ টাকা দিতে। বুধবার হাটবার দিন। হেদিন রোজি একটু ভালোই হয়।
আজ বৃহস্পতিবার। বনভোজনের টাকা জমা দেয়ার শেষ দিন। কিন্তু মন্টু খালি হাতেই স্কুলে যাচ্ছে। তাই মনটাও বেশী ভালো না। গতকাল দুপুরের পর থেকে অনেক বৃষ্টি হওয়াতে তার বাবার রোজি ভালো হয় নাই। তাই টাকাও দিতে পারে নাই। ছোট হলেও সংসারের অস্বচ্ছলতা সে কিছুটা বুঝে।
বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে স্কুল। মাঝে মাঝে তার বাবা তাকে স্কুলে দিয়ে আসে। কিন্তু আজ আসতে পারে নাই। বড় একটা খেপ নিয়ে দূরে কোথাও গেছে। তাই হেঁটেই সে রওনা দিয়েছে। বেশ কিছু দূর রাস্তা পার হওয়ার পর হঠাৎ সে পথের ধারে একটা মানিব্যাগ দেখতে পেল। রাত ভর বৃষ্টি হওয়াতে ভিজে আছে। তার গা ছম ছম করে উঠলো। ভয়ে কাঁপতে লাগলো। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। যদি মানিব্যাগে যথেষ্ট টাকা থাকে, তবে সে বনভোজনের চাঁদার টাকা দিয়ে দিতে পারবে। এই চিন্তা হঠাৎ করে মাথায় ঢুকল। আর অমনি এদিক সেদিক তাকিয়ে মানিব্যাগটা তুলে নিল। ভিতরে এক ঝলক দেখতে যেয়ে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। বেশ কিছু টাকা মানিব্যাগের ভিতর। তবে বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে নাই। ভয় এবং আনন্দ দুটো নিয়েই স্কুলব্যাগে মানিব্যাগটা ঢুকিয়ে রেখে মন্টু স্কুলে গেল।
ক্লাসে একে একে সবাই শ্রেণী শিক্ষকের কাছে যার যার বনভোজনের টাকা জমা দিচ্ছে। মন্টু এখনো জমা দেয় নাই। তার বাবা তাকে টাকা দিতে পারে নাই। কিন্তু এখন তো তার কাছে অনেক টাকা আছে। দিতে কোন অসুবিধা হবে না। তারপরেও চুপ করে বসে আছে। কিন্তু মাথার ভিতর ঘুর পাক খাচ্ছে। কি করবে বুঝে উঠার আগেই শ্রেণী শিক্ষক মন্টুকে ডেকে উঠলো।
-কিরে তুই টাকা দিলি না?
মন্টু একবার ভাবল মানিব্যাগ থেকে একটা ১০০ টাকার নোট বের করে দিয়ে দেই। কিন্তু সে দিতে পারলো না। তার মনে পড়ে গেল, শ্রেণী শিক্ষক একদিন বলেছিলেন, রাস্তায় পাওয়া কোন জিনিসকে নিজের কাজে লাগাতে নেই। এতে যেমন পাপ হয়, তেমনি এটা এক ধরণের অপরাধ। কুঁড়ে পাওয়া জিনিস নিকটস্থ থানায় বা পুলিশ ফাঁড়িতে জমা দিতে হয়। আর তা না পারলে ইউনিয়িন অফিসে জমা দিতে হয়। ছোটরা কিছু পেলে বাড়ির বড় কারো কাছে দিতে হয় জমা দেয়ার জন্য। চোখে পানি নিয়ে মন্টু উঠে দাঁড়াল।
-স্যার আমার বাবা টাকা যোগাড় করতে পারে নাই। আমি বনভোজনে যাবো না।
মানিব্যাগের কথা লুকিয়ে রেখে মন্টু শ্রেণী শিক্ষককে বলল।
স্কুল ছুটির পর মন্টু শ্রেণী শিক্ষকের সাথে দেখা করতে গেল।
-স্যার, আমি কি ভিতরে আসতে পারি।
- আয়। আয় ভিতরে আয়। কিরে তুই কিছু বলবি? স্যার মন্টুকে জিজ্ঞেস করলো।
কথাটা কিভাবে বলবে ভেবে ভেবে মন্টু ভয়ে ইতস্তত করতে লাগলো। তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
-স্যার, আমি রাস্তায় একটা মানিব্যগ কুঁড়ে পেয়েছি। এই বলে সে মানিব্যাগটা স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিল।
মানিব্যাগ খুলে ভিতরে অনেকগুলো টাকা দেখল শ্রেণী শিক্ষক।
-এই মানিব্যাগ তুই কোথায় পেয়েছিস?
-বাড়ি থেকে আসার পথে রাস্তার ধারে পেয়েছি।
শ্রেণী শিক্ষক কিছু না বলে অনেকক্ষণ মন্টুর দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবল, ছেলেটা বনভোজনের টাকা দিতে পারে নাই। অথচ মানিব্যাগে কতগুলো টাকা।
-তুই চিন্তা করিস না। এটা আমি থানাতে জমা দিয়ে দেব।
-আমি এখন যাই স্যার? মন্টুর ভয় এখন অনেকটা কমে গেছে। তাই সাবলীল ভাবে স্যারকে যাওয়ার কথা বলল।
-আচ্ছা যা।
মন্টু শ্রেণী শিক্ষকের রুম থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াল। হঠাৎ পিছন থেকে শ্রেণী শিক্ষকের ডাক শুনে ফিরে তাকাল।
-এদিকে আয়। শ্রেণী শিক্ষক মন্টুকে কাছে ডাকল।
-জি স্যার।
-তুইও আমাদের সাথে বনভোজনে যাচ্ছিস। তোর টাকা আমি দিয়ে দিচ্ছি।
মন্টু ফ্যাল ফ্যাল করে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলো। আনন্দে সে হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠার আগেই স্যার বলল,
-যা, এবার বাড়ি যা।
১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫০
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: এখানে আমি তিন মাস আগে নিক নিয়েছিলাম। তারপর তিনমাস পরে আমাকে মন্তব্য করতে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু 'ঘাস ফুল' নিকটা পাই নাই বলে আগ্রহ কম। তারপরও চেষ্টা করবো এই নিক নিয়েই নিয়মিত হতে। ধন্যবাদ সাদিয়া।
২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৯
আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: এইটা একটা ক্লাসিক। বাচ্চাটার ভাবনা বাচ্চার মতই ছিল, অনুভুতিগুলো খুব বাস্তব। যারা মধ্যবুত্ত ফ্যামিলির, তারা এসব মন দিয়ে বুঝতে পারে। নিম্নবিত্তও হবার দরকার নেই
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫২
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আমিও শিশুতোষ ভালো লিখতে পারি না। বড়দের জন্য লেখা যত সহজ শিশুদের জন্য লেখা ততই কঠিন। কারণ অনেক বিষয়ে সীমাবদ্ধতা ধরে রাখতে হয়। কয়েকটা লিখেছি। এই ব্লগে একটাই পোস্ট দিয়েছি, তাও অনেক আগে। খুঁজে বের করে পড়ার জন্য এবং উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আমি অথবা অন্য কেউ। আপনার লেখা এই পর্যন্ত যা পড়েছি, তাতে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আপনি চাইলেই শিশুতোষ লিখতে পারবেন। ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে।
৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪৫
আরমিন বলেছেন: নাইস ওয়ান!
সেকেন্ড প্লাস!
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৪
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আমার ব্লগ বাড়িতে আপনাকে স্বাগতম আরমিন২৯। শিশুতোষ পড়ার পাঠক পেয়ে ভালো লাগলো। লেখতে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। প্লাস পাওয়ার জন্য নয়, তবু আপনার সেকেন্ড প্লাসে আনন্দিত। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার ব্লগে এই এলাম আমি
আশা করছি দারুন কিছু লেখা পাবো
চমৎকার লেখায় ++++++++++
শুভ কামনা
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৩
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আমার ব্লগ বাড়িতে স্বাগতম মনিরা। দারুণ কিছু লেখা নাও পেতে পারেন। আমি যে ভাই সৌখিন লেখক। আমার আসল পরিচয় একজন ব্লগার। মাঝে মাঝে কিছু লিখি শখের বশে। সেগুলো পড়ে দেখতে পারবেন। ভালো লাগা মন্দ লাগা বলে গেলেই আমি ধন্য। অনেক ধন্য্যবাদ মনিরা সুলতানা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:২১
সুলতানা সাদিয়া বলেছেন: আপনি এখানে নিয়মিত না বোঝা যাচ্ছে। পাশে পেলে ভাল লাগবে। সাহস পাবো। এই গল্পটি আগেই পড়েছি। আপনি শিশুদের জন্য লেখাগুলি একেবারে ওদের মতো করেই লিখেন। আগের ভাল লাগা অব্যাহত। ভাল থাকুন।