নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যোগসুত্র

বিমুর্ত০৮০৬

বিমুর্ত০৮০৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যোগসুত্র

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

পাঁচতলা বাড়ির চিলেকোটায় থাকে সাহেদ।যখন সে ছাদের ধারে এসে দাড়ায় নিজকে পাখির মত লাগে।বাড়িটার আশেপাশে তেমন উঁচু কোন বাড়ি নেই।তাই শহরটাকে কিছুটা দেখা যায়।রাতের শহরটা অদ্ভুত সুন্দর লাগে।তার বাড়ির মালিক ছালেক সাহেব।বিশিষ্ট ভদ্রলোক।গত তিন বছরে সাহেদের কাছ থেকে কখনও ভাড়া চেয়ে নেন নি।মাঝে মাঝে দু-তিন মাসের ভাড়া বাকি পরে যায়।এতে তার কোন আপত্তি নেই।সাহেদ যখন তাকে ভাড়া দিতে যায়,তখন তাকে দেখে মনে হয় তিনি লজ্জা পাচ্ছেন।তিনি একা মানুষ।দেশে তার তেমন আপন কেউ নেই।একমাত্র মেয়েটাও বিদেশে থাকে।তার স্ত্রী মারা গেছেন আঁট বছর আগে।সব তথ্যই পাওয়া আলামুদ্দির কাছে।আলামুদ্দি এই বাসার কেয়ার-টেকার এবং দারোয়ান।আলামুদ্দির মুখে সব সময় কথা লেগেই থাকে।তার পেটে কথা থাকলে নাকি তার অস্থির লাগে।আলামুদ্দির নামদের পেছনে একটা ছোট গল্প আছে।তার নাম রাখা হয়েছিল আলাউদ্দিন ।কিন্তু গ্রামের মানুষ ডাকতে ডাকতে হয়ে গেছে আলামুদ্দি।তার এই নামের পেছনের গল্প সে প্রথম আলাপেই সবাইকে খুব আগ্রহ নিয়ে বলে

সাহেদের মনে হচ্ছে তার বিছানার পাশে কেউ বসে আছে।কিন্তু সে ঘুম থেকে উঠতে পারছেনা। মনে করল সে স্বপ্ন দেখছে।মাঝে মাঝে মানুষ আধা জাগ্রত অবস্থায় কিছু কিছু অদ্ভুত জিনিস অনুভব করে। যা বেশির ভাগ সময়ই অসম্ভব। যখন সাহেদ চোখ খুলল তখন দেখল তার বিছানার পাশে আসিফ বসা। আসিফ তার কলেজ জীবনের বন্ধু। বন্ধুত্ব যে ইচ্ছা করে হয়না তার প্রমান আসিফ।তারা দুজনই সব সময় চুপচাপ থাকত।আসিফ ভাল ছাত্র।তবুও তার সাথে তেমন কেউ মিশত না। সবাই তাকে ভেজিটেবল বলে ডাকত।কেমন করে আসিফ তার বন্ধু হয়ে হয়ে গেছে কেউ জানেনা। কোন কিছু হলেই আসিফ তার কাছে আসে। মাঝে মাঝে কিছু না বলেই কিছুক্ষণ বসে চলে যায়। মাঝে মাঝে রাতে থাকেও।সাহেদের তার একটা বিষয় ভাল লাগে, অনেক বড়লোকের ছেলে হয়েও আসিফের মাঝে কোন তার ছাপ নেই।খুব সাধারন এবং অদ্ভুত একটা ছেলে।তার মাঝে মাঝে অদ্ভুত অদ্ভুত ভূত চাপে। একবার সে ঠিক করল একটা গাধা কিনবে। আর তাতে করে সাড়া ঢাকা শহর ঘুরে ভিক্ষা করবে। প্রথমে শহর কেন্দ্রিক ভিক্ষা, তারপর অভ্যাস হয়ে গেলে সারা বাংলাদেশ।টানা তিনদিন ভিক্ষা করার পর সে সাহেদের বাসায় ভিক্ষা করতে গেল। সাদেদ জীবনে প্রথম কাউকে এতটা খুশি হতে দেখল। কিন্তু চতুর্থ দিন ঘটল বিপত্তি। গাধা নিয়ে নিজের বাড়িতে ভিক্ষা করতে গেল। আর সেখানেই তার ভিখুক জীবনের সমাপ্তি। তার বাবা হৈচৈ করে বাড়ি মাথায় তুলল।আর তাতেই কাজ হয়ে গেল। আসিফের আর সারা বাংলাদেশ জুড়ে ভিক্ষা করা হল না।
আজ কি জন্য আসেছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে সমস্যা সে জটিল তাতে কোন সন্দেহ নেই।সাহেদ আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,কিরে ভাত খাবি?
আসিফ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
-কিরে এরকম গাধার মত মাথা নাড়ছিস কেন? মুখে কথা বল,তারপর বিদায় হবি।
-তুই কি আমাকে তারাতে চাচ্ছিস?
-হ্যাঁ।সন্ধ্যায় আমাকে টিউশনিতে যেতে হবে।
-সাহেদ,আজ রাতে আমার বিয়ে।
-ঠিক আছে।তোর বিয়েতে আমি যাব।তবে একটু দেরি হবে।
-তুই অবাক হসনি?
-না। তোর সবকিছু হঠাৎ করে শুরু,হঠাৎ করেই শেষ।প্রথমে অবাক হতাম,এখন হইনা।আর বিয়েত হঠাৎই হয়।
-কিন্তু আমি বিয়েটা করতে চাচ্ছিনা।আর মেয়েকে আমি দেখিওনি।
-দেখিসনি দেখবি।আর মেয়ে কথা থেকে হাজির হচ্ছে?
-বাবার বন্ধুর মেয়ে।পড়ে ইডেনে।বুঝতেই পারছিস কি মেয়ে।এরা নাকি মারামারি করে।
-আমার মনে হয়না এমন হবে। তোর বাবা নিশ্চয়ই চাইবেনা তার ছেলে বউয়ের হাতে মার খাক।
-তুই জানিস না। বাবা চাইছেন আমাকে শিক্ষা দেবে।আর আমাকে ঘরে বন্দি করে ফেলবেন।
-তুই তাড়াতাড়ি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা।আর বাসায় গিয়ে জামাই সাজ সুন্দর করে।
সন্ধ্যার সময় আসিফ বের হয়ে গেল,আর সাহেদ গেল টিউশনিতে।

এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে সাহেদের মাঝে। সত্যিই আজ আসিফের বিয়ে?রাস্তায় হাঁটছে সাহেদ।টিউশনিতে যাওয়া হয়নি।যাওয়া উচিৎ ছিল।এটা হাতছাড়া হয়ে গেলে সে বেশ বিপদে পরে যাবে। মানুষ কত বিচিত্র,সবাই নিজের মত করে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখেতে সাহেদের ভাল লাগে।হাঁটতে হাঁটতে কখন যে সে আসিফের বাসার সামনে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি।গেটের বাইরে থেকে বাড়ির বারান্দায় মানুষের বাস্ততা দেখা যাচ্ছে।সাহেদের মানুষের ভিড় ভাল লাগেনা।তাই আবার সে নিজের বাসার দিকে হাটা দিল।ঠিক করল বাসায় গিয়ে গোসল করে একটা ঘুম দিবে।
সাহেদ ঘুম থেকে উঠে দরজার নিচে একটা সাদা খাম দেখতে পেল।সাহেদ খামটা খুলল।এটাকে ঠিক চিঠি বলা ভুল হবে,শুধু একটা লাইন লিখা।
“মেয়ে পছন্দ হয়েছে।কিন্তু পালিয়েছি অনেক দূর।“
সাহেদের বুঝতে দেরি হল না,আসিফ বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।এটাও বুঝল এক সপ্তাহ বাসায় থাকা ঠিক হবেনা। কারন আসিফকে খুঁজে পাওয়া না গেলে প্রথম খোঁজ পরবে তার এখানে।আর না পেলে তার বারোটা বাজিয়ে দিবে।শুধু তাই নয়।আসিফের চাচা পুলিশের ডি আই জি ।একবার ধরলে আর গেল থেকে বের হতে হবেনা।গলায় একটা খুনের মামলা ঝুলিয়ে ঝুলতে হবে ফাঁসির দড়িতে।তার থেকে পালিয়ে থাকাই ভাল।
রাস্তায় নেমে সাহেদ চিন্তা করছে,কোথায় যাওয়া যায়?সাহেদ এখন খেলছে চোর-পুলিশ খেলা।তাকে খুব সাধারণ একটা জায়গায় পালাতে হবে,যেখানে খোঁজার কথা কারও মাথাতেই আসবেনা।হঠাৎ পাশে এসে একটা গাড়ি থামল।সাহেদ ঠিক বুঝলনা গাড়িটা কি তাকে দেখেই থেমেছে ,নাকি অন্যকিছু।গাড়ির কাঁচ নামানোর পর দেখতে পেল,এক রূপবতী তরুণী তার দিকে তাকিয়ে।বয়স বাইশ-তেইশ হবে।আবার ভুলও হতে পারে।মেয়েদের একটা সময় বয়স থেমে যায়।একসময় দুম করে বয়স বেড়ে যায়।তার চোখে সানগ্লাস।বড়লোকের কিছু কিছু স্বভাব আজব।যারা সানগ্লাস পরে,তারা রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টাই পরে।
-আপনি কি সাহেদ ভাই?
সাহেদ কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।তাই কিছু না বলেনা সিধান্ত নিল।
-আমি বকুল।
-ও আচ্ছা।
বড়লোকের মেয়েদের সাধারণত এ ধরনের নাম হয়না। আর বাবা- মা শখ করে রাখলেও টা তারা নিজেরাই পরিবর্তন করে নেয়।দেখা গেল তার আসল নাম জহুরা।যে নিজে যখন পরিচয় দিচ্ছে বলছে “জোরা”।
-আপনি বোধ হয় আমাকে চিনতে পারেননি।অবশ্য চেনার কথাও না।আমি আসিফ এর অর্ধেক স্রি।
-ও আচ্ছা।আপনি বোধহয় ভুল করছেন।আমার বন্ধু আসিফ পালিয়েছে।
-হ্যাঁ।আমাকে প্রায় বিয়ে করে পালিয়েছে।
-মানে?
-দুই বার কবুল বলে পালিয়েছে।এখনও একবার বাকি।দুইবার কবুল বলার পর বাথরুমে যাবে বলে পালিয়েছে।
-কেন পালিয়েছে?
-(কিছুটা লজ্জা পেয়ে)আসলে তার বাবাকে শিক্ষা দেবার জন্য পালিয়েছে।
-আমাকে চিনলেন কি করে?
-কেউ চিন্তা মগ্ন থাকলে সে তার পরিচিত পথেই ঘোরাফেরা করে।আপনি এখন এখন পালিয়ে থাকবেন,তাই চিন্তিত।আর আপনার প্রিয় রাস্তা এটা।আপনি চিন্তিত থাকলে মাথা নিচু করে হাঁটেন ,হাতে সিগারেট।আসিফ আমাকে বসেছে।(নামটা উচ্চারণের মাঝে মায়াটা সাহেদ অনুভব করল)
-আমাকে কেন খুজচ্ছেন?
-আসিফ বলেছে।আমারও আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিল।আপনি ওর একমাত্র বন্ধু।
-ঠিক আছে আমি আসি।পরে হয়ত কখনও দেখা হবে।
সাহেদের হঠাৎ মাথাটা দুলে উঠল।পেটের ভেতর একটা গুলিয়ে যাওয়া অনুভুতি।তবু সামনে হেটে যেতে থাকল।সিগারেটাও তেত লাগছে।বকুল অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। বকুল ফুলের গন্ধের একটা ঝাপটা সাহেদের নাকে এসে লাগল ।

( চলবে.............................)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাল লাগল
তবে হিমু হিমু একটা ভাব

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬

বিমুর্ত০৮০৬ বলেছেন: সে তো ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সে রকম ইচ্ছা ছিলনা।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩১

শায়মা বলেছেন: ভূতের গল্প হলে ভালো হবে। :)

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫১

বিমুর্ত০৮০৬ বলেছেন: আগে পড়লেই বুঝতে পারবেন। :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.