নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।
তখন আমি বি.টেক ফার্স্ট ইয়ার, সালটা ২০১০। আমরা কজন ক্রিকেটপাগল বন্ধু কোলকাতা রেলওয়ে ক্লাবের পিচের রাস্তার ওপর নেট প্র্যাকটিস করতাম। প্রতি দিনই প্র্যাকটিসের পরে বাইরে কালুর চায়ের দোকানে পাউরুটি-ঘুগনি আর চায়ের অর্ডার দিয়ে ফাঁকা বাসে (মেরামতির জন্য আসা) বসে, গার্লস কলেজগামী তরুণীদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একে অন্যকে সান্ত্বনা দিতাম।
একটা ঝকঝকে সকাল। আমরা প্র্যাকটিসে ক্লান্ত। বাসের ভেতর সদ্য কালুর পাঠানো গরম ঘুগনির প্রথম চামচটা তুলেছি। হঠাৎ চোখে পড়ল, উলটো দিকে একটা গাছে একটা ছেলে উঠে গাছের ডালে দড়ি বাঁধছে। ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল— ‘ধ্রুব, কুইক, দ্বিতীয় স্লিপের দিকেই ব্যাটসম্যানের স্নিক্টা আসছে।
কাউকে কিছু না বলেই এক লাফে বাস থেকে রাস্তায়, মাঝপথে কালুর দোকান থেকে পাউরুটি কাটার ছুরি তুলে নিয়েই এক দৌড়ে রাস্তার ও-পারে এক লাফে গাছে। আমি ডাল ধরে উঠছি, ওর কাছে পৌঁছে গেছি প্রায়, আর ছেলেটিও হাত ছাড়ছে গলায় দড়ি দিয়ে। পুরো হিন্দি সিনেমা। আমিও দড়ির মাঝে ছুরির ছড় টেনে দিয়েছি। ফলে দুজনে স্ট্রেট গাছতলার দুঃখশয্যায়। ঘাড়ের ওপর ছেলেটির সব ভার নিয়ে হাত-পা কেটে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছি।
ইতিমধ্যে বন্ধুরা সব হাজির। ওরা তো কিছু বুঝে উঠতেই পারছে না! ছেলেটিকে এনে বাসে বসানো হল। দৃষ্টি ঘোলাটে, থরথর করে সারা শরীর কাঁপছে, কথা বলার অবস্থাতেই নেই। কালুর দোকান থেকে গরম দুধ, ডিম আর পাউরুটি আনিয়ে খাওয়ানো হল। কিছুটা ধাতস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন গলায় দড়ি দিচ্ছিল।
গল্পটা এ রকম: লালগোলা নেতাজি কলোনির ছেলে সুভাষ অল্প বয়সেই মাতৃহারা, বাপ চাষি, একটা ছোট বোন, বয়স চোদ্দো-পনেরো— এই সংসার। খুব গরিব। তাই অল্প বয়সেই সুভাষ কলকাতায়। শিয়ালদার পাইস হোটেলে ‘বয়’-এর কাজ। মাসে দু’শো-আড়াইশো আর দু’বেলার খাওয়ার চুক্তিতে চাকরি।
দিন দুয়েক আগে তার বাবার শরীর খুবই খারাপ, পারলে এক্ষুনি বাড়ি রওনা হ’— জানিয়ে গেছে পাড়াতুতো এক কাকা। এ কথা শুনেই মালিকের কাছে ছুটি আর মাইনের টাকাটার আর্জি। নিট ফল ঘাড়ধাক্কা, চাকরি খতম। অগত্যা টিকিটহীন অবস্থায় ট্রেনে চড়ে পড়া আর যথারীতি রেল-পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দু’দিনের হাজতবাস। কপাল মন্দ হলে যা হয় আর কী!
এখানেই শেষ নয়। হাজত থেকে বাইরে বেরিয়ে একটাই চিন্তা বাড়ি যেতে হবে। বাবা বেঁচে আছে তো? বোন কার কাছে? টাকা চাই, কিন্তু কী ভাবে? কাকতালীয় ভাবে উপকারী বন্ধুও জুটে যায় রাস্তায়। টাকার আশা দেখিয়ে নিয়ে যায় মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে। দু বোতল রক্ত দেওয়ার পর বন্ধুর খোঁজে গিয়ে দেখা যায় সে নেই! রক্ত বেচার টাকা নিয়ে দালাল-বন্ধু হাওয়া। অগত্যা সিদ্ধান্ত আত্মহত্যার।
একটানা কথা বলে ক্লান্ত সুভাষ দেখাল তার হাতের স্টিকিং প্লাস্টার রক্ত নেওয়ার পর যা লাগানো হয়েছে।
অতঃপর সুভাষকে নিয়ে আমাদের পাড়া পরিক্রমা। দোকান, কারখানা, পাড়ার সাধারণ মানুষ সকলের কাছে সাহায্য সংগ্রহ। তার পরে ওকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে ট্রেনে তুলে দিলাম আমরা। যাওয়ার আগে সুভাষের চোখের জল বাধা মানেনি।
আমরা সুভাষকে বার বার বলে দিয়েছিলাম কী হল না হল তার একটা খবর যেন অন্তত দেয়। কিন্তু সুভাষের কোনও খবর আমরা পাইনি। কে জানে, ওর কী হল?
বোনকে অক্ষত পেল কি? বাবার শেষ কাজটা কি করতে পেরেছিল? কোনও কাজকর্ম কি করছে ও? না কি অন্ধকারে হারিয়ে গেল, কিংবা মুছেই গেল একেবারে, আত্মহত্যার হাতছানি এড়াতে না পেরে?
৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:১৮
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।।
২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৩
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মানুষ আত্মহত্যা করে তার জীবনের আশা ভরসা শেষ হয়ে গেলে। সুভাষের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল বলে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। আত্মহত্যাকারীকে আমরা তো 'কাপুরুষ' বলেই খালাস হয়ে যাই। কিন্তু আসলে এটা ঠিক নয়। সুভাষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের প্রতি সহানুভূতি রইল।
ধন্যবাদ ফেলুদার তোপসে।
৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৫
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: মানুষ যখন জীবনে সব পেয়ে যায় আর যখন কিছুই পায় না তখনি সে আত্মহত্যা করে………সুভাষের ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল বুঝি।।
৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কী যন্ত্রণাময় জীবন!
৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩০
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: সত্যিই খুব যন্ত্রনাময় জীবন,এই জীবন উপরওয়ালা আর কাঊকে না দেন।
৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২
সুমন কর বলেছেন: দুঃখজনক !
৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৬
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: সত্যিই খুব দুঃখজনক।
৫| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২১
তার আর পর নেই… বলেছেন: আপনি কলকাতার?
সেই ছেলে হয়তো আপনাদেরও স্মরণ করে।
৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৮
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: হয়তো স্মরন করে কিংবা ভুলেই গেছে হয়তো বহু ঘটনার ভীড়ে।
আর হ্যাঁ, আমি কলকাতারই ছেলে।
৬| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯
আমিই মিসির আলী বলেছেন: আপনার স্মৃতির পাতায় থাকা গল্পটা হৃদয় ছুঁয়ে গেল। আপনার কাজটাও অনেক প্রশংসার দাবিদার।
৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২০
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকুন আর ভালো রাখুন সবাইকে।।
৭| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১০
পারভেজ রশীদ মঙ্গল বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর বাস্তব ভিত্তিক ছোট গল্প।লেখককে ধন্যবাদ।আরো আগে মনে পড়া কাঙ্খিত ছিল।
৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২৬
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন, সত্যিই অনেক আগে মনে পড়া উচিত ছিল, এই কংক্রিটের শহরে থেকে থেকে মনটাও পাথরের মতই হয়ে গেছে।
অনেক অনেক ভাল থাকুন, আর ভাল রাখুন সবাইকে।
৮| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২৭
ঈশান আহম্মেদ বলেছেন: মানুষের জীবন খুব কষ্টের।
৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২৭
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: এই মানব জীবন সত্যিই খুব কষ্টের।
৯| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
সায়ান তানভি বলেছেন: হায় ! জীবন ,কি অসহ্য যন্ত্রণাময় কারো কাছে , হয়তবা সবার কাছেই ,কেউ সয়ে যায় ,কেউ জীবন থেকে পালায় ।ভালো লিখেছেন ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: শুভ সকাল আপনাকে এবং সুভাষকে