নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

ফেলুদার তোপসে

দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।

ফেলুদার তোপসে › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরারী গল্পের খোঁজে

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৯

সামনের ঘরে বসে আছি । বোকাবাক্সে গড়গড় চলছে এনডিটিভি। দুপুরের লেমন ইয়েলো রোদ তেরছা হয়ে মারিয়ে গিয়েছে বারান্দার কোল। পাশের বাড়ির ছাদে শুকোচ্ছে সেনেদের ভেজা
শাড়ি-সায়া-ব্লাউজ। পাখিটা হঠাৎ গ্রানাইটের কালো থামের আড়াল থেকে বুকে ভর দিয়ে হেঁচড়ে বেড়িয়ে এল। ওর নাম জানি না। ছোট, কালচে, ঘাড়ের কাছটা একটু ধূসর; আগে দেখিনি। বেশিক্ষণ
পারল না। মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। অমনি মাটিতে ছিটকে পড়ল তিন ফোঁটা তাজা রক্ত। শরীরে ভর দিয়ে দম নিয়ে একটু পরে আবার উঠে বসল। দাঁড়াবার প্রাণপণ চেষ্টা, কিন্তু পারল না। ঝাপটে পড়ল
মাটিতে। ঠোঁটের পাশ দিয়ে গল গল করে ফেটে বেরিয়ে এল একদলা টাটকা কালচে বেদানা রঙ। তার সঙ্গে ঈষৎ গড়াচ্ছে সরু হলদেটে কষ । এক মুহুর্তের জন্য তীব্র ছটফট। তারপরই হিমশীতল
নিরবতা, স্থবীর। বাতাসে মিলিয়ে গেল শ্বাস; একপাশে পাখিটার লাশ ।

মেঝের মোজাইকের হাজার বিন্দুর ভিড়ে মিশে গেল গোত্রহীন পাখিটার কয়েক ফোঁটা রক্ত । পাখিটা নেই। একটু আগে হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে। ধীরে ধীরে নানান দিক থেকে ভিড় জমাচ্ছে ছোট ছোট
পিঁপড়ের দল । একটা দুটো মাছির ডানায় মাংসের লোভ !
নির্বাক দেখে চলি এক অবধারিত মৃত্যুর সেলুলয়েড। অন্য পাশে গড়গড় চলছে এনডিটিভি।

পাখিটা মরল কেন? এক্সিডেন্ট, না নির্ভেজাল খুন?
নাকি, আত্মহত্যা?
মৃত্যুর সময় কেঁদেছিল?
চোখ বোজার ঠিক আগে কার মুখ মনে করেছিল? মা? বাবা? সহোদর? নাকি অতি নিকট অন্য কোন মুখ?
কতটা যন্ত্রণা হয়েছিল পাখিটার?
জিগ্যাসাচিহ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে না । বিসর্গের মত শূণ্যে ভাসবে অনিশ্চিত । মৃত্যুর কোন ময়নাতদন্ত হবে না। শবদেহ কাঁটাছেড়ার প্রশ্নই নেই। একটু পড়ে উঠে গিয়ে পাখিটার নিথর ঠ্যাং-টা ধরে
তাচ্ছিল্য সহযোগে ছুঁড়ে ফেলে দেবো রাস্তার ধারে ডাস্টবিনে । কোন মিডিয়ার ফ্লাশবাল্ব জ্বলবে না । দেখা যাবে না সাদা উটের দৌড় ।
খেচর রাজ্যের এটাই নিয়ম ।
সামনে গড়গড় চলছে এনডিটিভি । লোকটা খুন করেছিল । মদ খেয়ে নিজের হাতে গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা আর একজন মানুষকে মেরেছে । লোকটি চিত্রতারকা । তাই মানুষ নন, ভগবান ।
ভগবান কখনও দোষ করতে পারেন না ।
আদালত চত্বরে মিডিয়ার অসংখ্য ফ্লাশবাল্ব জ্বলছে । সাদা উটের দৌড়ও ইতিউতি চোখে পড়ে। শবদেহ কাঁটাছেড়া হতে পারে । কিন্তু সত্য ম্যানুফ্যাকচার হবে নিজস্ব যুক্তিতে। কারণ, ভগবান কখনও
খুন করতে পারে্ন না ।
মনুষ্য রাজ্যের এটাই নিয়ম ।
ডাস্টবিনে কাকেরা খুঁটে খায় মৃত পাখির মাংস । আদালতে অন্য মানুষের মৃত্যু নিয়ে মোচ্ছব চলে দুপেয়ের । বিবর্তন হয়, পরিবর্তন হয় না স্বভাবে । মৃতদেহ চেটে খায় কাকে আর মানুষে । বোকাবাক্স
দেখে যায় সভ্যতার বেইমান । বেলজিয়ান বিয়ারে একসাথে ‘চিয়ার্স’ হাঁকে খাদক ও ভগবান ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন।
উপমাগুলো মনে ধরার মতো।
বিশেষ করে লেমন ইয়োল রোদ তেরছা করে- এই জায়গাটা।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: চমৎকার উপস্থাপনা । পড়ে ভালো লাগলো ।

শুভ কামনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.